Logo
শিরোনাম

নাশকতার দায় কার, কারা তৃতীয় পক্ষ ?

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৬ জুলাই ২০২৪ | হালনাগাদ:রবিবার ২০ এপ্রিল ২০25 |

Image

অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান, 

ইংরেজ আমল থেকে বাঙালি আন্দোলন করেছে, আন্দোলন দেখেছে, আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। একটি আন্দোলন তখনই সফল হয় যখন তার নেতৃত্ব সঠিক পথে অগ্রসর হয় এবং আন্দোলনের একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে। আমাদের ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্ন সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, এরশাদ আমলের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন তার উত্কৃষ্ট প্রমাণ। অতীতে লক্ষ করা গেছে আন্দোলন যদি সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়, তাহলে তা বেহাত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

আর এসব আন্দোলনের পেছনে এই দেশে শিক্ষার্থীদের ঐতিহাসিক ভূমিকা বিশ্ব স্বীকৃত। তবে শিক্ষার্থীদের সব আন্দোলনের পেছনে ছিল কোনো না কোনো রাজনৈতক দলের সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা।

অতীত সব আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে এই মাসের গোড়ার দিকে একটি ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়েছিল, যা সরকারি চাকরিতে বৈষম্যবিরোধী বা কোটাবিরোধী আন্দোলন নামে পরিচিতি লাভ করেছে। চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বিশ্বের সব দেশেই আছে।

সেটি অন্য প্রসঙ্গ। বালাদেশের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে যে কোটা পদ্ধতি সাংবিধানিকভাবে চালু আছে তার সংস্কার চায়। এটি একটি যৌক্তিক আন্দোলন। শুধু সরকার নয়, দেশের উচ্চ আদালত পর্যন্ত তা স্বীকার করেন।

২০১৮ সালেও এমন একটি আন্দোলন হয়েছিল। কিন্তু নেতৃত্বের নিজস্ব মতলবি স্বার্থের কারণে তা সফল হয়নি। তাদের সেই আন্দোলনে জনদুভোর্গ হচ্ছে দেখে প্রধানমন্ত্রী সব ধরনের সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা এক নির্বাহী আদেশে বাতিল করে দেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই আদেশের কারণে গত প্রায় সাত বছর দেশে সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা কার্যকর নেই।

শিক্ষার্থীরা নয়, নাশকতা করেছে তৃতীয় পক্ষপ্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ২০২১ সালে দেশের উচ্চ আদালতে এই আদেশের বিরুদ্ধে একটি রিট মামলা দায়ের করলে উচ্চ আদালত প্রধানমন্ত্রীর আদেশ বাতিল করে দেন।

এই আদেশের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষ দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে, যা চূড়ান্ত শুনানির জন্য আগস্টের ৭ তারিখ দিন ধার্য ছিল। এমন একটি পরিস্থিতি যখন বিদ্যমান, তখন দেখা গেল যে আবার সেই পুরনো আন্দোলন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ও বিভিন্ন সংগঠনের ছাত্ররা রাজপথে নেমেছে। তারা তখন হয়তো বুঝতে পারেনি একটি মামলা যখন দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকে সেখানে সরকার চাইলেও কিছু করতে পারে না। আইনের এই বিষয়টি সব সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ সুধীজন তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। বয়সের বা অজ্ঞতার কারণে হয়তো তারা এসব আইনের জটিল বিষয়গুলো বুঝতে পারেনি। সবাই কদিন একটু ধৈর্য ধরতে বলেছেন। যেখানে সরকার, আদালত তাদের পক্ষেদাবি পূরণ অনেকটা নিশ্চিত ছিল। তাদের বিচলিত হওয়ার কিছুই ছিল না।

উল্লিখিত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চেয়েছে এবং তারা তা করতে গিয়ে পরবর্তীকালে এই শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দেশে এক অভূতপূর্ব নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। দেশের মানুষ লক্ষ করেছে, আন্দোলনকারীরা প্রথম ১০-১২ দিন অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ছিল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীও ছিল সংযত। আন্দালনকারীদের কর্মসূচিতে হয়তো জনভোগান্তি হয়েছে, তবে মানুষ কিছুটা তিক্ততার সঙ্গে তা মেনে নিয়েছে। কিন্তু দেখা গেল যে একটি স্বার্থান্বেষী মহল আস্তে আস্তে তাদের সেই যৌক্তিক আন্দোলন ছিনতাই করতে তৎপর হয়ে ওঠে। এই মহলটি ১৫ বছর ধরে বর্তমান সরকারের পতন চাইছে। একটি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ঢুকে গেল ভয়াবহ সহিংসতা।

গর্বের মেট্রো রেলস্টেশনে চলল ভয়াবহ ভাঙচুর, পুলিশ বক্সে দেওয়া হলো আগুন। সবচেয়ে ভয়ংকর ছিল বাংলাদেশে টেলিভিশনের মূল ভবনে অগ্নিসংযোগ, আগুনে পুড়ে ছাই হলো গুরুত্বপূর্ণ সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, বিআরটিএ ভবন, আর দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ডাটা সেন্টার, যেখানে থেকে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে আর দেশের মানুষকে নানা গুরুত্বপূর্ণ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে সেবা দেয়, আর মানুষের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নেট যোগাযোগব্যবস্থা নিশ্চিত করে। এর ফলে বাংলাদেশ সারা বিশ্ব থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। সব বাদ দিলেও রাতারাতি বেকার হয়ে গেল প্রায় ১৫ লাখ ফ্রিল্যান্সার, যারা ঘরে বসে লাখ-কোটি ডলার আয় করে। হানিফ ফ্লাইওভার, ঢাকা বিমানবন্দরের এক্সপ্রেসওয়ে আর গর্বের পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় আগুন দেওয়া হলো। এসব অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডে পুড়ে ছাই হলো কয়েক শ সরকারি গাড়ি। সিটি করপোরেশনের আবর্জনার গাড়িও বাদ গেল না। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, এসব নাশকতার সঙ্গে প্রকৃত অর্থে আন্দোলনরত কোনো শিক্ষার্থী জড়িত ছিল তা বলা যাবে না। জড়িত ছিল পুরনো সেইসব মহল, যারা এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি আর গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।

চলমান পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী গত ১৭ জুলাই যেটি ছিল পবিত্র আশুরার রাত জাতির উদ্দেশে দেওয়া আট মিনিটের একটি ভাষণে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বলেন, তোমরা একটু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করো, আমরা চেষ্টা করছি কত দ্রুত বিষয়টা উচ্চ আদালতে সমাধান করা যায়। তিনি সবাইকে সংযম প্রদর্শন করারও আহ্বান জানান। কিন্তু এরই মধ্যে যে স্বার্থান্বেষী মহল এই আন্দোলনকে ছিনতাই করার জন্য ওত পেতে ছিল তারা কিন্তু অনেক দূর এগিয়ে গেছে। যেকোনো আন্দোলন করতে অর্থের প্রয়োজন হয়। অনেকের প্রশ্ন, কোথা থেকে এলো সেই অর্থ? জবাব সোজা বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেশে-বিদেশে অর্থ জোগানদাতার অভাব নেই। আর যখন সরকারে আওয়ামী লীগ থাকে, তখন সেই জোগানদাতার সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পায়। এই অর্থ জোগানদাতারা বলেই দিয়েছে এবার এই আন্দোলনকারীদের পিঠে চড়ে তারা ক্ষমতায় যাবে। পুরো পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলে সরকার ও সরকারি দলের কিছু ব্যক্তির অপরিণামদর্শী বক্তব্য, বিবৃতি ও বালখিল্য আচরণ। ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা যে কত নাজুক, এবার তা পরিষ্কার হয়ে গেল।

পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে যদি শুরু থেকে কয়েকজন দায়িত্ববান ব্যক্তিকে দিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করা যেত, তাহলে পরিস্থিতি এতদূর গড়াত না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরবর্তীকালে সারা দেশে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা কারো কাম্য ছিল না। আমি নিজেও খুব ক্ষুব্ধ এবং এই যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর গুলিতে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে তা যেকোনো মানুষকেই বিচলিত করবে। নিহতদের মধ্যে যেমন ছিল সাধারণ শিক্ষার্থী তেমন ছিল ছাত্রলীগের কর্মীরা। একই সঙ্গে এই সংঘাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কমপক্ষে চারজন সদস্য প্রাণ হারিয়েছে আর আহত হয়েছে সহস্রাধিক। যৌক্তিক দাবিতে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন শুরু করেছিল, তা এত দ্রুত তাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে তা হয়তো তারাও চিন্তা করতে পারেনি।

সব শেষে প্রধানমন্ত্রী পুরো বিষয়টার সম্ভাব্য পরিণতি ও গুরুত্ব উপলব্ধি করে আমাদের আইনমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীকে দায়িত্ব দেন আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে। এরই মধ্যে আন্দোলনকারীরাও ঘোষণা করেছিল আন্দোলনের পাশাপাশি তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় রাজি। আন্দোলন ও আলোচনা দুটিই একসঙ্গে হতেই পারে। তাদের মতামত জানতে চাওয়া হবে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী অনেকটা নজিরবিহীনভাবে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ৭ আগস্টের পরিবর্তে ২১ জুলাই মামলাটি নিষ্পত্তি করার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করতে।

একটি কথা অনেকের ভালো নাও লাগতে পারে, দেখা যায় আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে তখন ঘরে ঘরে রাতারাতি আওয়ামী লীগ তৈরি হয়। আর দেশে বা দলে কোনো সংকট দেখা দিলে তাদের প্রায় কাউকেই পাওয়া যায় না। দেখা যায় না। ক্ষমতায় থাকলে শেখ হসিনার চারপাশে তাঁবেদার গিজগিজ করে। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর চারপাশে তৈরি করেন এক অদৃশ্য দেয়াল। তাঁকে দেশের ও মানুষের মনের বাস্তব চিত্রটা বুঝতে দেওয়া হয় না। তা না হলে প্রধান নির্বাহী দেশে বিরাজমান পরিস্থিতি সহজে বুঝতে পারতেন। আজকে যে সমস্যাটি দেশে এত মানুষের প্রাণ ঝরাল, এত রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি হলো তা বন্ধ করার একটি যৌক্তিক পদক্ষেপ যদি ১০ দিন আগে নেওয়ার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর কাছের মানুষরা দিতেন, তাহলে বর্তমান সংকট এড়ানো সম্ভব ছিল।  

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৯ জুলাই রাতে সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়। এটি করা না হলে হয়তো দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের পরবর্তী টার্গেট হতে পারত আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনা, যেমন হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, পদ্মা সেতু বা কর্ণফুলী টানেল। একটি জিনিস লক্ষণীয়, যেসব রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলা চালনো হয়েছে তার প্রতিটিই বর্তমান সরকারের উন্নয়নের স্মারক এবং তা এ দেশের জনগণের অর্থে নির্মিত।

গত রবিবার নির্ধারিত দিনের ১৭ দিন আগে দেশের সর্বোচ্চ আদালত এ বিষয়ে চূড়ান্ত রায় দিয়ে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ চাকরি দেওয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশ দেন। বাকি ৭ শতাংশের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা আর বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য আর ৩ শতাংশ নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী আর ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য সংরক্ষিত রাখার নির্দেশ দিয়ে এই মর্মে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। যেহেতু মুক্তিযোদ্ধা বা বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের বর্তমানে চাকরি করার বয়স আর তেমনটা নেই, সুতরাং তাদের জন্য সংরক্ষিত ৫ শতাংশও মেধায় যোগ হয়ে তা ৯৮ শতাংশ হয়ে যাবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী সরকার এক দিন পরই প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে, যদি কোনো প্রার্থী পাওয়া না যায়, তা হলে তা সাধারণ মেধা কোটা থেকে পূরণ করা হবে। এটি একটি অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত। যেখানে ইউরোপে নারীদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি চাকরিতে প্রায় ৪০ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত আছে, সেখানে এই মুহূর্তে তা শূন্য। আন্দোলনরত নারী শিক্ষার্থীরা মনে করেন তাঁরা এখন ছেলেদের সমান মেধাবী। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের দাবির প্রায় পুরোটাই মেনে নেওয়া হয়ছে। দেশের মানুষ আশা করে এরপর দেশে শান্তি ও স্বস্তি ফিরে আসবে।

শিক্ষার্থীদের লক্ষ রাখতে হবে গত কয়েক দিনের সব ধরনের নাশকতার জন্য তাদের কেউ দায়ী করছে না। দায়ী করছে ওই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে, যারা ১৫ বছর ধরে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ চেয়ে কোনো এক তৃতীয় পক্ষের কাঁধে চড়ে ক্ষমতায় যেতে চায়। এরা দেশদ্রোহী ছাড়া আর কিছুই নয়। এরই মধ্যে তাদের অনেককে আটক করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এগুলো এখন জনসম্মুখে আসা প্রয়োজন। এই দেশকে কারা স্বাধীন দেশ হিসেবে দেখতে চায় না, মানুষ তাদের চেহারা দেখতে চায়।  

শিক্ষার্থীদের আবারও অনুরোধ করি, তারা যেন কারো পাতা ফাঁদে পা না দেন। লক্ষ্য যৌক্তিক ছিল বলে বিজয় তাঁদেরই হয়েছে। শেষে বলতে চাই, যাঁরা এ কদিনের সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন সবাই আমাদের সন্তানতুল্য। তাঁদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি, আর যাঁরা আহত হয়েছেন তাঁদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। ঘটনা তদন্তে সরকার এরই মধ্যে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দ্রুত এই কমিটি একটি বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বলে মানুষ আশা করে। যেসব তথাকথিত ছাত্রসংগঠনের নামধারীরা এই আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিল বা পেছন থেকে ইন্ধন জুগিয়েছে তাদের বলি, একটি প্রজন্মকে নষ্ট করার অধিকার তাদের নেই। সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক। শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিলে ফিরে যাক। মনে রাখতে হবে, এই দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রায় ৪৮ লাখ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে আর সরকারি চাকরিতে সর্বসাকল্যে ১৫ লাখ মানুষ চাকরি করে। বছরে সাত থেকে আট হাজার মানুষ সব পর্যায়ের সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করে। তরুণদের যদি সঠিক মেধা আর প্রশিক্ষণ থাকে, তাহলে তামাম দুনিয়াটা তাদের কর্মক্ষেত্র।

লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক 


আরও খবর

প্রিয় বন্ধু হবেন যেভাবে

মঙ্গলবার ১৫ এপ্রিল ২০২৫




ঈদকে সামনে রেখে কর্মব্যস্ত তাঁত পল্লি

প্রকাশিত:শুক্রবার ২১ মার্চ ২০২৫ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫ |

Image

ঈদকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জের তাঁত পল্লি গুলো কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছে। বর্তমান বাজার ভালো থাকায় দীর্ঘ দিনের নানা সমস্যা কাটিয়ে লাভের আশা করছেন তাঁত মালিকরা। গত বছরের তুলনায় এবছর চাহিদা অনেক বেশি বলে জানান তাঁত মালিকেরা ।

তাঁত সমৃদ্ধ জেলা হিসেবে পরিচিত সিরাজগঞ্জ। সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, এনায়েতপুর, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া ও চৌহালী উপজেলায় পাওয়ার লুম ও হ্যান্ডলুম রয়েছে অন্তত ৫ লাখ তাঁত রয়েছে । তাছাড়াও উল্লেখিত এলাকায় প্রায় ১৫ হাজার তাঁত কারখানা রয়েছে । এতে প্রায় ২৩-২৪ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। তারা শাড়ি, লুঙ্গি, ধুতি, গামছা, থ্রিপিস তৈরি করছে । তবে, ৯০ শতাংশ তাঁতে মূলত তৈরি হয় শাড়ি ও লুঙ্গি । আসন্ন ঈদ উপলক্ষ্যে ব্যাপক চাহিদা থাকায় সব কারখানায় দিন- রাত ব্যস্ততা বেড়েছে। এখানে তৈরি হয় আন্তর্জাতিক মানের জামদানী, কাতান, সিল্ক, বেনারশি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস, গামছা ও থান কাপড়। এখানকার উৎপাদিত কাপড় সমূহের কদর রয়েছে দেশ জুড়ে।

জেলার অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির অন্যতম এ শিল্পটির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছে অন্তত ৫ লাখ মানুষ। বছরে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার তাঁত পন্য উৎপাদিত হয় প্রায় ৭০ কোটি মিটার কাপড়। এ কারণে জেলার ব্র্যান্ডিং ঘোষণা করা হয় তাঁতশিল্পকে। নাম দেয়া হয় তাঁতকুঞ্জ সিরাজগঞ্জ।

দিনের আলো ফোটার সাথে সাথেই তাঁতের খট খট শব্দে মুখরিত থাকতো সিরাজগঞ্জের তাঁত পল্লীগুলো। কালের আবর্তে এবং আধুনিকতার ছোয়া লেগেছে তাঁত কারখানাগুলোতে। উৎপাদন বাড়াতে প্রতিটি কারখানায় যন্ত্র চালিত পাওয়ার লুম দিয়ে শাড়ী, লুঙ্গি আর গামছা তৈরি করা হয়। তাঁত শ্রমিক হামিদ, শহিদুল, আলামিন, মিতু বেগম, জাহানারা জানান, ঈদকে সামনে রেখে এখন এখানকার তাঁত মালিকরা পুরোদমে কারখানা চালু করেছে । ফলে আমাদের ব্যস্ততা বেড়েছে । এখন প্রতিদিনই কাজ হচ্ছে । এখন তাঁত চালু হওয়ায় আমাদের অভাব অনেকটাই দুর হয়েছে।

তাঁত শ্রমিক শফিকুল জানান, প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করছি। ফলে সাপ্তাহে ৫ হাজার টাকার বেশি মজুরি পাই। এতে পরিবারের সবার চাহিদা মিটিয়ে সকলকে নিয়ে এবার সুন্দরভাবে ঈদ করতে পারব।

কাপড় ব্যবসায়ী শহীদ সরকার জানান, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কাপড়ের এনায়েতপুর ও সোহাগপুর হাটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকারি ক্রেতা-বিক্রেতারা এখান থেকে কাপড় পাইকারি কিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিয়ে বিক্রি করেন।

বেলকুচি উপজেলার শফিকুল ইসলাম শফি, খুকনীর ফিরোজ উইভিং ফ্যাক্টরির মালিক ফিরোজ হাসান অনিক আলামিন, আব্দুল আজিজ বাবু সহ একাধিক তাঁত মালিক বলেন, বর্তমান বাজার ভালো থাকায় দীর্ঘ দিনের নানা সমস্যা কাটিয়ে লাভের আশা করছি। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে ব্যবসা ভালো হবে বলে মনে করেন তাঁত মালিকরা।

খামার গ্রামের সফল জাতীয় কারুশিল্পী পদকপ্রাপ্ত তাঁতি আফজাল হোসেন লাভলু বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে এবার ভারতে শতকোটি টাকার সুতি শাড়ি ইতিমধ্যেই রপ্তানি হয়েছে। আমিও কয়েক কোটি টাকা মূল্যের শাড়ি রপ্তানি করেছি।

বেলকুচি পাওয়ারলুম এসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ এম.এ বাকী বলেন, সমগ্র বাংলাদেশের মধ্যে তাঁত বস্ত্রের মোট উৎপাদনে ৭০-৭৫ ভাগ সিরাজগঞ্জ জেলাতে উৎপাদিত হয়। যার মূল্য কয়েকশো কোটি টাকা। মালিকেরা সিরাজগঞ্জে উৎপাদিত কাপড়ের সুনাম ধরে রাখার চেষ্টা করছে। তিনি আরও বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোশকতা, তাঁত মালিকদের নানা সমস্যা দূরিকরণে সরকারি সহয়োগিতা একান্ত প্রয়োজন। তাছাড়াও সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্প রক্ষায় বাইরের দেশ থেকে অবৈধভাবে শাড়ি আসা বন্ধ এবং রং-সুতা সহজলভ্য করতে না পারলে এই তাঁত শিল্প উন্নয়নে হোচট খাবার কথাও জানান তিনি।

বাংলাদেশ তাঁতবোর্ড সিরাজগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত লিয়াজো অফিসার ইমরানুল হক বলেন, কোন কুচক্রি মহল যেন সুতা ও রংগের দাম বাড়াতে না পাড়ে সেজন্য সরকারি হত্যক্ষেপ কামনা করেন। তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্র তাঁতশিল্প রক্ষায় ৫% হারে ঋণসহ বাহারি ডিজাউনের শাড়ী তৈরীর জন্য তাঁতীদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ জাতীয় তাঁতি সমিতির সভাপতি আলহাজ আব্দুস ছামাদ খান জানান, ঈদকে সামনে রেখে সিরাজগঞ্জসহ দেশের তাঁতশিল্পে শ্রমিক ও মালিকদের ব্যস্ততা বেড়েছে। বিশেষ করে তাঁতকুঞ্জ সিরাজগঞ্জে উৎপাদিত শাড়ির সুনাম দেশজুড়ে রয়েছে। তবে এই শিল্পের প্রসার ও ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে সমিতির পক্ষ থেকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগ নেয়া হবে।


আরও খবর



যে ভুলে কমছে না পেটের চর্বি

প্রকাশিত:বুধবার ০৯ এপ্রিল ২০২৫ | হালনাগাদ:শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫ |

Image

শরীরের ওজন মাত্রাতিরিক্ত হয়ে গেলে, বিশেষ করে পেটে চর্বি জমলে তা হৃদরোগ ও টাইপ টু ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক জটিলতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।  
এ বিষয়টি অনেকেরই জানা।

তারপরেও অনেকেরই পেটে জমে যায় মাত্রাতিরিক্ত চর্বি। এটি কমানোর জন্য অনেকেই ব্যায়াম থেকে শুরু করে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে আনা পর্যন্ত অনেক ধরনের কাজই করেও কোনো সুফল পাননি। এর কারণ হিসেবে থাকতে পারে ভুল ডায়েটিং কিংবা ভুল শারীরিক অনুশীলনের মতো বিষয়। আজকের লেখায় থাকছে তেমনই কয়েকটি বিষয়, যা আপনার পেটের চর্বি কমানোর চেষ্টা ভণ্ডুল করে দেয়।

* বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার দেহের নানা মাপকাঠি পরিবর্তিত হয় এবং এতে ওজনও বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে পুরুষ বা নারী, উভয়েরই দেহের ওজন বাড়তে পারে।

* মধ্যবয়সী নারীদের মেনোপজের জন্য পেটে বাড়তি চর্বি হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। তবে ভালো খবর হলো, চিকিৎসকের সহায়তায় এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যায়।

* অনেকেই বড় কোনো ব্যায়াম প্রোগ্রামের একাংশের ব্যায়াম করে থাকেন। কিন্তু আপনি যদি শুধু হৃৎপিণ্ডের জন্য ব্যায়াম করেন তাহলে তা পেটের চর্বি কমাতে ভূমিকা রাখবে না। এজন্য সঠিক ব্যায়াম করতে হবে। পেটের চর্বি কমানোর জন্য প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ২৫০ মিনিট মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম বা ১২৫ মিনিট উচ্চমাত্রার নির্দিষ্ট ব্যায়াম করা যেতে পারে।

* আপনার কি অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে? ক্র্যাকার্স, চিপস, পরিশোধিত চিনি, কোমল পানীয়, মিষ্টি খাবার ইত্যাদি আপনার পেটের চর্বি বাড়িয়ে দেয়। এর বদলে প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাওয়া খাবার যেমন ফলমূল, সবজি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ অন্যান্য খাবার আপনার পেটে চর্বি জমা থেকে রক্ষা করবে।

* মানবদেহ সব ধরনের চর্বিতে একই আচরণ করে না। গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চমাত্রায় দ্রবীভূত চর্বি (মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্যের চর্বি) গ্রহণ পেটের চর্বি বাড়িয়ে দিতে পারে। অন্যদিকে কিছু উদ্ভিদ, মাছ, সূর্যমুখী তেল ও অলিভ অয়েলে থাকা অদ্রবীভূত চর্বি ক্ষতিকর নয়। বরং সঠিকভাবে খেলে পেটের চর্বি নিয়ন্ত্রণেও এগুলো ভূমিকা রাখে। অবশ্য মাত্রাতিরিক্ত যেকোনো খাবার খাওয়াই ক্ষতিকর হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

* পেটের চর্বি কমানোর জন্য অনেকেই অল্পমাত্রায় শারীরিক অনুশীলন করেন। কিন্তু কিছুদিন অনুশীলনের পর কোনো উপকার পান না। এর কারণ হতে পারে অপর্যাপ্ত অনুশীলন। তাই শারীরিক অনুশীলনের মাধ্যমে পেটের চর্বি কমানোর জন্য যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হবে। অন্যথায় কোনো পরিবর্তন নাও হতে পারে।

* আপনার পেটের চর্বি কমানোর সামান্য লক্ষণ দেখা গেলেই কি অনুশীলন বাদ দেন? ব্যায়াম পুরোপুরি সফল হওয়ার আগেই যদি আপনি অনুশীলন ছেড়ে দেন তাহলে এর ফলাফল ধরে রাখা সম্ভব হবে না। এ ছাড়া রয়েছে শুধু পেটের অনুশীলনের মতো কাজ করা। এক্ষেত্রে সারা দেহের জন্য সুষম অনুশীলন করা হতে পারে সঠিক উপায়।

* আপনার যদি কর্মক্ষেত্র, শিক্ষা, সন্তান ইত্যাদি নিয়ে অতিরিক্ত চাপের মাঝে থাকতে হয় তাহলে তা পেটের চর্বি বাড়াতে ভূমিকা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে অন্যান্য উপায় প্রয়োগ করার আগে মানসিক চাপ কমানোর চেষ্টা করুন।

* আপনার যদি পর্যাপ্ত ঘুম না হয় তাহলে তা দেহের ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। এর অন্যতম রূপ হতে পারে পেটের চর্বি বৃদ্ধি। এজন্য ব্যক্তিভেদে প্রতি রাতে সাত থেকে ৯ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমানোর প্রয়োজন হয়।

* অনেকের দেহের মাঝখানের অংশ বিশেষ করে পেট, থাই, উরু ইত্যাদি গঠনগত কারণেই মোটা থাকে। জেনেটিক কারণেই এমনটা হতে পারে। এ ধরনের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে পেটের চর্বি কমানো কঠিন; তবে অসম্ভব নয়। এজন্য বাড়তি পরিশ্রম করতে হয়।

* টেস্টোস্টেরোনের মাত্রার ওপর দেহের অনেক বিষয় নির্ভর করে। এ হরমোনটি দেহে উচ্চমাত্রায় থাকলে তা ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওজন কমানোর চেষ্টা করতে হবে।

* পেটের চর্বি কমানোর ক্ষেত্রে উৎসাহের সঙ্গে অনুশীলন করার কোনো বিকল্প নেই। আপনি যদি পেটের চর্বি কমাতে চান আবার সব উপায়গুলো ঠিকঠাক মেনে না চলেন তাহলে তা কোনো উপকারে আসবে না।


আরও খবর

স্নিগ্ধ সাজে নতুন বছরকে বরণ

বুধবার ০৯ এপ্রিল ২০২৫




যুক্তরাষ্ট্রের ওপর ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করল চীন

প্রকাশিত:বুধবার ০৯ এপ্রিল ২০২৫ | হালনাগাদ:শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫ |

Image

চীনের পণ্যের উপর ১০৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যা কার্যকর হয়েছে বুধবার (৯ এপ্রিল)। এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর শুল্কহার বাড়িয়েছে চীন। এবার মার্কিন পণ্যে ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে দেশটি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) থেকে এই শুল্ক কার্যকর হবে। জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে বিবিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা সমস্ত পণ্যের উপর ৮৪ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করেছে।

ট্রাম্পের নতুন শুল্ক কার্যকরের পর ইউরোপীয় শেয়ারবাজারগুলো নিম্নমুখী ছিল, এখন মার্কিন আমদানিতে চীনের ৮৪ শতাংশ শুল্ক ঘোষণার পরে তা আরও হ্রাস পেয়েছে। ইউকে তালিকাভুক্ত বৃহত্তম সংস্থাগুলোর এফটিএসই ১০০ সূচক আজ পর্যন্ত ৩ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। এছাড়া জার্মান, ফ্রান্সের সুচকও নেমে গেছে।

এর আগে, ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২ এপ্রিল ‘মুক্তির দিন’ হিসাবে আখ্যা দিয়ে চীনের পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব বাণিজ্যিক অংশীদারের ওপর আরোপিত ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্কের অংশ হিসাবেই চীনের ওপর-ও তখন ওই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু এর আগে গত মার্চেও চীনা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল।

