
শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, স্টাফ রিপোর্টার :
নওগাঁয় চলতি ইরি বোরো ধান চাষের ভরা মৌসুমের শুরুতেই বিদ্যুতের ঘনঘন লোড শেডিংএ দেখা দিয়েছে। ফলে ইরি বোরো ধান চাষের জমিতে পানি সেচ দেওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে কৃষকদের মাঝে। সার-তেলের সংকট না থাকলেও ধানের চারা এক চতুর্থাংশ নষ্ট এবং বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করায় ধান উৎপাদনে বাড়তি খরচ হচ্ছে বলেও দাবি ধান চাষি কৃষকদের। চৈত্র মাসে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায় বর্তমান সময়ের দেড়গুণ। সে সময় চাহিদা মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ না হওয়ায় অধিকাংশ জমিতে পানি সেচ এর অভাবে ধান চাষের জমি শুকে ফেটে যায়। ইতি মধ্যেই ধানের জন্য দেশের মধ্যে বিক্ষাত এজেলায় কৃষি পরামর্শের পাশাপাশি ধান উৎপাদন সঠিক রাখতে নওগাঁয় বিদ্যুতের বিশেষ বরাদ্দের বাদি জানানো হয়েছে।
নওগাঁ গ্রিড (বিদ্যুৎ) বিভাগ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি ইরি বোরো মৌসুমের শুরুতে জেলায় ১শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার পরিবর্তে ৮০ মেগাওয়াটের নিচে সরবরাহ থাকছে। যার ফলে আগের চেয়ে বর্তমানে লোডশেডিং এর পরিমাণ বেড়ে গেছে।
চৈত্র মাসে নওগাঁ জেলায় প্রায় দেড়শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা হয়।
নওগাঁর বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ধান উৎপাদনে দেশের অন্যতম জেলা নওগাঁয় পুরোদমে শুরু হয়েছে ইরি বোরো চাষ। সার-তেলের সংকট না থাকলেও ইরি বোরো চাষের শুরুতেই দেখা দিয়েছে বিদ্যুতের ঘনঘন লোডশেডিং।
এই লোডশেডিং এর মাত্রা বেড়ে যায় প্রতি বছরের চৈত্র মাসে। সে সময় বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যায় বর্তমান সময়ের দেড়গুণ। চাহিদা মতো বিদ্যুৎ সরবরাহ না হওয়ায় চৈত্র মাসে সেচ দেওয়া সম্ভব হয় না অনেক বোরো ধান চাষের জমিতে। সে সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ায় ঘনঘন লোডশেডিংএ সেচের অভাবে ধানের জমি ফেটে যায়। এতে তূলনা মূলক ফেটে যাওয়া জমিতে ফলন কম হয়।
নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার চৌমাশিয়া ও খোর্দ্দনারায়নপুর গ্রামের কৃষক সাজ্জাদ হোসেন মন্ডল, শাহ আলম, নজরুল ইসলাম বাবু সহ জেলা সদর উপজেলার শৈলগাছী বাজার এলাকায় কথা হয় কৃষক আমজাদ হোসেন, করিম হোসেন, আবুল কালাম সহ আরো কযেক জন কৃষকের সাথে। কৃষকরা জানান, গত কয়েক দিনের ঠান্ডায় এক চতুর্থাংশ ইরি বোরো ধানের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে ধানের চারা বাজার থেকে কিনে প্রতি বিঘায় প্রায় ২ হাজার টাকারও বেশি খরচ হচ্ছে। এসময় কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শ না পাওয়ার অভিযোগ করেন কয়েক জন কৃষক।
নওগাঁ সদরের বোয়ালিয়া গ্রামের মাঠে কৃষক মেহেদী হাসান জানান, জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম সরকারি ভাবে বৃদ্ধি করায় গত বছরের তুলনায় প্রতি বিঘায় এ বছর সেচের দাম ৫শ’ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা বেড়ে দিয়েছে নলকূপের মালিকরা। এ ছাড়াও কিটনাশকের দাম বৃদ্ধি, জমি চাষ, লাগানো, নিরানী সহ শ্রমিকের মূল্যও বেড়েছে। একারনে গত বছরের চেয়ে এ বছর প্রতি বিঘায় ৩ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা ধান উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে। প্রতি মণ বোরো ধান ১৫শ’ টাকা থেকে ১৬শ’ টাকায় বিক্রি না হলে লোকসান গুণতে হবে বলেও মনে করছেন কৃষকরা।
নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন জানান, নওগাঁ জেলায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইত্যে মধ্যেই প্রায় ৪৫ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ (রোপন) সম্পন্ন করেছেন কৃষকরা। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের কৃষি পরামর্শ না পাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে আবু হোসেন আরো জানান, প্রয়োজন মত লোকবল না থাকায় কোথাও অসুবিধা হতে পারে। তবে মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারিদের সেল ফোন ও তাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্যে বলা হয়েছে কৃষকদের।
বাংলাদেশ কৃষক সমিতি নওগাঁ জেলা শাখার সহ-সভাপতি মহসিন রেজা জানান, একে তো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করায় বোরো ধানের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। আবার সেচ নির্ভর বোরো ধান বিদ্যুতের লোডশেডিং আরো বেশি হলে সেক্ষেত্রে সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে জ্বালানি তেল দিয়ে ইরি বোরো চাষের জমিতে পানি সেচ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এতে আরো বেড়ে যাবে কৃষকদের উৎপাদন খরচ।
ইরি বোরো উৎপাদন মৌসুমে নওগাঁয় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ রাখার দাবি জানান এই কৃষক নেতা।
নওগাঁ গ্রিড (বিদ্যুৎ ) বিভাগের উপ-সহকারি প্রকৌশলী সুলতান বায়জিত জানান, বর্তমানে নওগাঁয় ১শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা থাকলেও সেখানে ৭৫ মেগাওয়াট থেকে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে, এজন্য মাঝে মাঝে লোডশেডিং চলছে জানিয়ে অতিদ্রুত চাহিদা মতো বিদ্যুৎ পেলে এসমস্যার সমাধান হবে বলেও আশাব্যাক্ত করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, চৈত্র মাসে প্রায় দেড়শ’ ১শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা হয়। ইত্যে মধ্যেই সরকারের উচ্চ পর্যায়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।