
নিজস্ব প্রতিনিধি, পার্বতীপুর
পার্বতীপুুরে রেলহেড অয়েল ডিপোতে পেট্রোল ও অকটেনের মজুদ আশংকাজনক হারে কমে যাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলায় পেট্রোল ও অকটেনর সরবরাহ প্রায় ১৫দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এ ডিপোতে দৈনিক পেট্রোলের চাহিদা ১ লাখ ৮০ হাজার লিটার। বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে মাত্র ১ লাখ ৮০ হাজার লিটার ডিপোতে পেট্রোল সরবরাহ দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, প্রায় ২ মাস ধরে মৌলভীবাজারের রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড হতে রেলপথে পার্বতীপুর রেলহেড অয়েল ডিপোতে পেট্রোল ও অকটেন সরবরাহ দেয়া হচ্চে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের আওতাধীন ৩ কোম্পানী পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানী লিমিটেড একদিন পরপর ট্যাংকলরীতে করে ৪ লাখ ৫ হাজার লিটার পেট্রোল পার্বতীপুুর রেলহেড অয়েল ডিপোতে পেট্রোল সরবরাহ করতো। এ ডিপো থেকে প্রতিদিন উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলা ঠাকুরগাও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও গাইবান্ধাসহ ৪৫০ পেট্রোল পাম্পে পেট্রোল সরবরাহ করা হয়ে থাকে যা দিয়ে এ অঞ্চলের পেট্রোল ও অকটেনের চাহিদা পুরণ হয়। প্রায় ২ মাস ধরে রশিদপুর গ্যাস ফিল্ড থেকে হঠাৎ করে পেট্রোল ও অকটেন আসা কমে যাওয়ায় ডিপোতে এ সংকট দেখা দিয়েছে।
জ্বালানি তেল পরিবেশক ও পেট্রোল পাম্প প্রতিনিধিদের অভিযোগ, তারা চাহিদা অনুযায়ী তেল পাচ্ছেন না। পেট্রোল ও অকটেন সংকট চরমে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী ও দিনাজপুরে। ইতিমধ্যে পেট্রোল ও অকটেন না থাকায় দুই শতাধিক তেল পাম্প বন্ধ হয়ে গেছে। শিগগিরই পেট্রোল ও অকটেন সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে সংকট চরম আকার ধারণ করবে।
পেট্রোল ও অকটেন নিতে আসা ট্যাংকলরীগুলো টার্মিনালে ৮/১০ দিন অপেক্ষা করেও পেট্রোল ও অকটেন না পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
পার্বতীপুরে ফিলিং স্টেশনগুলোতে পেট্রোল ও অকটেন সংকটের কারণে জ্বালানি না পেয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে যানবাহন চালকদের।
ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে এ অবস্থা চলছে বলে জানিয়েছেন তেল বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলো।
দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, পার্বতীপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের রিয়েল ফিলিং স্টেশনসহ কয়েকটি পাম্পে তেল নেই। পেট্রোল ও অকটেন না থাকায় মোটরসাইকেল চালকদের ফিরে যেতে হচ্ছে। পাম্প পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।
রিয়েল ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক মোঃ নুরুল নবী জানান, ঈদের কয়েকদিন আগেই পেট্রোল ও অকটেন সংকট চরমে পৌঁছেছে। মানুষকে দিতে পারছি না। গত ২৮ এপ্রিল ৯ হাজার লিটার পেট্রোল ও ৪ হাজার ৫শ লিটার অকটেন এসেছিল। সেগুলো বিকেলের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। তিনি আরও জানান, প্রতিদিন এ পাম্পে সাড়ে ৩ হাজার লিটার পেট্রোল ও ১ হাজার ৩শ লিটার অকটেন প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু সরবরাহ না থাকায় আমরা গ্রাহককে পেট্রোল ও অকটেন দিতে পারছি না। যার কারণে তেল না থাকায় পাম্পে গায়ে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।
নীলফামারী সৈয়দপুর শহরের ইকু ফিলিং স্টেশনের মালিক মোঃ সিদ্দিকুল আলম জানান, প্রায় মাস থেকে পেট্রোল ও অকটেন সংকট দেখা দেয়। পার্বতীপুর তেল ডিপোতে না পেয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি ডিপো থেকে তেল নিয়ে পাম্পগুলো চালাতে হচ্ছিল। কিন্তু এখন বাঘাবাড়ি ডিপোতেও পেট্রোল ও অকটেন পাওয়া যাচ্ছে না। তবে, পাম্পগুলোতে ডিজেল সরবরাহ রয়েছে।
দিনাজপুর জেলা পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক এটিএম হাবিবুর রহমান শাহীন জানান, পার্বতীপুর রেলহেড অয়েল ডিপোতে প্রায় ১৫ দিন ধরে পেট্রোল ও ৭ দিন ধরে অকটেনের সংকট চলছে। আমরা চাহিদা মত পেট্রোল ও অকটেন সরবরাহ পাচ্ছি না। এরফলে প্রায় অনেক তেল পাম্প বন্ধ হয়ে রয়েছে।
শনিবার রাত ৮টার দিকে মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজার কাজী মোঃ রবিউল জানান, শনি এবং রবিবার ৬ লাখ পেট্রোল ডিপোতে এসেছে। আজকের মধ্যে ডিপোতে আরও ৪ লাখ লিটার পেট্রোল ও দেড় লাখ অকটেন এসে পৌছাবে। ঈদের ছুটি থাকায় এ সাময়িক সমস্যা হয়েছে বলে তিনি দাবী করেন। বর্তমানে তিন কোম্পানী পদ্মা, মেঘনা ও যমুনায় প্রায় ২০ লাখ ডিজেল মজুদ রয়েছে।
এ বিষয়ে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল তিন কোম্পানীর পার্বতীপুর রেলওয়ে অয়েল হেড ডিপোর ইনচার্জ এমরানুল হাসানের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।