Logo
শিরোনাম

রবীন্দ্রনাথের গল্প ও সুর মানুষকে পথ দেখিয়েছে-- খাদ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত:সোমবার ৩০ জানুয়ারী ২০২৩ | হালনাগাদ:বুধবার ২৯ মার্চ ২০২৩ | ১২৩জন দেখেছেন

Image

শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, স্টাফ রিপোর্টার :

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি বলেছেন, বাঙালির আত্মপরিচয় জাগিয়ে তুলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাঙালি যতবার সভ্যতার সংকটে পড়েছে ততবার কবিগুরুর কবিতা,গল্প ও সুর মানুষকে সঠিক পথ দেখিয়েছে।সোমবার বেলা সারে ১১ টায় নওগাঁ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ৪১তম জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত প্রস্তুতি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে খাদ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

এসময় মন্ত্রী আরো বলেন, কথা, কবিতা ও গানে বিশ্বকবি সামগ্রিকভাবে বাঙালি নন্দনতত্ত¡কে তুলে ধরেছেন বিশ্ব দরবারে। নতুন প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রনাথের কৃতিত্বকে পরিচিত করতে প্রতিটি জেলায় রবীন্দ্র সম্মেলন আয়োজন করা দরকার।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার আরো বলেন, একাত্তরের কোটি মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের যে অনুভব তা আমরা লক্ষ করেছি। তিনি যে মুক্তির ডাক দিয়েছেন, তার রচিত স্বদেশের গানে তা অনুরণিত হতে দেখেছি একাত্তরে।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান পিএএ' এর সভাপতিত্বে নওগাঁ জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মিল্টন চন্দ্র রায়, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম শাহনেওয়াজ,  এফবিসিসিআই পরিচালক ও নওগাঁ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল, জাতীয় রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদ নওগাঁ’র সাধারন সম্পাদক মোসাদ্দেক হোসেন সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

সভায় জানানো হয়, আগামী ৩-৫ মার্চ নওগাঁ জেলায় ৪১ তম রবীন্দ্র সম্মিলণ অনুষ্ঠিত হবে। ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার মধ্য থাকবে সহস্রকন্ঠে রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন, পতিসরে রবীন্দ্র প্রীতি সম্মেলন ও স্মৃতিচারণ, রবীন্দ্র নাথের চিত্রকর্ম প্রদর্শন এবং কবিগুরুর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা। এতে অংশ গ্রহন করবেন, আসাদুজ্জমান নূর, রামেন্দু মজুমদার, রেজোয়ানা চৌধুরী বন্যা সহ দেশ বরেণ্য শিল্পীরা।


আরও খবর

শাকিবকে বাঁচাতে মরিয়া অপু-বুবলী

মঙ্গলবার ২৮ মার্চ ২০২৩




খেলার মাঠের নাফিজা কামাল কুমিল্লার ভোটের মাঠে

প্রকাশিত:বুধবার ১৫ মার্চ ২০২৩ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২৮ মার্চ ২০২৩ | ১৪৯জন দেখেছেন

Image

কুমিল্লা ব্যুরো :

কুমিল্লার লালমাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ও বরুড়ার ইউপি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রতিদ্বন্ধি আওয়ামীলীগ। নির্বাচনকে ঘিরে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় ভোটারার।আর তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষে নির্বাচন এলাকায় প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্ত ব্যবস্থা 

 কাল বৃহস্পতিবার  কুমিল্লার লালমাই উপজেলা পরিষদ সহ বরুড়ার উত্তর ও দক্ষিণ শিলমুড়ি ও দাউদকান্দির বারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কুমিল্লার লালই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনসহ ৩টি ইউনিয়নপরিষদে আওয়ামীলীগের প্রতিদ্বন্ধি আওয়ামীলীগ।

 ইভিএম এর মাধ্যমে সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে কোন ধরনের বিরতি ছাড়েই বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ একটানা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

কুমিল্লার লালমাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দিনবারত পথসভার আর গ্রামের অলিগলিতে ভাইয়ের জন্য ভোট চাইলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ক্রিকেট টিমের চেয়ারপার্সন ও অর্থমন্ত্রীর কণ্যা নাফিসা কামাল। আর নাফিসা কামালকে ঘিরে ছাত্রজনতাসহ নির্বাচনে আমেজে সরগরম লালমাই উপজেলা। 

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ক্রিকেট টিমের চেয়ারপার্সন নাফিসা কামাল, আমি এ এলাকার মানুষকে বলছি নৌকায় ভোট দিয়ে ঠকবেন না। নৌকা মার্কা দেশের উন্নয়নের প্রতীক নৌকা। আমার ভাই নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তাই আমি জননেত্রী প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার জন্য নৌকা প্রতীকে ভোট চাইছি। এ এলাকার মানুষ তথা কুমিল্লার মানুষকে আমি আমার পরিবার মনে করি। তাই পরিবারের মানুষদের কাছে ভোট চাইছে। এ এলাকার মানুষের সাথে আমার বাবা লোটাস কামালের আত্নার সম্পর্ক। 

 লালমাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন ৩জন। আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্ভন্ধিতা করছেন অর্থ  মন্ত্রীর ভতিজা জেলা যুবলীগের আহবায়ক সাবেক ভিপি শাহিনুল ইসলাম শাহিন। এই উপজেলায় আওয়ামীলীগের বিদ্রেহী স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মো. আব্দুল মমিন মজুমদার (আনারস ), মো: হারুনর রশীদ মজুমদার( কাপ পিরিচ )

 আওয়ামীলীগের প্রার্থী শাহিনুল ইসলাম শাহিন (নৌকা) বলেন- আমাকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন।আমি লালমাইবাসীকে আশ্বস্ত করছি । আমার বোন নাফিসা কামাল ভোটের মাঠে আসায় নৌকার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

 আওয়ামীলীগের বিদ্রেহী স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মো. আব্দুল মমিন মজুমদার (আনারস ) বলেন-হুমকি দমকি দিয়ে লাভ নেই। আনারসে যত কাটা তত রস। নির্বাচনে আনারসের কর্মীদের ওপর হামলা হলে কাটা খাবেন বললেন বিদ্রোহী প্রার্থী।

এদিকে কুমিল্লা বরুড়া উপজেলার উত্তর শিলমুড়ি ইউনিয়নে নির্বাচনকে ঘিরে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর অফিস ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামীলীগের সভাপতি বতর্মান চেয়ারম্যান মো: ইসহাক নৌকা ও আওয়ামীলীগের বিদ্যোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মো: আবদুল সালাম আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ।

নির্বাচনে ভোটের পরিবেশ নিয়ে আংশকায় ভোটারা। ভোটাররা বলছেন সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নিষ্চিত করতে প্রশাসনে কাযকর পদক্ষেপ।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঞ্জুরুল আলম বলেন- শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশন বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। নির্বাচনের দিন প্রতিটি সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ১৪ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৬ জন করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে।

নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি, র‌্যাব, আনসার বাটালিয়ান সহ বিপুলসংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন থাকবে। এই নির্বাচনে কোন রকম অনিয়ম সহ্য করা হবে না।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মারুফ আহমেদ  বলেন- নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকায় পুলিশের পাশাপশি বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি । সড়কগুলোতে বৃদ্ধি করা হয়েছে টহল ব্যবস্থা। নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচনের পরের দিন মোট ৫দিন অতিরিক্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। 

কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ৫৭ কেন্দ্রে এ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইউজেলায় মোট ভোটার সংখ্যা রয়েছে ১৫৭২১৮ জন। বারপাড়া ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রের ৫১ টি কক্ষে এ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা রয়েছে ১৭,০৭৭ জন। বরুড়ার শিমুড়ি উত্তর ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রের ৪৭ টি কক্ষে এ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা রয়েছে ১৫,৫৫২ জন। বরুড়ার শিলমুড়ি ইউনিয়নের ৯টি কেন্দ্রের ৬৪ টি কক্ষে এ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা রয়েছে ২২,৩২৫ জন।


আরও খবর



নওগাঁয় দুদকের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ

প্রকাশিত:বুধবার ২২ মার্চ ২০২৩ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২৮ মার্চ ২০২৩ | ৬৬জন দেখেছেন

Image

শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, স্টাফ রিপোর্টার :

নওগাঁর রাণীনগরে “রুখবো দুর্নীতি, গড়বো দেশ হবে সোনার বাাংলাদেশ” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে দুদকের সমন্বিত নওগাঁ জেলা কার্যালয়ের পক্ষ থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

বুধবার নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এবং দুর্নীতি দমন কমিশন ও উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির আয়োজনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হুসেইন। অনুষ্ঠানে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় নওগাঁর উপপরিচালক মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ মোফাখখার হোসেন খাঁন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল আমীন, একাডেমিক সুপার ভাইজার কামরুল হাসান, সাবেক প্রধান শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিক প্রমুখ। অনুষ্ঠানে রাণীনগর সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, রাণীনগর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ও ত্রিমোহনী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণির ১-১০জন করে মোট ১শত ৫০জন মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ ও ৩ জন শিক্ষকের মাঝে প্লাষ্টিকের ডাস্টবিন বিতরণ করা হয়।


আরও খবর



সেন্ট মার্টিন ও ছেঁড়াদ্বীপের ভবিষ্যৎ

প্রকাশিত:শুক্রবার ১৭ মার্চ ২০২৩ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২৮ মার্চ ২০২৩ | ৮৩জন দেখেছেন

Image

সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, যাকে ঘিরে রয়েছে অপার পর্যটন সম্ভাবনা। প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ অবসর যাপনের জন্য ভিড় করে দেশের সর্বশেষ প্রান্তে অবস্থিত এই নীল জলের দ্বীপে। সারি সারি নারিকেলগাছ আর কেয়াবনের সৌন্দর্য সেন্ট মার্টিনের গ্রহণযোগ্যতা আরও অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয় ভ্রমণপিপাসুদের কাছে। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত এই দ্বীপ বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এই দ্বীপটি ঠিক কত আগে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে উঠেছিল তার সঠিক দিন-তারিখ খুঁজে পাওয়া যায়নি। শুরুতে এই দ্বীপটিকে জিঞ্জিরা নামে ডাকা হতো। যা পরবর্তীতে নারিকেল জিঞ্জিরা, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, দারুচিনি দ্বীপ ইত্যাদি নামে পরিচিতি পেয়েছে। সেন্ট মার্টিন নামকরণের দুই রকম ইতিহাস থাকলেও ধারণা করা হয় চট্টগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মার্টিনের নামানুসারেই এর নাম সেন্ট মার্টিন দ্বীপ হয়। ভৌগোলিকভাবে সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে তিনটি অংশে ভাগ করা যায়।

যার উত্তর অংশের ভাগকে বলা হয় উত্তর পাড়া বা নারিকেল জিঞ্জিরা। দক্ষিণ অংশকে বলা হয় দক্ষিণ পাড়া এবং দক্ষিণ-পূর্বদিকে বিস্তৃত লেজের মতো অংশটিকে ডাকা হয় গলাচিপা নামে। এই দ্বীপের দক্ষিণে ছোট আরেকটি দ্বীপ আছে যা স্থানীয়ভাবে ছেঁড়াদিয়া বা ছেঁড়া দ্বীপ নামে পরিচিত। জনশূন্য এই দ্বীপে ভাটার সময় হেটে যাওয়া গেলেও জোয়ারের সময় প্রয়োজন হয় নৌকা। তবে পর্যটকরা বেশিরভাগই ট্রলার, স্পিডবোট ইত্যাদিতে করে ছেঁড়াদ্বীপে যান। অনেকে আবার বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেলও ব্যবহার করেন, যা এই দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে ভাড়ায় পাওয়া যায়। এত সুন্দর ভৌগোলিক পরিবেশে অবস্থিত এই দ্বীপের বর্তমানে বড়ই বেহাল দশা। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার ফলে সেন্ট মার্টিনের পরিবেশের উপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব। প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে প্রবালের পরিমাণ। কমছে গাছপালা আচ্ছাদিত অঞ্চলের পরিমাণ, নষ্ট করা হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ীঠা কেয়াবন। যেখানে ১৯৯৬-৯৭ সালে সেন্ট মার্টিনে বার্ষিক পর্যটকের পরিমাণ ছিল মাত্র ১৫০-২০০ জন সেখানে এখন প্রতি বছর লক্ষাধিক পর্যটক ভিড় করছেন এই দ্বীপে। একদিকে যেমন পর্যটন সম্ভাবনা বিকশিত হয়েছে অন্যদিকে হচ্ছে পরিবেশের বিপর্যয়।

যে প্রবালকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে স্বচ্ছ জলধারার এই দ্বীপ সেটিই এখন প্রবালশূন্য হওয়ার পথে। গত চার দশকে এই দ্বীপে প্রবালের পরিমাণ কমেছে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। অথচ শুধু এই প্রবালের উপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে এই দ্বীপ। প্রবাল কমে যাওয়ায় এই দ্বীপের আয়তনও কমা শুরু হয়েছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের ধারণা, এভাবে চলতে থাকলে ২০৪৫-৫০ সালের মধ্যে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ প্রবালশূন্য হয়ে বঙ্গোপসাগরে তলিয়ে যাবে। প্রবালকে আমরা সাধারণভাবে পাথর মনে করলেও এটি এক ধরনের অমেরুদন্ডী প্রাণী। এর বাইরের আবরণ শক্ত হওয়ায় আমরা একে পাথর ভেবে ভুল করে থাকি।

 সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু প্রতিবেদনে লক্ষ্য করা যায়, সেন্ট মার্টিনে হোটেল-মোটেল ও আবাসিক স্থাপনা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিনিয়ত অতিরিক্ত পর্যটকের চাপ সামলাতে এই স্থাপনাগুলো গড়ে উঠছে। ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে এবং নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। প্রবাল পাথরগুলোকে ভেঙে হোটেল নির্মাতাদের কাছে বিক্রি করছেন স্থানীয় মানুষজন। যা সেন্ট মার্টিনের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। অল্প কিছু টাকার জন্য তারা নিজেদের আবাসস্থলকে ফেলছে অসম্ভব বড় ঝুঁকিতে। এই মানুষ হয়তো অজ্ঞতার ফলে বুঝতে পারছে না এই প্রবালের সঙ্গেই নির্ভর করছে তাদের টিকে থাকা, এই দ্বীপের টিকে থাকা।

ব্যক্তি বা বেসরকারি পর্যায়ে অনেকেই গবেষণা করছেন সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে কিন্তু সবার গবেষণালব্ধ ফলাফলই আমাদের এই দ্বীপ সম্পর্কে অশনিসংকেত দিচ্ছে। স্থানীয় কিছু সংগঠন ও পরিবেশবাদী লোকজন এই বিষয়ে অল্পবিস্তর আলোচনা বা প্রতিবাদ করলেও হচ্ছে না কোনো প্রতিকার। তাদের ধারণা, কিছু প্রভাবশালী মহল সেন্ট মার্টিনে নিজেদের ব্যবসা প্রসারিত করতে গিয়ে চালাচ্ছেন এক ধ্বংসলীলা। সরেজমিনে গিয়েও আপনি একই চিত্র দেখতে পাবেন। যেখানে ২০১২ সালে সেন্ট মার্টিনে মাত্র ১৭-১৮টি হোটেল-রিসোর্ট ছিল এখন সেখানে হোটেল-রিসোর্টের সংখ্যা ১৫০ ছাড়িয়েছে। এসব হোটেল-রিসোর্টের সিংহভাগেরই মালিক বিভিন্ন বড় বড় ব্যবসায়ী কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। টাকার খেলায় যারা ধরাকে সরা জ্ঞান করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। স্থানীয় অধিবাসীদের শিক্ষা ও সচেতনতার অভাবকে কাজে লাগিয়ে কাজ করে যাচ্ছে এই কুচক্রী মহলের মানুষরূপী পরিবেশখেকোর দল।

সেন্ট মার্টিনে একসময় দেখা যেত বিরল প্রজাতির সব কাছিমসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীদের। অথচ এসব প্রাণী এখন চোখেই পড়ে না। সরকারিভাবে এসব প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে আশানুরূপ কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না বলে পরিবেশবিদদের ধারণা। কয়েক প্রজাতির কাছিমের অভয়ারণ্য ও প্রজননস্থান হিসেবে সেন্ট মার্টিনের পশ্চিম বিচকে আলাদা করা হলেও এই বিচেও কমেছে কাছিমের আনাগোনা। স্বাভাবিক সময়ে এখন আর এখানে কাছিম দেখতে পাওয়া যায় না। তবে করোনাকালীন লকডাউনের সময় সেন্ট মার্টিন পর্যটকশূন্য থাকায় ঝাঁকে ঝাঁকে মা কাছিম এই সমুদ্রতটে এসে ডিম পেড়ে বাচ্চা ফুটিয়েছে। এতে সহজেই অনুমান করতে পারি আমরা পর্যটকরা এই সামুদ্রিক প্রাণীদের স্বাভাবিক প্রজননের ক্ষেত্রেও হুমকি তৈরি করছি।

সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ বিপর্যয় ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের জন্য অনিয়ন্ত্রিত ও অতিরিক্ত পর্যটক, পাথর তুলে ফেলা, প্রবাল উত্তোলন, আবাসিক হোটেলের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পর্যটকদের ব্যবহৃত সামগ্রী সমুদ্রের পানিতে ফেলা ইত্যাদি বিশেষভাবে দায়ী। গবেষকদের মতে, সেন্ট মার্টিনে নতুন জন্ম নেওয়া প্রবালগুলো জেলেদের জালের টানে নষ্ট হওযার সম্ভাবনা থাকে কারণ জেলেরা দ্বীপের তীর উপকূলবর্তী এলাকায় জাল ফেলে মাছ ধরেন। যেখানে জন্মায় সবচেয়ে বেশি প্রবাল। ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দ্বীপের চারপাশের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন ও সামুদ্রিক জলের রাসায়নিক পরিবর্তন যার মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ। সম্প্রতি সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ভারসাম্য রক্ষায় 'প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন' এলাকা ঘোষণা করে ভ্রমণে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

এতে বলা হয়েছে, অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন এবং পর্যটকদের অসচেতনতা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, পরিবেশ এবং প্রতিবেশ বিরোধী আচরণের কারণে সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যসহ দ্বীপটিকে টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ৪ ধারার ক্ষমতাবলে সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এই বিধিনিষেধগুলো আরোপিত হয়েছে। নিষেধগুলোর মধ্যে রয়েছে- দ্বীপের সৈকতে বাইসাইকেল, মোটরসাইকেলসহ কোনো ধরনের যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক বাহন না চালানো।

সৈকত বা সমুদ্রে পস্নাস্টিক বা অন্য কোনো ধরনের বর্জ্য না ফেলা। দ্বীপের চারপাশে নৌ-ভ্রমণ না করা। জোয়ার-ভাটা এলাকায় পাথরের ওপর দিয়ে হাঁটাচলা না করা। সামুদ্রিক কাছিমের ডিম পাড়ার স্থানে চলাফেরা না করা। সৈকতে মাইক না বাজানো, হইচই এবং উচ্চৈঃস্বরে গান-বাজনা না করা। স্পিডবোট, ট্রলার কিংবা অন্যান্য উপায়ে ছেঁড়াদ্বীপে না যাওয়া। প্রবাল, শামুক, ঝিনুক, কাছিম, রাজকাঁকড়া, সামুদ্রিক শৈবাল এবং কেয়া ফল সংগ্রহ ও ক্রয়-বিক্রয় না করা। সর্বোপরি সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পরিবেশ ও প্রতিবেশের জন্য ক্ষতিকর যে কোনো কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। সেন্ট মার্টিনের পরিবেশগত বিপর্যয়ের অন্যতম প্রধান কারণ পস্নাস্টিক। সম্প্রতি এই দ্বীপের মাত্র দেড় কিলোমিটার এলাকা থেকে প্রায় ১২০ কেজি পস্নাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।

সংগৃহীত পস্নাস্টিক বর্জ্যের বেশির ভাগই ছিল একবার ব্যবহারযোগ্য কাপ, পেস্নট, চিপসের খালি প্যাকেট প্রভৃতি। আমরা জেনে কিংবা অজান্তেই এসব পস্নাস্টিক এই দ্বীপে ফেলে আসি যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যেহেতু খাবার এবং পানির জন্য প্যাকেটজাত ও বোতলজাত পণ্যের উপর নির্ভর করতে হয় তাই নূ্যনতম সচেতন না হলে এই মারাত্মক দূষণ ঠেকানো কঠিনসাধ্য হবে। এছাড়া সেন্ট মার্টিনকে পর্যটনবান্ধব করতে এবং এর পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। যত্রতত্র হোটেল তৈরি না করে নিয়ন্ত্রিত ও মানসম্পন্ন স্বল্পসংখ্যক হোটেল তৈরি করা যেতে পারে।

আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সর্বোপরি দ্বীপটিকে পর্যটকদের নিকট নিরাপদ ও আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে যাতে সেই সুন্দর স্থানটিকে কেউ নষ্ট করতে উদ্যত না হয়। মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে স্থানীয় প্রশাসন, কোস্ট-গার্ড, নৌ-বাহিনীসহ পরিবেশ অধিদপ্তরকে এগিয়ে আসতে হবে। সেই সঙ্গে পর্যটক হিসেবে আমাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং পরিবেশকে ভালোবাসতে হবে। তবেই প্রিয় সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে আমরা সবাই মিলে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে পারব।

 


আরও খবর



নওগাঁয় ভুটভুটি-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে মোটরসাইকেল চালক নিহত

প্রকাশিত:শুক্রবার ০৩ মার্চ ২০২৩ | হালনাগাদ:সোমবার ২৭ মার্চ ২০২৩ | ৮৬জন দেখেছেন

Image

শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, স্টাফ রিপোর্টার :

নওগাঁর রানীনগর উপজেলার নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কে ভুটভুটি ও মোটরসাইকেল এর মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন মোটরসাইকেল চালক নিহত হয়েছেন। নিহত মোটরসাইকেল চালক যুবক হলেন, জয়রুপ দত্ত আপন(২৬)। 

বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ৮টার দিকে রানীনগর উপজেলার আঞ্চলিক মহাসড়কের খট্টেশ্বর সরদারপাড়া এলাকায় এ দূর্ঘটনাটি ঘটে। 

নিহত মোটরসাইকেল চালক জয়রুপ দত্ত আপন নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ভবানীপুর চৌধুরীপাড়া গ্রামের বাদল দত্তের ছেলে। 

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যুবক জয়রুপ দত্ত আপন একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার। সে নওগাঁ শহরে একটি প্রিন্টিং প্রেসের দোকানে ডিজাইনার হিসাবে কাজ করতেন। বৃহস্পতিবার রাতে দোকানের কাজ শেষে রাণীনগর উপজেলার আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে মোটরসাইকেল যোগে আত্রাই উপজেলায় নিজ বাড়ি ফিরছিলেন। পথে ৮টারদিকে জয়রুপ খট্টেশ্বর সরদারপাড়া এলাকায় পৌঁছালে আত্রাইয়ের দিক থেকে দ্রুত গতিতে আসা একটি ভুটভিটির সাথে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মোটরসাইকেল চালক সিটকে সড়কের উপর পড়ে গুরুতর আহত হোন। আর ভুটভুটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে খাদে পড়ে যায়। এ সময় স্থানীয় লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে রাণীনগর ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে মোটরসাইকেল চালককে উদ্ধার করে রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রাণীনগর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আতাউর রহমান বলেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা মোটরসাইকেল চালক কে হাসপাতালে নিয়ে আসার পূর্বেই তার মৃত্যু হয়।

সত্যতা নিশ্চিত করে,রাণীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ জানান, দূর্ঘটনায় ভুটভুটি টি গভীর খাদে পড়ে যাওয়ায় এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আর ভুটভুটির ড্রাইভারকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। ভুটভুটি উদ্ধার সহ চালককে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।


আরও খবর



নওগাঁয় ইরো-বোরো ধান চাষে খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ,ধানের মূল্য বাড়ানোর দাবি

প্রকাশিত:সোমবার ২০ মার্চ ২০23 | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ২৮ মার্চ ২০২৩ | ৬৪জন দেখেছেন

Image

শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, স্টাফ রিপোর্টার :

শস্য-ভান্ডার নামে সারা দেশে পরিচিত উত্তরাঞ্চল এর নওগাঁ জেলার ১১ টি উপজেলায় এবার ইরি-বোরো ধান উৎপাদন (চাষে) খরচ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে বলেই জানিয়েছেন কৃষকরা। ধান চাষি কৃষকরা বলছেন, বিগত ধান চাষের মৌসম থেকে এবার চলতি ইরি-বোরো ধান চাষে দ্বিগুণ খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে দিন মজুর ও ধানের চারা রোপন কাজের শ্রমিকের মূল্য যেমন বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ তেমনি বাজারে ডিজেল এর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জমি চাষের খরচও বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ, এছাড়া সার এর মূল্য কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও বেড়েছে পানি সেচ মূল্য, বীজ, কীটনাশক সহ কৃষি শ্রমিকের মজুরি। যার ফলে বিগত বছরের থেকে এবার প্রতি বিঘা ইরি-বোরো ধান চাষে ৪-৫ হাজার টাকা বেশি খরচ হচ্ছে বলেই জানিয়েছেন কৃষকরা। একই সাথে কৃষকরা জানিয়েছেন, ধান - কাটা মাড়াই এর শুরু থেকেই বাজারে প্রতি মণ ধান সর্বনিন্ম ১৫-১৬ শ’ টাকা দরে যদি বিক্রি করতে পারেন, সেক্ষেত্রে তারা কিছুটা লাভমান হতে পারেন। এরনিচে কম মূল্যে বিক্রি করলে কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়বেন।

তবে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বর্গাচাষিরা। ইউরিয়া সার, শ্রমিক, চাষের খরচ সহ পানি সেচ বাবদ খরচ বেড়ে যাওয়ায় জেলায় এবার গত বছরের চেয়ে ৮৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে করতে হচ্ছে কৃষকদের। 

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে নওগাঁ জেলার সদর, মহাদেবপুর, পত্নীতলা, ধামইরহাট, সাপাহার, নিয়ামতপুর, মান্দা, বদলগাছী, রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলায় মোট ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭শ' ৫৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, এ পরিমাণ জমিতে ধান চাষে পানি সেচ ও সার বাবদ খরচ হবে ২৯৭ কোটি ৮৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা। গত বছর এক লাখ ৮৯ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদে সার ও সেচে খরচ হয়েছিল ২১৩ কোটি ১৭ লাখ ৬২ হাজার টাকা। চলতি বছর এ বাড়তি খরচ প্রান্তিক চাষি (কৃষকদের) জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃষকরা সার, ডিজেল ও বিদ্যুতের দাম সহনীয় পর্যায়ে এনে ধানের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণের দাবিও জানিয়েছেন কৃষকরা।

নওগাঁ জেলার পল্লী গ্রামের মাঠ গুলোতে এবার চিকন ধান জিরাশাইল, কাটারিভোগ, সম্পা কাটারি, ব্রি-২৮, ২৯, ৮১, ৮৬, ৮৮, ৮৯, ৯০, ৯২ ও বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। নওগাঁর বিভিন্ন উপজেলার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ যেন সবুজ চাদরে ঢাকা। ইরি-বোরো ধানের ক্ষেতে সবুজের সমারোহ নজর কাড়ব যে কারো মনে। ইরি-বোরো ধান ক্ষেত পরিচর্যায় কৃষকরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার নওহাটামোড় চৌমাশিয়া গ্রামের কৃষক সাজ্জাদ হোসেন মন্ডল, খোর্দ্দনারায়নপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বাবু সহ বেশ কয়েক জন কৃষক জানান, বিগত বছরের চেয়ে এবার ইরি-বোরো ধান চাষে খরচ অনেক বেড়েছে। তারা বলেন, শ্রমিকের খরচ, পানি সেচ খরচ ও ডিজেল এর মূল্য রাড়ানোর ফলে জমি চাষ খরচ সহ কিটনাশকের মূল্যও ব্যাপক বৃদ্ধি হওয়ায় চলতি ইরিবোরো ধান চাষে বিঘা প্রতি ৪-৫ হাজার টাকা খরচ বৃদ্ধি হয়েছে, এজন্য বাজারে ধানের মূল্য ও বাড়ানোর দাবি করেন কৃষকরা। অপরদিকে আত্রাই উপজেলার দমদমা গ্রামের পোস্ট মাস্টার আব্দুল লতিফ চাকরির পাশাপাশি কৃষি কাজও করেন। এবার তিনি সারে ৪ বিঘা জমিতে ইরো বোরো ধান লাগিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। সেই সাথে বেড়েছে কীটনাশকের দাম, জমি চাষ, ধানের চারা লাগানো, নিড়ানিসহ বিভিন্ন খরচ গত বছরের চেয়ে এবার বিঘাপ্রতি ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বেড়েছে। প্রতি মণ ধান ১৫শ' টাকা থেকে ১৬' টাকায় বিক্রি করা না গেলে ধানে লোকসান গুণতে হবে।

বদলগাছী উপজেলার চাংলা গ্রামের কৃসক ওয়াহেদ আলী এবার সারে ৬ বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ইরি বোরো ধান রোপণ করেছেন। তিনি বলেন, গতবছর ধানের চারা রোপণ ৭০০-৮০০ টাকা বিঘা হিসেবে শ্রমিকের মজুরি ছিল। এবার তা বেড়ে ১৫০০ টাকা দ্বিগুণ হয়েছে। এছাড়া একজন শ্রমিক এক বেলা খাওয়া দিয়ে ৫০০ টাকা দিতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে এবার প্রতি বিঘা জমিতে ধান রোপণ থেকে শুরু করে ঘরে তোলা পর্যন্ত ১৬-১৭ হাজার টাকা খরচ হবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ধান পাবো ২০ মণ। এর মধ্যে জমির মালিককে প্রতি বিঘাতে ৭ মণ করে ধান দিতে হবে। ৭ মন ধান দেওয়ার পর বিঘাতে ১৩ বা ১৪ মন ধান পাবো, তাহলে ধান চাষ করে কী লাভ হবে। এবার ধানের মন বিগত বছরের থেকে ৩০০-৪০০ টাকা বেশি না করা হলে আমরা ক্ষতির মুখে পড়বো।

রানীনগর উপজেলার মিরাট গ্রামের ধান চাষি কৃষক শুকবর আলী বলেন, এবছর ধার-দেনা করে ৭ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। গত বছরের তুলনায় এবার প্রতি বিঘা বোরো আবাদের শুরুতেই খরচ বেড়েছে ২হাজার টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত। শ্রমিকের মজুরি গত বছর ছিল ৩শ' টাকা। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫শ' থেকে সারে ৫শ' টাকায়। ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে সেচ ও জমিতে ট্রাক্টর দিয়ে হালচাষ করায় খরচ বেড়েছে। এই ধার-দেনার টাকায় ধান কাটার পরেই তা বিক্রি করতে হয়। তখন (ধান-কাটা মাড়াই এর) সময় আবার ধানের দামও পাওয়া যায় না। ধান ঘরে তোলার সময় শ্রমিক পাওয়া যায় না। শ্রমিকদেরকে বেশি টাকা দিয়ে ধান কাটাতে হয়। তাই এবার ধানের দাম না বাড়লে ধান চাষি কৃষকরা মাঠে মারা যাবে বলেও মনে করেন তিনি।

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা একে এম মঞ্জুরে মাওলা জানান, ইতিমধ্যেই জেলায় মতভাগ আবাদি ধান চাষের জমিতে ধান রোপন সম্পূর্ণ করেছেন কৃষকরা। এখন ধান নিরানি, কিটনাশক, সেচ সহ ধান ক্ষেতের পরিচর্যা নিয়ে ব্যাস্ত কৃষকরা। তবে এখন পর্যন্ত জমিতে ইরি বোরো পরিবেশ ভালো রয়েছে। আশা করা হচ্ছে এবার লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে। তিনি আরো বলেন, এবছর বিদ্যুৎ খরচ ও সেচ খরচ বেড়েছে, বেড়েছে শ্রমিকের মূল্যও। আর যেকোনো বিষয়ে উৎপাদন খরচ বাড়লে সেটি শেষ পর্যন্ত কৃষক পর্যায়ে বেড়ে যায়। সরকার ধানের দাম নির্ধারণ করার সময় বর্তমান বাজার দরের সমন্বয় করবেন। তবে বাজারে ধানের দামও ভালো পাবেন কৃষকরা এবং কৃষকরা ধান বিক্রি করে লাভবান হবেন বলে আশা এই কৃষি কর্মকর্তার।


আরও খবর