মাজহারুল ইসলাম মাসুম, সিনিয়র সাংবাদিক, লেখক, ও গবেষক :
নকশবন্দিয়া তরিকার প্রতিষ্ঠাতা হযরত শেখ খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ
আল-বোখারী রহ.। এই তরিকা মূলতঃ হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা. কর্তৃক উদ্ভাবিত। রাসূলুল্লাহ সা. গোপন ভাবে হযরত আবু
বকর রা.কে ইলমে মারেফাতের যে খেলাফত দান করিয়াছিলেন, তাহা অদ্যাবধি বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন তরিকা, উপ-তরিকার মাধ্যমে জারী রহিয়াছে। নক্শবন্দিয়া তরিকা উহার একটি
উল্লেখ যোগ্য তরিকা। রাসূলুল্লাহ সা.-এর গোপন তালিম হযরত আবু বকর সিদ্দীক রা.- এর
মাধ্যমে পীর বা খলিফা পরম্পরায় সিনা-ব-সিনায় ইমামে তরিকত শামসুল আরেফিন হযরত খাজা
বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহ. পর্য্যন্ত খেলাফত প্রাপ্তির ষোড়শ স্তর পৌঁছিয়াছে।
নকশবন্দিয়া তরিকার গুরুত্বপূর্ণ তালিম হইল ছয় লতিফা এবং চার উপাদান
তথা আব, আতশ, খাক, বাদ অর্থাৎ পানি, আগুন, মাটি ও বাতাস প্রভৃতির উপর
মোরাকাবা করা। ছয় লতিফা: ক্বাল্ব, রূহ, ছের, খফী, আখফা, নফস প্রভৃতির উপর সাধনার
প্রতিক্রিয়া পরিচালিত হয়। ইহা ব্যতীত পঞ্চ হাযরা তথা সায়ের ইলাল্লাহ, সায়ের ফিল্লাহ, সায়ের আনিল্লাহ, আলম-এ-মিসাল, আলম-এ-শাহাদাত
প্রভৃতির উপর মোরাকাবা করিবার নিয়ম-পদ্ধতি এই তরিকায় বিদ্যমান রহিয়াছে।
নকশবন্দিয়ার তালিম রাসূলুল্লাহ সা. হইতে সিনা-ব-সিনায় হযরত বাহাউদ্দীন নক্শবন্দিয়া
রহ.- এর নিকট পৌঁছিলেও পূর্বে তাহা লিপিবদ্ধ আকারে ছিল না। হযরত বাহাউদ্দীন
নক্শবন্দ রহ. তাহা সু-শৃঙ্খল ভাবে লিপিবদ্ধ করেন।
নক্শবন্দিয়া সাধকগণ আহাদিয়াত, ওয়াহিদাত ও ওয়াহেদিয়াতের স্তরে পরিভ্রমণ করেন। ওয়াহিদাত ও
ওয়াহেদিয়াত স্তর দুইটি উপনীত হইতেছে সায়ের ইলাল্লাহ’তে। আলমে আমর ও আলমে খালক একই স্তরে অবস্থিত। আহাদিয়াতের স্তর
কেবলই সায়ের ফিল্লায় অবস্থিত।
নকশবন্দিয়া তরিকা মতে ৮টি বিষয়ের উপর অধিক গুরুত্বারোপ করা হয় যথা:
১. হুঁশদম: শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতি খেয়াল রাখা।
২. নেগাহ্ বর কদম: পীরের
পদাঙ্কানুসরণ করা।
৩. সফর দার ওয়াতন: দেহ রাজ্যে
পরিভ্রমণ করা।
৪. খিলওয়াত দার আঞ্জুমান: চুপি
চুপি বাক্যালাপ।
৫. ইয়াদ কার্দান: সার্ব্বক্ষণিক
জিকিরে মশগুল থাকা।
৬. বাজগশত: আল্লাহর প্রতি ধাবিত
হওয়া।
৭. নেগাহ দাশ্ত: আল্লাহতে
অন্তর্দৃষ্টি নিবন্ধ রাখা।
৮. ইয়াদ দাশ্ত বা খোদগোজাশ্ত:
নিজকে নিঃশেষ করিয়া আল্লাহতে চির জাগ্রত রাখা। এই তরিকা মতে নিচু স্বরে জিকির
স্বীকৃত। এই তরিকার কোন কোন উপ-তরিকায় সামা জাতীয় গজলের প্রচলনও রহিয়াছে।
উল্লেখ্য, নকশবন্দিয়া তরিকার শাজারা মোবারকে
১৬তম পুরুষ ইমামুত তরিকত হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহ.। কিন্তু ভারতবর্ষে সর্ব
প্রথম এই পবিত্র তরিকা প্রচার-প্রসার শুরু করেন হযরত খাজা রাজি উদ্দীন মুহাম্মদ
বাকি বিল্লাহ রহ.। তিনি এই তরিকার ২২তম পুরুষ। তিনি স্বীয় পীর-মোর্শেদ হযরত
মাওলানা খাজাগী আমাকনগী রহ.- এর নির্দেশে এই তরিকার প্রচার-প্রসারের উদ্দেশ্যেই
ভারতবর্ষে আগমন করিয়াছিলেন। তখন তাঁহার সফর সঙ্গী ছিলেন তাঁহার স্ত্রী ও মহীয়সী
মাতা।
হযরত বাকি বিল্লাহ রহ.- এর পবিত্র মাজার শরীফ নতুন দিল্লী রেল
ষ্টেশনের নিকটে নবী করীম সড়কের একটি টিলার উপর অবস্থিত।