শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, সিনিয়র রিপোর্টার :
নওগাঁর পত্নীতলায় আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর কম্পিউটার ব্যবসায়ী সুমন হোসাইন (২৩) হত্যাকান্ড মামলার প্রধান আসামী বুলবুল (৩৫) কে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করছে পুলিশ। বৃহষ্পতিবার ২১ নভেম্বর দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা জানান নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান। এর আগে ভোরে ঢাকার গাজীপুর জেলার কোনাবাড়ী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃত বুলবুল হলেন, সুমন হোসাইন হত্যা মামলার মূল আসামী সে নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার গাহন গ্রামের আব্দুল করিম এর ছেলে। আর হত্যার শিকার যুবক সুমন হোসাইন হলেন, নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার বিলছাড়া চকপাড়া গ্রামের মৃত ময়েন উদ্দিন ও শাহিদা'র ছেলে। সুমন হোসাইন পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড মসজিদ মার্কেটের সুমন ফটোস্ট্যাটের স্বত্বাধিকারী।
সংবাদ সম্মেলনে নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজিউর রহমান জানান, গত ১৭ নভেম্বর রাত সারে ১০টায় নিজের ফেসবুকে আইডিতে লাইভে এসে সুমন দাবি করেন বুলবুল এর কাছ থেকে সুদের উপর ৭০ হাজার টাকা ঋণ নেয়। এই ঋণের টাকা দেওয়ার সময় বুলবুল তার কাছ থেকে স্বাক্ষর করা ফাঁকা স্ট্যাম্পও নেন। সেই টাকা বৃদ্ধি পেতে পেতে ১০ লাখ টাকা হয়ে যায়। এটা নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দন্দ চলছিল এবং বুলবুল সুমনকে চাপও দিচ্ছিলেন। সেই টাকাই সুমন রাতে মহাদেবপুর উপজেলা থেকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় রাস্তার মাঝখানে বুলবুল তার কিছু লোক দিয়ে তাকে ধাওয়া করে মেরে ফেলার চেষ্টা করছেন বলে লাইভে বলেন। এরপর একটি গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। পুলিশ কর্মকর্তা
গাজিউর রহমান আরো জানান, এ ঘটনার পর থেকে বুলবুল পালিয়ে বেড়ান। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজ ভোরে গাজীপুরের কোনাবাড়ী থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিকভাবে বুলবুল এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত নয় বলে দাবি করেছেন। তবে তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে। তারপর জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে এই হত্যাকান্ডের সাথে কারা কারা জড়িত এর মূল কারণ বেরিয়ে আসবে। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১৭ নভেম্বর রাত সাড়ে ১০টারদিকে নিজের ফেসবুকে আইডিতে লাইভে এসে কথা বলেছিলেন সুমন হোসাইন। সেই ৫ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের ফেসবুক লাইভ ভাইরাল হয়। জানা যায়, কিছুদিন আগে তিনি নজিপুর বাসস্ট্যান্ড মজসিদ মার্কেটের বুলবুল টেলিকমের স্বত্বাধিকারী বুলবুল হোসেনের কাছ থেকে সুদের উপর ৭০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। এই ঋণের টাকা দেওয়ার সময় বুলবুল সুমন হোসাইন এর কাছ থেকে স্বাক্ষর করা ফাঁকা স্ট্যাম্প ও ব্যাংক চেকের পাতা নেন। ঋণ গ্রহণের পর সুমন পর্যায়ক্রমে সুদসহ বুলবুলকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু বুলবুল সুমনের কাছ থেকে প্রথমে আরো ১০ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দাবি করেন এবং পরে ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। সেই টাকার জন্য বুলবুল সুমনকে হত্যাসহ নানাভাবে হুমকি ও চাপ দিচ্ছিলেন। নিরুপায় হয়ে সুমন বুলবুলের দাবি করা ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে গত সোমবার ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত সময় চান। বুলবুলকে টাকা দেওয়ার জন্য সুমন মহাদেবপুর থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে ১৭ নভেম্বর রবিবার রাতে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় করে গ্রামের বাড়ি বিলছাড়া চকপাড়া গ্রামে ফিরছিলেন। সুমনের ভাষ্যমতে, তিনি গ্রামের বাড়ি ফেরার পথে নাদৌড় মোড় এলাকায় পৌঁছালে বুলবুল এর নের্তৃত্বে দুষ্কৃতকারীরা তাঁকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে সঙ্গে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় সুমন পালিয়ে ফেসবুকে লাইভে এসে তাঁকে বাঁচানোর আকুতি জানান। ছিনতাইকারীরা তার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে তাকে হত্যার জন্য খুঁজছে বলেও দাবি করেন সুমন। লাইভে সুমন বলে যান, মহাদেবপুর থেকে টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরার খবর বুলবুল ছাড়া আর কেউ জানত না। সুমনের ফেসবুক লাইভ দেখে তার গ্রামের বাড়ি বিলছাড়া চকপাড়া ও আশপাশের গ্রামের লোকজন নাদৌড় মোড়ে ছুটে আসেন। লোকজন ছুটে এসে সুমনকে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে উপজেলার পদ্মপুকুর বালকাপাড়া গ্রামের একটি গাছের ডালের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় তাকে দেখতে পান। তাকে উদ্ধার করে পত্নীতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পর থেকে বুলবুল পলাতক ছিলেন।