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে ৩৪ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করে চীন। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ আরও তীব্র হয়ে ওঠে। চীনের এমন শুল্ক আরোপে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ট্রাম্প।

চীনের এই পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। তিনি ঘোষণা করেন, যদি চীন ৮ এপ্রিলের মধ্যে মার্কিন পণ্যের ওপর থেকে ৩৪ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহার না করে, তবে ৯ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যের ওপর আরও অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে।

অবশেষে, চীনের কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার ফলে ট্রাম্প ৯ এপ্রিল থেকে ১০৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক পোস্টে এই পদক্ষেপের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন এবং চীনকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় শোষক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন অনেক লাভবান হচ্ছে, যা আগে চীনসহ অন্যান্য দেশগুলো থেকে শোষণ করা হতো। তেল, সুদের হার ও খাদ্যের দাম কমার পাশাপাশি কোনো ধরনের মূল্যস্ফীতি না থাকার বিষয়টিও ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন।

এবার চীনের পাল্টা শুল্ক আরোপ বাণিজ্যযুদ্ধকে আরও গভীর করে তুলতে পারে। এই লড়াই দুটি দেশের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, কারণ দুটি দেশই একে অপরের প্রধান বাণিজ্যিক সঙ্গী।


আরও খবর



ক্যানসারে আক্রান্ত উপস্থাপিকা-অভিনেত্রী সামিয়া

প্রকাশিত:সোমবার ২৪ মার্চ ২০২৫ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৮ এপ্রিল ২০২৫ |

Image

আড়াই বছর ধরে এই মরণব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছেন টিভি উপস্থাপক-অভিনেত্রী সামিয়া আফরিন।সম্প্রতি রাজধানীর বনানীতে তারকাদের পোশাক নিয়ে ‘রিভোগ ওয়্যার টু কেয়ার’ নামে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়, যেখান থেকে প্রাপ্ত পোশাক বিক্রির টাকা ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসায় ব্যয় হবে। গতকাল ২২ মার্চ উজ্জ্বলা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এই প্রদর্শনী শেষ হয়েছে।

এই আয়োজনে উজ্জ্বলা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক সামিয়া আফরিন বলেন, ‘আমার ক্যানসার ধরা পড়ে ২০২২-এর ঠিক এপ্রিলে। তখন কোভিড থেকে সবেমাত্র লকডাউন উঠছে এবং কিছু কিছু দেশ খুলছে (ভ্রমণ অনুমতি)। ওই সময় স্টেজ ৪-এ ছিল আমার ক্যানসার। এটা খুবই ভীতিকর ব্যাপার হয়ে গিয়েছিল আমার পরিবারের লোকজনের জন্য। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে যে, এটা একটা অসুখ; এ জন্য আমাকে লড়াই করতে হবে অথবা নিরাময়ের উপায় খুঁজে বের করতে হবে। ভয় না পেয়ে কীভাবে নিরাময় হতে পারে, আমি সেসব খুঁজে বের করি।

যোগ করে তিনি বলেন, ‘তখন মানসিকভাবে ভেঙে না পড়ে, বরং আমি আমার পরিবারের জন্য সহায়ক হয়েছিলাম। কারণ, কারও কাছ থেকে সহানুভূতিশীল কোনো কথা বা সেই দৃষ্টিতে দেখতে চাইনি। আমি সবসময় দৃঢ়চেতা হতে চেয়েছিলাম। তাতে হয় কী, এটা একজন রোগীকে আরও বেশি শক্তি জোগায় তাড়াতাড়ি সেরে ওঠার জন্য।’

ক্যানসারে আক্রান্ত হলে রোগীর মনোবল ভেঙে পড়ার যে পরিস্থিতি তৈরি হয়, সেই বিষয়ে সামিয়ার ভাষ্য, ‘আমরা হয় কী, মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। মনে হয়—আমার জীবন শেষ হয়ে গেল, এরপর আর বুঝি কিছু নেই। এটা নিছক ভুল কথা। যদি আমরা চেষ্টা করি, মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারি এবং সাথে সাথে অনেক লাইফ স্টাইলেও পরিবর্তন আনতে হয়, তাহলে এটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব, যদিও তা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। লাইফ স্টাইল যদি ঠিক থাকে, তাহলে পরবর্তীতে এটা আর হওয়ার সুযোগ থাকে না বলে আমার মনে হয়।

বর্তমান নিজের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা জানিয়ে সামিয়া বলেন, ‘প্রতি ঘরে-ঘরেই দেখা যায় এক-দুজন ক্যানসারের রোগী আছেন, আমি নিজেও একজন ক্যানসারের রোগী। প্রায় আড়াই বছর ধরে আমি এটার সঙ্গে লড়াই করছি। আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি।

