
অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান,
ইংরেজ আমল থেকে বাঙালি আন্দোলন করেছে,
আন্দোলন দেখেছে, আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। একটি আন্দোলন তখনই সফল হয় যখন তার নেতৃত্ব
সঠিক পথে অগ্রসর হয় এবং আন্দোলনের একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে। আমাদের ভাষা আন্দোলন,
চুয়ান্ন সালের যুক্তফ্রন্টের নির্বাচন, আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-আন্দোলন,
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, এরশাদ আমলের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন তার উত্কৃষ্ট প্রমাণ।
অতীতে লক্ষ করা গেছে আন্দোলন যদি সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়, তাহলে তা বেহাত হয়ে যাওয়ার
আশঙ্কা থাকে।
আর এসব আন্দোলনের পেছনে এই দেশে শিক্ষার্থীদের
ঐতিহাসিক ভূমিকা বিশ্ব স্বীকৃত। তবে শিক্ষার্থীদের সব আন্দোলনের পেছনে ছিল কোনো না
কোনো রাজনৈতক দলের সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা।
অতীত সব আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে
এই মাসের গোড়ার দিকে একটি ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়েছিল, যা সরকারি চাকরিতে বৈষম্যবিরোধী
বা কোটাবিরোধী আন্দোলন নামে পরিচিতি লাভ করেছে। চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বিশ্বের সব দেশেই
আছে।
সেটি অন্য প্রসঙ্গ। বালাদেশের শিক্ষার্থীরা
বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে যে কোটা পদ্ধতি সাংবিধানিকভাবে চালু আছে তার সংস্কার
চায়। এটি একটি যৌক্তিক আন্দোলন। শুধু সরকার নয়, দেশের উচ্চ আদালত পর্যন্ত তা স্বীকার
করেন।
২০১৮ সালেও এমন একটি আন্দোলন হয়েছিল। কিন্তু
নেতৃত্বের নিজস্ব মতলবি স্বার্থের কারণে তা সফল হয়নি। তাদের সেই আন্দোলনে জনদুভোর্গ
হচ্ছে দেখে প্রধানমন্ত্রী সব ধরনের সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা এক নির্বাহী আদেশে বাতিল
করে দেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই আদেশের কারণে গত প্রায় সাত বছর দেশে সরকারি চাকরিতে কোনো
কোটা কার্যকর নেই।
শিক্ষার্থীরা নয়, নাশকতা করেছে তৃতীয় পক্ষপ্রধানমন্ত্রীর
সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ২০২১ সালে দেশের উচ্চ আদালতে এই আদেশের
বিরুদ্ধে একটি রিট মামলা দায়ের করলে উচ্চ আদালত প্রধানমন্ত্রীর আদেশ বাতিল করে দেন।
এই আদেশের বিরুদ্ধে সরকারপক্ষ দেশের সর্বোচ্চ
আদালতে আপিল করে, যা চূড়ান্ত শুনানির জন্য আগস্টের ৭ তারিখ দিন ধার্য ছিল। এমন একটি
পরিস্থিতি যখন বিদ্যমান, তখন দেখা গেল যে আবার সেই পুরনো আন্দোলন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের
সাধারণ ও বিভিন্ন সংগঠনের ছাত্ররা রাজপথে নেমেছে। তারা তখন হয়তো বুঝতে পারেনি একটি
মামলা যখন দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন থাকে সেখানে সরকার চাইলেও কিছু করতে পারে
না। আইনের এই বিষয়টি সব সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞ সুধীজন তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। বয়সের
বা অজ্ঞতার কারণে হয়তো তারা এসব আইনের জটিল বিষয়গুলো বুঝতে পারেনি। সবাই কদিন একটু
ধৈর্য ধরতে বলেছেন। যেখানে সরকার, আদালত তাদের পক্ষে—দাবি পূরণ অনেকটা
নিশ্চিত ছিল। তাদের বিচলিত হওয়ার কিছুই ছিল না।
উল্লিখিত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন মহল ঘোলা
পানিতে মাছ শিকার করতে চেয়েছে এবং তারা তা করতে গিয়ে পরবর্তীকালে এই শিক্ষার্থীদের
ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে দেশে এক অভূতপূর্ব নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। দেশের মানুষ লক্ষ
করেছে, আন্দোলনকারীরা প্রথম ১০-১২ দিন অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ছিল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীও
ছিল সংযত। আন্দালনকারীদের কর্মসূচিতে হয়তো জনভোগান্তি হয়েছে, তবে মানুষ কিছুটা তিক্ততার
সঙ্গে তা মেনে নিয়েছে। কিন্তু দেখা গেল যে একটি স্বার্থান্বেষী মহল আস্তে আস্তে তাদের
সেই যৌক্তিক আন্দোলন ছিনতাই করতে তৎপর হয়ে ওঠে। এই মহলটি ১৫ বছর ধরে বর্তমান সরকারের
পতন চাইছে। একটি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ঢুকে গেল ভয়াবহ সহিংসতা।
গর্বের মেট্রো রেলস্টেশনে চলল ভয়াবহ ভাঙচুর,
পুলিশ বক্সে দেওয়া হলো আগুন। সবচেয়ে ভয়ংকর ছিল বাংলাদেশে টেলিভিশনের মূল ভবনে অগ্নিসংযোগ,
আগুনে পুড়ে ছাই হলো গুরুত্বপূর্ণ সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, বিআরটিএ ভবন,
আর দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ডাটা সেন্টার, যেখানে থেকে বাংলাদেশ
সারা বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে আর দেশের মানুষকে নানা গুরুত্বপূর্ণ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে
সেবা দেয়, আর মানুষের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নেট যোগাযোগব্যবস্থা নিশ্চিত করে। এর
ফলে বাংলাদেশ সারা বিশ্ব থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। সব বাদ দিলেও রাতারাতি বেকার
হয়ে গেল প্রায় ১৫ লাখ ফ্রিল্যান্সার, যারা ঘরে বসে লাখ-কোটি ডলার আয় করে। হানিফ ফ্লাইওভার,
ঢাকা বিমানবন্দরের এক্সপ্রেসওয়ে আর গর্বের পদ্মা সেতুর টোল প্লাজায় আগুন দেওয়া হলো।
এসব অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডে পুড়ে ছাই হলো কয়েক শ সরকারি গাড়ি। সিটি করপোরেশনের আবর্জনার
গাড়িও বাদ গেল না। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, এসব নাশকতার সঙ্গে প্রকৃত অর্থে আন্দোলনরত
কোনো শিক্ষার্থী জড়িত ছিল তা বলা যাবে না। জড়িত ছিল পুরনো সেইসব মহল, যারা এ দেশের
স্বাধীনতা চায়নি আর গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।
চলমান পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী
গত ১৭ জুলাই যেটি ছিল পবিত্র আশুরার রাত জাতির উদ্দেশে দেওয়া আট মিনিটের একটি ভাষণে
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে বলেন, ‘তোমরা একটু ধৈর্য
ধরে অপেক্ষা করো, আমরা চেষ্টা করছি কত দ্রুত বিষয়টা উচ্চ আদালতে সমাধান করা যায়। ’ তিনি সবাইকে
সংযম প্রদর্শন করারও আহ্বান জানান। কিন্তু এরই মধ্যে যে স্বার্থান্বেষী মহল এই আন্দোলনকে
ছিনতাই করার জন্য ওত পেতে ছিল তারা কিন্তু অনেক দূর এগিয়ে গেছে। যেকোনো আন্দোলন করতে
অর্থের প্রয়োজন হয়। অনেকের প্রশ্ন, কোথা থেকে এলো সেই অর্থ? জবাব সোজা বাংলাদেশকে একটি
ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে দেশে-বিদেশে অর্থ জোগানদাতার অভাব নেই। আর যখন সরকারে আওয়ামী
লীগ থাকে, তখন সেই জোগানদাতার সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পায়। এই অর্থ জোগানদাতারা
বলেই দিয়েছে এবার এই আন্দোলনকারীদের পিঠে চড়ে তারা ক্ষমতায় যাবে। পুরো পরিস্থিতিকে
আরো জটিল করে তোলে সরকার ও সরকারি দলের কিছু ব্যক্তির অপরিণামদর্শী বক্তব্য, বিবৃতি
ও বালখিল্য আচরণ। ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা যে কত নাজুক, এবার
তা পরিষ্কার হয়ে গেল।
পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে যদি শুরু
থেকে কয়েকজন দায়িত্ববান ব্যক্তিকে দিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করা যেত, তাহলে
পরিস্থিতি এতদূর গড়াত না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে পরবর্তীকালে সারা দেশে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির
সৃষ্টি হয়েছে তা কারো কাম্য ছিল না। আমি নিজেও খুব ক্ষুব্ধ এবং এই যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা
বাহিনীর গুলিতে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে তা যেকোনো মানুষকেই
বিচলিত করবে। নিহতদের মধ্যে যেমন ছিল সাধারণ শিক্ষার্থী তেমন ছিল ছাত্রলীগের কর্মীরা।
একই সঙ্গে এই সংঘাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কমপক্ষে চারজন সদস্য প্রাণ হারিয়েছে
আর আহত হয়েছে সহস্রাধিক। যৌক্তিক দাবিতে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন শুরু করেছিল, তা এত
দ্রুত তাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে তা হয়তো তারাও চিন্তা করতে পারেনি।
সব শেষে প্রধানমন্ত্রী পুরো বিষয়টার সম্ভাব্য
পরিণতি ও গুরুত্ব উপলব্ধি করে আমাদের আইনমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীকে দায়িত্ব দেন আন্দোলনকারীদের
সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে। এরই মধ্যে আন্দোলনকারীরাও ঘোষণা করেছিল আন্দোলনের পাশাপাশি
তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনায় রাজি। আন্দোলন ও আলোচনা দুটিই একসঙ্গে হতেই পারে। তাদের
মতামত জানতে চাওয়া হবে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী অনেকটা নজিরবিহীনভাবে অ্যাটর্নি জেনারেলকে
নির্দেশ দিয়েছিলেন ৭ আগস্টের পরিবর্তে ২১ জুলাই মামলাটি নিষ্পত্তি করার জন্য প্রধান
বিচারপতির কাছে আবেদন করতে।
একটি কথা অনেকের ভালো নাও লাগতে পারে,
দেখা যায় আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে তখন ঘরে ঘরে রাতারাতি আওয়ামী লীগ তৈরি
হয়। আর দেশে বা দলে কোনো সংকট দেখা দিলে তাদের প্রায় কাউকেই পাওয়া যায় না। দেখা যায়
না। ক্ষমতায় থাকলে শেখ হসিনার চারপাশে তাঁবেদার গিজগিজ করে। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর চারপাশে
তৈরি করেন এক অদৃশ্য দেয়াল। তাঁকে দেশের ও মানুষের মনের বাস্তব চিত্রটা বুঝতে দেওয়া
হয় না। তা না হলে প্রধান নির্বাহী দেশে বিরাজমান পরিস্থিতি সহজে বুঝতে পারতেন। আজকে
যে সমস্যাটি দেশে এত মানুষের প্রাণ ঝরাল, এত রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি হলো তা বন্ধ করার
একটি যৌক্তিক পদক্ষেপ যদি ১০ দিন আগে নেওয়ার পরামর্শ প্রধানমন্ত্রীর কাছের মানুষরা
দিতেন, তাহলে বর্তমান সংকট এড়ানো সম্ভব ছিল।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৯ জুলাই রাতে
সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়। এটি করা না হলে হয়তো দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের পরবর্তী
টার্গেট হতে পারত আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনা, যেমন হযরত
শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, পদ্মা সেতু বা কর্ণফুলী টানেল। একটি জিনিস
লক্ষণীয়, যেসব রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলা চালনো হয়েছে তার প্রতিটিই বর্তমান সরকারের
উন্নয়নের স্মারক এবং তা এ দেশের জনগণের অর্থে নির্মিত।
গত রবিবার নির্ধারিত দিনের ১৭ দিন আগে
দেশের সর্বোচ্চ আদালত এ বিষয়ে চূড়ান্ত রায় দিয়ে মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ চাকরি দেওয়ার
