কক্সবাজারের উখিয়ার রুমখাপালং মাতব্বর পাড়া এলাকার একজন সাধারণ পরিবারের সন্তান ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি সৌদি আরবে থাকাকালীন পেশায় ছিলেন রংমিস্ত্রি। তার আগে জেলা পরিষদের যাত্রী ছাউনির এক পাশে বসে ফ্লাক্সিলোডের ব্যবসাও করতেন। ২০১৮ সালে সৌদি থেকে দেশে ফিরে বিয়ে করেন এক চেয়ারম্যানের মেয়েকে।
২০১৯ সালে ২৫ মার্চ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন তিনি। এরপরই ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে জাহাঙ্গীর আলমের। নির্বাচনি ইশতেহার মাত্র ১২ লাখ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দেখানো হলেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি এখন ২৬৫ কোটি টাকার সম্পদের মালিক।
সে স্থানে ৩ কোটি টাকা খরচ করে একটি বহুতল ভবন বানিয়েছেন। ওই ভবনে গত তিন বছর ধরে জাহাঙ্গীর নিজে বসবাস করে আসছেন।
উখিয়া উপজেলার ব্যয়বহুল কোটবাজার এলাকায় রত্নাপালং মৌজায় ৩৭৬৮ খতিয়ানে ৬৫ শতক জমি ক্রয় করেন যার বর্তমান বাজারমূল্য ৫ কোটি টাকার ওপরে (খতিয়ান সংযুক্ত)।
ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কোটবাজার স্টেশনে একই মৌজায় ৫৩২৩ খতিয়ানে ১৬ শতক জমি ক্রয় করে একটি বহুতল অত্যাধুনিক ভবন তৈরি করেছেন জমিসহ যার বাজারমূল্য ১০ কোটি টাকা। এ ছাড়াও উখিয়ার কোটবাজার স্টেশনে রত্নাপালং মৌজায় প্রণব রায় চৌধুরীর কাছ থেকে তিনি একসঙ্গে ২ একরের বেশি জমি ক্রয় করেন যার বর্তমান বাজারমূল্য ১৫ কোটি টাকারও বেশি।
২০১৯ সালে কক্সবাজার শহরের কলাতলির সৈকতের লাগোয়া ঝিলংজা মৌজায় যৌথভাবে তিনি একটি জমির মালিক যার বর্তমান বাজারমূল্য ৮ কোটি টাকা।
অভিযোগে বলা হয়েছে, উখিয়া উপজেলার ইনানী মৌজায় মেরিন ড্রাইভ রোডের হ্যাচারি জোন, ইনানী ও মনখালী এলাকায় ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর, তার শ্যালক শাহা আমিন ও বন্ধু জসিম উদ্দিনের নামে প্রায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের জমি রয়েছে। এ ছাড়াও চট্টগ্রামের চান্দগাঁও এলাকায় নিজ নামে, পিতার নামে ও ভাইয়ের নামে ৪০ কোটি টাকা মূল্যের চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে।
গত কয়েক বছরে ভাইস চেয়ারম্যান তার স্বজনদের নামে কক্সবাজারের কলাতলিতে ২টি হোটেল যার আনুমানিক মূল্য ৬০ কোটি টাকা। পাশাপাশি কক্সবাজার থেকে উখিয়া রোডে পালং স্পেশাল সার্ভিসের সভাপতিও তিনি। তার ১০টি বাস যার বাজারমূল্য ২ কোটি টাকা। এ ছাড়াও তার চারটি ট্রাক আছে যার বাজার মূল্য ৫০ লাখ টাকা।
অভিযোগকারী অভিযোগ করেন, উখিয়ার রত্নাপালং, রুমখাপালং ও জালিয়াপালং মৌজা, রামুর উপজেলার খুনিয়াপালং, হিমছড়ি, পেঁচারদ্বীপ মৌজা এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় নিজের নামে, স্ত্রীর নামে এবং শ্যালকের নামে আরও প্রায় ১০০ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। যার সবকিছুই অবৈধ উপায়ের মাধ্যমে গত সাড়ে চার বছরে তিনি অর্জন করেন।
ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর ও তার চাচার যৌথ মালিকানাধীন কোটবাজার স্টেশনে রয়েছে একটি গ্যাস পাম্প যার বাজারমূল্য ২ কোটি টাকা। সৌদি প্রবাসী একজন রংমিস্ত্রি ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ১২ লাখ টাকার সম্পদ থেকে এখন প্রায় আড়াইশ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক বনে যাওয়ায় হতভম্ব খোদ এলাকাবাসী। অভিযোগে আরও বলা হয়, এসব স্থাবর সম্পদ ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকে নিজের নামে, স্ত্রী ও দুই শ্যালকের নামে অঢেল অর্থ জমা আছে।
কক্সবাজারের সদর, রামু ও উখিয়া সাব রেজিস্ট্রার অফিসের পাশাপাশি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়ও তার অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া যাবে বলে তিনি অভিযোগে উল্লেখ করে
তবে অভিযুক্ত ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম সময়ের আলোকে বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমার পরিবারের মধ্যে ১৭ জন চেয়ারম্যান রয়েছে। চাচা সরকারের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তার সবই মিথ্যা। ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর সাড়ে চার হাজার টাকার সম্পদও আমি বানাইনি। তবে বিদেশে লোক পাঠানোর কথা স্বীকার করেন তিনি। কিন্তু রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট তৈরি করে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, তার ও তার ভাইয়ের নামে যে সম্পদ রয়েছে তার সবই গড়েছেন বিদেশ থাকাকালীন।
নির্বাচনি ইশতেহারে ১২ লাখ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য উল্লেখ করার কথা বলা হলে তিনি বলেন, এসব বিষয় নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে।