প্রাণসংহারী নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে দুই বছরে ঈদ অর্থনীতি স্থবির ছিল। উৎসবকেন্দ্রিক অর্থনীতির মধ্যে সবচেয়ে বড় অঙ্কের বাণিজ্য হয়ে থাকে এই রমজানের ঈদে। ফলে এবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় স্থবিরতা কাটিয়ে জমজমাট ঈদবাজার। ক্রেতাদের পদচারণায় ভরে উঠেছে মার্কেটগুলো। ব্যবসা ভালো হওয়ায় খুশি বিক্রেতারা। আগের বারের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রাণপণ চেষ্টা তাদের। পোশাকের পাশাপাশি দেশি শিল্প ও অন্য বাণিজ্যের প্রতিটি খাতে বেচাকেনা কয়েক গুণ বেড়েছে। ঘুরে দাঁড়াচ্ছে উৎসবের অর্থনীতি। গতকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, ইস্টার্ন মল্লিকা, গাজী ভবন, ইস্টার্ন প্লাজা, মৌচাক মার্কেটসহ একাধিক মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে মানুষের ঢল।
বসুন্ধরা সিটির টপ টেনের ব্র্যান্ড ম্যানেজার আবু সাইদ বলেন, দুই বছর পর আমরা ভালোমতো ব্যবসা শুরু করতে পারছি। এবারের ঈদে আমরা দুই বছরের ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব। শুক্রবার তাই ক্রেতাদের সমাগম একটু বেশি। এমন সমাগম আশাকরি মাসজুড়ে হবে। এর মাধ্যমে আমরা অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা হলেও স্বস্তি পাব।
একই শপিং মলের ইনফিনিটি ব্র্যান্ডের ম্যানেজার সুমন মিয়া আশাবাদী হয়ে বলেন, দুই বছর ধরে তো আমরা লসের মধ্যেই ছিলাম। দোকান খুলেও সবকিছুর ভাড়া দেওয়া লাগছে। তবে এবার ক্রেতারা মার্কেটে আসছে অনেক। আশা করছি এভাবে ক্রেতারা আসতে থাকলে ব্যবসা সফল হবে এবারের ঈদ।
যমুনা ফিউচার পার্কে একজন ক্রেতা ইলমা জাহান। এসেছেন বারিধারা থেকে। তাকে অনেকটা খোশমেজাজে দেখা গেছে। তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত আনন্দের যে আমরা আবার আগের মতো করে মন মতো কেনাকাটা করতে পারব। নিজের পছন্দমতো কিনতে পারব সবকিছু।
ইলমার ভাষায়, আসলে দুই বছর অনলাইন থেকেই বেশিরভাগ কেনাকাটা করতে হয়েছে। কিন্তু এবার নিজে এসে দেখে শুনে পছন্দমতো কিনতে পারছি। এটা সত্যিই আনন্দদায়ক। আবারও ঈদের একটা অনুভূতি হচ্ছে। বাস্তবে শপিং করতে না পারলে ঈদের আমেজটা আসে না ওইভাবে। তাই এবার অনেক উৎফুল্ল লাগছে।
ক্লাস ফাইভে পড়া আদনান সাকির এসেছে বাবা-মায়ের সঙ্গে কেনাকাটা করতে। নিজের পছন্দমতো জিন্স প্যান্ট, শার্ট, গেঞ্জি, জুতা, চশমা, ঘড়িসহ অনেক কিছু কিনেছে। তার পছন্দমতো সবকিছু কিনে দিতে পেরে তার বাবা-মাও অনেক খুশি। তিনি বলেন, ‘দুই বছর ঈদে মার্কেটে এসে শিশুদের পছন্দমতো কেনাকাটা করে দিতে পারিনি। তারা প্রায়ই মন খারাপ করত। তা পূরণ করতাম অনলাইনে। তবে এবার সশরীরে এসে সন্তানের এবং নিজের পছন্দ অনুযায়ী কিনতে পারছি, এটাই ভালো লাগছে।’
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলালউদ্দিন বলেন, দুই বছরে পহেলা বৈশাখ ও ঈদের মৌসুমে বাণিজ্য হয়নি। এ সময় সাধারণ ব্যবসাটাই হয়নি। বাড়তি বেচাকেনা তো পরের কথা। সুতরাং বড় লোকসানের কবলে পড়তে হয়েছে ব্যবসায়ীদের। এ বছর করোনা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকায় এবার অনেক আগে থেকেই ব্যবসা চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা পেছনের লোকসান থাকা সত্ত্বেও বৈশাখ ও ঈদ সামনে রেখে সবার শেষটুকু দিয়ে, ঋণ করে আবার বিনিয়োগ করেছেন। মৌসুমে ভালো আয় করতে জোর চেষ্টা করছেন ব্যবসায়ীরা।