
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের
প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে
পড়তেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে মুসলিম দেশগুলোতে।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট
রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান তার এক্স অ্যাকাউন্টে আবেগঘন একটি পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি
লিখেছেন, আমি আমার এক ভাই হারালাম। প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ছিলেন আমার প্রিয়
একটি ভাই। তাকে হারিয়ে আমি গভীর শোকাহত।
তিনি আরও লেখেন, এই
শোকের দিনে তুরস্কের মানুষ ইরানি ভাইদের সঙ্গে আছে। প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুতে
তুরস্কের ভ্রাতৃপ্রতীম জনগণ গভীরভাবে শোকাহত। এটি কি নিছকই দুর্ঘটনা, না-কি এর
পিছনে অন্য কিছু আছে, তা খুঁজে বের করতে ইরানি কর্তৃপক্ষকে সব ধরনের সহযোগীতা করবে
তুরস্ক।
সৌদি আরবের পররাষ্ট্র
মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট রাইসি ও তার সঙ্গীদের জন্য আল্লাহর কাছে
প্রার্থনা করে জানায়, এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা ইরানের পাশে রয়েছি।
পাকিস্তানের
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ গভীর সমবেদনা এবং সহানুভূতি প্রকাশ করে এক্সে দেওয়া এক
পোস্টে বলেছেন, মহান ইরানি জাতি তাদের প্রথাগত সাহসের মাধ্যমেই এই ট্র্যাজেডি
কাটিয়ে উঠবে। মর্মান্তিক এই ঘটনায় পাকিস্তান একদিনের জন্য শোক পালন করবে এবং
পাকিস্তান তার পতাকা অর্ধনমিত করবে।
কাতারের আমির শেখ
তামিম বিন হামাদ আল-থানি এক্সে দেওয়া এক বার্তায় বলেছেন, ইরানের সরকার ও জনগণের
প্রতি আন্তরিক সমবেদনা এবং নিহতদের জন্য মহান আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা প্রার্থনা
করছি। আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা তার কাছেই ফিরে যাব।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী
নরেন্দ্র মোদি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, তার (ইব্রাহিম রাইসি)
পরিবার এবং ইরানের জনগণের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা। ভারত এই দুঃখের সময়ে
ইরানের পাশে আছে।
এ ছাড়া ইরাক, সিরিয়া,
আজারবাইজান, আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, মিশর, লেবানন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান,
জর্ডান, কুয়েত, ইয়েমেন, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইউরোপীয় কাউন্সিল ও জাতিসংঘ
মহাসচিব শোকপ্রকাশ করেছে।
এর আগে, রোববার (১৯
মে) আজারবাইজানের সীমান্তবর্তী এলাকায় একটি অনুষ্ঠান থেকে ফেরার সময় ইব্রাহিম
রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয়। পরে দীর্ঘসময় উদ্ধার
অভিযান চালানোর পর হেলিকপ্টারটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পায় তারা। এরপর হেলিকপ্টারে
থাকা কোনো আরোহী জীবিত নেই বলে নিশ্চিত করা হয়।
এদিকে, ইব্রাহিম
রাইসির মৃত্যুর পর দেশটির অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে
যাচ্ছেন মোহাম্মদ মোখবের। তিনি বর্তমানে ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন।
ইরানের সংবিধান
অনুযায়ী, ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট মারা গেলে বা কোনো কারণে দায়িত্ব পালনে সক্ষম না
হলে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট। পরবর্তী ৫০ দিনের মধ্যে
নতুন নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে এবং নতুন প্রেসিডেন্ট বেছে নিতে হবে। নির্বাচন না
হওয়া পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব সামলাবেন ভাইস প্রেসিডেন্ট।
উল্লেখ্য, ইরানের
অষ্টম প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। তিন বছর আগে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত
হওয়ার আগে ইব্রাহিম রাইসিকে মনে করা হয় একদিন দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা
আয়াতুল্লাহ খামেনির উত্তরসূরি হবেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে দেশটির প্রধান বিচারপতি
হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি।