তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের যে
ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে, তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন মার্কিন কংগ্রেসের
আট সদস্য।
শ্রমিকরা যে মাসিক ২৩
হাজার টাকা মজুরি দাবি করেছিলেন, তা না মানা শুধু দুঃখজনক নয়, লজ্জাজনক বলেও মনে
করেন তারা। এ পরিস্থিতিতে ২৩ হাজার টাকা বা ২০৮ ডলারের ন্যূনতম মজুরির দাবি মেনে
নিতে সরকার ও তৈরি পোশাক খাতের উৎপাদকদের চাপ দিতে আমেরিকান অ্যাপারেলস অ্যান্ড ফুটওয়্যার
অ্যাসোসিয়েশনকে (এএএফএ) চিঠি দিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসের এ সদস্যরা। ১৫ ডিসেম্বর
মার্কিন কংগ্রেসের এ আট সদস্য এএএফএ সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী স্টিভেন ল্যামারের
কাছে এ চিঠি দিয়েছেন।
চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের যে মজুরি বৃদ্ধি
করা হয়েছে, তা দিয়ে জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় মেটানো সম্ভব নয়। এতে শ্রমিকদের
প্রতিবাদ আন্দোলন আরো তীব্র হয়েছে। আন্দোলন দমন করতে পুলিশ সহিংস পথ বেছে নিয়েছে।
এতে অন্তত চারজন নিহত হওয়ার পাশাপাশি অসংখ্য শ্রমিক আহত হয়েছেন; শ্রমিক নেতাদের
অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করে আটক করা হয়েছে; এমনকি অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ
রাখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশের পোশাকশ্রমিকদের
ন্যায্য মজুরির দাবির প্রতি সমর্থন জানালেও কংগ্রেস সদস্যরা মনে করেন, শুধু কথায়
কাজ হবে না।
সেজন্য এএএফএর
প্রতি তাদের আহ্বান :
১. তারা যেন শ্রমিকদের
আন্দোলনে দমন-পীড়ন বন্ধ করতে তাৎক্ষণিক আহ্বান জানায়।
২. তারা যেন শ্রমিকদের
২৩ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরির দাবি মেনে নিতে এবং মজুরি নির্ধারণের প্রক্রিয়া
উন্নত করতে সরকার ও মালিকপক্ষকে চাপ দেয়।
৩. তারা যেন বাংলাদেশের পোশাক সরবরাহকারীদের সঙ্গে দীর্ঘ মেয়াদে সম্পর্ক রাখার
অঙ্গীকার করে। ২৩ হাজার টাকা মজুরি দিতে যে ব্যয় বৃদ্ধি হবে, তার পুরোটা যেন
পোশাকের মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়।
৪. তারা যেন সংগঠন
করার অধিকারসহ শ্রম ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও সদস্য
কোম্পানিগুলোর সরবরাহ ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বজায় রাখে।
৫. তারা যেন শ্রমিক ও
ইউনিয়ন নেতাদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা তুলে নিতে নির্দেশনা দেয়।
৬. তারা যেন
সরবরাহকারীদের এ বিষয়ে সতর্ক করে দেয় যে, শ্রমিক ও ইউনিয়ন নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা
মামলা ও তাদের হয়রানি করা গ্রহণযোগ্য নয় এবং সেক্ষেত্রে পোশাক কেনার সিদ্ধান্ত
প্রভাবিত হতে পারে।
৭. কারখানার মালিকদের ব্যক্তিগতভাবে ও শিল্প সংগঠনের ওপর প্রভাব খাটিয়ে এটা
নিশ্চিত করে যে, সম্প্রতি বন্ধ হওয়া কারখানার শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করা হবে।
এছাড়া কংগ্রেস
সদস্যদের চিঠিতে রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণের
প্রক্রিয়া যেন বাইরের কারখানাগুলোর মতো ‘অন্যায্য’
না হয়, তা নিশ্চিত করতে এএএফএকে চাপ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। দেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ
অঞ্চলে (ইপিজেড) কর্মরত শ্রমিকদের জন্য অবশ্য খাতভেদে ১২ হাজার ৮০০ থেকে শুরু করে ১৪
হাজার ২৫ টাকা পর্যন্ত ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে ৭ ডিসেম্বর গেজেট প্রকাশ করেছে প্রধানমন্ত্রীর
কার্যালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। কংগ্রেস
সদস্যরা মনে করেন, এএএফএ এসব বিষয় নিশ্চিত করতে প্রভাব খাটানোর মতো শক্তিশালী
অবস্থায় রয়েছে।
সব শেষে চিঠিতে বলা
হয়, যুক্তরাষ্ট্র নিজের দেশে যে মূল্যবোধের চর্চা করে, বিশ্বের অন্যান্য জায়গায়
তার প্রতিফলন থাকা উচিত। বাংলাদেশের শ্রমিকদের এ আন্দোলন বিশ্বব্যাপী ন্যায্য
মজুরি ও নিরাপদ কর্মপরিবেশের আন্দোলনের অংশ। এক দেশের শ্রমিকদের ন্যায্যতার
আন্দোলনে সমর্থন করার অর্থ হলো বিশ্বের সবখানেই তা সমর্থন করা।
চিঠিতে সই করেছেন কংগ্রেস সদস্য ইলহান ওমর, জেমস পি ম্যাকগভার্ন, জ্যান শাকোস্কি,
রাউল এম গ্রিহালভা, বারবারা লি, ডেভিড জে ট্রোন, আলেক্সান্ড্রিয়া ওকাসিও-করটেজ ও
সুজান ওয়াইল্ড।