গতকাল রাত প্রায় ১০ টা, শাজাহানপুর এর রাজারবাগ মোড়, সামনে সাংবাদিক লেখা এক মোটরসাইকেল সিগন্যাল অমান্য করে যেতে চাচ্ছিল আর তখন তাকে দৌড়ে এসে ২ ট্রাফিক কন্সটেবল আটকালো, সে তখন তার সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছে কিন্তু কন্সটেবল তাকে রুল ভায়োলেশন করে যেতে দিবে না। এক পর্যায়ে এক কন্সটেবল তার ইউনিফর্ম টা দেখিয়ে বলছিল “আমি ত এই ইউনিফর্ম পইরা দারাইছি এখানে……” পাশ দিয়ে সাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় আমিও একটু দাড়ালাম আর ঐ সাংবাদিক ভাই কে বললাম “ ভাই আইনটা মানেন, কথা শুনেন…” । আমি যে সব আইন মানি তা কিন্তু না কিন্তু ঐ যে, আইন যেহেতু অন্য কারো উপরে প্রয়োগ হচ্ছে তাই আমি একটু কথা শুনানোর চিরাচরিত বাঙালি স্বভাব ছাড়তে পারলাম না যদিও আমার উপরে প্রয়োগ হলে চিরাচরিত সেই বাঙালি নিয়মে বেজার হইতাম …।
কথা সেটা না, কথা হচ্ছে, ঐ কন্সটেবল যে ইউনিফর্ম টা যেভাবে অউন করল সেটা ভালো লাগছে কিন্তু আজ (১১-০৫-২০২৫) ছুটির দিনে বাসায় ফ্যান এর নিচে বসেও যখন গরমে অস্থির হচ্ছি তখন ঐ গর্বের ইউনিফর্ম পরে যে ট্রাফিক পুলিশ এখনো রাস্তায় আমাদের মত সুযোগ সন্ধানী চালকদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে সেই ইউনিফর্ম তাকে কতটা সস্তি দিচ্ছে ???
গরমের সময় ট্রাফিক পুলিশের ড্রেস টা কিছুটা চেঞ্জ করা যায় কিনা সেটা নিয়ে বেশ কয়েকবার বিভিন্ন মিটিং এ আলোচনা করেছিলাম কিন্তু হয় না,। যারা সিধান্ত নিবেন তারা এসি রুমে বেশী থাকেন বলে এমনটা হতে পারে। তারা লোক্মুখে শুনেন যে অনেক গরম আর মোবাইল এ টেম্পারেচর দেখেন। আর পরিবারকে ফোন দিয়ে বলেন বেশী করে পানি খেতে, ঘরে থাকতে ...
অনেকের সাথে কথা বলে আমার কাছে মনে হয়েছে ট্রাফিক পুলিশদের কাজে ২ টা মেজর সমস্যা হয়:
১) তাদের পোশাক মোটা কাপড়ের। সরকার থেকে যে কাপড় দেয়া হয় সেটা কিছুটা মোটা। অনেকেই নিজেরা আলাদা করে কিছুটা পাতলা কাপড় দিয়ে ড্রেস বানায়।
২) অফিস ত দূরের কথা ভালো কোন বসার জায়গা, বাথরুম নাই। যা অল্প কিছু আছে সেটা সিনিয়র অফিসার দের জন্য। এবং সেগুলাও সব রস্তার ডিভাইডার এ বা পাশে। যেখানে তাপমাত্রা স্বাভাবিক এর চাইতে ২/৩ ডিগ্রি বেশী।
এ ধরনের গরম পড়ে এমন দেশে ট্রাফিক পুলিশের জন্য কিছু ব্যাবস্থা নেয়, যেমন দুবাই এ ট্রাফিক পুলিশেরা হালকা, বাতাস চলাচলের উপযোগী সুতি কাপড়ের ইউনিফর্ম পরেন, সাথে ক্যাপের নিচে কুলিং ফ্যাব্রিক ব্যবহৃত হয়। রাস্তায় ছোট ছোট শীতল ক্যাবিন আছে, যেখানে পানি ও বিশ্রামের সুবিধা আছে। সিঙ্গাপুরে হালকা রঙের (সাদা/নীল) ইউনিফর্ম, মাথায় ব্রিমযুক্ত হ্যাট, এবং নির্দিষ্ট স্থানে এয়ার-কুল্ড রেস্ট পয়েন্ট রয়েছে। পাশের দেশ ভারতে কিছু রাজ্যে ট্রাফিক পুলিশের ইউনিফর্মে সুতি কাপড় ও ভেন্টিলেশন সিস্টেম যুক্ত করা হয়েছে,। এছাড়া বিভিন্ন দেশ এমনকি শীতপ্রধান দেশেও আমি দেখেছি যে পুলিশ “ Police” লেখা গেঞ্জি আর প্যান্ট পরে কোমরে লজিস্টিকস বেল্ট পরে কাজ করছে।
আমার মনে হয় সংস্কার করার সুযোগ যদি চলে গিয়ে না থাকে তাহলে আমরা ভাবতে পারি কিভাবে আরামদায়ক সুতা দিয়ে ইউনিফর্ম বানানো যায় বা গরমের সময় আলাদা ড্রেস কোড হতে পারে। মোটা কাপড়ের বদলে বাতাস চলাচল করতে পারে এমন, সুতি বা ময়েশ্চার-উইকিং ফ্যাব্রিকের ইউনিফর্ম চালু করা যেতে পারে। এই জায়গায় পুলিশ চাইলে বিভিন্ন গার্মেন্টস এর সাথে কোলাবোরেশন করতে পারে যে তারা নতুন কোন সুতা বা ফ্রেব্রিক বানাতে পারে কিনা। রাস্তার পাশে ছোট শেড/ক্যাবিন বসানো, যেখানে পানি, পাখা ও জরুরি টয়লেট সুবিধা থাকবে। আর অতিরিক্ত গরমে ডিউটি সময় কমিয়ে ঘনঘন রোটেশন করা।
গতকাল যে পুলিশ ভাই ড্রেস টা দেখিয়ে গর্ব করছিল সেটা যেন তার অসুস্থতার কারন না হয় …। ফিমেল ট্রাফিক পুলিশদের অবস্থা ত আরও মেসারেবল...।
এতটুকু লেখতে ৩ বার পানি খেয়েছি আর এখন ওয়াশরুমে যাব…। ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে থাকলে পারতাম ??? পানি কম খেতাম ওয়াশরুমের যাওয়ার ভয়ে, আর অসুস্থ হতাম…