আজ থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। এ মাসে মাঠের রাজনীতি তেমন গরম না থাকলেও ঘরোয়া আলোচনা বা ইফতার রাজনীতি বেশ সরগরম হয়ে উঠে। তাই পবিত্র এ মাসকে সামনে রেখে বিএনপির পক্ষ থেকে বেশকিছু কাজ গুছিয়ে আনার প্রস্তুতি হাতে নেওয়া হয়েছে। ঘরোয়া আলোচনা, দলের পক্ষ থেকে চারটি ইফতার মাহফিল, সংগঠন গোছানো এবং ‘সরকারবিরোধী ঐক্য’ গঠনের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। একটি আন্দোলনমুখী সংগঠন গড়ে তুলতে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছে বিএনপি। রমজান মাসকে সামনে রেখে ইফতার কার্যক্রমের মাধ্যমে লক্ষ্য হাসিলের চেষ্টা করবে দলটি। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির নেতারা জানান, এবারের রমজান মাসের সময়কালটি রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন কারনে গুরুত্বপূর্ণ। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বড় একটি সরকারবিরোধী আন্দোলনের ঘোষণা বা পরিকল্পনা বিএনপির বহু দিনের। রাজপথ দখলে নিয়ে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করার মতো সাংগঠনিক শক্তি অর্জনের লক্ষ্যে সারা দেশে কমিটি পুনর্গঠনের কাজ চলছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু জেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে, চলতি রমজান মাসে আরো অন্তত্ব ১৫টি জেলায় সম্মেলনের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া অঙ্গ ও সহযোগী দলের সাংগঠনিক কাজও গুছিয়ে আনা হচ্ছে। এছাড়া নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে ‘সরকারবিরোধী ঐক্য’ গঠন এই মুহূর্তে বিএনপির অন্যতম এজেন্ডা। এ ক্ষেত্রে ভেবে-চিন্তে এগোচ্ছে বিএনপি। তবে দলটি এ নিয়ে কোনো তাড়াহুড়ো করতে চায় না। জোট ও জোটের বাইরের সমমনা দলগুলোর রাজনৈতিক মতামত এবং দাবির যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করে চূড়ান্ত পথে হাঁটতে চায় দলটি। এজন্য পর্দার অন্তরালে ডান-বামসহ বহু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দলটির নেতারা অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ দলগুলোর সঙ্গে এক দফা আলোচনা এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এর বাইরে বেশ কয়েকটি বাম দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গেও কথা বলেছেন বিএনপির নেতারা।
জানা গেছে, রমজানে ঐক্য গঠনের এই তৎপরতা এগিয়ে নেওয়া হবে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা এরই মধ্যে রমজানে চারটি ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রথম রমজান এতিম আলেমণ্ডওলামাদের সম্মানে ইফতার পার্টি হবে গুলশানের লেডিস ক্লাবে। পেশাজীবীদের সম্মানে একই স্থানে ২৮ এপ্রিল ইফতার মাহফিল হবে। তবে রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতারে তারিখ ও স্থান এখনো ঠিক হয়নি বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসের কার্যালয়ের মিডিয়া শাখার সদস্য শায়রুল কবির খান।
জানা গেছে, ইফতার মাহফিলের মধ্যে রাজনীতিবিদদের সম্মানে ইফতার অনুষ্ঠানকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। দলটির নেতারা এই ইফতার পার্টিকে ‘পুনর্মিলনী’ ও সরকারবিরোধী ঐক্যের সূচনা হিসেবে তুলে ধরতে চান। এই ইফতারে জোট ও জোটের বাইরে থাকা ডান-বাম সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, বিএনপি এবারের রোজার মাসে চারটি ইফতার মাহফিল আয়োজানের উদ্যোগ নিয়েছে। তাছাড়া দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির প্রতিবাদে চলমান আন্দোলন এ রমজান মাসেও চলমান থাকবে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আন্দোলন সময় বলে কয়ে আসে না। পরিস্থিতি বাধ্য করলে যেকোনো সময় কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে। তবে রমজান মাসে মানুষ ধর্মীয় কাজে বেশি ব্যস্ত থাকে বিধায় অনেক কর্মসূচি ভেবে চিন্তে দেওয়া হয়। বৃহৎ জোট গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, এটি চলমান পক্রিয়া, আলোচনা চলছে, আরো আলোচনা হবে।
জানা গেছে, আগামী বছর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি নতুন করে আবার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে শুরু করেছে। দলটি আওয়ামী লীগ হটাও আন্দোলনের নতুন একটি রোডম্যাপ তৈরির চিন্তা করছে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, খুব শিগগির রাজনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টাতে থাকবে। আন্দোলনকে বেগবান করতে কর্মসূচির ধরনে পরিবর্তন আসবে। সরকারের ওপরও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে চাপ বাড়তে থাকবে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, নতুন জোটগঠনের ক্ষেত্রে এইর মধ্যে অধিকাংশ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রাথমিক সম্মতি পেয়েছে বিএনপি। জোট ও জোটের বাইরের সব দলই চাচ্ছে, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্বাদশ নির্বাচন অনুষ্ঠান হোক।
সাম্প্রতিক সময়ে ইসির সংলাপে সুশীল সমাজের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা প্রয়োজন ও ভোটে ইভিএম ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন। জানা গেছে, বিএনপির অভ্যন্তরে এটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সচেতন ব্যক্তিরা গণতন্ত্রের স্বার্থে এভাবে আরো ভূমিকা রাখবেন বলে দলটি আশা করছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি দীর্ঘসময় ধরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন করছে। এই ফ্যাসিবাদী সরকারের হাত থেকে জনগণকে মুক্ত করতে হলে বৃহৎ রাজনৈতিক ঐক্য প্রয়োজন। বিএনপি আশাবাদী, অচিরেই সেই ঐক্য গড়ে উঠবে।
জানা গেছে, নির্বাচনের অনেকটা সময় বাকি থাকায় বিরোধী জোট গঠনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনই আসছে না। তবে এজন্য আলোচনা অব্যাহত রাখবে বিএনপি। এর পাশাপাশি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের এক দফা আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতেও কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। রমজানেও এ ধরনের কর্মসূচি চলবে। প্রতিটি অঙ্গ সংগঠনকে রমজানে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছে বিএনপি। সারা দেশে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলোর কমিটি পুনর্গঠনের চলমান প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করারও নির্দেশনা রয়েছে হাইকমান্ডের।