Logo
শিরোনাম
অডিও রেকর্ড সহ এসপি'র কাছে আলামত

নারীর কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করলেন চারঘাট থানার ওসি

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ০৩ অক্টোবর ২০২৩ |

Image

শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, সিনিয়র রিপোর্টার :

মাদক ব্যবসা করার জন্য এক নারীর কাছে ৫ লাখ টাকা ঘুষ ও জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ এর পরিদর্শককে বদলির জন্য আরো ২ লাখ, মোট ৭ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করার ''আলাপ-চারিতার'' ৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ট এর অডিও রেকর্ড সহ এক নারীর অভিযোগ। 

অবশেষে রাজশাহীর চারঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুল আলম কে সাময়িক প্রত্যাহার সহ ঘটনাটি তদন্তে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।

স্বামী জেল-হাজতে রয়েছে সেই সুযোগে ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি সহ কয়েক জন ঐ নারীর কাছে চাঁদা দাবী করেছেন এমন অভিযোগ নিয়ে ভিকটিম নারী (২৮) চারঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুল আলম এর অফিসে যাওয়ার পর অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহবুবুল আলম ঐ নারীকে তার কোয়াটারে ডেকে নিয়ে ''মাদক ব্যবসা করার জন্য ৫ লাখ এবং ঐ নারীর স্বামীকে গোয়েন্দা শাখার যে কর্মকর্তার নের্তৃত্বে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই কর্মকর্তাকে বদলী করার জন্য আরো ২ লাখ  টাকা দাবি করেন ওসি। এছাড়াও ৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ট এর অডিওতে নারীর সুন্দর চেহারা নিয়ে ও আলাপ-চারিতায় মন্তব্য করেন ওসি। 

ঘটনাটি প্রকাশের পরই গত শনিবার রাতেই চারঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কে প্রত্যাহার করে রাজশাহী পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয় বলে নিশ্চিত করেন রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম। তিনি বলেন, জেলা পুলিশ সুপার জনাব সাইফুর রহমান মহোদয় ঐ রাতেই চারঘাট থানার ওসি কে থানা থেকে প্রত্যাহার পূর্বক পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করার আদেশ দেন।গত শনিবার ঐ নারী (২৮)

 ৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ট এর আলাপ-চারিতার অডিও রেকর্ড সহ জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। 

উল্লেখ্য, গত ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে চারঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তার কোয়ার্টার এর কক্ষে ঐ নারীকে ডেকে নিয়ে মাদক ব্যবসা করার জন্য ৫ লাখ দাবি করে অবাধে মাদকের কারবার করতে দিবেন সহ মাদকের মামলায় ঐ নারীর স্বামীকে জেলা গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি'র) যে কর্মকর্তা গ্রেফতার করেছেন তাকে বদলী করার জন্য আরো ২ লাখ টাকা মোট ৭ লাখ টাকা চান ওসি। এসময় আলাপ-চারিতায় ঐ নারীর রুপ (সুন্দর চেহারা) নিয়েও কথা বলেন তিনি। অডিও রেকর্ড তথা

ঘটনাটি ফাঁস হওয়ার পর থেকে বিশেষ করে চারঘাট থানা এলাকা জুড়ে লোকজনের মাঝে নানা আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। 

তবে সর্বশেষ মঙ্গলবার একটি সুত্র জানায়, ঐ নারীর স্বামী পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করতো। আর সোর্স হিসেবে কাজ করার সুবাদে মাদকের সাথে জড়ীত হয়ে পড়েন। বেশ কিছুদিন পূর্বে ডিবি পুলিশ নারীর স্বামীকে মাদক সহ গ্রেফতার পূর্বক মাদক আইনে মামলা দিয়ে তাকে জেল-হাজতে প্রেরন করেন। তবে ঐ নারীর স্বামী গত ইউপি নির্বাচনে সদস্য পদে নির্বাচন করেছেন বলেও জানিয়েছেন সুত্র। 

ঘটনা যেটিই হোক না কেন, ৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ট এর অডিও এর বিষয়টি সহ সম্পূর্ণ ঘটনাটি'র সত্য রহস্য উদঘার্টন পূর্বক জড়ীতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের আশুদৃষ্টি কামনা করেছেন সচেতন মহল সহ সাধারন লোকজন।


আরও খবর



ভূ-রাজনীতির আলোচনায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত:শনিবার ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ০৩ অক্টোবর ২০২৩ |

Image

জনগণের স্বার্থকে বিবেচনায় রেখে জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছানোর বিকল্প নেই। তা না হলে বিদেশি শক্তি বারবার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর সুযোগ পাবে মনে করেন দেশের বিশিষ্টজনরা। একই সঙ্গে আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছানোর পথ বের করার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

বৈঠকে বক্তারা বলেন, কোনো দেশের নির্দেশনা বাংলাদেশের মানুষ মানবে না। বরং যারা এই বিদেশিদের নির্দেশ মানবে, জনগণ তাদের মেনে নেবে না। কেননা এখানে বিশ্ব ভূ-রাজনীতিতে বাংলাদেশকে নিয়ে বিদেশিদের স্বার্থ জড়িত রয়েছে। ১৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ঢাকা গ্যালারিতে এডিটরস গিল্ড আয়োজিত ভূ-রাজনীতির আলোচনায় বাংলাদেশ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এসব কথা বলেন। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও এডিটরস গিল্ডের প্রেসিডিয়াম সদস্য শ্যামল দত্ত।

আলোচকরা বলেন, ভূ-রাজনীতির প্লেয়ার কিছু সংখ্যক দেশ। তারা নিজেদের স্বার্থে অন্য আরেকটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে। আর এই ভূ-রাজনীতিতে মার্কিনিদের বড় স্বার্থ হলো বিশ্বের অন্যান্য দেশের সমর্থন পাওয়া। অন্যান্য দেশকে নিজেদের সমর্থনে রাখার প্রক্রিয়া হিসেবে উপনিবেশ ব্যবস্থা চলে যাওয়ার পর সরকারের নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়। আর এই নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য কিছু উপাদান লাগে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মানবাধিকার, গণতন্ত্র, বাক্স্বাধীনতাসহ আরো কিছু। এগুলোর মানও তারাই ঠিক করে দিয়েছে।

বক্তারা আরো বলেন, যখন তাদের পছন্দ মতো সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হয়, তখন তারা নিজেদের মতো আইন করে বিশেষ দলকে সুবিধা দেয়। এক্ষেত্রে তারাই যদি সরকার নির্বাচন করে তাহলে জনগণের ভোটাধিকার কোথায় থাকল?

ভূ-রাজনীতিতে টিকে থাকতে বাংলাদেশকে শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে হবে জানিয়ে আলোচকরা বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক দর্শন ও বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী প্রতিবেদনে দেখব যে, সবাইকে নিয়ে উন্নয়ন বা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের কথা বারবার বলা হয়েছে। এখন ভূ-রাজনীতিতে আলোচনায় বাংলাদেশ। আর এই আলোচনা একটা কারণ হচ্ছে, আমরা ভৌগোলিক একটা সুবিধাজনক অবস্থায় আছি। সেটা সব সময় ছিল। এখন আরো বেশি হচ্ছে, কারণ অর্থনৈতিক সক্ষমতা। আর অর্থনীতির সঙ্গে রাজনীতির একটা সম্পর্ক আছে। এখন যেটি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে, আমাদের অর্থনৈতিক যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেগুলো মোকাবিলা করে অর্থনৈতিক ভিতটা শক্ত করতে হবে।

তবে বাংলাদেশের মানুষ আর কোনো বাইরের দেশের নির্দেশনায় চলবে না। সেই পরিস্থিতিও নেই জানিয়ে বিশিষ্টজনরা বলেন, গ্লোবাল ভিলেজের মধ্যে থেকেই আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হবে, কূটনৈতিক সম্পর্ক ঠিক রাখতে হবে। কিন্তু কারো নির্দেশনায় বাংলাদেশ চলবে এটা হতে পারে না। বাংলাদেশের জনগণও তা মানবে না। আর তাই অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি রাষ্ট্রের কথা বলা বন্ধ করতে আসন্ন নির্বাচনের আগে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি জাতীয় ঐক্য তৈরি করতে হবে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী, সাবেক সচিব মোফাজ্জল করীম, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার, সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ড. হাসান মাহমুদ খন্দকার, ইউএনবির সম্পাদক ফরিদ হোসেন।


আরও খবর



মহান সাধক সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল-হাসানী (রহ.)

প্রকাশিত:শনিবার ২৩ সেপ্টেম্বর 20২৩ | হালনাগাদ:সোমবার ০২ অক্টোবর 2০২3 |

Image

অধ্যাপক ড. এস. এম. রফিকুল আলম : আল্লাহ তাআলা মানুষকে পৃথিবীতে খলিফা হিসাবেই প্রেরণ করেছেন। মানুষের প্রতি আল্লাহর খলিফা বিশেষণের মাহাত্ম্য যথাযথ অনুধাবন না করার কারণে আল্লাহর গুণ ও মানুষের যোগ্যতার মধ্যকার ব্যবধান একাকার করে গোলিয়ে ফেলি এবং কথায় কথায় শিরক-বিদআতের ফতোয়া দিই। আল্লাহর নিরানব্বই বা ততোধিক গুণবাচক নাম যেমন, সত্য ও বাস্তব; সে গুণবাচক নামের প্রতি আমাদের ঈমান যেমন যথাযথ থাকা আবশ্যক তেমনি মানুষ নামক সৃষ্ট জীব দুনিয়াতে আল্লাহর খলিফা (প্রতিনিধি) সেটাও সত্য। খলিফা হিসাবে দুনিয়াতে মানুষকে মেনে নেয়াও ঈমানের অংশ।

ইবলিশ মানুষকে দুনিয়াতে খলিফা হিসাবে মেনে সিজদা না করাতে অভিশপ্ত হয়েছে।
আল্লাহ কে? আল্লাহপাক হচ্ছেন তাঁর নিরানব্বই বা ততোধিক গুণে অসীম শক্তির অধিকারী। আল্লাহর পবিত্র জাত ও গুণের অস্তিত্বকে অকপটে সন্দেহাতীতভাবে স্বীকার করা একজন মুমিনের জন্য ঈমানের প্রধান শর্ত। কোন মানুষ আল্লাহর পবিত্র জাত কিংবা গুণের কোন একটিকে অস্বীকার বা সন্দেহ করলে তাকে ঈমানদার বা বিশ্বাসী বলা যাবেনা। মানুষ সৃষ্টি করা না হলে কিন্তু এ বিশ্বাসের প্রতিফলন সম্ভব ছিলনা। কেননা আল্লাহ নিরাকার, আল্লাহকে দেখা, কল্পনায় চিত্রায়িত করা, তাঁর গুণের বাস্তব চিত্রায়ণ মানুষের পক্ষে সম্ভব ছিলনা। নিরাকার আল্লাহর অস্তিত্ব বা গুণ কোনটাই মানুষের পক্ষে বাস্তবে বিশ্বাস করাও সম্ভব ছিলনা; যদিনা সে গুণ খলিফা তথা
মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর খলিফা বা প্রতিনিধি। খলিফা বা প্রতিনিধির কাজ কি? পৃথিবীতে আল্লাহর কাজের আন্জাম দেয়াই প্রতিনিধির কাজ।

পৃথিবীতে আল্লাহর কাজ কি? আল্লাহর নিরানব্বইটি গুণই আল্লাহর কাজ। আল্লাহর খলিফাগণ পৃথিবীতে তাঁর নিরানব্বই গুণের প্রতিফলন ঘটাবে।

তাহলে কি তারা আল্লাহ হয়ে গেল ? নাউযু বিল্লাহ। খলিফা আল্লাহ হতে যাবেন কেন? খলিফা তো সৃষ্ট আলাদা সত্তা। খলিফার মধ্যে আল্লাহর গুণের প্রতিফলন তো আল্লাহ প্রদত্ত যোগ্যতা। যিনি যোগ্যতা দান করেছেন কৃতিত্বতো তাঁরই। খলিফার মধ্যে আল্লাহ গুণের প্রতিফলন তো কৃত্রিমভাবে। গুণের মৌলিকত্বতো আল্লাহর সাথে। সুতরাং বান্দার মধ্যে আল্লাহর গুণের বা আল্লাহ প্রদত্ত প্রতিফলন মানলে বা বিশ্বাস করলে আল্লাহর সাথে বান্দাকে শরিক করা হবেনা বরং বান্দাকে আল্লাহর প্রকৃত খলিফা হিসাবে স্বীকার করা হবে।


খলিফার অর্থ বা সংজ্ঞার ব্যপারে আমাদের স্পষ্ট ধারণা না থাকার কারণে খলিফা ও আল্লাহর মধ্যকার পার্থক্য নির্ণয় করার যোগ্যতা অর্জিত হয়না। যার ফলে বান্দা কখন শিরক করে আবার কখন ইবাদত করে তা আমাদের বোধগম্য হয় না। তাই আমরা যখন তখন, যাকে তাকে, যেখানে সেখানে, শিরকের ফতোয়া দিয়ে ফেলি। সুতরাং যে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকবে না সে বিষয়ে সাবধানে কথা বলা উচিত। আল্লাহর গুণের প্রতিফলন মানুষের মধ্যে অস্বিক্বার করলে দুনিয়া অর্থহীন হয়ে যাবে। মানুষ সৃষ্টির আসল রহস্যই অস্পষ্ট থেকে যাবে। মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকে আল্লাহর গুণের প্রতিফলনের যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এ কথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতে হবে। তাই কোন মানুষের মধ্যে আল্লাহর কোন গুণের প্রতিফলন দেখার বর্ণনা দিলেই তিনি শিরক করেছেন বলে ফতোয়া দেয়া জগন্য অন্যায়। বরং দেখা উচিৎ তিনি কি ঐ মানুষকে আল্লাহর আসনে সমাসিন করছেন নাকি তাকে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে স্বীকার করেই তাঁর গুণের বর্ণনা দিচ্ছেন। তাই যদি হয়, তাহলে তিনি তো আল্লাহর প্রিয় বান্দার খিলাফতকে স্বীকার করেছেন মাত্র। এতে তো তার ঐ বান্দার দোষের কিছু নেই। বরং তা আল্লাহ ও আল্লাহর বান্দার যোগ্যতা ও উদ্দেশ্যকে তুলে ধরেছেন।


এ তো গেলো আল্লাহর খিলাফত। এ খিলাফতের আহাল দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পৃথিবীর সব মানুষ।
এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, “আল্লাহর খিলাফতও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াছাল্লামার খিলাফত কি এক? নাকি ভিন্ন ভিন্ন? এর উত্তর হচ্ছে, ভিন্ন ভিন্ন। কেন না, আল্লাহর খলিফা পৃথিবীর সব মানুষ- যাদের মধ্যে আল্লাহর নিরানব্বই গুণের প্রতিফলন আছে। এরা সবাই কিন্তু, আল্লাহর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াছাল্লামার খিলাফতের অনুসারী বা ওয়ারিশ নন। শুধুমাত্র তারাই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াছাল্লামার খলিফা (প্রতিনিধি, উত্তরাধিকার-ওয়ারিশ) হবেন। যিনি আল্লাহকে ইলাহমেনে আনুগত্য স্বীকার করে, নিজের স্বাধীন সত্তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াছাল্লামার আনিত দ্বীনের প্রতি সোপর্দ করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তাঁর মধ্যকার আল্লাহ প্রদত্ত খিলাফতকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াছাল্লামার খিলাফতের প্রতি সোপর্দ করেছেন, কেবল মাত্র তার খিলাফতই আল্লাহর নিকট গৃহিত হবে, অন্যথায় হবে না। আমাদের সমাজের ওলামায়ে কিরামগণ যে কোন কারণে হউক না কেন আল্লাহর খিলাফত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াছাল্লামার খিলাফত কে একাকার করে ফেলার কারণে, কথায় কথায় শিরকের ফতোয়া দিয়ে থাকেন। এটা এক ধরনের অজ্ঞতা বৈ কিছু নয়।


আল্লাহর খিলাফত আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হবার উপায় কি? সব মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর খলিফা হলেও সবার খিলাফত কি আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য? এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, না? সবার খিলাফত আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। তা হলে কোন্ খিলাফত আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য, আর কোন্ খিলাফত নয়? এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, আল্লাহর খিলাফত যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াছাল্লামার খিলাফতের আলোকে হবে, তখন তাঁর খিলাফত (প্রতিনিধিত্ব) আল্লাহর নিকট গৃহিত হবে, অন্যথায় হবেনা। যাঁরা আল্লাহর খলিফা হয়ে আল্লাহর রাসূলের খিলাফতের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন আমার আজকের আলোচ্য ব্যক্তি হচ্ছেন তাদের অন্যতম।


নিম্নে হযরত সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী কাদ্দাছাল্লাহু ছিররাহুল আজিজের উপর কিঞ্চিত ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হলো। আমাদের হযরত সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী কাদ্দাছাল্লাহু ছিররাহুল আজিজের আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াছাল্লামার সাধারণ কোন খলিফা নন। তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াছাল্লামার উত্তরাধিকারও বটে। তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াছাল্লামার বংশধরদেরও একজন। তিনি সাধারণ অর্থে আল্লাহর রাসূলের খলিফা ছিলেন না; তিনি তাঁর যুগে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াছাল্লামার আশেক ও জাতীয় আন্তর্জাতিক পরিমলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের একনিষ্ঠ খাদেম হিসাবে বলিষ্ট ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি আল্লাহর রাসূলের ক্বদম ব-কদম অনুসারী ছিলেন। তিনি একমাত্র ওলি যিনি জাতিসংঘ নামক বিশ্ব দরবারে প্রিয়নবী মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াছাল্লামার শানকে সম্মানের সাথে প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশে মিলাদুন্নবী উদযাপনের মত সাহসী কর্মসূচি বা বাস্তবায়ন করেছিলেন। তিনি বিশ্বব্যাপী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা-বিশ্বাসকে বিশ্ব মুসলিম জনতার মধ্যে প্রতিস্থাপন করার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তিনি তাঁর যুগে মুজাদ্দিদের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।


তিনি আচরণের দিক থেকে অসম্ভব বিনয়ী, ভদ্র ও নম্র ছিলেন। তিনি হুবহু রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াছাল্লামার পদাংক অনুসরন করতেন। তিনি মেহমানদারীতেও আল্লাহর রাসূলের সুন্নাতের অবিকল আদর্শ ছিলেন। তিনি নিজের উপর অন্যকে প্রাধান্য দিতেন। তাঁর চেহারা মোবারক ও আচরণ দেখলে আল্লাহর রাসূল ও তাঁর সাহাবীগনের কথা স্মরণ হয়ে যেত। তাঁর সুঠাম উজ্জ্বল দেহ, নূরানী চেহারা, পরনে ধবধবে সাদা লুঙ্গী বা পাজামা, গায়ে সাদা পাঞ্জাবী, মাথায় টুপী, ইত্যাদি মিলিয়ে যেই ব্যক্তিত্তের প্রকাশ ঘটত, তা সত্যিই অভাবনীয়। তাঁর পৌরুষ দীপ্ত ও বীরোচিত আচরণ যে কোনো ধর্মের কিংবা দলের- মতের লোককে কাবু করে ফেলত। তাঁকে দেখা মাত্র মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে সবাই মাথা নত করে ফেলত। ভক্তবৃন্দ সুবোধ বালকের মত শান্তশিষ্ট নিবেদিত প্রাণ হয়ে যে কোনো হুকুম কালবিলম্ব না করে তামিল করতে কোনো রকম কুণ্ঠাবোধ করতো না। হুজুরের যে কোনো নির্দেশ তামিল করাকে নিজের জন্য সৌভাগ্য মনে করত।


তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত অকর্ষণ ক্ষমতা, উষ্ণ হে প্রবণতা, দায়িত্ববোধ, উন্নত জীবনাদর্শ, সেবামূলক মনোভাব, জ্ঞানপিপাসু মন, ভক্ত ও শাগরিদদের প্রতি মমত্ত, নৈতিক আদর্শ, মানষিক সুস্থতা, ধৈর্য, দৃঢ়চেতা মনোভাব, সমাজ সচেতনতা, ব্যক্তিগত অধিকার ও মর্যাদায় বিশ্বাস, নির্ভীকতা, দল মত জাতি নির্বিশেষে সবার প্রতি স¤প্রীতি ও সদ্ভাব সারা জীবন অক্ষুণœ ছিলো। তাঁর খোদাভীরুতা, রসুল-প্রেম, ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবন বলয়ে নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিক সফলতা দেশ, জাতি ও আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তির দিশা হিসাবে ভূমিকা পালন করত। তাঁর উপস্থিতি যে কোনো মজলিশ বা অনুষ্ঠানকে নক্ষত্রের মত উদ্ভাসিত ও আলোকিত করত।


অনেক সময় আল্লাহ তাআলা তাঁর বিশেষ বান্দাকে দিয়ে বিশেষ কোন গুণের বিশেষ প্রতিফলন ঘটিয়ে ঐ বান্দার মর্যাদাকে বাড়িয়ে দেন। উদ্দেশ্য ঐ বান্দার সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করা। যখন কোন মকবুল বান্দার মধ্যে এ ধরনের কোন গুণের অস্বাভাবিক প্রতিফলন ঘটে তখন সাধারণ বান্দার কাজ হচ্ছে, তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা বাড়িয়ে তাকে অনুসরণ করা। তাঁকে অবহেলা বা তাঁর সমালোচনা করা নয়। এতে আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হন। কারণ কোন বান্দার অস্বাভাবিক ঘটনা; কারামাত, অলৌকিক ঘটনা আল্লাহ তাআলার ইচ্ছাতে ঘটে। এর দ্বারা হিদায়ত উদ্দেশ্য। গোমরাহী নয়। আমরা হেদায়তের পথেই থাকি। গোমরাহীর পথে নয়। ঈসা আলাইহিস সালামের অনুসারীরা গোমরাহীর পথকে বেছে নিয়েছে। আমরা যেন তা না হই।


