অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর তৃতীয় দফা সংলাপকে কেন্দ্র করে আবারও সামনে এসেছে সংসদে ‘সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা’র বিষয়টি। সম্প্রতি কয়েকটি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি উপস্থাপন করায় রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনায় এসেছে। ‘নব্বই দশক থেকে, বিশেষ করে ১৯৯৪ সালের পর তৎকালীন বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের আলোচনায় জাতীয় সংসদে আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনের কথা আছে। তখন থেকেই বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি ও বামজোট আনুপাতিক নির্বাচনের কথা তুলে ধরি তুলে ধরি।’ বলছিলেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স।
দেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল সিপিবির এই সাধারণ সম্পাদক আরও উল্লেখ করেন, ‘২০০৭ সালে নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে আলোচনার সময় আমরা তৎকালীন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এবং সরকারের সঙ্গে আলোচনায় সুনির্দিষ্টভাবে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির আলোচনা লিখিতভাবে তুলে ধরি। ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত বইয়ে এটি লিপিবদ্ধ করা আছে।’
২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমসহ সিপিবির নেতারা নির্বাচনে কমিশনে প্রস্তাব দেন। সেই প্রস্তাবেও ছিল, ‘যতদিন সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালু না হচ্ছে, ততদিন আরও তিনটি ব্যবস্থা’ রাখার সুপারিশ করে দলটি। সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ১০০-তে উন্নীত ও সরাসরি ভোট; নির্বাচিত প্রতিনিধি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ওই প্রতিনিধিকে প্রত্যাহারের বিধান; না ভোটের বিধান যুক্ত করা।
বামজোটের নেতারা জানান, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও দাবি তুলেছিল বাম, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল দল এবং জোটগুলো। সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ টাকার খেলা, পেশীশক্তি, সাম্প্রদায়িকতা, প্রশাসনিক কারসাজিনির্ভর বিদ্যমান গোটা নির্বাচনি ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের দাবি করেছিলো তারা।
‘প্রয়োজনে দেড়শ আসনেও হতে পারে’
সিপিবি সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘স্থানীয় সরকারকে দক্ষ ও শক্তিশালী করা এবং সংবিধানের দেওয়া দায়িত্ব অনুযায়ী তাদের ভূমিকা পালন করার সঙ্গে সঙ্গে আনুপাতিক পদ্ধতিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানটাও জরুরি হয়ে পড়েছে।’
এক্ষেত্রে প্রিন্সের পরামর্শ, ‘আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে যদি একবারে আমরা পুরো ৩০০ আসনে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি নাও করতে পারি— ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনে এখন দেড়শ আসনে আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন ও বাকি আসনে প্রচলিত ব্যবস্থায় নির্বাচন হতে পারে।’
রুহিন হোসেন জানান, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচন সংস্কার বিষয়ে কমিউনিস্ট পার্টি প্রকাশিত পুস্তিকায়ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির কথা সিপিবি প্রচার করেছে। সারাদেশে এ বিষয়ে দলটির ব্যাপক প্রচার অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, বিএনপির পক্ষ থেকে সংসদে দুই কক্ষ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। দলটি গণভোট ফেরানো এবং পর-পর দুই বার একই ব্যক্তির প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতের পক্ষ থেকেও ১০ দফা প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেখানে ‘প্রাণীর মূর্তিনির্ভর ভাস্কর্য নির্মাণ না করে দেশীয় প্রকৃতি, ঐতিহ্যকে বিভিন্ন চিত্রাঙ্কন-ভাস্কর্যে তুলে আনা’, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা চালু, কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে স্থায়ীভাবে সন্নিবেশিত করা, ইভিএম ভোটিং ব্যবস্থা বাতিল, ২০০৮ সালে প্রবর্তিত রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রথা বাতিলসহ নানা প্রস্তাব