Logo
শিরোনাম

রাজশাহী জেলা পরিষদের ১২৩ টি পূজামন্ডপে অনুদানের চেক বিতরণ

প্রকাশিত:বুধবার ০৯ অক্টোবর ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫ |

Image
মোঃ শাকিল আহামাদ - জেলা প্রতিনিধি রাজশাহী 

 রাজশাহীতে শারদীয় দুর্গাপূজা ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে রাজশাহী জেলা পরিষদের পক্ষ হতে রাজশাহী মহানগরী এবং জেলার বিভিন্ন পূজামন্ডপে অনুদান প্রদান করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর) বেলা ১১ টার সময় রাজশাহী জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন মন্দির ও পূজামন্ডপের অনুকূলে এ অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়। 

উক্ত চেক বিতরণের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী জেলা পরিষদের প্রশাসক ও রাজশাহীর অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) তরফদার  মোঃ আক্তার জামীল। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুঃ রেজা হাসানসহ পরিষদের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। 

রাজশাহী মহানগরীর ৭৭টি এবং জেলার ৪৬টিসহ সর্বমোট ১২৩ টি মন্দির ও পূজামন্ডপের প্রতিটিতে ৫ হাজার টাকা করে অনুদানের চেক হস্তান্তর করা হয়।

আরও খবর



সুলতানি যুগের সমাজ ও সংস্কৃতিতে সুফিবাদের প্রভাব

প্রকাশিত:রবিবার ১৫ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫ |

Image

মাজহারুল ইসলাম মাসুম. সিনিয়র সাংবাদিক, লেখক, গবেষক :

সুলতানি শাসনকালে ভারতবর্ষের দুটি মৌলিক সংস্কার আন্দোলন হয়েছিল ভক্তিবাদ যখন হিন্দু ধর্মের পরিবর্তন আনতে সচেষ্ট হয়েছিল ঠিক সেই সময়েই মুসলিম ধর্মে সুফিবাদ নামে একটি উদারনৈতিক সংস্কার আন্দোলন শুরু হয় বলাবাহুল্য 'সুফীনামের উৎপত্তি নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে ) 'সাফা' বা 'পবিত্রতা' শব্দ থেকে এর উৎপত্তি হতে পারে ) 'সাফ' বা সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়ানো কথাটি থেকে সুফী কথাটি এসে থাকতে পারে ) 'সুফা' থেকে সুফী শব্দটি এসে থাকতে পারে একটি মতানুযায়ী হজরত মহম্মদ কর্তৃক মদিনায় প্রতিষ্ঠিত মসজিদের বাইরে যারা উপাসনা করেছিলেন তারাই নাকি সুফী আবু নাসবাল সাব্বাজ তাঁর গ্রন্থে দাবি করেছেন যে, 'সুফ' বা মোটা পশমের বস্ত্র দ্বারা সুফীরা নিজেদের আচ্ছাদিত করে রাখতেন বলে তাদের সুফী বলা হত জামির মতে ৮০০ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে বুফার আবু হাসিম সর্ব প্রথম সুফী শব্দটি ব্যবহার করেন অউল্ কুরেশীর মতে ৮১১ খ্রিষ্টাব্দে শব্দটি ইরাকে পবিত্র মানুষদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা শুরু হয় এবং পঞ্চাশ বছরের মধ্যে সমগ্র মুসলিম সমাজের আধ্যাত্মবাদীদের বোঝাতে সুফী শব্দটি ব্যবহার করা হতে থাকে

সুফী নাম করণের উৎপত্তি ও প্রেক্ষাপট নিয়ে বিতর্ক থাকলেও একথা বলা যায় যে, ইসলামের মধ্যে থেকেই সুফীবাদের জন্ম ইউসুফ হুসেন লিখেছেন যে ইসলামের বক্ষদেশ থেকে সুফীবাদের জন্ম ইসলাম ধর্মের সূচনা কাল থেকেই একশ্রেণীর অতীন্দ্রিয়বাদী মুসলিম ছিলেন যারা পরবর্তীকালে সুফী নামে পরিচিত হন ইসলামের শান্তি দূত সূফীদের ব্রত ছিল অন্ধকারের দেশ 'দার-উল-হার্বকে বিশ্ববাসীর দেশ 'দার-উল-ইসলাম' এ পরিনত করা তাঁর মতে সুফীবাদ ইসলাম ধর্মের একটি অংশ এ বিষয়ে সন্দেহ নেই তফাৎ এই যে, গোঁড়া মুসলমানরা ধর্মাচরণের উপর জোর দেন কিন্তু সুফীরা গুরুত্বদেন অন্তরের শুদ্ধতাকে গোঁড়াপন্থীরা বিশ্বাস করেন যে, ঈশ্বরের করুনা লাভের জন্য ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান নিখুঁত ভাবে পালন করা উচিত 

সুফীরা মনে করেন যে প্রেম ও ভালোবাসার মধ্যে দিয়েই ঈশ্বরের কাছে পৌছানো সম্ভব প্রখ্যাত মুসলিম ধর্মবিদ জাকারিয়া আনসারী লিখেছেন সুফীবাদ শিক্ষাদেয় অনন্ত শান্তি লাভের জন্য কিভাবে আত্মাকে শুদ্ধ করতে হয়, নৈতিক মান উন্নত করতে হয় এবং ব্যবহারিক জীবনে আচরণ করতে হয় এর মূল বিষয় হল আত্মার শুদ্ধি এবং প্রধান লক্ষ্য হল স্বর্গীয় আশীর্বাদ লাভ করা ইসলামের অগ্রগতির যুগে সুফী সন্তরা শান্তি ও মানবতাবাদের কথা প্রচার করে বিজীত মানবগোষ্ঠীকে ইসলামের প্রতি আগ্রহী করে তোলেন

ইউসুফ হুসেন সুফীবাদকে ইসলামের নিজস্ব সম্পদ বলে দাবী করলেও সুফীবাদের উপর অন্যান্য ধর্ম মতের প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না সুফীবাদকে একটি জটিল প্রক্রিয়া বলে অভিহিত করে ঐতিহাসিক তারাচাঁদ বলেছেন কোরান ও মহম্মদের জীবন কেন্দ্রিক সংকীর্ণ প্রবাহ বহুদেশের বহু পথ ও মতের সঙ্গে মিলিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে সুফী মতবাদ পাশ্চাত্যের খৃষ্টধর্ম ও নবপ্লেটোবাদ প্রাচ্যের হিন্দু ও বৌদ্ধ ভাবাদর্শ পারস্যের জরাথ্রুষ্টীয় মতবাদ অদ্বৈতবাদ সুফীবাদ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছে . এস. শীবাস্তবও মনে করেন যে ঈশ্বরকে ভালোবাসা, শান্তি ও অহিংসা, উপবাস ও শরীরের প্রতি নিগ্রহ যা সুফীরা অনুসরণ করে তা হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন মতবাদ থেকে গ্রহণ করা সতীশচন্দ্র উল্লেখ করেছেন যে, ইসলামের আবির্ভাবের বহু আগে থেকেই মধ্য এশিয়ার বৌদ্ধধর্ম প্রচলিত ছিল পাশাপাশি ইসলামের আবির্ভাবের পরেও হিন্দু যোগীরা পশ্চিম এশিয়ায় যেতেন, বুদ্ধির বহু কাহিনী ইসলামের লোকগাথায় প্রচলিত ছিল এই সকল তথ্যের ভিত্তিতে সতীশচন্দ্র অনুমান করেছেন যে বৌদ্ধ ও হিন্দু যোগ সাধকদের ধর্মচারণ পদ্ধতি সম্বন্ধে সুফীরা পরিচিত হন এবং কালক্রমে সেগুলিকে গ্রহণ করেন

বস্তুতপক্ষে সুফীবাদ হল একজন মুসলমানের ব্যক্তিগত স্তরে আল্লাহর জীবন উপস্থিতির অনুভূতি ১১৬৫-১২৪০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেকার সময় শেখ মহীউদ্দিন ইবনুল আরবী তত্ত্ব প্রচার করেন যার অর্থ স্রষ্টা বাহক এবং সৃষ্টি বা খালক এক এই বিশ্বের দৃশ্যমান বৈচিত্র্য বা বিভিন্নতা একই ঈশ্বরের নানামুখী প্রকাশবলা বাহুল্য শঙ্করাচার্যের অদ্বৈতবাদে এরূপ এক ও অভিন্ন ঈশ্বরের কথা বলা হয়েছে উপনিষদে বলা হয়েছে যা কিছু বিরাজমান বা যা কিছু দৃশ্যমান সবই ব্রম্ভ। শ্রীমদ্ ভাগবত গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন সর্বধর্ম পরিত্যজ্য মামেকং শরনং ব্রজ অর্থাৎ সবকিছু করে ঈশ্বরকে স্মরণ করতে হবে এটাই মহীউদ্দিনের "complete detachment from the world." অলবেরুনী মনে করেন যে, সুফীবাদের আত্মা সম্পর্কিত মতবাদ পতঞ্জলির যোগসূত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল ত্রয়োদশ শতাব্দীর বিখ্যাত সুফী সাধক শেখ নিজামুদ্দিন আউলিয়া নাথ যোগীকৃত মানবদেহের বিভাজন মেনেনেন এই মতানুসারে মানবদেহের দুটি অংশ মাথা থেকে নাভি পর্যন্ত অংশ হল আধ্যাত্বিক শিবের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং পবিত্র নাভির নিম্নে দেহের অবশিষ্ট অংশ শক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত এবং অপবিত্র প্রায় অনুরূপভাবে সুফী সন্ত শেখ নাসিরউদ্দীন চিরাগ--দেহেলি হিন্দু যোগীদের শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেছিলেন কাজেই সুফী মতবাদের সঙ্গে ভারতীয় হিন্দু তথা বৌদ্ধ ধর্মের স্বাদৃশ্য কোনভাবে অস্বীকার করা যায় না

সুফী দর্শনে পীর বা গুরুর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঈশ্বরের সঙ্গে আত্মার মিলনের জন্য মুরিদ বা শিষ্যকে পীর সঠিক পথ ও পদ্ধতির সন্ধান দেন একটি মতানুসারে একজন সুফী সাধনার দশটি স্তর অতিক্রম করলে তবেই ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করতে পারে এই দশটি স্তর হল i) তত্তবা বা অনুশোচনা, ii) ওয়ারা বা নিবৃত্তি, iii) সবর বা সহনশীলতা অর্জন, iv) শূকর বা কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন, v) সুফ বা অন্যায়ের প্রতি ভীতি, vi) রজা বা আল্লাহর করুণা লাভের ইচ্ছাvii) তত্তয়াস্কুল বা আনন্দে বিষাদে অচঞ্চল থাকা, viii) রিজা বা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণ করা ভক্তিবাদী সাধকদের মত সুফীরা ও পার্থিব জগতের সাথে সম্পর্ক শূন্য থাকাকে আবশ্যিক বলে মনে করতেন সুফীদের একাংশ বিবাহ করে সাধারণ সংসার জীবন যাপন করলেও অধিকাংশই পীরের নেতৃত্বে নির্জন স্থানে খানকা বা দরগায় বসবাস করতেন এবং ইসলামীয় শাস্ত্র চর্চা করতেন শিক্ষাদীক্ষা ছাড়াও দরগাগুলি দরিদ্রকে অন্নদান ও চিকিৎসার কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হত কোন কোন সুফী পন্ডিত জমিতে চাষাবাদ করলেও সুফীরা জীবিকা নির্বাহের জন্য মূলত মানুষের অযাচিত দানের উপরেই নির্ভর করতেন সুফীরা মূলত দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল যারা ইসলামী আইন কানুন বা শরা অনুসরণ করতেন তাঁরা ছিল শরা, সংখ্যালঘিষ্ঠ অংশ কোন ধরনের নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ না থেকে মুক্তভাবে অন্তরের বিকাশে আস্থাবান ছিলেন এদের বলা হত বেশরা ভারতে প্রথমোক্ত গোষ্ঠীই অধিক প্রভাব বিস্তার করেছিল

প্রথম পর্বের প্রখ্যাত সুফী সাধকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বসরার মহিলা সুফী রাবেয়া (অষ্টম শতকএবং মনসুর বিন হল্লাজ (দশম শতক) তাঁরা প্রচার করেন সর্বভুতেই ঈশ্বরের সাথে মানুষের মিলন সম্ভব, স্রষ্টা ও সৃষ্টি সম্পর্কে এই অভেদ ধারণা গোড়াপন্থীদের ক্ষুব্ধ করে এবং তা শিয়া ও সুন্নী উভয় সম্প্রদায়ই সুফীদের বিরুদ্ধাচারণ করে শেষ পর্যন্ত আরবীয় দার্শনিক আল গজালী (১১০৫-১১১২সুফীদের অতীন্দ্রিয়বাদ ও ইসলামের গোঁড়া মতবাদের মধ্যে একটা সমন্বয় সাধনের কাজে কিছুটা সফল হয় তিনি ইসলামের রহস্যবাদকে অধিবিদ্যামূলক ভিত্তি দেন এবং যুক্তি দ্বারা প্রমাণ করেন যে অতীন্দ্রিয়বাদ যুক্তিসম্মতসুফী মতবাদের বিবর্তনে বায়াজিদ বুষ্টামি নামে জনৈক পার্শিয়ান ধর্ম প্রচারকের নাম খুবই প্রশিদ্ধ তিনি ঈশ্বরীয় অনুভূতিতে আবেগ ও অতীন্দ্রিয় ভাববাদ আরোপ করেন প্রথম সুফী লেখক আব্দুল্লা-আল মুহসিন বাইবেলের গসপেলের ভঙ্গিতে সুফী মতবাদ প্রচার করেন হূসেন ইবন হানসুর আল হামাজ রচিত 'ইনসান- কমিল', ফরিদউদ্দিন অ্যাটার রচিত তদ কিরত অল আউলিয়া এবং জালাল উদ্দিন রুমি রচিত 'মসনবি' গ্রন্থগুলি সুফী সমাজের উপর ঈশ্বরোপাসনার বিভিন্ন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে

পাঞ্জাবে গজনীর সুলতান মামুদের আগ্রাসনের (১০০০-১০২৭অব্যবহিত কাল পরেই ভারতে সুফী মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হয় লাহোরের শেখ ইসমাইল ভারতে সুফীবাদের প্রথম প্রচারক তাঁর অনুগামী শেখ আলি-বিন-উসমান অ্যাল হুজৌরি ভারতে সুফী মতবাদকে জনপ্রিয় করে তোলেন সুফীদের মধ্যে অনেকগুলি উপদল বা সিলসিলাহ তৈরী হয়েছিল আবুল ফজল লিখেছেন যে ভারতে মোট চৌদ্দটি সুফী সম্প্রদায় প্রবেশ করেছিল এগুলির মধ্যে চিস্তি ও সুরাবর্দী সম্প্রদায়ের কার্যকলাপ মূলত সীমাবদ্ধ ছিল সিন্ধু ও উত্তর পশ্চিম ভারতে কিন্তু চিস্তি সম্প্রদায় প্রভাব সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে

ভারতে চিস্তি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন খাজা মইনুদ্দিন চিস্তিলাহোর, দিল্লি এবং মূলত আজমীরে তিনি তার কার্যকলাপ বজায় রেখেছিলেন একজন হিন্দু সন্নাসীর মত তিনি জীবন যাপন করতেন এবং বেদান্ত দর্শনের মতই অদ্বৈতবাদ প্রচার করেন আজমীরে মইনুদ্দিনের (১১৪১-১২৩৫) সমাধি হিন্দু-মুসলমান উভয়ের কাছেই পবিত্র স্থান রূপে গণ্য হয় মইনুদ্দিনের একজন উল্লেখযোগ্য শিষ্য শেখ হামিদউদ্দিন রাজপুতানার নাগাউবে গৃহী জীবনযাপন করতেন এবং হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সুফীতত্ত্ব প্রচার করেন অপর শিষ্য সেখ কুতুবউদ্দিন সুলতান ইলতুৎমিসের রাজত্বকালে দিল্লিতে দরগা প্রতিষ্ঠা করেন অনুমান করা হয় সঙ্গীতানুরাগী এই সুফী সাধকের স্মৃতিরক্ষার্থেই সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবক দিল্লিতে কুতুবমিনারের নির্মাণ শুরু করেছিলেন। মইনুদ্দিনের অপর শিষ্য শেখ ফরিদ বা বাবা ফরিদ (১১৭৫-১২৬৫) বর্তমান পাকিস্তানের অযোধ্যা অঞ্চলে খানকা স্থাপন করেন 

হিন্দু ভক্তিবাদী সাধকদের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এত উদার ও উচ্চমার্গের ছিল যে পরবর্তীকালে শিখদের আদিগ্রন্থে শেখ ফরিদের বহু পদ উপস্থাপিত হয়েছে বাবা ফরিদের শিষ্য হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া ছিলেন (১২৩৬-১৩২৫চিস্তি সম্প্রদায়ের সর্বাধিক জনপ্রিয় সুফী সাধকআমির খসরু নিজামুদ্দিনের শিষ্য ছিলেন নিজামুদ্দিনের উদা ধর্মনিরপেক্ষতার মতবাদ উলেমাদের ক্ষুব্দ করলেও তাঁর বাণী সারা ভারতে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলনিজামুদ্দিনের শীর্ষ শেখ নাসিরউদ্দিন মামুদ পরবর্তীকালে চিরাগ--দিল্লী নামে পরিচিত হন চিরাগ--দিল্লীর একজন শিষ্য মহম্মদ গেসুদরাজ গুলবর্গায় গিয়ে সুফীবাদ প্রচার করেছিলেন এবং অলৌকিকতাবাদ সম্বন্ধে ত্রিশটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেনপ্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে চিস্তি সম্প্রদায়ভুক্ত সেলিম চিস্তির একান্ত অনুগামী ছিলেন মুঘল সম্রাট মহামতি আকবর চিস্তি সিলসিলার প্রধান কেন্দ্রগুলি ছিল আজমী, নবনৌল, সারওয়ালনাগাউর, হানসী, অযোধ্যা, বাদাউন ইত্যাদি স্থান।

ইরাকের বাগদাদে সুরাবর্দী সিলসিলাহর প্রতিষ্ঠাতা শিহাব উদ্দিন সুরাবর্দী মুলতানের শেখ বাহাউদ্দিন জাকারিয়া আরব দেশে গিয়ে সুরাবর্দীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন এবং মুলতানে এসে খানকা প্রতিষ্ঠা করেনসুরাবর্দী ধর্মাদর্শন প্রচার করেন এই সম্প্রদায়ের অন্যান্য প্রখ্যাত সন্ত ছিলেন সদরুদ্দিন আরিফসৈয়দ জালালউদ্দিন বুখারী প্রমূখ সুরাবর্দী সিলসিলাহ থেকেই পরবর্তীকালে জন্ম লাভ করে ফিরদৌসী ও সাত্তারি তারিখ সিলসিলা যথাক্রমে বিহার ও বাংলায়

চিস্তি ও সুরাবর্দী সম্প্রদায়ের মধ্যে কতগুলি মৌলিক পার্থক্য ছিল চিস্তি সন্তরা নির্জন স্থানে খানকা স্থাপন করতেন এবং সহজ সরল ও কঠোর সংযমপূর্ণ জীবন যাপন করতেন সমাজের হীন দরিদ্র ও অবহেলিত মানুষের জন্য তাদের সাধনগৃহ সর্বদাই উন্মুক্ত থাকত কিন্তু সুরাবর্দী সম্প্রদায় অতিরিক্ত কৃচ্ছসাধনে বিরোধী ছিলেন এঁরা ধর্মসংক্রান্ত বা বিচার বিভাগীয় উচ্চপদে যুক্ত থেকে ধর্ম চর্চা করতেন সমাজের উঁচু শ্রেণীর যোগাযোগ ছিল গরীব মানুষেরা এঁদের খানকায় প্রবেশাধিকার পেতেন না

শেখ মহীউদ্দিনের মতবাদের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে একজন প্রেমিক যেমন প্রেমিকার জন্য উদগ্রীব হয় একজন সুফীও সবকিছু ভুলে ঈশ্বরের সান্নিধ্যেরর জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। সুফীরা মানবসেবা, দরিদ্র নিরামিষ খাদ্য, শান্তি, মৈত্রী ও অহিংসাব্রতকে অন্তরের সঙ্গে পালন করে ভারতে সনাতন বেদ, উপনিষদ বা ভাগবদ্‌ গীতায় এসব কথা বহুদিন আগে থেকে বলা হলেও নিম্নবর্ণের হিন্দুরা তাঁর বিন্দু বিসর্গও জানতো না উচ্চবর্ণের অবহেলার শিকার হয়ে এই অন্তজ শ্রেণি চরম দারিদ্র, চরম অজ্ঞতা নিয়ে প্রায় মনুষ্যত্বের জীবনযাপন করত ভারতের মধ্যে এই শোষিত দরিদ্র হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে সুফীদের সহজ সরল জীবনযাপন এবং বৈরাগ্য ও উদারতা সহজেই গ্রহণযোগ্য হয়ে  ফীরা এদের শোনালেন ইসলাম ধর্ম প্রেমের ধর্ম এবং ঈশ্বরের কাছে মানুষের কোন ভেদাভেদ নেই হিন্দুদের আকৃষ্ট করার জন্য সুফীরা হিন্দু সাধুদের মত পোশাক পরত এবং আচার-আচরণ পালন করত। তান্ত্রিক ক্রিয়াকলাপের প্রতি সাধারণ ভারতীয়দের একটা গভীর টান আগে থেকেই ছিল সুফী পীর ও দরবেশদের অলৌকিক শক্তি প্রদর্শনের দক্ষতা স্বাভাবিক কারণেই সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে তোলে অনেকেই পীরের দরগায় নিয়মিত আসতে শুরু করে এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে হিন্দু রাজারাও তাদের শাসনাধীন অঞ্চলে সুফীবাদের কার্যকলাপের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে কোন বাধা দান করেন নি ফলে অনুকূল বাতাবরণে সুফীবাদ অতি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল

মধ্যযুগীয় ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতিতে সুফীবাদের প্রভাব কতখানি পড়েছিল তা আলোচনা করা যেতে পারে সুফীবাদের সার্বজনীন আদর্শ ধর্মীয় উত্তেজনা প্রশমিত করে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ককে সাবলীল করে তুলতে সাহায্য করেছিল ইসলামের সাম্যবোধ ও বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব বোধের আবেদন (সুল -কুলের আদর্শসুফী দর্শনের মধ্যে সবচেয়ে বেশী স্পষ্টরুপে প্রকাশ পায় সুফী দর্শন মুসলিম যুব সম্প্রদায়ের নৈতিক মনোনয়ন ঘটাতে সাহায্য করে সুফিবাদের সাম্য ভাবনা বহু নিম্নবর্ণের হিন্দুকে আকৃষ্ট করলেও প্রচলিত হিন্দু ধর্মের উপর সুফীবাদের প্রত্যক্ষ প্রভাব ছিল নগণ্য ঐতিহাসিক এ. এলশ্রীবাস্তব মনে করেন যে, সুফীরা দীর্ঘকাল ধরে ভারতে তাদের ধর্মমত প্রচার করলেও বৃহত্তর সমাজের উপর তার কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি নিম্নবর্ণের হিন্দু গোঁড়া সুন্নীদের কাছে পাত্তা না পেয়ে সুফী সম্প্রদায়ের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিল এবং তাদের সঙ্গে মেলামেশা করত সাধারণ হিন্দুসমাজ সুফিদের সঙ্গে সুন্নী ইসলামের কোন পার্থক্য খুঁজে পায়নি এবং সুফী মতবাদ যা বলত তাদের ধর্মের ঐশ্বর্যের ক্ষেত্রে তা নিতান্তই নগণ্য বলে হিন্দুরা এদের সংশ্রব এড়িয়ে চলত

ডঃ অনিল চন্দ্র ব্যানার্জি মনে করেন যে, সুফীরা ত্রয়োদশ শতাব্দীর পূর্বে ভারতের নিম্ন বর্ণের কিছুসংখ্যক হিন্দুকে ধর্মান্তরিত করতে সক্ষম হলেও  শতাব্দীর পরে তাদের কর্মকাণ্ড সীমিত হয়ে পড়ে এর কারণ হলো রাজ ক্ষমতায় ক্ষমতাশালী উলেমাদের কর্তৃত্বের ছায়া থেকে তারা নিজেদের স্বাতন্ত্রকে পৃথক রাখতে পারেননি রমেশচন্দ্র মজুমদার এই প্রসঙ্গে বলেছেন যে, মধ্যযুগের ভারতে সুফীবাদের গুরুত্ব খুব একটা বেশি নয় কারণ এই ধর্মমতের প্রভাবে ধর্মান্তরিত সুফী ইসলামের সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য হিন্দুরা হিন্দুদের মত এবং মুসলমানরা মুসলমানদের মতই পার্থক্য বজায় রেখে চলেছিল দুটি ধর্ম যেন একটি নদীর পরস্পর বিপরীত দুই তীর দুই তীরের মধ্যে সুফীরা সেতুবন্ধনের চেষ্টা করলেও তা কার্যকরী হয়নি স্থানীয়ভাবে হয়তো সাময়িক কোন সেতু রচিত হলেও তা চিরস্থায়ী হয়নি অন্যদিকে মুসলিম ঐতিহাসিক ইউসুফ হুসেন মনে করেন যে কোরানের শিক্ষাকে সুফীরা ভারতের মৃত্তিকায় সুপ্রোথিত করেছে। সুফীরা কোরানের মৌলবাদী নীতি থেকে আধ্যাত্ম সাধনার দিকটি পৃথক করে জনমানসে প্রতিষ্ঠা করেছে যাদের হৃদয় মৌলবাদী ভাবনা-চিন্তায় সন্দীহান, তাদের কাছে সুফী মতবাদ ছিল শান্তির  প্রলেপ

ঐতিহাসিক বক্তব্যকে অনুসরণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, হিন্দু সমাজে অবহেলিত নিম্নবর্ণের মানুষ যারা একত্রে উপাসনা বা মুক্তি লাভের উপায় সন্ধানের অধিকার থেকে বঞ্চিত তারাই বা তাদের একটি বৃহৎ অংশ সাম্যবাদী সুফী দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল এছাড়া মধ্যযুগের শিক্ষা ও সাহিত্যের উপর সুফী দর্শনের ও সুফী আন্দোলনের প্রভাব ছিল লক্ষণীয় সুফীদের খানকা বা জামাতখানাগুলি বিদ্যাচর্চা ও জ্ঞানান্বেষণের অন্যতম কেন্দ্র ছিল। অনেক খানকায় নিয়মিত বিদ্যালয় পরিচালন করা হতো সুফীরা হিন্দী ও উর্দু ভাষার সমন্বয়ে হিন্দভী ভাষায় কবিতা রচনা করার ফলে তা সাধারণ মানুষের বোধগম্য হয় এবং হিন্দী ভাষারও শ্রীবৃদ্ধি ঘটে সুফীদের গীত বাউল ধর্মী 'সম' গান ভারতীয় সঙ্গীতকে পুষ্ট করেছিল

ইসলাম ধর্ম তার হিন্দু বিদ্বেষ নিয়ে, মৌলবাদী ধ্যান ধারণা নিয়ে, উলেমাদের অপ্রতিহত ক্ষমতার দম্ভ নিয়ে, জিম্মি বা অমুসলমানদের উপর জিজিয়া প্রয়োগ নিয়ে যখন ভারতে তার রাজকীয় দীপ্তি ও মহিমা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল, হিন্দুরা ও তাদের প্রতি অত্যাচারের ক্ষত বুকে নিয়ে তাদের ধর্ম ও সমাজকে রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর হয়ে সুকঠীন মৌলবাদী চিন্তার মধ্যে নিজেদের আবদ্ধ রেখেছিল। এই ধর্মীয় ঘাত প্রতিঘাতের কালপর্বে ইসলামী ও সুফীবাদ বা হিন্দু ভক্তিবাদ ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে এবং অহিংসার মন্ত্রে সকলকে বাঁধতে চেয়েছিল। এই আঙ্গিকে বিচার করলে সুফীবাদ ইসলামের ভারতীয় করন করার প্রচেষ্টা চালিয়ে ছিল মানুষের ওপর বল প্রয়োগ করে নয়, মানুষের হৃদয় জয় করেছে ভালোবাসার উদারতার দানকার্য ও সমাজ সেবার মাধ্যমে যার ফলশ্রুতি হিসেবে গোঁড়ামী, রক্ষণশীলতা, জাতিভেদ সাম্প্রদায়িকতার পরিবর্তে সহিষ্ণু এবং সমন্বয় মূলক সংস্কৃতির বিকাশ


আরও খবর



গরু মাংসের কয়েকটি স্পেশাল রেসিপি

প্রকাশিত:সোমবার ০৯ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫ |

Image

রেসিপি রিমিস ড্রিম: 

সারাদেশে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে উদযাপিত হচ্ছে কোরবানির ঈদ। কোরবানির ঈদের মূল খাবারগুলো তৈরি হয় মাংস দিয়ে। ঈদে তৈরি করতে জেনে নিন সচরাচর করা হয় না, মাংসের এমন কয়েকটি স্পেশাল রেসিপি।

গরুর মাংসের শাহী রেজালা

উপকরণ: ১ কেজি গরুর মাংস, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদা-রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, লবণ, কেওড়া জল, কিশমিশ, আলুবোখারা, টক দই, বাদাম বাটা, চিনি, কাঁচামরিচ বাটা, জায়ফল-জয়ত্রী-পোস্তদানা বাটা, গরম মসলা (এলাচ, দারচিনি), তেজপাতা, তেল।

রান্নার পদ্ধতি: মাংস ধুয়ে সব মসলা ও টক দই দিয়ে মেরিনেট করে ১ ঘণ্টা রেখে দিন। এরপর তেলে পেঁয়াজ, আদা-রসুন, বাকি মসলা দিয়ে মাংস কষান। সেদ্ধ হয়ে এলে কেওড়া জল, কিশমিশ, আলুবোখারা দিয়ে ঢেকে দিন। ঝোল ঘন হলে নামিয়ে পরিবেশন করুন।

কড়াই গোস্ত

উপকরণ: ১ কেজি গরুর মাংস, পেঁয়াজ কুচি, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, মাংসের মসলা, দারচিনি, এলাচ, জায়ফল-জয়ত্রী বাটা, টক দই, টমেটো কিউব, তেজপাতা, রসুন, তেল, লবণ।

রান্নার পদ্ধতি: মাংস সব মসলায় মেখে ২৫ মিনিট মেরিনেট করুন। প্যানে তেল গরম করে মেরিনেট করা মাংস দিয়ে কষান। সেদ্ধ হয়ে গেলে অন্য কড়াইয়ে টমেটো, রসুন, পেঁয়াজ ভেজে কষানো মাংস দিন। ২-৩ মিনিট দমে রেখে নামিয়ে ফেলুন।

গার্লিক বিফ

উপকরণ: ১ কেজি মাংস, পেঁয়াজ, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, আদা-রসুন বাটা, রসুন কোয়া, ধনে-জিরা গুঁড়া, টেস্টিং সল্ট, টমেটো সস, টক দই, গরম মসলা, তেল, লবণ।

রান্নার পদ্ধতি: সব উপকরণ মিশিয়ে মাংস মেরিনেট করে রাখুন। তেলে পেঁয়াজ ভেজে মাংস কষান। সেদ্ধ হয়ে গেলে টমেটো সস, রসুন কোয়া ও কাঁচামরিচ দিয়ে কিছু সময় দমে রাখুন।

গরুর মাথার মাংস ভুনা

উপকরণ: গরুর মাথার মাংস, পেঁয়াজ কুচি, টমেটো, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, আদা-রসুন বাটা, ধনে-জিরা গুঁড়া, সরিষার তেল, গোলমরিচ, তেজপাতা, গরম মসলা।

রান্নার পদ্ধতি: তেলে পেঁয়াজ ভেজে সব মসলা দিয়ে কষান। মাংস দিয়ে গরম পানি দিয়ে দিন। ঢেকে রান্না করুন যতক্ষণ না সেদ্ধ হয়। শেষে গরম মসলা ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

গরুর মাংসের কালা ভুনা

উপকরণ: ২ কেজি হাড় ছাড়া মাংস, বিভিন্ন গুঁড়া মসলা (হলুদ, মরিচ, জিরা, ধনে), পেঁয়াজ বাটা, আদা-রসুন বাটা, গরম মসলা, পেঁয়াজ কুচি, কাঁচামরিচ, সরিষার তেল, লবণ।

রান্নার পদ্ধতি: সব মসলা দিয়ে মাংস মেখে জ্বাল দিন। সেদ্ধ হয়ে গেলে অন্য কড়াইয়ে তেলে পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ ভেজে মাংস কষান যতক্ষণ না কালো হয়ে আসে। খেয়াল রাখুন পুড়ে না যায়।

ঝুরা মাংস

উপকরণ: ১ কেজি গরুর মাংস, পেঁয়াজ কুচি, আদা-রসুন বাটা, মরিচ গুঁড়া, জিরা গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, বাদাম, সরিষা বাটা, তেজপাতা, গরম মসলা, তেল, লবণ।

রান্নার পদ্ধতি: তেলে পেঁয়াজ ভেজে মসলা দিয়ে কষান। মাংস দিয়ে সেদ্ধ করুন। পানি শুকিয়ে এলে ঝুরা করে অন্য কড়াইয়ে পেঁয়াজ ভেজে ভাজা মাংস দিন। গরম মসলা ছড়িয়ে পরিবেশন করুন।

গ্রিল বিফ 

উপকরণ 

মাংসের পাতলা টুকরো ৬ পিস, সরিষা বাটা ২ টেবিল চামচ, ওয়েস্টার সস ২ টেবিল চামচ, লবণ ও গোলমরিচ পরিমাণ মতো, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ ও টকদই ২ টেবিল চামচ।  

রান্নার পদ্ধতি: হাড় ছাড়া মাংস টুকরো করে ধুয়ে নিন। তারপর সব উপকরণ দিয়ে মেখে রাখুন অন্তত চারঘণ্টা। এবার গ্রিলের ওপর দিয়ে দুই পাশই গ্রিল করতে হবে বাদামি রং না হওয়া পর্যন্ত। তৈরি হয়ে গেলে গরম গরম পরিবেশন করুন।

মেজবানি মাংস   

উপকরণ : গরুর মাংস, কলিজা ও হাড় মিলিয়ে ৫ কেজি, পেঁয়াজ কুচি ২ কাপ, আদা বাটা ৩ টেবিল-চামচ, রসুন বাটা ২ টেবিল-চামচ, লাল মরিচ বাটা ৩ টেবিল-চামচ, জিরা গুঁড়া দেড় টেবিল-চামচ, ধনে গুঁড়া ১ টেবিল-চামচ, হলুদ গুঁড়া ২ টেবিল-চামচ, সাদা তিল বাটা ১ টেবিল-চামচ, পেঁয়াজ বাটা আধা কাপ, সরিষা তেল আড়াই কাপ, মিষ্টি জিরা বাটা ১ চা-চামচ, রাঁধুনি বাটা ১ চা-চামচ, সরিষা বাটা ১ টেবিল-চামচ, পোস্তদানা বাটা ১ টেবিল-চামচ, তেজপাতা ৭-৮টি, এলাচ, দারুচিনি ও লবঙ্গ বাটা ১ টেবিল-চামচ, কাবাব চিনি বাটা ১ টেবিল-চামচ, জয়ফল-জয়ত্রি বাটা ১ চা-চামচ, গোলমরিচ বাটা ১ চা-চামচ, মেথি বাটা ১ চা-চামচ, পানি ৪-৫ কাপ ও লবণ স্বাদমতো।

রান্নার পদ্ধতি: তেলে পেঁয়াজ কুচি লাল করে ভেজে গরম মসলা ছাড়া বাকি মসলা ও মাংস দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে নিন। আধা ঘণ্টা পর ৪-৫ কাপ গরম পানি দিয়ে ঢেকে দিন। মাংস সেদ্ধ হয়ে এলে গরম মসলা দিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রেখে নামিয়ে নিন। তৈরি হয়ে গেল চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানি মাংস।  

গরুর মাংসের স্টেক   

উপকরণ: হাড় ছাড়া গরুর মাংস ৫০০ গ্রাম, আদা পেস্ট আধা চা চামচ, হট টমেটো সস ১/২ কাপ, গোল মরিচ গুঁড়া সামান্য, রসুন পেস্ট আধা চা চামচ, জিরার গুঁড়া সামান্য স্টেক স্পাইস পরিমাণমতো, অলিভ অয়েল ২ টেবিল চামচ, লবণ ও মরিচ-স্বাদমতো।

রান্নার পদ্ধতি: মাংস পছন্দমতো কেটে ধুয়ে নিন। একটি পাত্রে সব উপকরণ নিয়ে ভালোভাবে পেস্ট বানিয়ে নিন। এবার স্টেকগুলো মসলা মেখে মেরিনেট করে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টার জন্য ফ্রিজে রেখে দিন। গ্রিলে স্টেক দিয়ে মাঝারি তাপমাত্রায় গ্রিল করুন। ওভেনেও গ্রিল করে নিতে পারেন।  

লক্ষ্য রাখবেন স্টেক যেন খুব শক্ত না হয়ে যায়। এরপর স্টেকের ওপর গ্রেভি দিয়ে আপনার পছন্দমতো সাজিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার স্টেক।


আরও খবর

ভালো লিচু চিনবেন যেভাবে

শুক্রবার ২৩ মে ২০২৫




বৃষ্টির সঙ্গে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী

প্রকাশিত:রবিবার ০৮ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:সোমবার ২৩ জুন ২০২৫ |

Image

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নতুন করে ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ২৬ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১০ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে চারজন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে তিনজন, চট্টগ্রাম বিভাগে তিনজন ও ময়মনসিংহ বিভাগে দুজন রয়েছে। এছাড়া ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ১৭ রোগী সুস্থ হওয়ায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে।

আবওয়াবিদরা জানান, দীর্ঘ ১৬ বছর পর এবার সময়ের আগেই বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মৌসুমি বায়ু। গত ২৫ মে কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূলে এ বায়ু প্রবেশ করে। আর এ বায়ুর প্রভাবে সারা দেশেই এখন বৃষ্টি হচ্ছে। তবে মৌসুমি বায়ু সাধারণত পয়লা জুন থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এটি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করে। পরে উত্তরের বাতাস শুরু হলে মৌসুমি বায়ু চলে যায়। এর আগে‌ সর্বশেষ ২০০৯ সালে জুনের আগে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করেছিল বাংলাদেশে।

মৌসুমি বায়ু প্রবেশের ফলে সারা দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ার পাশাপাশি ভারি বর্ষণ হতে পারে বলে জানান আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘‌সাধারণ ২ বা ৩ জুন দেশে মৌসুমি বায়ু প্রবেশ করে। এবার সেটি আগেই প্রবেশ করেছে, যা ১৬ বছর পর। এটি মূলত জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হয়ে থাকে; যা দেশের কৃষি ও পরিবেশের জন্য ইতিবাচক। এ সময়ে স্বাভাবিকভাবে বৃষ্টিপাত বেশি হয়।

তিনি অবশ্য এও বলেন, ‘‌আগেভাগে মৌসুমি বায়ু চলে আসার কারণে একটি নেতিবাচক দিকও আছে। যখন বৃষ্টি দরকার হবে তখন বৃষ্টিহীন হয়ে পড়তে পারে দেশ।

এদিকে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি বাতাসে আর্দ্রাতা বেড়েছে। আর এটি এডিস মশার প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির জন্য সহায়ক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘‌শীতকালের তাপমাত্রা সহ্যক্ষমতার বাইরে থাকায় মশার প্রজননক্ষমতা কমে যায়। ফলে বংশবৃদ্ধিও কমে। অতি তাপমাত্রায়ও একই থাকে। তবে বৃষ্টি হলে, বাতাস ভেজা থাকলে মশার প্রজননক্ষমতা বাড়ে। বৃষ্টিপাতের সময়ে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকে, যা মশার প্রজননের জন্য খুবই সহায়ক। এ সময়ে মশা সর্বোচ্চ বংশবৃদ্ধি করে। আর ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা। তাই মশা যত বাড়বে ডেঙ্গুর প্রবণতা তত বাড়বে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৪ হাজার ৯৩০ জন। এর মধ্যে ৫৯ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ এবং ৪০ দশমিক ৫ শতাংশ নারী। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের। আর সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে ৪ হাজার ৪৮৬ জন।

মৌসুমি বায়ুর শুরু থেকে এডিস মশার বংশবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী।  তিনি বলেন, ‘‌বৃষ্টির জমে থাকা পানি, অনুকূল তাপমাত্রা ও বাতাসের আর্দ্রতায় মশার প্রজননক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীও বেড়েছে। এ থেকে রক্ষা পেতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রাসায়নিক ও জৈব উপায়ে নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি পরিবেশগতভাবেও তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এর জন্য সরকারকে নিতে হবে যুগপৎ উদ্যোগ। জনগণকে নিয়ে মশা নিধন কর্মসূচি নিতে হবে।


আরও খবর



ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ফের কাঁপল ইসরায়েল

প্রকাশিত:সোমবার ১৬ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫ |

Image

পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যেই সোমবার (১৬ জুন) ভোরে ইরানের ছোড়া একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে আঘাত হেনেছে। যার ফলে দেশজুড়ে রকেট সতর্কতা সাইরেন বেজে ওঠে।

নতুন হামলায় এখন পর্যন্ত তিনজন নিহত ও ৬৭ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি স্বেচ্ছাসেবক-ভিত্তিক জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা সংস্থা ইউনাইটেড হাটজালাহ। টাইমস অব ইসরায়েল ও জেরুজালেম পোস্টের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় অংশে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং পেতাহ তিকভা শহরের একটি ভবনে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত হানে। তেল আবিবেও দুটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের খবর পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) জনগণকে সতর্ক করে বলেছে, কেউ যেন হামলার স্থান বা ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার না করেন, কারণ শত্রুপক্ষ এসব তথ্য নজরে রেখে পরবর্তী হামলার দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারে।

ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা ম্যাগান ডেভিড এডাম (এমডিএ) জানিয়েছে, তারা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার চারটি স্থান চিহ্নিত করেছে এবং সেখানে জরুরি সেবা দিচ্ছে। এ পর্যন্ত অন্তত ২৯ জনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে, যাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা মাঝারি এবং বাকিরা হালকা আহত হয়েছেন। এছাড়া অনেকেই আতঙ্ক ও উদ্বেগে মানসিক চাপে ভুগছেন।

এদিকে হাইফা শহরেও হামলার ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানায় ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কান। একই সময়ে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে ইসরায়েলের কিছু অঞ্চলে হুতিদের হামলার সতর্কতা সাইরেনও সক্রিয় হয়ে ওঠে।

হামলার কিছুক্ষণ পরেই ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চল, বিশেষ করে রোশ হানিকরা এলাকায় ড্রোন অনুপ্রবেশের সতর্কতা সাইরেন বেজে ওঠে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।


আরও খবর



ভারতে বিমান বিধ্বস্ত : নিহতদের প্রত্যেক পরিবার পাবে ১ কোটি রুপি

প্রকাশিত:শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫ |

Image

ভারতের শিল্পগোষ্ঠী টাটা গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১ কোটি রুপি সহায়তা দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টাটা গ্রুপের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন এ সহায়তা ঘোষণা দেন।

এ ছাড়া দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার পুরো ব্যয় বহন করবে টাটা গোষ্ঠী। ক্ষতিগ্রস্ত বি জে মেডিকেল কলেজের হোস্টেলটি নতুন করে নির্মাণেও সহায়তা দেওয়া হবে।

চন্দ্রশেখরন এক বিবৃতিতে বলেছেন, শোক প্রকাশের জন্য কোনো শব্দই এ মুহূর্তে যথেষ্ট নয়। যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। খবর ইন্ডিয়া টুডের।

বৃহস্পতিবার ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রীবাহী ওই প্লেনটি ২৪২ জন আরোহী নিয়ে বিধ্বস্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের ৭৮৭ মডেলের তৈরি এ প্লেনটি ‘ড্রিমলাইনার’ হিসেবে পরিচিত। প্লেনটি ১৪ বছর আগে আকাশে ওড়া শুরু করেছিল। তবে বোয়িং ৭৮৭ মডেলের কোনো প্লেনের এর আগে এভাবে ভেঙে পড়ার তথ্য নেই।


আরও খবর