বান্দা যখন তাঁর দাসত্ব দ্বারা আল্লাহর অধিক নিকটে হয়ে যান তখন তাঁকে স্বাভাবিকতার ঊর্ধ্বে নিয়ে গিয়ে তাঁকে দুনিয়বাসীর জন্য মডেল (আদর্শ) হিসাবে উপস্থাপনের উদ্দেশ্যে তাঁকে দিয়ে তাঁর (আল্লাহর) শক্তির বিশেষ প্রদর্শন ঘটান। উদ্দেশ্য তাঁকে দুনিয়াবাসীর নিকট বিশেষ মর্যাদার আসনে আসীন করানো এবং অন্য বান্দাগণকে আল্লাহর দাসত্বে তাঁর অনুগত ও অনুসারী বানানো। অদূরদর্শিরা এটা গ্রহণে ব্যর্থ হয়। ফলে তারা তাঁর অনুগত হতেও বঞ্চিত হয়। অবশ্য কিছু সুবিধাবাদী এর জন্য দায়ী। যারা নিজেদের দুনিয়াবী সুবিধার জন্য আল্লাহর বিশেষ বান্দাদের এ ধরণের অলৌকিক ঘটনাকে ব্যবহার করে নিজেদের দুনিয়াবী সুবিধা আদায় করে নেয়। তাঁদের ব্যাপারে সাবধান হওয়া প্রয়োজন আছে।
হযরত শাহ্সূফী সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী কাদ্দাছাল্লাহু ছিররাহুল আজিজ অন্তরদৃষ্টির অধিকারী ছিলেন। তিনি একজন মানুষকে দেখে তাঁর অন্তরের অবস্থা বুঝে নিতেন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও গ্রহণ করতেন। অলি-আল্লাহগণের অন্তরদৃষ্টি সম্পর্কে আল্লাহর রাসূলের একটি পবিত্র হাদীস নিরূপ: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াছাল্লামা তাঁর পবিত্র যবানীতে বলেন, উচ্চারণ: ইত্তাকু ফিরাসাতিল মুমিনি ফায়িন্নাহু ইয়ানজুরু বিনুরিল্লাহি

 

(অর্থাৎ, তোমরা মুমিনের অন্তর দৃষ্টিকে ভয় কর কেননা তাঁরা আল্লাহর নূর দ্বারা দৃষ্টিপাত করেন।) পুরা হাদিছটি নিম্নরূপ:


উচ্চারণ: আন আবি সাঈদিল খুদরী ক্বালা ক্বলা রাসূলুল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লামা ইত্তাকু ফিরাসাতিল মুমিনি, ফায়িন্নাহু ইয়ানজুরু বিনূরিল্লাহি ছুম্মা ক্বারা আ- ইন্না ফী জালিকা লাআইয়াতিল লিল মুতা ওয়াস সিমিন। অর্থাৎ, হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াছাল্লামা ইরশাদ করেছেন, তোমরা মুমিনগণের অন্তরদৃষ্টিকে ভয় কর, কেননা তাঁরা আল্লাহর নূর দ্বারা দৃষ্টিপাত করেন। ইমাম তিরমিযী রহমাতুল্লাহি তায়ালা আলাইহি তাঁর সহীহ গ্রন্থের ৩১২৭ নম্বরে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।


আমার আলোচনার সাথে সংশ্লিষ্ট ছোট্ট একটি ঘটনার বিবরন দিয়ে আমার লেখার ইতি টানবো। চট্টগ্রামস্থ আল্লামা রুমী সোসাইটির একটি তাসাউফের প্রোগ্রামে হযরতুল আল্লামা সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী কাদ্দাছাল্লাহু ছিররাহুল আজিজ উপস্থিত ছিলেন। সময়টি ছিল রমজান মাস। উক্ত তাসাউফের প্রোগ্রামে অন্যান্য সদস্যদের সাথে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের প্রফেসর ড.গিয়াসুদ্দীন তালুকদারও উপস্থিত ছিলেন। তিনি হযরতুল আল্লামা সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী কাদ্দাছাল্লাহু ছিররাহুল আজিজকে কৌতুহলের বসে ভালোভাবে অনুধাবন করছিলেন।

 

 হুজুর কেবলা সাধারণ ইফতারী গ্রহণে মাজুর ছিলেন বিধায় তিনি নিজ বাসা থেকে নিজের ইফতারী নিয়ে এসেছিলেন। তাও আবার অসাধারণ কিছু নয়; দুধ-ছিড়া-কলা মাত্র। উক্ত ধরনের খাবার বর্ণিত প্রফেসর সাহেবেরও প্রিয় ছিল। তিনি খাবারের লোভে নয়; বরং কৌতুহলী হয়েই হুজুর কেবলার দিকে একটু দৃষ্টি দিয়েছিলেন। কিন্তু এতেও হযরতুল আল্লামা সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী কাদ্দাছাল্লাহু ছিররাহুল আজিজের দৃষ্টি এড়ায়নি। তিনি তাঁর অন্তরদৃষ্টি দিয়ে উল্লেখিত প্রফেসর সাহেবের মনের অবস্থা দেখে ফেলেন, তাই তিনি তাঁর বাসা থেকে আনিত ইফতারি অল্পকিছু খেয়ে বাকী সবটুকু প্রফেসর সাহেবকে দিয়ে খাবার অনুরোধ করেন। প্রফেসর সাহেব হুজুর কেবলার এহেন উদার আচরণ দেখে কিছুটা অবাক হন। অন্যরা তাঁকে বাহবা দিয়ে বলেন, আপনার জীবন ধন্য। আমরা যা পাওয়ার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষায় থাকি, আপনি তা সৌভাগ্য বসত: পেয়ে গেলেন। এ ছোট্ট ঘটনাতে হযরতুল আল্লামা সৈয়দ মইনুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী কাদ্দাছাল্লাহু ছিররাহুল আজিজের উদারতা, ইছার ও অন্তরদৃষ্টিসম্পন্ন হবার প্রমাণ পাওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাঁর অলিগণের ব্যাপারে সতর্ক হবার তৌফিক দান করুন।

 

লেখক : আরবী বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়


আরও খবর



এনার্জি ড্রিংকস : স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিশুরা

প্রকাশিত:সোমবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ০৩ অক্টোবর ২০২৩ |

Image

প্রচণ্ড গরমে তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি আড্ডা, পার্টি, পিকনিক কিংবা বাসাবাড়ির যে কোনো অনুষ্ঠানে অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে এনার্জি ড্রিংকস ও সফট ড্রিংকস (কোমল পানীয়)। কেউ কেউ ভাত-মাংস, এমনকি পানির মতো গ্রহণ করেন এগুলো। স্কুলের টিফিনে শিশুদের খাবার কিংবা কোমল পানীয় দিয়ে অতিথিকে আপ্যায়ন যেন মানুষের রীতি বা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বড়দের জন্য এগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, অথচ শিশুদের ক্ষেত্রে? এটি নিয়ে কেউ কি চিন্তা করেছেন?

এসব পানীয়ের প্রতি আসক্তির বিষয়টি উঠে আসে জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (নিপোর্ট) বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপে (২০২২)। সেখানে দেশের ৩০ হাজার ৩৭৫টি পরিবারের কাছ থেকে নানা ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। খাদ্য গ্রহণসংক্রান্ত তথ্য নেওয়া হয় ছয় থেকে ২৩ মাস বয়সী দুই হাজার ৫৭৮টি শিশুর কাছ থেকে। জরিপের ফলে উঠে আসে, ৩২ শতাংশ শিশু তথ্য সংগ্রহের আগের দিন কোমল পানীয় পান করেছেন। ৪৯ শতাংশ শিশু অতিরিক্ত চিনি ও লবণজাতীয় অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়েছেন।

গবেষণায় কোমল পানীয়তে উচ্চ মাত্রার সুগার ও ক্যাফেইনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এনার্জি ড্রিংকসে এর মাত্রা আরও বেশি। সেখানে বলা হয়েছে, ক্যাফেইনের জন্য বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদিত সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য মাত্রা ১৪৫ পিপিএম হলেও একটি এনার্জি ড্রিংকসে এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে ৩২১.৭ পিপিএম। এ ছাড়া এক বোতল (২৫০ মিলি) কোমল পানীয়তে সিসার মাত্রা মিলেছে যথাক্রমে ০.০৫৩ ও ০.০৪৮ মিলিগ্রাম

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গবেষণাতেও কোমল পারীয় ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি উঠে এসেছে। গবেষণায় কোমল পানীয়তে উচ্চ মাত্রার সুগার ও ক্যাফেইনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এনার্জি ড্রিংকসে এর মাত্রা আরও বেশি। সেখানে বলা হয়েছে, ক্যাফেইনের জন্য বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদিত সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য মাত্রা ১৪৫ পিপিএম হলেও একটি এনার্জি ড্রিংকসে এর উপস্থিতি পাওয়া গেছে ৩২১.৭ পিপিএম। এ ছাড়া এক বোতল (২৫০ মিলি) কোমল পানীয়তে সিসার মাত্রা মিলেছে যথাক্রমে ০.০৫৩ ও ০.০৪৮ মিলিগ্রাম।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, নমুনার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ পানীয়ের পিএইচ (পটেনশিয়াল অব হাইড্রোজেন) ও অ্যাসিটিক মাত্রা আসে ৩-এর নিচে, যা দাঁতের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ২৫০ মিলিলিটারের (মিলি) কোমল পানীয়তে চিনির পরিমাণ ২০.৮ থেকে ২৮.৮ গ্রাম এবং এনার্জি ড্রিংকে তা ২২.৬ থেকে ৩৭.০ গ্রাম পর্যন্ত পাওয়া গেছে। এটি একজন প্রাপ্তবয়স্কের জন্য দৈনিক সর্বোচ্চ মাত্রা পূরণের সমান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী, একজন প্রাপ্তবয়স্কের জন্য দিনে সর্বোচ্চ চিনি গ্রহণের মাত্রা ২৫ গ্রাম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এনার্জি ড্রিংকসে উচ্চ মাত্রার সুগার ও ক্যাফেইন থাকে যার পরিমাণ হয় ২৫০ মিলিলিটার (মিলি) ক্যানে অন্তত ৮০ মিলিগ্রাম (মিগ্রা)। যেখানে ৩৩০ মিলির একটি কোকাকোলা ক্যানে এর পরিমাণ থাকে ৩২ মিগ্রা। সেখানে ৬০ মিলির একটি এনার্জি ড্রিংকসের বোতলে ১৬০ মিগ্রা পর্যন্ত ক্যাফেইন থাকতে পারে। বেশি মাত্রার ক্যাফেইন উদ্বেগ ও আতঙ্কিত হওয়ার মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে। এটি রক্তচাপও বাড়িয়ে দেয়।

এনার্জি ড্রিংকসে উচ্চ মাত্রার সুগার ও ক্যাফেইন থাকে যার পরিমাণ হয় ২৫০ মিলিলিটার (মিলি) ক্যানে অন্তত ৮০ মিলিগ্রাম (মিগ্রা)। যেখানে ৩৩০ মিলির একটি কোকাকোলা ক্যানে এর পরিমাণ থাকে ৩২ মিগ্রা। সেখানে ৬০ মিলির একটি এনার্জি ড্রিংকসের বোতলে ১৬০ মিগ্রা পর্যন্ত ক্যাফেইন থাকতে পারে। বেশি মাত্রার ক্যাফেইন উদ্বেগ ও আতঙ্কিত হওয়ার মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে। এটি রক্তচাপও বাড়িয়ে দেয়

উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন  ধরনের কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকস বাজারে পাওয়া যায়। এর মধ্যে কিছু আছে কার্বনেটেড ওয়াটার, কিছু কার্বনেটেড ড্রিংকস ও সফট ড্রিংকস। এগুলোর ক্ষতির মাত্রাও ভিন্ন। এসব পানীয়তে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। চিনির কারণে বাচ্চাদের ওজন দ্রুত বেড়ে যায়।

ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণে বাচ্চাসহ বয়স্ক ব্যক্তিদের উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়ারেটিকস  দ্রুত বাড়ে। এমনকি কোমল পানীয় বাচ্চাদের মধ্যে এক ধরনের আসক্তিও তৈরি করে। ঠিক তামাকের নিকোটিনের মতো। এ কারণে বাচ্চারা একবার অভ্যস্ত হলে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে।

কেমিক্যাল-কাঁচামালে নকলের ছড়াছড়ি

ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে উৎপাদিত যেসব ড্রিংকস বা জুস আছে, সেগুলোতে ফলমূলের ব্যবহার খুবই কম থাকে। ব্যবহার হয় মূলত কেমিক্যাল, সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে চিনি। তাও আসল চিনি নয়। চিনির নামে ফ্রুক্টোজ, যা সিরাপ তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এগুলোতে খুবই উচ্চমাত্রার ক্যালরি থাকে, যা শরীরে মেটাবলিক প্রবলেম (বিপাকীয় সমস্যা) তৈরি করে।

বেশি ক্ষতি শিশু-কিশোরদের

দেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ  বলেন, কোমল পানীয় ও এনার্জি ড্রিংকসে কোনো পুষ্টিকর উপাদান নেই। বরং দেহের জন্য ক্ষতিকর কিছু রাসায়নিক উপাদান আছে। বেশকিছু গবেষণায় বলা হয়েছে, কোমল পানীয় দাঁতের ক্ষয়রোগ সৃষ্টি করে, মাড়ি দুর্বল করে। এমনকি এর প্রভাবে হাড়, পেশি ও লিভারে জটিল রোগ দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয় শিশু-কিশোররা।

গবেষকরা বলেন, কোমল পানীয়ের অন্যতম উপাদান হচ্ছে ক্যাফেইন। এটি অত্যন্ত আসক্তিকর মাদক। এটি শুধু স্নায়ুতন্ত্র নয় দেহকেও কৃত্রিমভাবে উত্তেজিত করে। হৃৎস্পন্দন ও সাময়িক বুদ্ধিবৃত্তি বাড়ায়, অবসন্ন ভাব বা ক্লান্তি-শ্রান্তি দূর করে। ছোটরা তাই একবার খেলে আবারও খেতে চায়।


আরও খবর



যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা, এটা তাদের ইচ্ছা

প্রকাশিত:শনিবার ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ০৩ অক্টোবর ২০২৩ |

Image

বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বুধবার ২৭ সেপ্টেম্বর (যুক্তরাষ্ট্র সময়) ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন অভিমত দেন।

শেখ হাসিনা জানান, আওয়ামী লীগই দেশের মানুষকে ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। তারপরেও যুক্তরাষ্ট্র কোন কারণে এমন নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে তার তার বোধগম্য নয়।

চলতি বছরের ২৪ মে বাংলাদেশে সুষ্ঠু, ও অবাধ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রক্রিয়াকে বাধাদানকারী ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন।

গত ২২ সেপ্টেম্বর এই নতুন ভিসানীতির আলোকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা চালু করার পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্র নিতে শুরু করেছে বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়।

ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি, তার দল ও সরকার যখন মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে দীর্ঘ লড়াই করে বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকার ও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করেছেন। বাংলাদেশ যখন উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে তখন হঠাৎ কেন এধরণের স্যাংশন তা তিনি জানেন না।

বাংলাদেশের সরকারপ্রধান আরও দাবি করেন যে, বাংলাদেশেই এখন অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে, তাই ভিসা স্যাংশনের ফলে যদি (বাংলাদেশিরা) আমেরিকাতে আসতে না পারে তাতে কিছু যায় আসে না।

শেখ হাসিনা বলেন, হঠাৎ কথাবার্তা নেই তারা বাংলাদেশের ওপর কী কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞা নিতে চাচ্ছে। আওয়ামী লীগই দেশের মানুষের মানবাধিকার ও ভোটের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করেছে। ভোটের অধিকার আদায় করার জন্য আওয়ামী লীগের কত মানুষ রক্ত দিয়েছে। অবাধ ‍সুষ্ঠু ভোট আয়োজন যত সংস্কার সব আ.লীগই করেছে। ছবিসহ ভোটার তালিকা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, মানুষকে ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা করার কাজ তারাই করেছে।

আমার ভোট আমিই দেব যাকে খুশি তাকে দেব এই শ্লোগান আমার দেওয়া। এখন মানুষ ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন। এমন পরিস্থিতিতে স্যাংশনে যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।-বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে তারা স্যাংশন দিচ্ছে আরও দিতে পারে এটা তাদের ইচ্ছা। কিন্তু আমার দেশের মানুষের যে অধিকার সব মৌলিক অধিকার আমরা নিশ্চিত করেছি। ২০০৯ সাল থেকে ২৩ সালের বাংলাদেশ কিন্তু বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। এখন বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ নেই, হাহাকার নেই।

সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের অফিস, আমেনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ দেশি বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো তার সরকারের আমলে গত ১৫ বছরে গুমের ঘটনার যে অভিযোগগুলো করেছে, সে ব্যাপারে তার সরকারের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। সাক্ষাৎকারে সদ্য পাস হওয়া সাইবার নিরাপত্তা আইনের যে ধারাগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তারও জবাব দেন তিনি।

৩৫ মিনিটের সাক্ষাৎকারে আগামী নির্বাচনের নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার জন্য বিরোধীদলগুলোর দাবিকে নাকচ করে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ ব্যবস্থায় ফেরত যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।


আরও খবর



ভুয়া দলিল তৈরি করলে ৭ বছরের জেল

প্রকাশিত:বুধবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | হালনাগাদ:সোমবার ০২ অক্টোবর 2০২3 |

Image

রোকসানা মনোয়ার : অন্যের জমি নিজের দখলে রাখা, ভুয়া বা মিথ্যা দলিল তৈরি এবং নিজ মালিকানার বাইরে অন্য কোনো জমির অংশবিশেষ উল্লেখ করে দলিল হস্তান্তরে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রেখে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার বিল-২০২৩। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কন্ঠভোটে পাস হয়। এছাড়া সর্বোচ্চ ৬০ বিঘা কৃষি ভূমির মালিকানার বিধান রেখে সংসদে আরো একটি বিল পাস হয়েছে।

বিলে বলা হয়, ভূমি হস্তান্তর, জরিপ ও রেকর্ড হালনাগাদে অন্যের জমি নিজের নামে প্রচার, তথ্য গোপন করে কোনো ভূমির সম্পূর্ণ বা অংশ বিশেষ কারো কাছে হস্তান্তর, ব্যক্তির পরিচয় গোপন করে জমি হস্তান্তর ও মিথ্যা বিবরণ সংবলিত কোনো দলিলে সই করলে তার সাজা হবে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। এছাড়া কোনো দলিল সম্পাদিত হওয়ার পর আইনানুগ কর্তৃত্ব ছাড়া প্রতারণামূলকভাবে দলিলের কোনো অংশ কাটা বা পরিবর্তন করলে তার সাজাও হবে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে কোনো মিথ্যা দলিল প্রস্তুত করার সাজাও একই হবে। প্রতারণামূলকভাবে কোনো ব্যক্তিকে কোনো দলিলে সই বা পরিবর্তনে বাধ্য করার ক্ষেত্রেও একই সাজা ভোগ করতে হবে।

বিলে বলা হয়, সর্বশেষ খতিয়ান মালিক বা তার উত্তরাধিকারসূত্রে বা হস্তান্তর বা দখলের উদ্দেশে আইনানুগভাবে সম্পাদিত দলিল বা আদালতের আদেশের মাধ্যমে কোনো মালিকানা বা দখলের অধিকারপ্রাপ্ত না হলে কোনো ব্যক্তি ওই ভূমি দখলে রাখতে পারবেন না। অবৈধ দখলের সাজা হবে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড।

বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির নামে স্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি অ্যাক্টের অধীনে প্রণীত বা হালনাগাদকৃত বলবৎ সর্বশেষ খতিয়ান না থাকলে এবং খতিয়ান ও হালনাগাদ ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হলে তিনি ওই জমি বিক্রি, দান বা হেবা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন বা দলিল নিবন্ধন করতে পারবেন না। কোনো ব্যক্তি জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া আবাদযোগ্য জমির উপরিস্তর কাটার সাজা সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড। নতুন আইনের আওতায় কোনো অপরাধ সংঘটনে সহায়তা ও প্ররোচনা দিলে মূল অপরাধীর সমান দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভূমির স্বত্ব সংরক্ষণ ও শান্তিপূর্ণ ভোগদখল বজায় রাখার লক্ষ্যে ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ এবং দ্রুত প্রতিকার নিশ্চিত করতে এই আইন করা হচ্ছে। নাগরিকরা নিজ নিজ মালিকানাধীন ভূমিতে নিরবচ্ছিন্ন ভোগদখল অধিকারসমূহ নিশ্চিত, ভূমি বিষয়ক প্রতারণা ও জালিয়াতির ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত ও প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি ও সর্বসাধারণের ব্যবহার প্রতিরোধ ও দমনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভূমি সংক্রান্ত কিছু অপরাধের দ্রুত প্রতিকারের ব্যবস্থা লক্ষ্যে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ভূমি থেকে বেআইনি দখল, স্থাপনা ব প্রতিবন্ধকতা বা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অবৈধভাবে ভরাটকৃত মাটি, বালু, ইত্যাদি অপসারণ করতে এবং ওই ভূমিকে এর আগের শ্রেণি বা প্রকৃতিতে পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা সন্নিবেশ করা হয়েছে।

ভূমি সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা দূর করা এবং যথাসময়ে জনগণের বিচার পাওয়া নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং মাঠ পর্যায়ের মতামত নেওয়াসহ অংশীজনের মতামত নিয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও পরিমার্জনক্রমে আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে বলেও বিলে উল্লেখ করা হয়েছে।

৬০ বিঘার বেশি কৃষিজমির মালিকানা নয় : ১৯৮৪ সালের ল্যান্ড রিফর্মস অর্ডিন্যান্স রহিত করে ভূমি সংস্কার বিল-২০২৩ সংসদে পাস হয়েছে। ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কন্ঠভোটে গৃহীত হয়। পাস হওয়া বিলে বলা হয়, ৬০ বিঘার বেশি কৃষি ভূমির মালিক বা তার পরিবার হস্তান্তর, উত্তরাধিকার, দান বা অন্য কোনো উপায়ে নতুন কোনো কৃষি ভূমি অর্জন করতে পারবে না। তবে সমবায় সমিতির মাধ্যমে চা, কফি ও রাবার বাগান, শিল্প প্রতিষ্ঠান বা কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম, রফতানমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আইনটি শিথিল থাকবে। এই আইনে বাস্তুভিটার অধিকার, বর্গাচুক্তি ও উৎপন্ন ফসলের ন্যায্য ভাগের কথাও বলা হয়েছে।


আরও খবর