
রোকসানা মনোয়ার : বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)
চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার জানিয়েছেন প্রায় সাড়ে ১২ লাখ ড্রাইভিং
লাইসেন্স প্রদান বাকি রয়েছে। করোনাভাইরাসের সময় স্মার্ট ড্রাইভিং কার্ডের জন্য ৩
বার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে এবং মামলার কারণে লাইসেন্স বিতরণে দীর্ঘসূত্রিতা
হয়েছে বলে তিনি জানান।
স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্সে যাবতীয় তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকলে বিদেশে
চাকরি বা ভ্রমণের ক্ষেত্রে খুবই কাজে লাগবে। তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে এ প্রক্রিয়া
সম্পন্ন করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। শুধুমাত্র যানবাহনের অতিরিক্ত গতির কারণে
দুর্ঘটনা ঘটছে না, সড়কে শৃঙ্খলার অভাবে সবকিছু প্রশ্নবিদ্ধ
হয়ে যাচ্ছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বিদ্যমান আইন রয়েছে, যা যথাযথভাবে প্রয়োগের অভাবে কোন রাস্তায় কোন যানবাহন চলাচল করবে,
সে ব্যাপারে তদন্ত সলিসি নির্ধারণের প্রয়োজন রয়েছে।
তিনি ১৯৮০ সালে নির্মিত গাড়ি ঢাকা শহরে চলাচল
করার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেন আরও বলেন,
এক্ষেত্রে গাড়ির ফিটনেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও সতকর্তা অবলম্বন
করার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। ঢাকা শহরে ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধের লক্ষ্যে
কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের প্রস্তাব করেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বলেন, বিআরটিএ থেকে দীর্ঘদিন যাবত স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে গ্রাহকরা চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে এবং যে কোনো সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দালালের মাধ্যমে নিতে হয়। ১২ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং নবায়নযোগ্য ২৫ লাখ লাইসেন্স ছাপানোর অপেক্ষায় রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাপানোর কার্যক্রম ধীর গতিতে হওয়ায় সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। বিষয়টি নিরসন হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন। ড্রাইভিং লাইলেন্স প্রদানে বিলম্ব হওয়ায় পেশাদার ও অপেশাদার ড্রাইভারগণ গাড়ি চালাচ্ছে। এ সুযোগে অপেশাদার ব্যক্তি গাড়ি চালানোর ফলে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা বাড়ছে ফলে মানুষের মৃত্যুর মিছিলও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এ বিষয়ে সভাপতি সভায় অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী মহোদয় বরাবর একটি
আবেদন করা হয়েছে, যার কপি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়
সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতিকে দেওয়া হয়েছে। যা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়
এটি একটি উন্নত প্রযুক্তি সম্বলিত সমাধান। যা জার্মান প্রযুক্তির মাধ্যমে
পরিকল্পনা করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত কম খরচে গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব। এতে
সরকারের কোনো আর্থিক সংশ্লিষ্ঠ বিষয় থাকবে না। এটির সাথে গাড়ি এবং চালক সম্পর্কিত
বিস্তারিত তথ্যাবলি থাকবে। ইহা ছাড়াও এ প্রযুক্তিতে আইডি কার্ড জন্ম নিবন্ধনসহ
ড্রাইভিং লাইসেন্স সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্যসমূহ থাকবে। এটি কোনোক্রমেই নকল করা
সম্ভব হবে না। এ প্রযুক্তিটি পরবর্তীতে ডিজিটাল প্রেডেনশিয়াল তৈরিতে সহায়তা
করবে।
এসবের উত্তরে বিআরটিএ আরও বলেন, তবে যারা মাঠপর্যায়ে পরীক্ষা দিচ্ছে তারা যথাসময়ে লাইসেন্স পেয়ে যাচ্ছে। যাদের লাইসেন্স রয়েছে, তাদের অস্থায়ীভাবে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে বলে জানান। ডিপিএম পদ্ধতি লাইসেন্স তৈরি করার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দেওয়া হয়েছে, এক্ষেত্রে কোভিডের কারণে জার্মান থেকে মেশিন সরবরাহে বিলম্ব হচ্ছে। ১২ লাখ ৪৫ হাজার লাইসেন্সের মধ্যে ৪ লাখ ইতোমধ্যে প্রিন্ট সম্পন্ন হয়েছে। গ্রাহকের ভোগান্তি দূর করার লক্ষ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ ডিজিটালাইজড হয়েছে। কিন্তু ডিজিটালাইজডের বিষয়টি অনেকে অবহিত নয়, এক্ষেত্রে প্রায় গ্রাহক দালালের শরণাপন্ন হয়ে থাকে।
বৈঠকে মানুষের জীবন নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সকল প্রকার অবকাঠামো নির্মাণ এবং মহাসড়কে জনগণের জীবনের নিরাপত্তা বিধান ও নিরাপদ রাখা লক্ষ্যে নসিমন, করিমন, সিএনজি চালিত অটোরিকশা, ইঞ্জিনচালিত রিকশা চলাচল বন্ধ করার ব্যপারে ৮টি বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, অতিরিক্ত আইজিপি (হাইওয়ে) এর সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়কে পুনরায় সুপারিশ করা হয়।
বৈঠকে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাপানো ও
বিতরণে দীর্ঘসূত্রিতায় অসন্তোষ প্রকাশ করে এবং আবেদনকারীদের নিকট দ্রুত বিতরণের
ব্যবস্থা নেওয়া হবে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য জানানোর জন্য কমিটি সুপারিশ করে।