জন্য সরকারকে নির্দেশ দেন। বাকি ৭ শতাংশের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা আর বীরাঙ্গনাদের
সন্তানদের জন্য আর ৩ শতাংশ নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী আর ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য সংরক্ষিত
রাখার নির্দেশ দিয়ে এই মর্মে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। যেহেতু
মুক্তিযোদ্ধা বা বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের বর্তমানে চাকরি করার বয়স আর তেমনটা নেই, সুতরাং
তাদের জন্য সংরক্ষিত ৫ শতাংশও মেধায় যোগ হয়ে তা ৯৮ শতাংশ হয়ে যাবে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের
দাবি অনুযায়ী সরকার এক দিন পরই প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়েছে, যদি
কোনো প্রার্থী পাওয়া না যায়, তা হলে তা সাধারণ মেধা কোটা থেকে পূরণ করা হবে। এটি একটি
অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত। যেখানে ইউরোপে নারীদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি চাকরিতে প্রায়
৪০ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত আছে, সেখানে এই মুহূর্তে তা শূন্য। আন্দোলনরত নারী শিক্ষার্থীরা
মনে করেন তাঁরা এখন ছেলেদের সমান মেধাবী। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের দাবির প্রায়
পুরোটাই মেনে নেওয়া হয়ছে। দেশের মানুষ আশা করে এরপর দেশে শান্তি ও স্বস্তি ফিরে আসবে।
শিক্ষার্থীদের লক্ষ রাখতে হবে গত কয়েক
দিনের সব ধরনের নাশকতার জন্য তাদের কেউ দায়ী করছে না। দায়ী করছে ওই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে,
যারা ১৫ বছর ধরে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ চেয়ে কোনো এক তৃতীয় পক্ষের কাঁধে চড়ে ক্ষমতায়
যেতে চায়। এরা দেশদ্রোহী ছাড়া আর কিছুই নয়। এরই মধ্যে তাদের অনেককে আটক করা হয়েছে।
উদ্ধার করা হয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এগুলো এখন জনসম্মুখে আসা প্রয়োজন। এই দেশকে
কারা স্বাধীন দেশ হিসেবে দেখতে চায় না, মানুষ তাদের চেহারা দেখতে চায়।
শিক্ষার্থীদের আবারও অনুরোধ করি, তারা
যেন কারো পাতা ফাঁদে পা না দেন। লক্ষ্য যৌক্তিক ছিল বলে বিজয় তাঁদেরই হয়েছে। শেষে বলতে
চাই, যাঁরা এ কদিনের সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন সবাই আমাদের সন্তানতুল্য। তাঁদের আত্মার
মাগফিরাত কামনা করছি, আর যাঁরা আহত হয়েছেন তাঁদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। ঘটনা তদন্তে
সরকার এরই মধ্যে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দ্রুত এই কমিটি একটি বস্তুনিষ্ঠ
তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বলে মানুষ আশা করে। যেসব তথাকথিত ছাত্রসংগঠনের নামধারীরা
এই আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য সহিংসতার সঙ্গে জড়িত ছিল বা পেছন থেকে ইন্ধন জুগিয়েছে
তাদের বলি, একটি প্রজন্মকে নষ্ট করার অধিকার তাদের নেই। সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক। শিক্ষার্থীরা
পড়ার টেবিলে ফিরে যাক। মনে রাখতে হবে, এই দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রায় ৪৮ লাখ
শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে আর সরকারি চাকরিতে সর্বসাকল্যে ১৫ লাখ মানুষ চাকরি করে। বছরে
সাত থেকে আট হাজার মানুষ সব পর্যায়ের সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করে। তরুণদের যদি সঠিক
মেধা আর প্রশিক্ষণ থাকে, তাহলে তামাম দুনিয়াটা তাদের কর্মক্ষেত্র।
লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক