বাঙালীর প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। বিশ্বজুড়ে কোটি বাঙালি এই দিনটি উৎসবে-আনন্দে পালন করেন। নতুন পোশাক এবং সাজ-গোজ যেন সেই আনন্দের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। বৈশাখে বাঙালিরা সাধারণত শহরে কিংবা গ্রামের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, প্রতিবেশিদের সঙ্গে বর্ষবরণের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন।বাঙালীর প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। বিশ্বজুড়ে কোটি বাঙালি এই দিনটি উৎসবে-আনন্দে পালন করেন। নতুন পোশাক এবং সাজ-গোজ যেন সেই আনন্দের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। বৈশাখে বাঙালিরা সাধারণত শহরে কিংবা গ্রামের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, প্রতিবেশিদের সঙ্গে বর্ষবরণের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেন।
বৈশাখের সাজের ক্ষেত্রে আবহাওয়া ও সংস্কৃতি কেমন সে বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। বৈশাখে সাজ ভারী হলেও ন্যাচারাল লুক যেন বজায় থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পহেলা বৈশাখের আগের রাতে কিংবা সকালে উঠেই মেহেদি দিতে হবে। মেহেদি সব উৎসবে বাড়তি আনন্দ যোগ করে। পোশাকের দিকে খেয়াল রেখে স্কিন টোনের সঙ্গে মিলিয়ে মেকআপ করতে হবে।
বৈশাখের দিন সকালে গোসলের সময় চুলে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে এরপর সিরাম লাগাতে হবে।
সকালে সাজলেও বাসায় ফিরতে ফিরতে দুপুর কিংবা বিকেল হতে পারে। এজন্য অবশ্যই ত্বকে সানক্রিন লাগাতে হবে। এতে সারাদিন রোদে ঘুরে বেড়ালেও ত্বক ভালো থাকবে।
ত্বক টোনার দিয়ে পরিষ্কার করার পর কিছুক্ষণ সিরাম লাগিয়ে রাখতে হবে। এরপর ময়েশ্চারাইজ লাগিয়ে বিবি ক্রিম লাগাতে হবে। এরপর ড্যাব ড্যাব করে ফাউন্ডেশন লাগিয়ে ফেস পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। হালকা করে ব্লাশন লাগাতে হবে।
ভ্রু একে নিতে হবে। পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে চোখে আইশ্যাডো দিতে হবে। চোখের সাজের ক্ষেত্রে হাইলাইটার ব্যবহার করলে সাজ গর্জিয়াস দেখাবে। চোখে চিকন কিংবা মোটা করে আই লাইনার ও মাশকারা লাগাতে হবে। ঠোটে লিপস্টিক কিংবা লিপগ্লস লাগিয়ে নিতে হবে। নখে নেইলপলিশ লাগাতে পারেন।
দিনের বেলায় মেকআপের ক্ষেত্রে ন্যাচারাল লুক বেশ ভালো লাগবে। চুল খোলা রাখতে পারেন। ফ্রেঞ্চ বেণি অথবা চুলে ক্লিপ লাগাতে পারেন। শাড়ি পরলে খোপা করে ফুল গুজে দিলেও বেশ ভালো লাগবে।
বিউটিবক্স ওমেন্স পার্লারের বিউটি এক্সপার্ট ফাতেমা আক্তার বলেন, পহেলা বৈশাখের দিন সকালের সাজ খুব হালকা হতে পারে। প্রথমে ময়েশ্চারাইজার এরপর মেকআপ লং লাস্টিং রাখার জন্য প্রাইমার ব্যবহার করবো। তারপর প্রত্যেক মানুষের স্কিনশেড অনুযায়ী একশেড ব্রাইট ফাউন্ডেশন নির্বাচন করতে হবে। কনসিলার দিতে হবে। তারপর (ফেস পাউডার বা লুস পাউডার) দিয়ে মেকআপ সেট করে নিতে হবে। তারপর আই ভ্রু একে নিয়ে নিজস্ব ড্রেস কালার অনুযায়ী আইমেকআপ করে নিতে পারে। মাশকারা, আইলাইনার, কাজল, ব্লাশন, হাইলাইটার, লিপস্টিক। মেক আপ ধরে রাখার জন্য সেটিংস স্প্রে ব্যবহার করতে হবে। এতে মেকআপ লং লাস্টিং হবে।
বর্ষবরণে সাজের সঙ্গে পোশাক নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তাই চাইলে সুতি পাতলা কাপড়ের পাশাপাশি যেকোন কাপড়ের পোশাক পরা যেতে পারে। নারীরা থ্রি-পিস, শাড়ি কিংবা লেহেঙ্গা পরতে পারেন। ছেলে শিশুরা শার্ট-প্যান্ট, পায়জামা ও পাঞ্জাবি পরতে পারে। মেয়ে শিশুরা ফ্রক, টপস, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা পরতে পারে। তবে বৃদ্ধদের পোশাকের ক্ষেত্রে আরামের বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। ঢিলেঢালা নরম ও পাতলা কাপড়ের পোশাক নির্বাচন করতে হবে।
বিশ্বরঙ এর সত্ত্বাধিকারী বিপ্লব সাহা বলেন, দেশীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে আন্তর্জাতিক চলের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে বাহারি নকশা ও বৈচিত্রময়তায় উপস্থাপন করা হয়েছে পোশাকে। উৎসবের রঙে বাড়তি মাত্রা যোগ করতে বরাবরের মতোই দেশীয় কাপড়, উপকরণ ব্যাবহার করে বিশ্বরঙ। এবারের বর্ষবরণের আয়োজনে পোশাকে ট্রেন্ডি এবং ট্রেডিশনাল লুকের নান্দনিকতা উপস্থাপন করেছে। দেশের আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে আরামদায়ক কাপড় যেমন সুতি, ধুপিয়ান সিল্ক, তসর সিল্ক, লিলেন, কাতান, জ্যাকার্ড কাপড় ব্যবহার করেছে, রঙের ব্যবহারেও কনট্রাস্ট কালারের পাশাপাশি রঙের ম্যাচিউরড টোন এর পরিমিত ব্যবহার লক্ষ্যনীয়।
তিনি বলেন, এবারের বর্ষবরণে কাজের মাধ্যম হিসাবে রয়েছে স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক, ডিজিটাল প্রিন্ট, মেশিন এমব্রয়ডারী, কম্পিউটার এমব্রয়ডারী, হ্যান্ড এমব্রয়ডারী, কারচুপি, নকশী কাঁথা জারদৌসীসহ মিশ্র মাধ্যমের নিজস্ব বিভিন্ন কৌশল। উৎসবে বিশ্বরঙ প্রতিটি শ্রেণীর মানুষের জন্যই ভিন্ন কিছু যোগ করেছে। বাচ্চাদের জন্য এনেছে নান্দনিক সব কালেকশন সেই সাথে প্রাপ্ত বয়স্ক এবং নারীদের জন্য আছে ঐতিহ্য ও আভিজাত্যের ছোঁয়া। স্বাধ ও সাধ্যের সমন্ময়ে প্রিয়জনকে খুশি করতে বিশ্বরঙ নিয়ে এসেছে ১০০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে আকর্ষনীয় শাড়ী।
দেশীয়ার সত্ত্বাধিকারী রবিন মুশফিক বলেন, এবার বৈশাখী পোশাকের রঙ নির্বাচনের ক্ষেত্রে কালারফুল রাখার চেষ্টা করেছি। সব রঙের পোশাক তৈরি করলেও পোশাকে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে লাল, সাদা, বেগুনি, নীল, হলুদ, গ্রীন, ম্যাজেন্ডা, পেস্ট।
তিনি বলেন, পোশাকের ক্ষেত্রে কাটিংয়ে নতুনত্ব এসেছে। মেয়েদের ওয়ানপিস পোশাকে পকেট কুর্তি রয়েছে। ছেলে শিশু, তরুণ ও প্রবীণদের জন্য পাঞ্জাবি ও পায়জামা রয়েছে। নারী ও তরুণীদের জন্য শাড়ি, ওয়ান পিস ও থ্রিপিস রয়েছে। এছাড়া মেয়ে শিশুদের জন্য থ্রিপিস, ওয়ান পিস, সারারা, ঢোল সালোয়ার, ধুতি সালোয়ার ও স্কার্ট রয়েছে।
শিশু ও বৃদ্ধদের পোশাক ও জুতার ক্ষেত্রে আরামের বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
যুগে-যুগে, কালে-কালে নতুন বছর আসে আনন্দের বার্তা নিয়ে। কিন্তু সবার ঘরে একইভাবে উৎসবের আনন্দের বার্তা পৌঁছায় না। গরীব-দুঃখী, বস্তিবাসী, তাদের ঘরের হাড়িশূন্য। উনুনে ভাতের হাড়ি উঠে না। হা-ভাতে, জীর্ণবস্ত্রে মানবেতর জীবন কাটায়। উৎসবের বার্তা ঘোষিত হয় আমরা সকলে সমান। একে অপরের পরমাত্মীয়। নীতিকথায় মানবতার কথা উঠে আসলেও বাস্তবে সামাজিক চিত্র ভিন্ন। তখনই নতুন বছরের আনন্দ অর্থবহ হয়ে ওঠবে, সার্থক হবে; যখন সবাই একই কাতারে সামিল হয়ে উপভোগ করতে পারবো উৎসবের আনন্দ।