Logo
শিরোনাম

পাকিস্তানে উর্দু ভাষায় মুক্তি পাচ্ছে ‘জংলি’

প্রকাশিত:বুধবার ০৭ মে ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

সিয়াম আহমেদ ও বুবলী অভিনীত চলচ্চিত্র ‘জংলি’ মুক্তি পেতে যাচ্ছে পাকিস্তানে। তবে এবার নতুনত্ব হিসেবে সিনেমাটি উর্দু ভাষায় ডাবিং করে মুক্তি দেওয়া হবে দেশটিতে।

এর আগে শাকিব খানের ‘তুফান’ ও শরিফুল রাজের ‘দেয়ালের দেশ’ পাকিস্তানে বাংলা ভাষায় সাবটাইটেলসহ মুক্তি পেলেও ‘জংলি’ হতে যাচ্ছে প্রথম কোনো বাংলা চলচ্চিত্র, যা উর্দুতে ডাব হয়ে দেশটিতে প্রদর্শিত হবে।

‘জংলি’ চলচ্চিত্রটি চলতি বছরের ঈদুল ফিতরে বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় এবং প্রশংসিত হয় দর্শকমহলে। এরপর এটি আমেরিকা ও কানাডার ৪০টি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পায়। এবার সেই যাত্রায় নতুন সংযোজন হলো পাকিস্তান।

পাকিস্তানে ছবিটি পরিবেশন করবে লাহোরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সিনে এন্টারটেইনমেন্ট। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার আসিফ চৌধুরী জানান, আমরা ইতোমধ্যেই ছবিটির প্রযোজনা সংস্থা টাইগার মিডিয়ার সঙ্গে সব চুক্তি সম্পন্ন করেছি। বর্তমানে উর্দু ডাবিংয়ের কাজ চলছে। এটি উর্দুতে ডাব করা প্রথম বাংলা সিনেমা হিসেবে পাকিস্তানে মুক্তি পাবে।

এম রাহিম পরিচালিত ‘জংলি’ সিনেমার নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সিয়াম আহমেদ। শিশু শিল্পী নৈঋতা অভিনয় করেছেন ‘পাখি’ চরিত্রে। এছাড়া রয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী শবনম বুবলী, একসময়ের জনপ্রিয় শিশু শিল্পী দীঘি ও অন্যান্যরা।



আরও খবর



ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে

প্রকাশিত:বুধবার ২৮ মে ২০২৫ | হালনাগাদ:শনিবার ১৪ জুন ২০২৫ |

Image

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বললেন, ইরানি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীদের ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। তেহরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পথ থেকে সরিয়ে আনতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন তিনি। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের মরিসটাউন বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইরান বিষয়ে ভালো কোনও খবর দিতে পারব বলেই আমি আশা করি। দুদিন বাদে আমি ভালো না খারাপ খবর দিতে পারব, সে বিষয়ে নিশ্চিত নই। তবে, ভালোকিছু হবে বলেই আমি আশাবাদী।

ইরানের সঙ্গে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি করেন ট্রাম্প। অবশ্য ইরানি প্রতিনিধিদলে সঙ্গে বিশেষ মার্কিন কূটনীতিবিদ স্টিভ উইটকফের বৈঠকের বিষয়ে তেমন কোনও তথ্য দেননি তিনি।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে পশ্চিমের সঙ্গে তেহরানের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করতে হবে। এদিকে, ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, নিজ মাটিতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যাওয়ার অধিকার থেকে তারা সরে আসবে না। তবে সমৃদ্ধকরণের মাত্রা হ্রাস এবং উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়াম মজুদের পরিমাণ কমাতে আপত্তি নেই তেহরানের। তবে এই মাত্রা ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির উল্লিখিত হারের কম হতে পারবে না বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছে ইরান।

কয়েক দফা বৈঠকের পর, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তেহরান-ওয়াশিংটন একজায়গায় সম্মত হয়েছে-তারা উভয়েই সামরিক পন্থার বদলে কূটনৈতিক উপায়ে সমস্যা সমাধানে আগ্রহী। তবে, বেশ কিছু জায়গায় দু পক্ষেরই আপত্তির কারণে সমঝোতায় আসতে পারছেন না মধ্যস্থতাকারীরা। সামরিক আগ্রাসনের ঝুঁকি এড়াতে চাইলে এই মতবিরোধ প্রশমন করতে উভয় পক্ষেরই নমনীয় হতে হবে।

তবে, দু পক্ষের কেউই ছেড়ে কথা বলছেন না। যেমন, এক বক্তব্যে ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক সত্তা বলে অভিহিত করেন ট্রাম্প। স্বাভাবিকভাবেই তার মন্তব্য ভালোভাবে নেয়নি ইরান।

ওই মন্তব্যের জবাবে ইরানি প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ইরানকে অস্থিতিশীল করে তুলতে চাইছেন ট্রাম্প। তিনি মনে করেন, চাইলেই আমাদের ধামকি দিয়ে, নিষেধাজ্ঞার চাপে রেখে পরে এসে মানবাধিকারের বুলি আওড়ানো যায়। অথচ তারাই মধ্যপ্রাচ্যে সবরকম অস্থিতিশীলতার জন্য দায়ী।

ইরানের অভিযোগ, তারা পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিবেচনা করলেও, যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বা শিথিলের কোনও লক্ষণ দেখা যায় না। পারমাণবিক কর্মসূচির জের ধরে ইরানের ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় দেশটির অর্থনীতিতে প্রায় ধস নেমেছে।


আরও খবর



সুলতানি যুগের সমাজ ও সংস্কৃতিতে সুফিবাদের প্রভাব

প্রকাশিত:রবিবার ১৫ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

মাজহারুল ইসলাম মাসুম. সিনিয়র সাংবাদিক, লেখক, গবেষক :

সুলতানি শাসনকালে ভারতবর্ষের দুটি মৌলিক সংস্কার আন্দোলন হয়েছিল ভক্তিবাদ যখন হিন্দু ধর্মের পরিবর্তন আনতে সচেষ্ট হয়েছিল ঠিক সেই সময়েই মুসলিম ধর্মে সুফিবাদ নামে একটি উদারনৈতিক সংস্কার আন্দোলন শুরু হয় বলাবাহুল্য 'সুফীনামের উৎপত্তি নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে ) 'সাফা' বা 'পবিত্রতা' শব্দ থেকে এর উৎপত্তি হতে পারে ) 'সাফ' বা সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়ানো কথাটি থেকে সুফী কথাটি এসে থাকতে পারে ) 'সুফা' থেকে সুফী শব্দটি এসে থাকতে পারে একটি মতানুযায়ী হজরত মহম্মদ কর্তৃক মদিনায় প্রতিষ্ঠিত মসজিদের বাইরে যারা উপাসনা করেছিলেন তারাই নাকি সুফী আবু নাসবাল সাব্বাজ তাঁর গ্রন্থে দাবি করেছেন যে, 'সুফ' বা মোটা পশমের বস্ত্র দ্বারা সুফীরা নিজেদের আচ্ছাদিত করে রাখতেন বলে তাদের সুফী বলা হত জামির মতে ৮০০ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে বুফার আবু হাসিম সর্ব প্রথম সুফী শব্দটি ব্যবহার করেন অউল্ কুরেশীর মতে ৮১১ খ্রিষ্টাব্দে শব্দটি ইরাকে পবিত্র মানুষদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা শুরু হয় এবং পঞ্চাশ বছরের মধ্যে সমগ্র মুসলিম সমাজের আধ্যাত্মবাদীদের বোঝাতে সুফী শব্দটি ব্যবহার করা হতে থাকে

সুফী নাম করণের উৎপত্তি ও প্রেক্ষাপট নিয়ে বিতর্ক থাকলেও একথা বলা যায় যে, ইসলামের মধ্যে থেকেই সুফীবাদের জন্ম ইউসুফ হুসেন লিখেছেন যে ইসলামের বক্ষদেশ থেকে সুফীবাদের জন্ম ইসলাম ধর্মের সূচনা কাল থেকেই একশ্রেণীর অতীন্দ্রিয়বাদী মুসলিম ছিলেন যারা পরবর্তীকালে সুফী নামে পরিচিত হন ইসলামের শান্তি দূত সূফীদের ব্রত ছিল অন্ধকারের দেশ 'দার-উল-হার্বকে বিশ্ববাসীর দেশ 'দার-উল-ইসলাম' এ পরিনত করা তাঁর মতে সুফীবাদ ইসলাম ধর্মের একটি অংশ এ বিষয়ে সন্দেহ নেই তফাৎ এই যে, গোঁড়া মুসলমানরা ধর্মাচরণের উপর জোর দেন কিন্তু সুফীরা গুরুত্বদেন অন্তরের শুদ্ধতাকে গোঁড়াপন্থীরা বিশ্বাস করেন যে, ঈশ্বরের করুনা লাভের জন্য ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান নিখুঁত ভাবে পালন করা উচিত 

সুফীরা মনে করেন যে প্রেম ও ভালোবাসার মধ্যে দিয়েই ঈশ্বরের কাছে পৌছানো সম্ভব প্রখ্যাত মুসলিম ধর্মবিদ জাকারিয়া আনসারী লিখেছেন সুফীবাদ শিক্ষাদেয় অনন্ত শান্তি লাভের জন্য কিভাবে আত্মাকে শুদ্ধ করতে হয়, নৈতিক মান উন্নত করতে হয় এবং ব্যবহারিক জীবনে আচরণ করতে হয় এর মূল বিষয় হল আত্মার শুদ্ধি এবং প্রধান লক্ষ্য হল স্বর্গীয় আশীর্বাদ লাভ করা ইসলামের অগ্রগতির যুগে সুফী সন্তরা শান্তি ও মানবতাবাদের কথা প্রচার করে বিজীত মানবগোষ্ঠীকে ইসলামের প্রতি আগ্রহী করে তোলেন

ইউসুফ হুসেন সুফীবাদকে ইসলামের নিজস্ব সম্পদ বলে দাবী করলেও সুফীবাদের উপর অন্যান্য ধর্ম মতের প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না সুফীবাদকে একটি জটিল প্রক্রিয়া বলে অভিহিত করে ঐতিহাসিক তারাচাঁদ বলেছেন কোরান ও মহম্মদের জীবন কেন্দ্রিক সংকীর্ণ প্রবাহ বহুদেশের বহু পথ ও মতের সঙ্গে মিলিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে সুফী মতবাদ পাশ্চাত্যের খৃষ্টধর্ম ও নবপ্লেটোবাদ প্রাচ্যের হিন্দু ও বৌদ্ধ ভাবাদর্শ পারস্যের জরাথ্রুষ্টীয় মতবাদ অদ্বৈতবাদ সুফীবাদ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছে . এস. শীবাস্তবও মনে করেন যে ঈশ্বরকে ভালোবাসা, শান্তি ও অহিংসা, উপবাস ও শরীরের প্রতি নিগ্রহ যা সুফীরা অনুসরণ করে তা হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন মতবাদ থেকে গ্রহণ করা সতীশচন্দ্র উল্লেখ করেছেন যে, ইসলামের আবির্ভাবের বহু আগে থেকেই মধ্য এশিয়ার বৌদ্ধধর্ম প্রচলিত ছিল পাশাপাশি ইসলামের আবির্ভাবের পরেও হিন্দু যোগীরা পশ্চিম এশিয়ায় যেতেন, বুদ্ধির বহু কাহিনী ইসলামের লোকগাথায় প্রচলিত ছিল এই সকল তথ্যের ভিত্তিতে সতীশচন্দ্র অনুমান করেছেন যে বৌদ্ধ ও হিন্দু যোগ সাধকদের ধর্মচারণ পদ্ধতি সম্বন্ধে সুফীরা পরিচিত হন এবং কালক্রমে সেগুলিকে গ্রহণ করেন

বস্তুতপক্ষে সুফীবাদ হল একজন মুসলমানের ব্যক্তিগত স্তরে আল্লাহর জীবন উপস্থিতির অনুভূতি ১১৬৫-১২৪০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেকার সময় শেখ মহীউদ্দিন ইবনুল আরবী তত্ত্ব প্রচার করেন যার অর্থ স্রষ্টা বাহক এবং সৃষ্টি বা খালক এক এই বিশ্বের দৃশ্যমান বৈচিত্র্য বা বিভিন্নতা একই ঈশ্বরের নানামুখী প্রকাশবলা বাহুল্য শঙ্করাচার্যের অদ্বৈতবাদে এরূপ এক ও অভিন্ন ঈশ্বরের কথা বলা হয়েছে উপনিষদে বলা হয়েছে যা কিছু বিরাজমান বা যা কিছু দৃশ্যমান সবই ব্রম্ভ। শ্রীমদ্ ভাগবত গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন সর্বধর্ম পরিত্যজ্য মামেকং শরনং ব্রজ অর্থাৎ সবকিছু করে ঈশ্বরকে স্মরণ করতে হবে এটাই মহীউদ্দিনের "complete detachment from the world." অলবেরুনী মনে করেন যে, সুফীবাদের আত্মা সম্পর্কিত মতবাদ পতঞ্জলির যোগসূত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল ত্রয়োদশ শতাব্দীর বিখ্যাত সুফী সাধক শেখ নিজামুদ্দিন আউলিয়া নাথ যোগীকৃত মানবদেহের বিভাজন মেনেনেন এই মতানুসারে মানবদেহের দুটি অংশ মাথা থেকে নাভি পর্যন্ত অংশ হল আধ্যাত্বিক শিবের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং পবিত্র নাভির নিম্নে দেহের অবশিষ্ট অংশ শক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত এবং অপবিত্র প্রায় অনুরূপভাবে সুফী সন্ত শেখ নাসিরউদ্দীন চিরাগ--দেহেলি হিন্দু যোগীদের শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেছিলেন কাজেই সুফী মতবাদের সঙ্গে ভারতীয় হিন্দু তথা বৌদ্ধ ধর্মের স্বাদৃশ্য কোনভাবে অস্বীকার করা যায় না

সুফী দর্শনে পীর বা গুরুর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঈশ্বরের সঙ্গে আত্মার মিলনের জন্য মুরিদ বা শিষ্যকে পীর সঠিক পথ ও পদ্ধতির সন্ধান দেন একটি মতানুসারে একজন সুফী সাধনার দশটি স্তর অতিক্রম করলে তবেই ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করতে পারে এই দশটি স্তর হল i) তত্তবা বা অনুশোচনা, ii) ওয়ারা বা নিবৃত্তি, iii) সবর বা সহনশীলতা অর্জন, iv) শূকর বা কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন, v) সুফ বা অন্যায়ের প্রতি ভীতি, vi) রজা বা আল্লাহর করুণা লাভের ইচ্ছাvii) তত্তয়াস্কুল বা আনন্দে বিষাদে অচঞ্চল থাকা, viii) রিজা বা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণ করা ভক্তিবাদী সাধকদের মত সুফীরা ও পার্থিব জগতের সাথে সম্পর্ক শূন্য থাকাকে আবশ্যিক বলে মনে করতেন সুফীদের একাংশ বিবাহ করে সাধারণ সংসার জীবন যাপন করলেও অধিকাংশই পীরের নেতৃত্বে নির্জন স্থানে খানকা বা দরগায় বসবাস করতেন এবং ইসলামীয় শাস্ত্র চর্চা করতেন শিক্ষাদীক্ষা ছাড়াও দরগাগুলি দরিদ্রকে অন্নদান ও চিকিৎসার কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হত কোন কোন সুফী পন্ডিত জমিতে চাষাবাদ করলেও সুফীরা জীবিকা নির্বাহের জন্য মূলত মানুষের অযাচিত দানের উপরেই নির্ভর করতেন সুফীরা মূলত দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল যারা ইসলামী আইন কানুন বা শরা অনুসরণ করতেন তাঁরা ছিল শরা, সংখ্যালঘিষ্ঠ অংশ কোন ধরনের নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ না থেকে মুক্তভাবে অন্তরের বিকাশে আস্থাবান ছিলেন এদের বলা হত বেশরা ভারতে প্রথমোক্ত গোষ্ঠীই অধিক প্রভাব বিস্তার করেছিল

প্রথম পর্বের প্রখ্যাত সুফী সাধকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বসরার মহিলা সুফী রাবেয়া (অষ্টম শতকএবং মনসুর বিন হল্লাজ (দশম শতক) তাঁরা প্রচার করেন সর্বভুতেই ঈশ্বরের সাথে মানুষের মিলন সম্ভব, স্রষ্টা ও সৃষ্টি সম্পর্কে এই অভেদ ধারণা গোড়াপন্থীদের ক্ষুব্ধ করে এবং তা শিয়া ও সুন্নী উভয় সম্প্রদায়ই সুফীদের বিরুদ্ধাচারণ করে শেষ পর্যন্ত আরবীয় দার্শনিক আল গজালী (১১০৫-১১১২সুফীদের অতীন্দ্রিয়বাদ ও ইসলামের গোঁড়া মতবাদের মধ্যে একটা সমন্বয় সাধনের কাজে কিছুটা সফল হয় তিনি ইসলামের রহস্যবাদকে অধিবিদ্যামূলক ভিত্তি দেন এবং যুক্তি দ্বারা প্রমাণ করেন যে অতীন্দ্রিয়বাদ যুক্তিসম্মতসুফী মতবাদের বিবর্তনে বায়াজিদ বুষ্টামি নামে জনৈক পার্শিয়ান ধর্ম প্রচারকের নাম খুবই প্রশিদ্ধ তিনি ঈশ্বরীয় অনুভূতিতে আবেগ ও অতীন্দ্রিয় ভাববাদ আরোপ করেন প্রথম সুফী লেখক আব্দুল্লা-আল মুহসিন বাইবেলের গসপেলের ভঙ্গিতে সুফী মতবাদ প্রচার করেন হূসেন ইবন হানসুর আল হামাজ রচিত 'ইনসান- কমিল', ফরিদউদ্দিন অ্যাটার রচিত তদ কিরত অল আউলিয়া এবং জালাল উদ্দিন রুমি রচিত 'মসনবি' গ্রন্থগুলি সুফী সমাজের উপর ঈশ্বরোপাসনার বিভিন্ন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে

পাঞ্জাবে গজনীর সুলতান মামুদের আগ্রাসনের (১০০০-১০২৭অব্যবহিত কাল পরেই ভারতে সুফী মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হয় লাহোরের শেখ ইসমাইল ভারতে সুফীবাদের প্রথম প্রচারক তাঁর অনুগামী শেখ আলি-বিন-উসমান অ্যাল হুজৌরি ভারতে সুফী মতবাদকে জনপ্রিয় করে তোলেন সুফীদের মধ্যে অনেকগুলি উপদল বা সিলসিলাহ তৈরী হয়েছিল আবুল ফজল লিখেছেন যে ভারতে মোট চৌদ্দটি সুফী সম্প্রদায় প্রবেশ করেছিল এগুলির মধ্যে চিস্তি ও সুরাবর্দী সম্প্রদায়ের কার্যকলাপ মূলত সীমাবদ্ধ ছিল সিন্ধু ও উত্তর পশ্চিম ভারতে কিন্তু চিস্তি সম্প্রদায় প্রভাব সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে

ভারতে চিস্তি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন খাজা মইনুদ্দিন চিস্তিলাহোর, দিল্লি এবং মূলত আজমীরে তিনি তার কার্যকলাপ বজায় রেখেছিলেন একজন হিন্দু সন্নাসীর মত তিনি জীবন যাপন করতেন এবং বেদান্ত দর্শনের মতই অদ্বৈতবাদ প্রচার করেন আজমীরে মইনুদ্দিনের (১১৪১-১২৩৫) সমাধি হিন্দু-মুসলমান উভয়ের কাছেই পবিত্র স্থান রূপে গণ্য হয় মইনুদ্দিনের একজন উল্লেখযোগ্য শিষ্য শেখ হামিদউদ্দিন রাজপুতানার নাগাউবে গৃহী জীবনযাপন করতেন এবং হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সুফীতত্ত্ব প্রচার করেন অপর শিষ্য সেখ কুতুবউদ্দিন সুলতান ইলতুৎমিসের রাজত্বকালে দিল্লিতে দরগা প্রতিষ্ঠা করেন অনুমান করা হয় সঙ্গীতানুরাগী এই সুফী সাধকের স্মৃতিরক্ষার্থেই সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবক দিল্লিতে কুতুবমিনারের নির্মাণ শুরু করেছিলেন। মইনুদ্দিনের অপর শিষ্য শেখ ফরিদ বা বাবা ফরিদ (১১৭৫-১২৬৫) বর্তমান পাকিস্তানের অযোধ্যা অঞ্চলে খানকা স্থাপন করেন 

হিন্দু ভক্তিবাদী সাধকদের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এত উদার ও উচ্চমার্গের ছিল যে পরবর্তীকালে শিখদের আদিগ্রন্থে শেখ ফরিদের বহু পদ উপস্থাপিত হয়েছে বাবা ফরিদের শিষ্য হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া ছিলেন (১২৩৬-১৩২৫চিস্তি সম্প্রদায়ের সর্বাধিক জনপ্রিয় সুফী সাধকআমির খসরু নিজামুদ্দিনের শিষ্য ছিলেন নিজামুদ্দিনের উদা ধর্মনিরপেক্ষতার মতবাদ উলেমাদের ক্ষুব্দ করলেও তাঁর বাণী সারা ভারতে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলনিজামুদ্দিনের শীর্ষ শেখ নাসিরউদ্দিন মামুদ পরবর্তীকালে চিরাগ--দিল্লী নামে পরিচিত হন চিরাগ--দিল্লীর একজন শিষ্য মহম্মদ গেসুদরাজ গুলবর্গায় গিয়ে সুফীবাদ প্রচার করেছিলেন এবং অলৌকিকতাবাদ সম্বন্ধে ত্রিশটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেনপ্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে চিস্তি সম্প্রদায়ভুক্ত সেলিম চিস্তির একান্ত অনুগামী ছিলেন মুঘল সম্রাট মহামতি আকবর চিস্তি সিলসিলার প্রধান কেন্দ্রগুলি ছিল আজমী, নবনৌল, সারওয়ালনাগাউর, হানসী, অযোধ্যা, বাদাউন ইত্যাদি স্থান।

ইরাকের বাগদাদে সুরাবর্দী সিলসিলাহর প্রতিষ্ঠাতা শিহাব উদ্দিন সুরাবর্দী মুলতানের শেখ বাহাউদ্দিন জাকারিয়া আরব দেশে গিয়ে সুরাবর্দীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন এবং মুলতানে এসে খানকা প্রতিষ্ঠা করেনসুরাবর্দী ধর্মাদর্শন প্রচার করেন এই সম্প্রদায়ের অন্যান্য প্রখ্যাত সন্ত ছিলেন সদরুদ্দিন আরিফসৈয়দ জালালউদ্দিন বুখারী প্রমূখ সুরাবর্দী সিলসিলাহ থেকেই পরবর্তীকালে জন্ম লাভ করে ফিরদৌসী ও সাত্তারি তারিখ সিলসিলা যথাক্রমে বিহার ও বাংলায়

চিস্তি ও সুরাবর্দী সম্প্রদায়ের মধ্যে কতগুলি মৌলিক পার্থক্য ছিল চিস্তি সন্তরা নির্জন স্থানে খানকা স্থাপন করতেন এবং সহজ সরল ও কঠোর সংযমপূর্ণ জীবন যাপন করতেন সমাজের হীন দরিদ্র ও অবহেলিত মানুষের জন্য তাদের সাধনগৃহ সর্বদাই উন্মুক্ত থাকত কিন্তু সুরাবর্দী সম্প্রদায় অতিরিক্ত কৃচ্ছসাধনে বিরোধী ছিলেন এঁরা ধর্মসংক্রান্ত বা বিচার বিভাগীয় উচ্চপদে যুক্ত থেকে ধর্ম চর্চা করতেন সমাজের উঁচু শ্রেণীর যোগাযোগ ছিল গরীব মানুষেরা এঁদের খানকায় প্রবেশাধিকার পেতেন না

শেখ মহীউদ্দিনের মতবাদের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে একজন প্রেমিক যেমন প্রেমিকার জন্য উদগ্রীব হয় একজন সুফীও সবকিছু ভুলে ঈশ্বরের সান্নিধ্যেরর জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। সুফীরা মানবসেবা, দরিদ্র নিরামিষ খাদ্য, শান্তি, মৈত্রী ও অহিংসাব্রতকে অন্তরের সঙ্গে পালন করে ভারতে সনাতন বেদ, উপনিষদ বা ভাগবদ্‌ গীতায় এসব কথা বহুদিন আগে থেকে বলা হলেও নিম্নবর্ণের হিন্দুরা তাঁর বিন্দু বিসর্গও জানতো না উচ্চবর্ণের অবহেলার শিকার হয়ে এই অন্তজ শ্রেণি চরম দারিদ্র, চরম অজ্ঞতা নিয়ে প্রায় মনুষ্যত্বের জীবনযাপন করত ভারতের মধ্যে এই শোষিত দরিদ্র হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে সুফীদের সহজ সরল জীবনযাপন এবং বৈরাগ্য ও উদারতা সহজেই গ্রহণযোগ্য হয়ে  ফীরা এদের শোনালেন ইসলাম ধর্ম প্রেমের ধর্ম এবং ঈশ্বরের কাছে মানুষের কোন ভেদাভেদ নেই হিন্দুদের আকৃষ্ট করার জন্য সুফীরা হিন্দু সাধুদের মত পোশাক পরত এবং আচার-আচরণ পালন করত। তান্ত্রিক ক্রিয়াকলাপের প্রতি সাধারণ ভারতীয়দের একটা গভীর টান আগে থেকেই ছিল সুফী পীর ও দরবেশদের অলৌকিক শক্তি প্রদর্শনের দক্ষতা স্বাভাবিক কারণেই সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে তোলে অনেকেই পীরের দরগায় নিয়মিত আসতে শুরু করে এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে হিন্দু রাজারাও তাদের শাসনাধীন অঞ্চলে সুফীবাদের কার্যকলাপের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে কোন বাধা দান করেন নি ফলে অনুকূল বাতাবরণে সুফীবাদ অতি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল

মধ্যযুগীয় ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতিতে সুফীবাদের প্রভাব কতখানি পড়েছিল তা আলোচনা করা যেতে পারে সুফীবাদের সার্বজনীন আদর্শ ধর্মীয় উত্তেজনা প্রশমিত করে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ককে সাবলীল করে তুলতে সাহায্য করেছিল ইসলামের সাম্যবোধ ও বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব বোধের আবেদন (সুল -কুলের আদর্শসুফী দর্শনের মধ্যে সবচেয়ে বেশী স্পষ্টরুপে প্রকাশ পায় সুফী দর্শন মুসলিম যুব সম্প্রদায়ের নৈতিক মনোনয়ন ঘটাতে সাহায্য করে সুফিবাদের সাম্য ভাবনা বহু নিম্নবর্ণের হিন্দুকে আকৃষ্ট করলেও প্রচলিত হিন্দু ধর্মের উপর সুফীবাদের প্রত্যক্ষ প্রভাব ছিল নগণ্য ঐতিহাসিক এ. এলশ্রীবাস্তব মনে করেন যে, সুফীরা দীর্ঘকাল ধরে ভারতে তাদের ধর্মমত প্রচার করলেও বৃহত্তর সমাজের উপর তার কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি নিম্নবর্ণের হিন্দু গোঁড়া সুন্নীদের কাছে পাত্তা না পেয়ে সুফী সম্প্রদায়ের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিল এবং তাদের সঙ্গে মেলামেশা করত সাধারণ হিন্দুসমাজ সুফিদের সঙ্গে সুন্নী ইসলামের কোন পার্থক্য খুঁজে পায়নি এবং সুফী মতবাদ যা বলত তাদের ধর্মের ঐশ্বর্যের ক্ষেত্রে তা নিতান্তই নগণ্য বলে হিন্দুরা এদের সংশ্রব এড়িয়ে চলত

ডঃ অনিল চন্দ্র ব্যানার্জি মনে করেন যে, সুফীরা ত্রয়োদশ শতাব্দীর পূর্বে ভারতের নিম্ন বর্ণের কিছুসংখ্যক হিন্দুকে ধর্মান্তরিত করতে সক্ষম হলেও  শতাব্দীর পরে তাদের কর্মকাণ্ড সীমিত হয়ে পড়ে এর কারণ হলো রাজ ক্ষমতায় ক্ষমতাশালী উলেমাদের কর্তৃত্বের ছায়া থেকে তারা নিজেদের স্বাতন্ত্রকে পৃথক রাখতে পারেননি রমেশচন্দ্র মজুমদার এই প্রসঙ্গে বলেছেন যে, মধ্যযুগের ভারতে সুফীবাদের গুরুত্ব খুব একটা বেশি নয় কারণ এই ধর্মমতের প্রভাবে ধর্মান্তরিত সুফী ইসলামের সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য হিন্দুরা হিন্দুদের মত এবং মুসলমানরা মুসলমানদের মতই পার্থক্য বজায় রেখে চলেছিল দুটি ধর্ম যেন একটি নদীর পরস্পর বিপরীত দুই তীর দুই তীরের মধ্যে সুফীরা সেতুবন্ধনের চেষ্টা করলেও তা কার্যকরী হয়নি স্থানীয়ভাবে হয়তো সাময়িক কোন সেতু রচিত হলেও তা চিরস্থায়ী হয়নি অন্যদিকে মুসলিম ঐতিহাসিক ইউসুফ হুসেন মনে করেন যে কোরানের শিক্ষাকে সুফীরা ভারতের মৃত্তিকায় সুপ্রোথিত করেছে। সুফীরা কোরানের মৌলবাদী নীতি থেকে আধ্যাত্ম সাধনার দিকটি পৃথক করে জনমানসে প্রতিষ্ঠা করেছে যাদের হৃদয় মৌলবাদী ভাবনা-চিন্তায় সন্দীহান, তাদের কাছে সুফী মতবাদ ছিল শান্তির  প্রলেপ

ঐতিহাসিক বক্তব্যকে অনুসরণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, হিন্দু সমাজে অবহেলিত নিম্নবর্ণের মানুষ যারা একত্রে উপাসনা বা মুক্তি লাভের উপায় সন্ধানের অধিকার থেকে বঞ্চিত তারাই বা তাদের একটি বৃহৎ অংশ সাম্যবাদী সুফী দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল এছাড়া মধ্যযুগের শিক্ষা ও সাহিত্যের উপর সুফী দর্শনের ও সুফী আন্দোলনের প্রভাব ছিল লক্ষণীয় সুফীদের খানকা বা জামাতখানাগুলি বিদ্যাচর্চা ও জ্ঞানান্বেষণের অন্যতম কেন্দ্র ছিল। অনেক খানকায় নিয়মিত বিদ্যালয় পরিচালন করা হতো সুফীরা হিন্দী ও উর্দু ভাষার সমন্বয়ে হিন্দভী ভাষায় কবিতা রচনা করার ফলে তা সাধারণ মানুষের বোধগম্য হয় এবং হিন্দী ভাষারও শ্রীবৃদ্ধি ঘটে সুফীদের গীত বাউল ধর্মী 'সম' গান ভারতীয় সঙ্গীতকে পুষ্ট করেছিল

ইসলাম ধর্ম তার হিন্দু বিদ্বেষ নিয়ে, মৌলবাদী ধ্যান ধারণা নিয়ে, উলেমাদের অপ্রতিহত ক্ষমতার দম্ভ নিয়ে, জিম্মি বা অমুসলমানদের উপর জিজিয়া প্রয়োগ নিয়ে যখন ভারতে তার রাজকীয় দীপ্তি ও মহিমা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল, হিন্দুরা ও তাদের প্রতি অত্যাচারের ক্ষত বুকে নিয়ে তাদের ধর্ম ও সমাজকে রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর হয়ে সুকঠীন মৌলবাদী চিন্তার মধ্যে নিজেদের আবদ্ধ রেখেছিল। এই ধর্মীয় ঘাত প্রতিঘাতের কালপর্বে ইসলামী ও সুফীবাদ বা হিন্দু ভক্তিবাদ ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে এবং অহিংসার মন্ত্রে সকলকে বাঁধতে চেয়েছিল। এই আঙ্গিকে বিচার করলে সুফীবাদ ইসলামের ভারতীয় করন করার প্রচেষ্টা চালিয়ে ছিল মানুষের ওপর বল প্রয়োগ করে নয়, মানুষের হৃদয় জয় করেছে ভালোবাসার উদারতার দানকার্য ও সমাজ সেবার মাধ্যমে যার ফলশ্রুতি হিসেবে গোঁড়ামী, রক্ষণশীলতা, জাতিভেদ সাম্প্রদায়িকতার পরিবর্তে সহিষ্ণু এবং সমন্বয় মূলক সংস্কৃতির বিকাশ


আরও খবর



স্পেনকে হারিয়ে শিরোপা রোনালদোর হাতে

প্রকাশিত:সোমবার ০৯ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে সবার চোখ ছিল স্পেনের লামিনে ইয়ামাল ও পর্তুগালের ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দিকে। তবে রোনালদো গোল পেলেও পুরো ম্যাচে নুনো মেন্দেসের কাছে বোতলবন্দী হয়ে থাকেন ইয়ামাল। শেষ পর্যন্ত জয় হলো রোনালদোরই। উয়েফা নেশনস লিগের ফাইনালে পর্তুগাল ও স্পেনের ম্যাচ নির্ধারিত সময়ে ২-২ গোলে ড্র হওয়ার পর টাইব্রেকারে স্পেনকে ৫৩ গোলে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতল পর্তুগাল।

প্রথম দল হিসেবে একাধিকবার উয়েফা নেশনস লিগ জিতল পর্তুগাল। এর আগে, ২০১৯ সালে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে নেশনস লিগের প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল রোনালদোদের দল।

গতকাল রবিবার রাতে জমজমাট এই ফাইনালই দেখল ফুটবলবিশ্ব। কোনো দলই একাধিপত্য দেখাতে পারেনি। যদিও দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বল দখলে এগিয়ে ছিল স্পেনই। গোলেও প্রথম এগিয়ে গিয়েছিল তারা। ২১ মিনিটে গোল দেন স্পেনের মার্তিন জুবিমেন্দি। ৫ মিনিট পর পর্তুগিজরা সমতায় ফেরে নুনো মেন্দেজের গোলে।

প্রথমার্ধের খেলা শেষ হওয়ার ঠিক আগে গতবারের চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে আবার এগিয়ে দিয়েছিলেন মিকেল ওইয়ারসাবাল। এই গোল শোধ দিতে বেশ সময় লাগল পর্তুগিজদের। ৬১ মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে গোল দেন সুযোগসন্ধানী রোনালদো। ৯০ মিনিট এই সমতাতেই শেষ হয় ম্যাচ। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও আসেনি কোনো গোল। এরপর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। 

টাইব্রেকারে পর্তুগালের হয়ে প্রথম শটেই গোল করেন গনসালো রামোস। পরের দুইটি গোল আসে ভিতিনিয়া ও ব্রুনো ফার্নান্দেজের কাছ থেকে। স্পেনের হয়ে প্রথম তিন শটে গোল করেন মিকেল মেরিনো, অ্যালেক্স বায়েনা ও ইসকো। পরের শটে পর্তুগালের হয়ে নুনো মেন্দেজ গোল দিলেও স্পেনের অধিনায়ক আলভারো মোরাতা জাল খুঁজে পেতে ব্যর্থ হন। তবে পঞ্চম শটে গোল আদায় করে দলকে ঠিকই উচ্ছ্বাসে ভাসান রুবেন নেভেস। 


আরও খবর



আমি সুইসাইড করার মতো মেয়ে নই

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ২০ মে ২০25 | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

সোমবার রাতে হঠাৎই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে চিত্রনায়িকা পরীমনির মৃত্যুর গুজব। এরপর রাতেই নিজের ফেসবুক পেজে লাইভে এসে জানান দেন বেঁচে আছেন তিনি। কেবল তাই নয়, মানুষের এমন উদ্ভট কর্মকাণ্ড নিয়ে দারুণ বিরক্ত এই নায়িকা।

ফেসবুক লাইভে পরীমনি বলেন, সারা দিন শুটিং করে যখন ফোন হাতে নিলাম, আমি শকড। ফোনকলের চেয়ে বেশি মেসেজ। ধরেন, আপনার কোনো আত্মীয়র মৃত্যুর খবর শুনলেন, আপনি সেই আত্মীয়কেই ফোন করে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি বেঁচে আছেন? যেকোনোভাবে গুজবটা ছড়িয়েছে, আমার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আমার জন্য কতটা শকিং!

এই অভিনেত্রী বলেন, মৃত্যু তো আসলে আমার হাতে নেই। আপনি তো জানেন না, কখন চলে যাবেন। আল্লাহর কাছে স্বাভাবিক মৃত্যু চাই সব সময়।

‘পরীমণির যদি অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়, তবে ধরে নিতে হবে তাকে কেউ খুন করেছে’,- ভক্তদের এ তথ্য জানিয়ে পরীমনি বলেন, এই যে আমার ঝুলন্ত মরদেহটা উদ্ধার করল, তারপরও লাইভে এসে কথা বলছি আপনাদের সঙ্গে। কোনো একটা ফোকাস সরানোর জন্য মানুষ পরীমনিকেই বেছে নেয়। আলুর দাম কমাতে পারছে না বলে পরীমনির বিয়ের খবর করে দাও। এখন বিয়ে দিতে পারছে না বলে একদম মেরে ফেলল।

‘পরীমণি আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে না’, তা পরিষ্কার জানিয়ে দিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, আমি সুইসাইড করার মতো মেয়ে না। আমার জীবনে এখন সুইসাইড করার মতো কোনো ইস্যুই নাই। আমার দুইটা বাচ্চা নিয়ে, কাজ নিয়ে অনেক খুশি। এই খুশির মধ্যে আপনাদের জীবনযাপন ঢুকিয়ে দেবেন না। কিছু হইলে খালি পরীমনিকে নিয়ে টানাটানি কেন? আর কিছু খুঁজে পান না?


আরও খবর



স্টারলিংক নিয়ে হোয়াইট হাউসের ভয়ংকর তথ্য

প্রকাশিত:রবিবার ০৮ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

টেসলা ও স্পেসএক্সের সিইও ইলন মাস্কের উপগ্রহ-ভিত্তিক ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক স্টারলিংকে নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে বলে হোয়াইট হাউজের কয়েকজন বিশেষজ্ঞের বরাত দিয়ে জানিয়েছে আমেরিকার জনপ্রিয় সংবাদপত্র দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।

এমন সময় এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, যখন গত কয়েকদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার বন্ধু ধনকুবের ইলন মাস্কের সম্পর্কের ফটল নিয়ে তোলপাড় বিশ্ব।

শনিবার এনবিসির সাক্ষাৎকারে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, ধনকুবের ইলন মাস্কের সঙ্গে তার সম্পর্ক শেষ। তিনি আর সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করতে চান না।

এছাড়া সম্প্রতি ট্রাম্পের কর ও ব্যয় বিলকে জঘন্য বলে কটাক্ষ করেন মাস্ক। জবাবে ট্রাম্প বলেন, আমি ভীষণ হতাশ। কারণ, এখানে উপস্থিত অন্য যে কারও চেয়ে তিনি এ বিলের ভেতরের খুঁটিনাটি সম্পর্কে ভাল জানতেন। হঠাৎই এটি নিয়ে তার সমস্যা শুরু হয়েছে।

তবে ট্রাম্পের এ দাবিকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন মাস্ক। ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একাধিক পোস্ট দিয়েছেন তিনি। এসব পোস্টে ট্রাম্পকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতেও ছাড়েননি মাস্ক। মাস্ক দাবি করেছেন, ট্রাম্প এপস্টেইন ফাইল’–এ আছেন।

এরই মধ্যে মার্কিন সরকারের ওপর ভর করে ইলন মাস্কের যেসব ব্যবসাপাতি চলছে, সেগুলো নিয়ে তাকে হুমকিও দিয়েছেন সাবেক বন্ধু ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

এদিকে দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, হোয়াইট হাউসে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার সময় এর সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন ৩ জনের বক্তব্যের ভিত্তিতে খবরটি প্রকাশ করেছেন তারা। স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় ওই তিন ব্যক্তি নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করেননি।

তবে ওই ৩ জনের বক্তব্য হলো, গত ফেব্রুয়ারিতে মাস্কের ডিওজিই প্রতিনিধিরা হোয়াইট হাউজের পাশের আইজেনহাওয়ার এক্সিকিউটিভ অফিস ভবনের ছাদে একটি টার্মিনাল বসান। কিন্তু ঘটনাটি হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিদের আগে থেকে জানানো হয়নি।

তাদের ভাষ্য, এ ধরনের সংযোগের মাধ্যমে সংবেদনশীল তথ্য বাইরে চলে যাওয়া কিংবা হ্যাকারদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর সক্ষমতা হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের নেই।

হোয়াইট হাউসের ওই ৩ ব্যক্তির তথ্যানুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে হোয়াইট হাউস প্রাঙ্গণে মোবাইল ফোনে স্টারলিংক গেস্ট নামে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক দেখাত, যেখানে শুধু পাসওয়ার্ডই চাইত। ব্যবহারকারীর নাম বা দ্বিতীয় স্তরের যাচাই পদ্ধতি ছিল না। এই ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কটি গত সপ্তাহেও হোয়াইট হাউসে পাওয়া গেছে।

ওই ৩ কর্মকর্তার একজন বলেন, কর্মীরা যেসব কম্পিউটারে কাজ করেন, সেগুলো কঠোর নিরাপত্তা প্রোগ্রাম লক করা থাকে। বাইরের জগতের সঙ্গে তাদের যে কোনো যোগাযোগও নজরদারিতে রাখা হয়। কিন্তু স্টারলিংকে কিছুই লাগে না। এটা আপনাকে এমনভাবে তথ্য পাঠাতে দেয়, যেখানে কোনো রেকর্ড বা ট্র্যাকিংয়ের সুযোগ থাকে না।

তারা আরও বলেন, নেটওয়ার্কে হোয়াইট হাউসের আইটি সিস্টেমের জোরালো নিয়ন্ত্রণ থাকে। সব সময় পুরোপুরি ভিপিএন টানেলে থাকতে হয়। আপনি ভিপিএনে না থাকলে হোয়াইট হাউসের ডিভাইসগুলো বাইরের ইন্টারনেট সংযোগে কাজ করবে না।

ওই তিনজনের একজন বলেন, স্টারলিংকের সংযোগ হোয়াইট হাউসের ডিভাইসগুলোকে বাইরের নেটওয়ার্কে যেতে বাধা দেয় না। এটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাইপাস করতে সহায়তা করে।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, তারা এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের বক্তব্য চেয়েছিল। কিন্তু তারা বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিসে পাঠিয়ে দেয়। সিক্রেট সার্ভিস জানিয়েছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে নির্দিষ্ট প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের মন্তব্য করার এখতিয়ার নেই।

সিক্রেট সার্ভিসের মুখপাত্র অ্যান্টনি গুগলিয়েলমি বলেন, আমরা জানতাম ডিওজিই হোয়াইট হাউস কমপ্লেক্সে ইন্টারনেট সংযোগ উন্নত করতে চাচ্ছে এবং আমরা এটিকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি বিবেচনা করিনি।

এছাড়া এ বিষয়ে স্টারলিংকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয় ওয়াশিংটন পোস্টের পক্ষ থেকে। তবে স্টারলিংকের তরফ থেকেও কোনো সাড়া পাওয়া যাননি। 

যদিও ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠানটি বরাবরই বলে আসছে যে, তাদের স্যাটেলাইট সংযোগগুলো হ্যাক করা তুলনামূলক কঠিন।


আরও খবর