ফটিকছড়িতে সুন্নী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী...
উগ্রবাদীদের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শে বিশ্বাসী সকল সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মাইজভান্ডার দরবার শরীফের বর্তমান পীর ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপি চেয়ারম্যান শাহজাদা ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী। তিনি বলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শ ও সুফিবাদে বিশ্বাসীরা শান্তিপ্রিয় ও দেশপ্রেমিক। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিতর্কিত ভূমিকা থাকলেও মাইজভান্ডার দরবার শরীফ এবং এদেশের অন্যান্য সুফি দরবারগুলো স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদেরকে আশ্রয় দিয়েছেন। সুফিরা সব সময় সকল প্রকারের জুলুম ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকেন। তাই ২০২৪ সালের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও শিক্ষার্থীদের পক্ষে লেখনী ও বক্তব্যের মাধ্যমে এদেশের সুফি পীর মাশায়েখরা অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ৫ই আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে শতাধিক মাজার, খানকা, দরগাহ্, দরবার, মসজিদ-মাদ্রাসায় হামলা লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করে কথিত মব জাস্টিসের নামে ধ্বংসযজ্ঞের উৎসবে মেতে উঠেছে এক শ্রেণীর চিহ্নিত ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী। এই উগ্রবাদী গোষ্ঠীরা গত ১২ ই রবিউল আউয়াল বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রায় অতর্কিতভাবে হামলা করেছে। এমনকি ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে এদের হাতে একজন নবী প্রেমিক শহীদ হয়েছে। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আহ্বান জানিয়েছিলাম অনতিবিলম্বে এই উগ্রবাদীদের লাগাম টেনে ধরা না হলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শী সবাইকে নিয়ে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। কিন্তু সরকার আমাদের আল্টিমেটামকে মোটেই কর্ণপাত করেছে বলে মনে হয় না। সম্প্রতি শেরপুরের মুর্শিদপুর দরবারকে পুরোপুরি ধ্বংস করেই এরা কান্ত হননি দরবারের সকল গাছগাছালি পশু পাখিকে পর্যন্ত অত্যাচার করেছে। বিএসপি চেয়ারম্যান উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন, ইসলামের নাম দিয়ে করলেই তাদের সকল কাজ কি হালাল হয়ে যায়? সরকার অদৃশ্য কোন এক শক্তির ইশারায় এইসব অন্যায় অপরাধ অত্যাচারের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
দেশের আপামর সুফিবাদি জনগণের উদ্দেশ্যে সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমদ মাইজভান্ডারী বলেন, এখন আর ঘরে বসে থাকার সময় নেই, শান্তি প্রিয় সুন্নিদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও সুফিবাদের অস্তিত্বের ওপরে আঘাত এসেছে। সুন্নি সুফি মতাদর্শী রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠন নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আমাদের গন্তব্য আমাদেরকে ঠিক করতে হবে। আমাদের সিদ্ধান্ত আমাদেরকে নিতে হবে। যে কোন সময় বড় ধরনের কর্মসূচি আসতে পারে জানিয়ে তিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শী সবাইকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য জোরালো প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান। ১৪ ডিসেম্বর (শনিবার) সাকেরা আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ময়দানে আয়োজিত এক সুন্নি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
এতে উদ্বোধক ছিলেন মাইজভান্ডার গাউছিয়া রহমান মঞ্জিলের বাইতুল ইতকান শাখার সাজ্জাদানশীন শাহজাদা এ্যাডভোকেট সৈয়দ মিফতাহুন নূর মাইজভাণ্ডারী। মাইজভান্ডার শাহী জামে মসজিদের সাবেক খতিব আলহাজ্ব মাওলানা নুরুল ইসলাম ফুরকানীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান আলোচক ছিলেন, ছিপাতলী গাউছিয়া মইনীয়া বহুমুখী কামিল (এম.এ) মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক মুফতি মাওলানা ফখরুদ্দিন চাঁদপুরী। বিশেষ আলোচক ছিলেন, মাওলানা ওমর ফারুক নঈমী, মাওলানা জামাল উদ্দিন সহ আরো অনেকেই।
মিলাদ কিয়াম শেষে মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ, দেশ ও বিশ্ববাসীর শান্তি-সমৃদ্ধি কামনায় আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন শাহ্সূফী মাওলানা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী।