
বুলবুল আহমেদ সোহেল ; নারায়ণগঞ্জঃ
নারায়ণগঞ্জ নগরের চাষাঢ়ার হেলথ রিসোর্ট হাসপাতালে অতিরিক্ত মুনাফার জন্য প্রসূতি রোগীকে অকারণেই জরুরী অজুহাতে সিজার করিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছ। সিজারের পর চুক্তির দ্বীগুন টাকা বিল ধরিয়ে দিয়ে টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত আটকে রাখাহয় রোগীকে। রোগীর অভিভাবক প্রায় তিনঘন্টা দেন দরবার করে চুক্তির বাইরে অতিরিক্ত টাকা পরিশোধ করে রোগীর ছাড়পত্র হাতে পান। বুধবার ঘটে যাওয়া এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসকদের নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে নগরীতে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী হায়দার আলী সুমন জানান, শহরের চাষাঢ়ার পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বসেন স্যার সলিমউল্লাহ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড মিটফোর্ড হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ও সার্জন ডা. পারুল আক্তার। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকে তার তত্ত্বাবধানে ছিলেন তার স্ত্রী নীলিমা। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও গত রোববার (১৯ জুন) সিজার করতে হবে বলে চাষঢ়া বালুর মাঠ এলাকায় অবস্থিত হেলথ রিসোর্ট হাসপাতালে নীলিমাকে ভর্তি কারতে বলেন ডাক্তার। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে হাসপাতালের লোকজন ডা. পারুলের সাথে আলাপ করে ১৫ হাজার টাকা অগ্রীম দিতে বলেন। অগ্রীম টাকা দেওয়ার পর তার স্ত্রীকে ইনজেকশন দিয়ে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, ডা. পারুল ঢাকায় এক মিটিংয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় তিনি অপারেশন করতে পারবেন না। অন্য ডাক্তার দিয়ে অপারেশন করানো হবে। অপারেশনের আগে বলেছিলেন, টাকা-পয়সা নিয়ে কোন টেনশন করতে হবে না, সব পারুল ম্যাডাম বুঝবেন।
বুধবার দুপুর বারোটায় স্ত্রী ও নবাগত মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য ছাড়পত্র চাইলে হাসপাতাল থেকে ওষুধের খরচ ছাড়াও ৫৪ হাজার ৮০০ টাকার বিল ধরিয়ে দেয়। আর অ্যাডভান্স ১৫ হাজার টাকাও বিলে ওঠানো হয়নি। পুরো টাকা পরিশোধে করে ছাড়পত্র নিতে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সুমন এসময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডাঃ পারুলের সঙ্গে ঔষধসহ সব কিছু মিলিয়ে ২৫ হাজার টাকায় চুক্তি হয়েছিল বলে জানান। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে বলেন ডাঃ পারুলের সঙ্গে কথা বলে চুক্তিনুযায়ীই এ বিল ধরা হয়েছে। এসময় ডাঃ পারুলের সঙ্গে যোগাযোগ কররা চেষ্টা করলে তার ও অ্যাসিসটেন্ট দুজনেরই মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
পরে এ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগীর স্বজনদের মধ্যে প্রায় তিন চার ঘন্টা দর কষাকষি করে ৩৫ হাজার টাকা বিল পরিশোধের সমঝোতা হয়। পরে চুক্তির বাইরে অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা দিয়ে বিকেল চারটার দিকে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে হাসপাতাল ছাড়েন সুমন।
হেলথ রিসোর্ট হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক আব্দুল মান্নান মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, ডা. পারুল আক্তারেরই অপারেশন করার কথা ছিল। তিনি রোগীকে পাঠিয়েও সময়মতো আসতে পারেননি। পরে আরেকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে অপারেশন করানো হয়। হাসপাতালের পক্ষ থেকে সব ধরনের সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। বিলের বিষয়টি ডা. পারুলের সাথে রোগীর লোকজন আগেই চুক্তি করেন। সে অনুযায়ীই বিল করা হয়েছ বলে রোগীর অভিভাবকদের অভিযোগের কথাটি এড়িয়ে যান।
কৌশলে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের এ অভিযোগের খবর ছড়িয়ে পড়লে নগর জুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। সচেতন মহলের দাবি, জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাদের ঔদাসিনতায় আনাচে কানাচে নামে বেনামে অবৈধ হাসপতাল ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছ। বৈধগুলোর মধ্যেও অনেক প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। চিকিৎসকদের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক রোগীদের অনেক হাসপাতাল ক্লিনিকে রোগী যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। সে কারণেই সেবা নিতে গিয়ে মানুষকে নানা ভাবে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হতে হচ্ছে।