এই প্রদর্শনীর উদ্যোগ মূলত ক্যানসার রোগীদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের ব্যয়বহুল চিকিৎসায় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। সামিয়া বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে, এটা ব্যয়বহুল চিকিৎসা পদ্ধতি এবং সবার পক্ষে ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব না—এমনটা শোনার সাথে সাথে সবার ভেতর যে ভয় বা ভীতি কাজ করতে থাকে, সেই জায়গা থেকে একটা মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার জন্য তার যদি আর্থিক সামর্থ্য থাকে, তবে সে মানসিকভাবে একটু পরিত্রাণ পায়।

তিনি বলেন, ‘সবারই ইচ্ছে থাকে কিছু করার, সহায়তা দেওয়ার, কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে এতটা সুযোগ হয় না। আমাদের যেহেতু কিছু জিনিস আছে, যেগুলো পরিধেয় পোশাক; টেলিভিশন-মিডিয়ায় কাজ করার সুবাদে আমাদের অনেক কাপড় পরতে হয়েছে এবং সেগুলো পুনরায় আর পরা হয়নি, তাই মনে হয়েছে এই কাপড়গুলো বিক্রি করে যে টাকা আসবে, সেটা আমরা ক্যানসার আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যয় করব। এই ভাবনা থেকে বন্ধুদের জানালাম, সবাই সহমত প্রকাশ করেছে এবং একাত্মতা ঘোষণা করে তারাও এসেছে, সবাইকে সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি এই প্রদর্শনী এক ধরনের সচেতনতা তৈরি করাও যে, আমরা আমাদের জায়গা থেকে কতটুকু সহায়তা করতে পারি, দেখা যায় এক-দুই হাজার টাকা করে একসঙ্গে একটা বড় অ্যামাউন্ট হয়ে যায়।

প্রসঙ্গত, একসময় টিভি উপস্থাপনার নিয়মিত মুখ ছিলেন উপস্থাপিকা সামিয়া আফরিন। মাঝেমধ্যে তাকে নাটকেও দেখা গেছে। ইমরাউল রাফাতের ‘পাপপূণ্য’, মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের ‘ধুলোর মানুষ’, ‘মানুষের ঘ্রাণ’ এবং রাজিবুল ইসলামের ‘ব্লাফমাস্টার’ ছাড়াও বেশ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছেন তিনি।


আরও খবর



রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তুতি নিক, নির্বাচন হবে : তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ

প্রকাশিত:বুধবার ০২ এপ্রিল 2০২5 | হালনাগাদ:রবিবার ২০ এপ্রিল ২০25 |

Image

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :

অন্তর্র্বতী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস বলেছেন আগামি ডিসেম্বর থেকে জুন ২০২৬ এর মধ্যে নির্বাচন দেবেন। এটি হচ্ছে সংস্কার কতটুকু হবে, কিভাবে হবে তার ওপর নির্ভর করবে৷ এর ভেতরেই নির্বাচন আমরা সীমিত রাখি। এর বেশি উচ্চাশা সরকারের ভিতর থেকেও নেই। আর এটা নিয়ে ধোঁয়াশারও কিছুও নেই, যে কবে নির্বাচন হবে? নির্বাচন দিবে কি, দেবে না? অবশ্যই নির্বাচন হবে। ডিসেম্বর অথবা জুন দুইটা টাইমলাইন আছে, এই টাইমলাইনের ভেতরেই হয়ে যাবে। এ কথার বাহিরে সরকার হয়তো যাবে না। রাজনৈতিক দলগুলো প্রস্তুতি নিক, নির্বাচন হবে।



বুধবার (২ এপ্রিল) দুপুরে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার ইছাপুর ইউনিয়নের নারায়ণপুর গ্রামের পূর্ব নারায়ণপুর ইসলামীয়া জুনিয়র দাখিল মাদ্রাসা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে তিনি বাড়িতে পৌঁছে মা-বাবাসহ স্বজনদের সঙ্গে দেখা করার পর তার দাদা-দাদির কবর জিয়ারত করেন।



মাহফুজ আলম বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে সরকার মনে করছে যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া, আর দেশী-বিদেশী যারা আমাদের সহযোগী ও স্টোকহোল্ডার রয়েছে তাদের পরামর্শ ছাড়া সরকার একা এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। জনগণ বারবার বলছে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে। আমরা মনে করছি সরকার সবার সঙ্গে পরামর্শ-পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেবে।



এসময় মাহফুজ আলমের বাবা ও ইছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুর রহমান বাচ্চু মোল্লা, জাতীয় নাগরিক কমিটির (এনসিপি) সংগঠক হামজা মাহবুব, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লক্ষ্মীপুর জেলা কমিটির আহবায়ক আরমান হোসেন, মুখপাত্র বায়েজীদ হোসেন ও মুখ্য সংগঠক সাইফুল ইসলাম মুরাদ প্রমুখ। 


আরও খবর