কক্সবাজারে সাড়ে তিনলাখ কোটি টাকা ব্যয়ে এগিয়ে চলছে ৭৭টি মেগা প্রকল্পের কাজ। উন্নয়নের এ মহাযজ্ঞ চলমান অবস্থায় আগামীকাল বুধবার কক্সবাজার সফর করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এ সফরকে কেন্দ্র করে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে পুরো জেলায়। প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতিও চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারের ইনানীতে ৩০টি দেশের নৌ বাহিনীর অংশগ্রহণে একটি মহড়া উদ্বোধন করবেন। বিকেলে জেলা সদরে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ শেষ হচ্ছে দোহাজারি থেকে ঘুমধুম রেললাইন সম্প্রসারণ কাজ। একই সময়ে শেষ হবে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পসহ আরও কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে কক্সবাজার।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, সাড়ে তিনলাখ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারে চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ তদারক করছেন। প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন। জেলা প্রশাসক বলেন, ‘পর্যটন শিল্প বিকাশে কক্সবাজারকে ঢেলে সাজাতে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে। টেকনাফের সাবরাং, জালিয়ারদিয়া, মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ এবং কক্সবাজার সদরের খুরুস্কুলে পর্যটনের জন্য বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আন্তর্জাতিক পর্যটন এলাকা হিসাবে কক্সবাজারের পরিচিতি যেমন বাড়বে, তেমনি দেশের অর্থনীতিতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সমুদ্র ছুঁয়ে উঠানামা করবে বড় আকারের উড়োজাহাজ : কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এ প্রকল্পটির পরিচালক ইউছুপ ভূঁইয়া জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৪৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী বছরের অক্টোবরে প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হবে। তিনি জানান, ২০১৭ সালের ৬ মে সম্প্রসারিত রানওয়েতে বিমানের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইসময় কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে ৯ হাজার ফুট থেকে ১২ হাজার ফুটে উন্নীতকরণের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সেই নির্দেশনা অনুসারে ‘কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।
মাতারবাড়ি থেকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে ১২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ: কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আগামী ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ ১২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলে আশা করছেন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
২০২৩ সালে ট্রেন আসবে কক্সবাজারে : চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১শ’ কিলোমিটার রেললাইনের নির্মাণ কাজ ২০২৩ সালের জুন মাস নাগাদ শেষ হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ‘২০২৩ সালের আগস্টের মধ্যে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল চলাচল শুরু হবে বলে আশা করছি। কক্সবাজারে ঝিনুকের আদলে নির্মিত হচ্ছে দেশের প্রথম আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন। এর কাজও শেষ পর্যায়ে।’
প্রকল্প পরিচালক জানান, কক্সবাজার ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দেরপাড়া এলাকায় তৈরি হচ্ছে ঝিনুক আকৃতির আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন ভবন। ২৯ একর জমির ওপর রেলস্টেশনটি আয়তন ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩৭ বর্গফুট। ভবনটি হবে ছয়তালা। মূলভবনের সামনে খোলা মাঠে তৈরি হবে ঝিনুকাকৃতির দৃষ্টিনন্দন একটি ফোয়ারা। যাত্রীরা ঝিনুক ফোয়ারা দিয়ে স্টেশনে প্রবেশ করবেন। ভবনটিতে থাকবে টিকিট কাউন্টার, অভ্যর্থনা কক্ষ, তথ্যকেন্দ্র, মসজিদ, শিশুদের বিনোদনের জায়গা, যাত্রী লাউঞ্জ, শপিং মল, রেস্তোরাঁ, তারকামানের হোটেল, কনফারেন্স হল ও কর্মকর্তা-কর্মচারী কার্যালয়।
সূত্র : বাসস এইচএস