Logo
শিরোনাম

সীমিত সামর্থ্যে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ প্রত্যাশা

প্রকাশিত:শুক্রবার ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | হালনাগাদ:শনিবার ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ |

Image

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : বাফুফের সংবাদ সম্মেলন কক্ষে গত কয়েক বছরে অসংখ্য বারই এসেছেন জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু। তিনি আজ (শুক্রবার) একটু ভিন্নভাবেই আসলেন। জাতীয় দলের টি-শার্ট পরে হেড কোচের আসনে বসে সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করলেন মিন্টু। জাতীয় দলের সাবেক এই ফুটবলার অনূর্ধ্ব-২৩ দল নিয়ে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর এএফসি অ-২৩ বাছাই খেলতে যাচ্ছেন। 

টুর্নামেন্টটিতে ১১ টি গ্রুপ রয়েছে। প্রতিটি গ্রুপের চ্যাম্পিয়নের সঙ্গে সেরা পাঁচ রানার্স-আপ মূলপর্বে খেলবে। বাংলাদেশের মূল পর্বে খেলার সম্ভাবনা সম্পর্কে কোচ বলেন, ‘আমরা অবশ্যই মূলপর্বে খেলার লক্ষ্য নিয়ে যাব। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। মালয়েশিয়ার বিপক্ষে প্রথমে পয়েন্ট পেলে তখন মূলপর্বে খেলার সম্ভাবনা আরও বাড়বে।’

এই সপ্তাহেই সিনিয়র জাতীয় দলের প্রীতি ম্যাচ এবং সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে আবার এশিয়ান গেমস রয়েছে। সব মিলিয়ে অ-২৩ দল পূর্ণ শক্তির নয়। বিষয়টি মেনে নিয়েও সর্বোচ্চ প্রত্যাশাই করছেন মিন্টু, ‘বয়স ২৩-এর নিচে এমন সাত জন (মোরসালিন, দিপকসহ আরও পাঁচ জন) খেলোয়াড় সিনিয়র দলে রয়েছে। তারা আসলে অবশ্যই দলীয় শক্তি বৃদ্ধি পেত। কিন্তু সিনিয়র দলের প্রীতি ম্যাচও গুরুত্বপূর্ণ। আবার সামনে এশিয়ান গেমস। সেই দলে যারা রয়েছে তাদের বিষয়টিও বিবেচনা করা হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে বিদ্যমান সামর্থ্যের মধ্যে আমরা সর্বোচ্চটা দেব। আমাদের গ্রুপে রয়েছে স্বাগতিক থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইন। তাদের সাম্প্রতিক খেলাগুলো দেখেছি। তারা আমাদের সামর্থ্যের খুব বাইরে নয়।’

সিনিয়র জাতীয় দলে খেলেছেন এমন চারজন রয়েছেন অনূর্ধ্ব-২৩ দলে। এদেরই একজন ইয়াসিন আরাফাত এই দলটির অধিনায়কত্ব করবেন। জাতীয় দলে এক সময়কার নির্ভরযোগ্য এই ফুটবলার সাফের চূড়ান্ত স্কোয়াডে ডাক পাননি। পুনরায় জাতীয় দলে প্রবেশের চেয়ে জুনিয়র দলের দায়িত্বেই তার আপাতত মনোযোগ, ‘আমি এখনকার দায়িত্ব নিয়েই ভাবছি। এই দলে সেরাটা দিতে চাই। সেরাটা দিতে পারলে অবশ্যই জাতীয় দলেও বিবেচনা করবে।’

গোলের খেলা ফুটবল। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ফুটবলারদের গোল স্কোরিংয়েই মূল সমস্যা। এএফসি অ-২৩ টুর্নামেন্টেও এটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে স্বীকার করলেন কোচ মিন্টু, ‘এটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট। গোল শুধু টেকনিক্যাল নয়, সাইকোলজিক্যালও বিষয়। খেলোয়াড়দেরও বিশ্বাস থাকতে হবে সে পারবে। গোল করতে করতে সে এতে অভ্যস্ত হবে।’ 


আরও খবর



গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রতি খোলা চিঠি

প্রকাশিত:বুধবার ২৮ আগস্ট ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ |

Image

বিষয়ঃ ‘রাষ্ট্র সংস্কার’ বিষয়ে কতিপয় প্রস্তাব। 

টরন্টো, কানাডা, আগস্ট ২৭, ২০২৪  

মাননীয় প্রধান  উপদেষ্টা, 

বাংলাদেশের ইতিহাসের এই সন্ধিক্ষণে আপনি সরকারের হাল ধরেছেন এই জন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমি আপনার প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিশ্ববাসী আপনাকে যে অতুলনীয় সম্মান বর্ষণ করেছে তা যেকোন নশ্বর জীবনের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের অর্জন। একাধিক রাষ্ট্রের কর্ণধার শান্তিতে নোবেল অর্জন করেছেন রাজনৈতিক কারণে, আপনি নোবেল অর্জন করেছেন আপনার অনন্য সাধারণ মেধাবি অর্জনের কারণে। এখন আপনি এক অভাগা রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিয়েছেন। এই অভাগা রাষ্ট্রের অভাগা মানুষকে আপনি হতাশ করবেননা এটা আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আমরা আশা করি এই দেশটি স্বৈরাচারের যে চক্রে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে তা থেকে পরিত্রাণের একটি টেকসই ব্যবস্থা আপনি জাতিকে উপহার দেবেন। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, কিন্তু দুর্ভাগ্য এই যে স্বৈরাচারের সূচনাও হয়েছে তারই হাতে।

দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় আপনার সদয় বিবেচনার জন্য আমি আমার চিন্তার কিছু ফসল নিম্নে উপস্থাপন করছিঃ    

 

ওয়েস্টমিনিস্টার ধাঁচের  সংসদীয় পদ্ধতিঃ আমাদের বৃটিশ উপনিবেশিক প্রভুদের কাছ থেকে পাওয়া ওয়েস্টমিনিস্টার ধাঁচের  সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমেই এই দেশে বারবার স্বৈরাচার উঠে এসেছে। এই পদ্ধতির প্রথম ব্যর্থতা আমরা দেখি বাকশাল প্রতিষ্ঠায়। বাকশাল ডেকে এনেছিল দেড় যুগের সামরিক শাসন। সামরিক শাসনের অবসানের পর আমরা আটটি সাধারণ নির্বাচন দেখেছি। এর মধ্যে চারটিই ছিল ভুয়া প্রহসনের নির্বাচন। বাকি চারটি নির্বাচন ছিল মোটামুটি গ্রহণযোগ্য।  কিন্তু মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনগুলি অনুষ্ঠিত হয়েছিল সংসদীয় পদ্ধতির ব্যত্যয় ঘটিয়ে অগণতান্ত্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সংবিধানে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয় সেই ব্যবস্থাকেও আমরা খেলো করে ফেলি পসন্দের তত্ত্বাবধায়ক প্রধান নিশ্চিত করার জন্য সুবিধামত সময়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের অবসর গ্রহণের বয়স বাড়িয়ে দিয়ে এবং সর্বশেষ নির্লজ্জভাবে দলীয় ক্রীড়নক রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব দিয়ে। ফল যা হবার তাই হল। আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে দেশে প্রচণ্ড বিক্ষোভ, লগি-বইঠা নিয়ে সমাবেশ, অবরোধের মুখে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে ফখরুদ্দিনের নেতৃত্বে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। দেশের রাজনীতির গুটি আবার ছকের প্রথম ঘড়ে ফিরে আসে। 

 তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনঃ বিএনপির নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের বিরোধী শিবির তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের দাবী নিয়ে দেড় যুগ ধরে মাঠে অবস্থান করেও একটা নিশ্ছিদ্র তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার রূপরেখা জাতির কাছে উত্থাপন করতে ব্যর্থ হয়। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভাষায় একমাত্র শিশু ও পাগল ছাড়া দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্ব দেওয়ার মত নিরপেক্ষ ব্যক্তি পাওয়া যাবেনা। প্রকৃতপক্ষে নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পরীক্ষা আমাদের দেশে যথেষ্ট হয়েছে  এবং এই ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে গেছে। এটাকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা না করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সাংবিধানিক ও আইনগত বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা যে ব্যর্থ হয়েছে তা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি নিরপেক্ষ ব্যক্তির সন্ধান করতে গিয়ে। নতুন ব্যবস্থা গড়ে   তুলতে হলে প্রথমে আমাদের মেনে নিতে হবে যে আমাদের (১) তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা এবং (২) ওয়েস্টমিনিস্টার ধাঁচের সংসদীয় পদ্ধতি ব্যর্থ হয়েছে। 

       

অন্তঃপ্রকৃতি দুর্বলতাঃ ওয়েস্টমিনিস্টার ধাঁচের সংসদীয় পদ্ধতির অন্তঃপ্রকৃতি দুর্বলতার কারণে এই ব্যবস্থা আমাদের দেশে ব্যর্থ হয়েছে। ইংল্যান্ডে যে গণতন্ত্র বিকশিত হয়েছিল তা ছিল মূলত সামন্তবাদিদের সুবিধার গণতন্ত্র। এটা ছিল রাজকীয় ক্ষমতা ধীরে ধীরে সংকোচিত করে ভূস্বামীদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করার প্রক্রিয়া। পরবর্তীতে বিত্তবানদের অধিকার এই প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হয়।। ভূমিহীন বিত্তহীনদের ভোটাধিকারের সংশ্লেষ আসা শুরু হয় উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে। এই প্রক্রিয়ায় বিকশিত পার্লামেন্টে সংখ্যা গরিষ্ঠতার নিয়ামক হচ্ছে প্রথম খুঁটি পার হওয়াদের (First-Past-The-Post) সংখ্যা গরিষ্ঠতা। অর্থাৎ নির্বাচনী এলাকায় সকল প্রার্থীর মধ্যে যিনি সবচেয়ে বেশী ভোট পাবেন তিনিই বিজয়ী হবেন। এখানে সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোটারদের সমর্থন পেলেন কি পেলেননা তা কোন বিষয় নয়। বৃটিশ উপনিবেশবাদের উত্তরধিকার সূত্রে পাওয়া ‘খুঁটি পার হওয়া’র সংখ্যা গরিষ্ঠতার ধারনার বাইরে আমরা যেতে পারিনি।

 এই পদ্ধতিতে বাংলাদেশের ইতিহাসে মোটামুটি গ্রহণযোগ্য চারটি নির্বাচনের (৫ম, ৭ম, ৮ম এবং ৯ম) কোনটির ফলশ্রুতিতে ক্ষমতা গ্রহণকারীদের পক্ষে দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোটদাতাদের সমর্থন ছিলনা। সংযুক্তি -১ এ প্রদত্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে এর প্রমাণ মিলে। 

পঞ্চম সংসদঃ  ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ পায় মোট প্রদত্ত ভোটের ৩০.০৮ শতাংশ আর বিএনপি পায় ৩০.৮১ শতাংশ ভোট। সারা দেশে দুই দলের প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান ০.৭৩ শতাংশ, কিন্তু উভয় দলের প্রাপ্ত সিটের ব্যবধান ১৮.৬৭ শতাংশ। অর্থাৎ বিএনপি ০.৭৩ শতাংশ বেশী ভোট পেয়ে সিট বেশী পায় ৫৬টি। অথচ প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে যদি সিট বরাদ্দ করা হত তাহলে ০.৭৩ শতাংশ বেশী ভোট পাওয়ার কারণে বিএনপি আওয়ামী লীগ অপেক্ষা মাত্র ২ টি সিট বেশী পেত। একই নির্বাচনে ১২.১৩ শতাংশ ভোট পেয়ে জামাত সিট পায় মাত্র ১৮টি, কিন্তু আনুপাতিক হারে এই দলের প্রাপ্য সিট হতে পারত ৩৬.৩৯টি। অপর দিকে জাতীয় পার্টি জামাতের চেয়ে কম ভোট (১১.৯২ শতাংশ)পেয়েও সিট পায় প্রায় দ্বিগুণ(৩৫)। এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করা ছোট ছোট দলগুলি সাধারণ ভাবে তারা প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সিট কম পেয়েছে।এদের মধ্যে একটি ব্যতিক্রম হল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (সিরাজ), এই দলটি ১ টি সিট পেয়েছে। প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে এই দলটি কোন সিট পাওয়ার কথা নয়। যেই দলগুলি কোন সিট পায়নি তাদের সম্মিলিত প্রাপ্ত (৭.৮১  শতাংশ) ভোটের বিপরীতে ২৩.৪৩টি সিট প্রাপ্য ছিল।

 ৭ম সংসদঃ  ১৯৯৬ সালের ৭ম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩৭.৪৪ শতাংশ প্রাপ্ত ভোটের বিপরীতে পায় ১৪৪ টি সিট এবং আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির সমর্থনের বলে সরকার গঠনে সমর্থ হয়। বিএনপি পায় ৩৩.৬০ ভোট আর সিট পায় ১১৬টি। ৩.৮৪ শতাংশ ভোট কম পেয়ে বিএনপি ১০ শতাংশ সিট কম পায়। এবারও দেখা যায় জামাতে ইসলামী তাদের প্রাপ্ত ভোটের তুলনায় সিট পায় অনেক কম। প্রাপ্ত ভোটের বিপরীতে আনুপাতিক হারে সিট বরাদ্দ পেলে তাদের প্রাপ্য ২৫.৮৩ টি সিটের মধ্যে তারা পায় মাত্র ৩টি সিট। একই হিসাবে জাতীয় পার্টি তাদের  প্রাপ্য ৪৯.২০ সিটের বিপরীতে পায় ৩২টি সিট। 

 ৮ম সংসদঃ  ২০০১ সালের ৮ম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রকৃত পক্ষে বিএনপির চেয়ে কিছু ভোট বেশী পেয়েও (৪০.১৩:৪০.০৭) সিট পায় বিএনপির একতৃতীয়াংশেরও কম। আওয়ামী লীগ পায় ৬২ আর বিএনপি পায় ১৯২ সিট। এবার জামাতে ইসলামীর ভাগ্য বিপরীত দিকে মোড় নেয়। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে  প্রাপ্য ভোটের তুলনায় ৪.১৬ সিট বেশী পায়। ‘ওয়েস্টমিনিস্টার স্টাইল’ সংসদীয় গণতন্ত্রের এই হচ্ছে শুভঙ্করের ফাঁকি। প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলির সংসদে সিট সংখ্যার সাথে দেশের ভোটদাতাদের দলগুলির প্রতি প্রকৃত সমর্থনের তুলনামূলক চিত্রের সামঞ্জস্য একেবারেই নেই।      

 ৯ম সংসদঃ  ২০০৮ এর ডিসেম্বরে ৯ম সংসদ নির্বাচনের ফলশ্রুতিতে এই অসামঞ্জস্য মারাত্মক আকার ধারণ করে। আওয়ামী লীগ ৪৮.০৪ শতাংশ ভোট পেয়ে সিট পেয়ে যায় ৭৬.৬৭ শতাংশ। সংসদে আওয়ামী লীগের এই বিপুল সংখ্যা গরিষ্ঠতা স্বৈরাচারের পোক্ত ভিত সৃষ্টি করে। পার্লামেন্টে নিজ দলের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সর্বসম্মত অভিমত, উচ্চ আদালতের সুপারিশ, বিরোধী দলগুলি ও সুশীল সমাজের চরম বিরোধিতা এবং জনমত উপেক্ষা করে সংবিধানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান সংসদে সংখ্যা গরিষ্ঠতা ব্যবহার করে বাতিল করে দেয়া হয়। এটা ছিল এক প্রকার সাংবিধানিক ক্যু। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় সংবিধানের আরও কয়েকটি অপ্রয়োজনীয়  সংশোধন করা হয়। জাতীয়ভাবে প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে যদি জাতীয় সংসদের সিট বণ্টন হত তাহলে আওয়ামী লীগ পেত ১৪৪ সিট, বিএনপি পেত ৯৭ সিট, জামাত ১৪ সিট। এই দৃশ্যপটে  সংবিধান সংশোধন করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রেখে ইচ্ছেমত বারবার নির্বাচনের প্রহসন করা শেখ হাসিনার পক্ষে সম্ভব হতনা।

 প্রধান দুর্বলতাঃ  জাতীয় পর্যায়ে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির প্রধান দুর্বলতা হল এই পদ্ধতিতে সরকার গঠনে সারা দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোটদাতাদের সমর্থনের প্রয়োজন হয়না। এমনকি সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলির মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া দলের চেয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া দলের সংসদ সদস্যের সংখ্যা শুধু বেশী হওয়া নয় তিনগুনের চেয়ে বেশী হতে পারে (৮ম সংসদ)। সংসদ নির্বাচনী এলাকার ভোটার সংখ্যার তারতম্য, এলাকা ভেদে একটি দলের সমর্থকদের ঘনত্বের তারতম্য এবং ভুগোলিক বৈশিষ্ট্য ও প্রশাসনিক এখতিয়ারের সমন্বয় প্রচেষ্টার কারণে এই অসামঞ্জস্য সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই পদ্ধতির নির্বাচনে ছোট দলগুলির পক্ষে সংসদে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ খুবই সীমিত থাকে কারণ ভোটাররা ছোট দলের প্রার্থীকে যোগ্যতর বিবেচনা করলেও প্রার্থীর নির্বাচনে জেতার সম্ভাবনা কম থাকায় তাকে ভোট দিয়ে ভোট নষ্ট করতে চায়না।

 অসামঞ্জস্য সর্বত্রঃ  সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্মস্থান যুক্তরাজ্য এবং এই গণতন্ত্রের বৃহত্তম ব্যবহারিক রাষ্ট্র ভারতেও এই অসামঞ্জস্য বিদ্যমান। যুক্তরাজ্যে ২০২৪ এর সাধারণ নির্বাচনে লেবার পার্টি ৩৫ শতাংশ ভোট পেয়ে পার্লামেন্টের ৬৫০ সিটের মধ্যে ৪১২টি সিট দখল করে অথচ রক্ষণশীলরা ২৪ শতাংশ ভোট পেয়ে পায় মাত্র ১২১টি সিট। আনুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচনে প্রধান দুই দলের এই সংখ্যা দাড়াত যথাক্রমে ২২৭ ও ১৫৬। সেই ক্ষেত্রে লেবারকে এলডিপি ও গ্রিন পার্টির অথবা অন্য একাধিক পার্টির সাথে কোয়ালিশন করতে হত। এই কারণে যুক্তরাজ্যে ‘খুঁটী পার হওয়া’ নির্বাচনের পরিবর্তে ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব’ পদ্ধতির নির্বাচনের পক্ষে এলডিপি ও ছোট দলগুলি সোচ্চার হয়ে উঠছে। ভারতে এই ‘ভুয়া’ সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে বিজেপি সংখ্যালঘুদের ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারকে যথেচ্ছ পদদলিত করছে।বিজেপি ২০১৪ ও ২০১৯ এর নির্বাচনে ভোট পেয়েছিল যথাক্রমে ৩১ ও ৩৭.৩৬ শতাংশ ভোট। কোয়ালিশনে বিজেপির শরিক দলগুলি পেয়েছিল ২০১৪ ও ২০১৯ নির্বাচনে যথাক্রমে ৫.২ ও ৭.৮৫ শতাংশ ভোট। ভোটদাতাদের ৩৬.০২ ও ৪৫.২১ শতাংশ ভোটের জোরে বিজেপি সংবিধান সংশোধন করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপ করেছে এবং হিন্দুত্ববাদের রাজত্ব কায়েম করেছে। মুসলমান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় অনুভূতি ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের প্রতি চরম অবজ্ঞা দেখিয়েছে, তাদের প্রতি জনমনে ঘৃণা সৃষ্টি করে তাদেরকে কার্যত ভারতের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করেছে। ‘আনুপাতিক পদ্ধতি’র নির্বাচন হলে এইসব অপকর্ম নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নই থেকে যেত। এই অসামঞ্জস্য সত্ত্বেও যুক্তরাজ্য ও ব্রিটিশ কমনওয়েলথের উন্নত দেশগুলিতে এবং অংশত ভারতে এই পদ্ধতি সফল হয়েছে, কারণ ঐ দেশগুলিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামতের প্রতি পারস্পরিক সহনশীলতা ও সমঝোতা সৃষ্টির যে ঐতিহ্য সৃষ্টি হয়েছে তা আমাদের দেশে একেবারেই অনুপস্থিত। আমাদের রাজনিতিকরা এখনো চর দখলের মানসিকতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারেননি। তাই আমাদের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের পদ্ধতিসমূহকে  যতদূর সম্ভব নিশ্ছিদ্র করা জরুরী।        

        

  দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদঃ  ‘ওয়েস্টমিনিস্টার স্টাইল’ সংসদীয় গণতন্ত্রে সাধারণত দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ থাকে। নিম্ন কক্ষের সংসদ ‘খুঁটী প্রথম পার হওয়া’ পদ্ধতিতে নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে গঠিত হলেও উচ্চ কক্ষের সদস্য নির্বাচন সাধারণত ভিন্ন মানদণ্ড বা প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে। দুই কক্ষের মধ্যে ক্ষমতা বন্টিত হওয়ার কারণে নিম্ন কক্ষের একচ্ছত্র ক্ষমতা কিছুটা নিয়ন্ত্রিত থাকে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশে সংসদ দুই কক্ষ বিশিষ্ট এবং সকল ক্ষেত্রেই দুই কক্ষের গঠন প্রক্রিয়া ভিন্নতর। বাংলাদেশের সংসদ এক কক্ষ বিশিষ্ট হওয়ায় সংসদের সিদ্ধান্ত কোন প্রাতিষ্ঠানিক রাজনৈতিক পর্যালোচনার ব্যবস্থা নেই।  

আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বঃ  অন্য দিকে ইউরোপের প্রায় সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পার্লামেন্ট গঠিত হয় কোন না কোন প্রকারের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (Proportional Representation) ভিত্তিক নির্বাচনের মাধ্যমে। এক সদস্য পদের নির্বাচনী এলাকা ভিত্তিক নির্বাচন হউক অথবা দেশ বা অঞ্চল ভিত্তিক নির্বাচনী এলাকার বহু সদস্য নির্বাচনের জন্য হউক, প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্বাচনে জয় লাভ করতে হলে সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোটদাতার সমর্থন পেতে হবে। এই পদ্ধতি অনুসরণের ফলে একজন পার্লামেন্ট সদস্য তিনি যে নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধিত্ব করবেন তাকে সেই এলাকার ভোটদাতাদের অর্ধেকের বেশীর ভোট পেতে হবে। প্রথম নির্বাচনে কোন প্রার্থী ভোটদাতাদের অর্ধেকের বেশী ভোট না পেলে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া প্রথম ২ অথবা ৩ প্রার্থীর মধ্য দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে জয়ী প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় গঠিত পার্লামেন্টের সংখ্যা গরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন নিয়ে যে সরকার গঠিত হবে সেই সরকার স্বয়ংক্রিয়ভাবে দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোটদাতার সমর্থনপুষ্ট হবে। 

সারা দেশ নিয়ে যদি একক নির্বাচনী এলাকা গঠিত হয় তাহলে সকল দল যারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে চাইবে তারা তাদের দলের নিজস্ব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পার্লামেন্টের সদস্য পদ প্রার্থীদের অগ্রাধিকার ক্রম-তালিকা নির্বাচনের আগে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে জমা দিবে। নির্বাচনে ভোটাররা তাদের পসন্দের তালিকার পক্ষে ভোট দিবেন। নির্বাচনের পরে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী দলগুলির পক্ষে প্রাপ্ত ভোট গণনা করা হবে। নির্বাচনে সব বৈধ ভোট সংখ্যাকে পার্লামেন্টের সিট সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে একটি এম পি পদের জন্য ন্যূনপক্ষে কত ভোটের প্রয়োজন তা নির্ণয় করা হবে। এই ভাবে যে সংখ্যা পাওয়া যাবে তা দিয়ে প্রতি দলের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যাকে ভাগ করে ঐ দলের প্রাপ্য সদস্য পদ সংখ্যা বের করা হবে। তবে মোট বৈধ ভোটের নিম্নতম একটি অংশ (ধরুন ১ অথবা ২ শতাংশ)ভোট কোন একটি দল যদি না পায় তা হলে সেই দল কোন সদস্য পদ পাবেনা। এইভাবে পদ বণ্টনের পর অবশিষ্ট পদ যদি থাকে সেগুলি পদ পাওয়া দলগুলির পাওয়া পদের বিপরীতে বণ্টন করা হবে। ভোটের পরে অবশিষ্ট ভোটের সংখ্যার আধিক্যের ক্রমানুসারে অবশিষ্ট পদগুলি বরাদ্দ করা হবে।সমমনা দলগুলি তাদের অবশিষ্ট ভোট নিজদের মধ্যে সমন্বয় করার সমঝোতা নির্বাচন পূর্বে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করলে নির্বাচনের পরে তদানুসারে বণ্টন করা হবে। এই নির্বাচন পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচন করার ব্যবস্থা থাকতে পারে।             

 আপোষের সংস্কৃতিঃ  দেখা যাচ্ছে যে বাংলাদেশের ৪ টি মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে অংশ গ্রহণকারী দলগুলির মধ্যে যদি জাতীয়ভাবে প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে সিট বণ্টন করা হত তাহলে কোন দলের পক্ষেই সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা লাভ করা সম্ভব হতনা। আর বড় দুই দলের দুই নেত্রীর পক্ষে সম্রাজ্ঞীর মত শাসন করা সম্ভব হতনা। ক্ষমতা গ্রহণ করতে হলে নির্বাচনের পর ছোট ছোট দলের সহায়তা নিয়ে কোয়ালিশন করে সরকার গঠন করতে হত এবং সরকার রক্ষা করার জন্য সদা সতর্ক থাকতে হত। নির্বাচনের আগে চৌদ্দ বা আঠার দলের জোট করে দুই দলের মার্কায় নির্বাচন করে ক্ষমতার অংশীদার হওয়া আর যার যার নিজস্ব শক্তিতে নির্বাচন করে নির্বাচনের পরে কোয়ালিশনে অংশ গ্রহণের মধ্যে বিস্তর গুণগত পার্থক্য আছে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে কনিষ্ঠ কোয়ালিশন শরিকদের ঘোষিত নীতি ও মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে বড় দলকে কিছুটা আপোষ করতে হয়।এর ফলে কোয়ালিশনের সংহতি দৃঢ় হয় এবং সরকারের স্থায়িত্ব কিছুটা নিশ্চিত হয়। রাজনীতিতে আপোষের সংস্কৃতি সৃষ্টি হয়। সরকারের বা সরকার প্রধানের স্বেচ্ছাচারী প্রবণতা হ্রাস পায়। অপর দিকে যেহেতু সরকার ভোটদাতাদের সংখ্যা গরিষ্ঠ অংশের প্রতিনিধিত্ব করে তাই সরকার আত্মবিশ্বাসের সাথে তার ঘোষিত নীতি বাস্তবায়ন করতে পারে। 

 প্রকৃত গণতন্ত্রঃ আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের গণতন্ত্র প্রকৃত গণতন্ত্র। এখানে শুভঙ্করের ফাঁকি নেই। সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোটদাতার সমর্থন ছাড়া সরকার গঠন সম্ভব নয়।এই পদ্ধতির নির্বাচনে কোন এক দলের পক্ষে সংসদে একক নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাওয়া সাধারণত বেশ কঠিন হয়ে থাকে।  ইউরোপ বা এশিয়ায় যেসব দেশে এই পদ্ধতির নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদ গঠিত হয় সেইসব দেশে প্রায় সর্বদাই কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয়ে থাকে। ইউরোপে জার্মানি, নেদারল্যান্ড, সুইডেন, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, স্পেইন, ইতালি, পর্তুগাল, বেলজিয়াম, অস্ট্রিয়া, আয়ারল্যান্ড, সুইটজারল্যান্ড, আইসল্যান্ড, গ্রিস, লুক্সেমবার্গ ও ফ্রান্সে এবং এশিয়ায় জাপান, ইসরায়েল, দক্ষিণ কোরিয়া, মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে  আনুপাতিক অথবা আংশিক আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের গণতন্ত্র প্রচলিত আছে। দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশে  যেখানে রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোন প্রার্থী প্রথম দফার নির্বাচনে সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোটদাতাদের সমর্থন পেতে ব্যর্থ হলে সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া প্রথম  ও দ্বিতীয় প্রার্থীর মধ্যে দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের মাধ্যমে সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোটদাতা সমর্থিত প্রার্থী নির্ণয় করা হয়।

 ‘কোয়ালিশন ভঙ্গুর’ ভুয়া কথাঃ  বলা হয়ে থাকে কোয়ালিশন সরকারের স্থায়িত্ব নেই এবং ভঙ্গুর হয়ে থাকে। যার ফলে দেশের উন্নয়ন বিঘ্নিত হয়। ধারনাটি সঠিক নয়। এটা হচ্ছে ক্ষমতাসীনদের মসনদ ধরে রাখার অজুহাত মাত্র।দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর জার্মানি, জাপান, ইটালি ও ফ্রান্স ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। ১৯৪৫ সালে ২য় মহাযুদ্ধ সমাপ্তির পরবর্তী ৫০ বছরে ইটালিতে গড়ে প্রতি বছর একবার করে সরকার পরিবর্তন  হয়েছে, অদ্যাবধি পরিবর্তন হয়েছে ৬০ বার । জাপানে ২০১০ পর্যন্ত কোন সরকার দুই বছরের বেশী টিকে থাকেনি এবং ২০২৪ পর্যন্ত আনুমানিক ৩০ জন প্রধানমন্ত্রীর পরিবর্তন হয়েছ। ফ্রান্সে ১৯৫৮ সাল থেকে ( ৫ম রিপাবলিক) ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে ২৫ জন। সেখানে ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৮ পর্যন্ত সরকার পরিবর্তন হয়েছিল ৬ বার । জার্মানিতে চেন্সেলার পরিবর্তনের সংখ্যা খুব বেশী নয় কিন্তু ফেডারেল পর্যায়ে সরকার প্রায় সব সময়ই কোয়ালিশনের ফসল ছিল এবং এখনো তাই। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর এই সময়টা ছিল চারটি দেশেরই অর্থনীতির পুনরুত্থানের সময়। বিগত শতাব্দীর ষাটের দশকের মধ্যে জাপান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম, ফ্রান্স ৪র্থ এবং ইটালি ৫ম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে আবির্ভূত হয়। অপর দিকে ইউরোপের সবচেয়ে স্থির সরকারের অধিকারী স্পেন ও পর্তুগাল এই সময়ে ইউরোপের পিছনের উঠানে পরিণত হয়েছিল।

 সাফল্যের চমকপ্রদ উদাহরণঃ  আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের গণতন্ত্রের সাফল্যের সবচেয়ে চমকপ্রদ উদাহরণ হচ্ছে ইসরায়েল। ১৯৪৮  সালে ডেভিড বেন গুরিয়নের নেতৃত্বে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়।রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর টানা ২৯ বছর (১৯৭৭ সাল পর্যন্ত) বেন গুরিয়নের দল ইসরায়েলে ক্ষমতায় ছিল। এই সময়ের মধ্যে ইসরায়েল ৯টি  সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ইসরায়েলি ভোটদাতারা কোন নির্বাচনেই বেন গুরিয়নের দলকে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা দেয়নি। প্রতি নির্বাচনের পরে এই দলকে গড়ে ছয়টি ক্ষুদ্র দলের সাথে কোয়ালিশন গঠন করে ক্ষমতায় আসীন হতে হয়েছে।এই দীর্ঘ সময় ধরে মেনাখেম বেগিন বিরোধী দলের নেতা থেকে বিশ্ব রেকর্ড করেন। বিশ্বে আর কোন জাতীয় নেতা নেই যিনি একাধারে ২৯ বছর সংসদে বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। ইসরায়েল রাষ্ট্রের ছিয়াত্তর বছরের ইতিহাসে ২৫টি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং ৩৭ বার সরকার পরিবর্তন হয়। এই সময়ের মাঝে ইসরায়েল তার প্রতিবেশীদের সাথে ৬টি সর্বাত্মক যুদ্ধ, গাজার সাথে ৪টি মাঝারি যুদ্ধ করেছে এবং এই মুহূর্তে গাজার বিরুদ্ধে একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। প্রায় প্রতিনিয়ত নিকট ও দূর প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা ও কমান্ডো অভিযান এবং প্রকাশ্য ও গুপ্ত হত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। মাথা পিছু দেশজ উৎপাদন ৩০০ থেকে ৫৫,০০০ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছে। ঘনঘন সরকার পরিবর্তন অথবা তিন বছরে ৪ টি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় এসব কোন কিছুই আটকে রাখেনি।             

কার স্থায়িত্ব প্রয়োজনঃ  ক্ষমতাসীনদের স্থায়িত্ব নয়, প্রয়োজন ক্ষমতা বদলের পদ্ধতির স্থায়িত্ব, রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানসমূহের স্থায়িত্ব। আমাদের দুর্ভাগ্য যে গত ৫৩ বছরে আমরা রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান সমূহ যথা সংবিধান, সংসদ, বিচার বিভাগ, নির্বাচন বা প্রশাসন যন্ত্র কোন কিছুর পদ্ধতিকে স্থায়ী রূপ দিতে পারিনি। ১৯৭২ সাল থেকে এই পর্যন্ত বাংলাদেশে যত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সবগুলিই ছিল এক ব্যক্তি  কেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা- সে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার হউক বা তথাকথিত সংসদীয় পদ্ধতির সরকার। বাংলাদেশের ৫৩ বছরের ইতিহাসে ১৩ টি সংসদ নির্বাচন হয়েছে এর মধ্যে ৯ টি নির্বাচনই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। 

স্বৈরতন্ত্রের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবেঃ জুলাই – আগস্ট ২০২৪ এ যে স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থান সঙ্ঘটিত হয়েছে তাকে যথার্থভাবেই বাংলাদেশের মানুষের দ্বিতীয় স্বাধীনতা লাভ নামে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। এর ফলে রাষ্ট্রকে ঢেলে সাজিয়ে তোলার এক অনন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে। আমাদের গণতন্ত্রের শুভঙ্করীর ফাঁক বন্ধ করে সোজা সাপটা গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটাতে হবে। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির সাথে আলাপ আলোচনা করে তাদেরকে এই পরিবর্তনের সাথে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন হবে। সংবিধানের যে ফাঁক দিয়ে স্বৈরতন্ত্র অনুপ্রবেশ করে সংবিধান সংশোধন করে সেই ফাঁক বন্ধ করতে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে সংসদ গঠন করে সংসদকে দেশের জনমতের প্রকৃত প্রতিবিম্ব করতে হবে। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সংবিধানের ৬৫(২)অনুচ্ছেদ সংশোধন করতে হবে এবং ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে প্রয়োজনীয় সংশোধন ও সংযোজন করতে হবে। নির্বাচনের নতুন পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রস্তুতি হিসেবে নির্বাচন কমিশন, রিটার্নিং অফিসার,  নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারী, প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট -দের স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন নির্বাচন পদ্ধতি ব্যখ্যা করে রেডিও টেলিভিশন ও পত্রপত্রিকায় ব্যপক প্রচারণা করতে হবে।

দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদঃ  যদি পার্টি ভিত্তিক ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব’ পদ্ধতিতে পার্লামেন্ট গঠন না করা হয় তবে দেশে অবশ্যই  দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠন করতে হবে যাতে সংসদে শুভঙ্করের ফাঁকের সংখ্যা গরিষ্ঠতা অপব্যবহার করে কেউ স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে না পারে। সকল দল যারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করতে চাইবে তারা তাদের দলের নিজস্ব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের সদস্য পদ-প্রার্থীদের অগ্রাধিকার ক্রম-তালিকা নির্বাচনের আগে নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে জমা দিবে।নির্বাচনের পরে নির্বাচন কমিশন নিম্ন কক্ষের নির্বাচনে প্রদত্ত মোট বৈধ ভোটের সংখ্যাকে উচ্চ কক্ষের সদস্য সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে উচ্চ কক্ষের একটি সিটের জন্য নিম্নতম কত ভোটের প্রয়োজন তা নির্ধারণ করবে এবং তদুনাযায়ে দলগুলির মধ্যে সিট বরাদ্দ করে দলগুলি কর্তৃক জমা দেওয়া প্রার্থীদের অগ্রাধিকার ক্রম-তালিকা থেকে দলের প্রাপ্য সংখ্যক প্রার্থীকে উচ্চ কক্ষের সদস্য হিসেবে ঘোষণা করবে। ভোটের পরে অবশিষ্ট ভোটের সংখ্যার আধিক্যের ক্রমানুসারে অবশিষ্ট পদগুলি বরাদ্দ করা হবে।সমমনা দলগুলি তাদের অবশিষ্ট ভোট নিজদের মধ্যে সমন্বয় করার সমঝোতা নির্বাচন পূর্বে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করলে নির্বাচনের পরে তদানুসারে অবশিষ্ট ভোট বণ্টন করা হবে। যেসকল দল গতানুগতি নির্বাচনে সংসদের নিম্ন কক্ষে কোন সিট পায়নি সেসকল দলের মধ্যে যে যে দলের প্রাপ্ত মোট ভোট সংসদের উচ্চ কক্ষের এক বা একাধিক সিট পাওয়ার মাপকাঠি অতিক্রম  করবে এই প্রক্রিয়ায় প্রাপ্য পদ তাদেরকে দেওয়া হবে।  যেসব দলের ভিন্ন ভিন্ন ভাবে তাদের প্রাপ্ত মোট ভোট একটি পদের জন্য যথেষ্ট হবেনা সেই দলগুলির প্রাপ্ত মোট ভোটে এক বা একাধিক সিট প্রাপ্য হলে ঐ সিট বা সিটগুলি ওইসব দলের প্রাপ্ত ভোটের আধিক্য ক্রমে ঐ সিট বা সিটগুলি বণ্টন করা যাবে। এইভাবে বণ্টনের পর অবশিষ্ট যে ভোটগুলি থাকবে তা অন্যান্য দল যারা একক ভাবে উচ্চ কক্ষে সিট পেয়েছে তাদের দলীয় অবশিষ্ট ভোটের আধিক্যের ক্রমানুসারে তাদের সাথে যোগ করে যদি এক বা একাধিক সিট প্রাপ্য হয় তাহলে সেই সিট বা সিট গুলি পূর্ববর্তী নিয়ম আনুসারী বণ্টন করা হবে। এই প্রক্রিয়ায় যেসব দল এককভাবে উচ্চ কক্ষে সিট পায়নি প্রযোজ্য  ক্ষেত্রে তাদের পাওয়া ভোটগুলিও সংসদে প্রতিনিধিত্ব পাবে। 

দুই কক্ষ ব্যয়বহুলঃ  দুই কক্ষের সংসদ কার্যকর করা ব্যয়বহুল হবে। এই বাবদ ব্যয় সীমিত রাখতে উচ্চ কক্ষের সদস্য সংখ্যা নিম্ন কক্ষের সদস্য সংখ্যার এক তৃতীয়াংশ রাখা যেতে পারে। নিম্ন কক্ষের ন্যায় উচ্চ কক্ষে সংরক্ষিত মহিলা সিট দলগুলির মধ্যে আনুপাতিক হারে বণ্টন করা হবে, এই ধরনের মোট মহিলা সিট ১০ এর বেশী হবেনা। নিম্ন কক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতার নেতৃত্বে যে সরকার গঠিত হবে তা উচ্চ কক্ষেও অনুমোদিত হতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের ন্যায় বাংলাদেশের সংসদের উভয় কক্ষে আইন প্রণয়ন সূচনা করা যাবে এবং আইন উভয় কক্ষে অনুমোদিত হলেই তাতে রাষ্ট্রপতির সম্মতি নিয়ে পাশ হবে। উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশনে সদস্যদের সংখ্যা গরিষ্ঠ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবে।              

স্বৈরাচার বন্ধের দ্বিতীয় পদক্ষেপঃ  স্বৈরাচার বন্ধের দ্বিতীয় পদক্ষেপ হবে প্রধানমন্ত্রীকে তার পদ রক্ষায় সদা সতর্ক থাকার ব্যবস্থা করা। এটা করা সম্ভব হবে যদি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭০(২) বিলুপ্ত করা হয়। বাংলাদেশের পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের বড় সমস্যা হল কোন দল একবার সরকার গঠন করতে পারলে পার্লামেন্টারি পদ্ধতিতে সেই সরকারের পতন ঘটানোর সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। বাংলাদেশ সংবিধানে এই অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্তির একটা ইতিহাস আছে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের গণপরিষদে যখন সংবিধানের খসড়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল তখন একজন সদস্য সংবিধানের ধারা সমূহের উপর ভোট দাবী করেন। এই প্রস্তাবে ক্ষিপ্ত হয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একটা অর্ডিন্যান্স জারি করা হয় যদ্বারা এই বিধান করা হয় যে পার্লামেন্টের কোন সদস্য যে দলের মনোনয়ন নিয়ে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি যদি ঐ দলের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে ভোট দেন তাহলে তিনি তার পদ হারাবেন। এই বিধানটি পরবর্তীতে সংবিধানের ৭০ ধারায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। 

স্বৈরাচারী সহমতঃ  ১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনর্বহাল কালে এই বিধানটি বাদ দেয়ার বিষয় নিয়ে বেশ প্রাণবন্ত আলোচনা হয়। খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা অন্য খুব কম বিষয়ে একমত হতে পারলেও উভয়ের অতি উৎসাহী সহমতে বিধানটি সংবিধানে থেকে যায়। এই বিধানটি একটি কালো আইন মর্মে বাংলদেশের সুপ্রিম কোর্ট মন্তব্য করেছে। বিধানটি একজন সংসদ সদস্যকে তার বিবেকের বিরুদ্ধে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়। এই বিধানটি সংবিধানের ৩৯ ধারায় প্রদত্ত চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে। এই বিধানটি সরকার দলীয় হউক বা বিরোধী দলীয় হউক সকল সংসদ সদস্যকে যার যার সংসদীয় দলের নেতার ইচ্ছার দাশে পরিণত করে। এই বিধানটির কারণে সংসদের বিরোধী দল বারবার সংসদ বর্জন কার্যকর করতে পেরেছে। এই বিধানটির কারণে কোন বিরোধিতা ছাড়া সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সংবিধান সংশোধন করতে পেরেছে। যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিয়েল্যেন্ড বা দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুরূপ কোন বিধান নেই। এইসব দেশে এবং অনেক পার্লামেন্টারি গণতান্ত্রিক দেশে ‘বাগ-না-মানা’  সংসদ সদস্যদের সাধারণত দল থেকে বহিষ্কার করা হয় অথবা পরবর্তী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দিয়ে শাস্তি দেয়া হয়ে থাকে। সংসদ সদস্য পদ অটুট থাকে। সংসদকে ব্যক্তি বিশেষের স্বেচ্ছাচারিতার ক্ষেত্রের পরিবর্তে সংসদের সকল সদস্যদের সম্মিলিত সার্বভৌমত্বের আধার করে তুলতে হবে। তাই সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭০(২) বিলুপ্ত করতে হবে। 

প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভাঃ  সংবিধানের ৫৫(১) ধারায় বলা আছে বাংলদেশের একটি মন্ত্রিসভা থাকবে এবং ‘প্রধানমন্ত্রী ও সময়ে সময়ে তিনি যেরূপ স্থির করিবেন, সেইরূপ অন্যান্য মন্ত্রী লইয়া এই মন্ত্রিসভা গঠিত হইবে’ এবং ৫৫(২) ধারায় বলা হয়েছে ‘প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বা তাহার কর্তৃত্বে এই সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রযুক্ত হইবে’। আমাদের সংবিধানে নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার একমাত্র উৎস হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এই ক্ষমতা প্রয়োগের সর্বময় কর্তৃত্ব প্রধানমন্ত্রীর উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। সংবিধানে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রীর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তাদের কাজ কী হবে বা ক্ষমতা কী থাকবে তা বলা হয়নি। এর অর্থ হল প্রধানমন্ত্রী যাকে যে কাজ দেবেন তার তার সেই কাজ ও ক্ষমতা। ভারত, যুক্তরাজ্য, কানাডা বা অস্ত্রালিয়ার সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি এমন ক্ষমতা দেয়া হয়নি। যেমন ভারতীয় সংবিধানে বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে সরকারের নেতৃত্ব দিবেন, মন্ত্রীদের মধ্যে মন্ত্রণালয় বণ্টন করবেন, মন্ত্রীসভার সভাপতিত্ব করবেন এবং মন্ত্রণালয় সমূহ এবং রাষ্ট্রপতির মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হবেন। চলতি প্রথা, বিধিবদ্ধ আইন ও বিচক্ষণতা অনুসরণে তিনি অন্যান্য ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাও মোটামুটি অনুরূপ। মন্ত্রীগণ তার আওতাধীন সকল বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যেসকল বিষয়ে অন্য মন্ত্রালয়ের সংশ্লেষ আছে, রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি, সংবিধি অনুসারে যেসব বিষয় মন্ত্রিসভা বা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন প্রয়োজন সেসব বিষয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট পেশ করতে হয়। এই ক্ষেত্রেও মূল নির্দেশিকা হল প্রচলিত প্রথা ও বিচক্ষণতা। তাত্ত্বিক পর্যায়ে  মন্ত্রীদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী সমানদের মধ্যে প্রথম। কিন্তু বাংলদেশের সংবিধানের ৫৫(১) ও ৫৫(২) ধারার বলে কার্যত মন্ত্রীদেরকে প্রধানমন্ত্রীর অধস্তন কর্মচারীর পর্যায়ে নামিয়ে ফেলা হয়েছে। ইহা সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৫৫(২) নিম্নরূপ প্রতিষ্ঠাপিত হতে পারেঃ ‘প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী কর্তৃক বা প্রধানমন্ত্রীর কর্তত্বে অথবা মন্ত্রীর কর্তত্বে এই সংবিধান-অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রযুক্ত হইবে’। 

প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীঃ  ৫৮(৫) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘এই অনুচ্ছেদে ‘মন্ত্রী’ বলিতে প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী অন্তর্ভুক্ত’। এই অনুচ্ছেদটির বলে প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীগণ মন্ত্রীর সমান সাংবিধানিক ক্ষমতার অধিকারী হতে পারেন।  সংশোধিত ৫৫ (২) অনুচ্ছেদের প্রেক্ষিতে প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীগণকে কেবিনেট মন্ত্রীর সমান ক্ষমতা দেয়া সমীচীন হবেনা। প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর সাথে পরামর্শক্রমে প্রতিমন্ত্রী অথবা উপমন্ত্রীকে মন্ত্রণালয় বা বিভাগের নির্দিষ্ট বিষয় সমূহের ক্ষমতা অর্পণ করবেন এবং প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী তার উপর অর্পিত ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন মর্মে অনুচ্ছেদটি সংশোধন করা যেতে পারে।     

মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবঃ  সরকারের অভ্যন্তরীণ রদবদল নির্ভর করে সম্পূর্ণভাবে সরকার প্রধানের খেয়াল খুশির উপর। কোন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে পার্লামেন্ট মেম্বাররা যত সমালোচনা মুখর হোক অথবা তার বিরুদ্ধে যত জনরোষই সৃষ্টি হোক প্রধানমন্ত্রীর সাথে সেই মন্ত্রীর সুসম্পর্ক থাকলে তাকে তার পদ থেকে নড়ানো খুব কঠিন। এই অবস্থা পরিবর্তন করা প্রয়োজন। কায্যপ্রণালী বিধি অনুসরণ করে সংসদে  যেকোন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপন ও অনুমোদন সম্ভব করার লক্ষ্যে সংবিধানে ও সংসদীয় কায্যপ্রনালী বিধি প্রয়োজনীয় সংশোধন বা সংযোজন করা যেতে পারে। উল্লেখ্য, অনেক দেশের সংসদে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভার উপর অনাস্থা প্রস্তাব না এনেও শুধু একজন বা একাধিক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা যায়। এই ধরনের অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর চাকরি যায়, সরকারের পতন হয়না।  

কায্যসম্পাদন বিধি বা রুলস অব বিজনেসঃ  সরকারী কাজকর্ম কি পদ্ধতি অনুসরণ করে এবং কোন পর্যায়ে সম্পাদিত হবে তা নির্ধারিত হয় রুলস অব বিজনেস-এর মাধ্যমে।এটা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধান পুস্তিকা। স্বৈরাচারী সরকারের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার খুবই কায্যকর হাতিয়ার হচ্ছে রুলস অব বিজনেস। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের রুলস অব বিজনেসের আদলে কিছু পরিবর্তন করে তা ব্যবহার করে কাজ চালিয়ে নিচ্ছিল। ১৯৭৫ সালে প্রথম সমন্বিত রুলস অব বিজনেস ও এলোকেশন অব বিজনেস জারী করা হয়। ১৯৮৬ সালে এই রুলস ব্যপক সংশোধন করা হয়, মূলত বিভিন্ন বিষয়ের উপর চূড়ান্ত ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে কেন্দ্রীভূত করার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য। ১৯৯১ সালে নির্বাচিত বেসামরিক সরকার রাষ্ট্রপতি শাসন ব্যবস্থার রুলস অব বিজনেসের মধ্যে নির্বাহী বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির স্থলে শুধু প্রধানমন্ত্রী প্রতিস্থাপন করা হয়। এর ফলে রাষ্ট্রপতি শাসন ব্যবস্থায় নির্বাহী ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুর স্থলে প্রধানমন্ত্রী প্রতিস্থাপিত হয়। ঢাকঢোল পিটিয়ে সংবিধান সংশোধন করে যে সংসদীয় ও কেবিনেট পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থা কাগজে কলমে প্রবর্তন করা হল তার কোন প্রতিফলন রুলস অব বিজিনেসে দেখা গেলনা। 

আমূল পরিবর্তনঃ ১৯৯৬ সালে যে রুলস অব বিজনেস নতুন করে জারী করা হয় তাতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের পরিবর্তে প্রশাসনের উপর প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণ আরও মজবুত করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যেসব সংশোধন করা হয় তাতে শুধু প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণের জাল আরও বিস্তৃত করা হয়।রুলস অব বিজনেস এবং এর তফসিলসমূহে চোখ বুলালেই দেখা যাবে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ব্যতীত বাংলাদেশ সরকারের কোন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর অস্তিত্ব নেই। যেসকল বিষয় প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অথবা তার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করতে হবে তার তালিকা এত লম্বা করা হয়েছে যা দেখে তাজ্জব হতে হয়। ভবিষ্যতে বাংলদেশে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক এই রুলস অব বিজনেসের আমূল পরিবর্তন না করা হলে স্বৈরাচার ঠেকানোর কোন রাস্তা থাকবেনা।

নিবৃত্তি ও ভারসাম্যের ব্যবস্থাঃ পূর্ববর্তী অনুচ্ছেদসমূহে যে সকল সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে তার সকল ফল নস্যাৎ হয়ে যাবে যদি সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, অবাধ ও নিরপেক্ষ এবং অবশ্যই অংশ গ্রহণ মূলক নির্বাচন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা না যায়। আবার নির্বাচন ব্যবস্থা যতই সুষ্ঠু করা হোক যদি নিবৃত্তি ও ভারসাম্যের (checks and balances) ব্যবস্থা করে রাষ্ট্রের সকল ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে পুঞ্জীভূত হওয়ার পথ পদ্ধতিগতভাবে বন্ধ না করা হয় তাহলে স্বৈরাচারের পুনঃউত্থান শুধু সময়ের ব্যপার হয়ে দাঁড়াবে। মনে রাখতে হবে ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে যে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে তার ক্ষমতায় আরোহণ হয়েছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সেরা নির্বাচনের মাধ্যমে। কিন্তু এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা পুঞ্জীভূত হওয়ার পথ অবারিত থাকার কারণেই এই অভাগা দেশের বুকে স্বৈরাচারের জগদ্দল পাথর অবস্থান করে নিতে পেরেছিল। 

 নির্বাচন কমিশনঃ সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ১ম পূর্বশর্ত হল একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে যদি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারগণের নিয়োগে, কমিশনের বাজেট বরাদ্দে এবং লোকবল নিয়োগ বিষয়ে  প্রধানমন্ত্রীর, কোন মন্ত্রীর বা মন্ত্রণালয়ের কোন ভূমিকা না থাকে।     

   কমিশন নিয়োগঃ রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে, আপিল বিভাগের সকল বিচারপতিগণ, কেবিনেট সেক্রেটারি, অডিটর জেনারেল, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত দুইজন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, একজন শিক্ষাবিদ ও একজন আইনবিদ এবং সংসদ নেতা ও বিরোধী দলের নেতা কর্তৃক মনোনীত একজন করে সংসদ সদস্য নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার পদের জন্য প্রার্থী নির্বাচন কমিটি গঠন করবেন। রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব এই কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। এই কমিটি তাদের নিজস্ব কর্ম পদ্ধতি স্থির করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিদের তালিকা প্রণয়ন ও যাচাই বাছাই করে সংশ্লিষ্ট পদের জন্য প্রার্থীর নাম চূড়ান্ত করে রাষ্ট্রপতির নিকট অনুমোদনের জন্য পেশ করবেন। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাভের পর মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে নিয়োগ পত্র জারী করা হবে।

বাজেট বরাদ্দঃ একজন নির্বাচন কমিশনারের তত্ত্বাবধানে কমিশনের সচিবের দপ্তর কমিশনের বার্ষিক বাজেট প্রণয়ন করবে। বাজেট প্রণয়নে সহায়তা প্রদানের জন্য কমিশন চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট উইং-এর একজন অভিজ্ঞ কর্মকর্তা এবং অডিটর জেনারেলের একজন উপযুক্ত কর্মকর্তাকে সাময়িক ভিত্তিতে কমিশনে প্রেষণে নিয়োগ করা হবে। সচিবের দপ্তর কর্তৃক প্রণীত বাজেটের খসড়া পূর্ণ কমিশন কর্তৃক অনুমোদনের পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থ বরাদ্দের জন্য পেশ করা হবে।অর্থ মন্ত্রণালয় কমিশনের চাহিদা মোতাবেক এককালীন অর্থ বরাদ্দ করবে। বরাদ্দকৃত অর্থ ভিন্ন করে অবমুক্তি প্রয়োজন হবেনা।  

কমিশনের লোকবলঃ নিজস্ব লোকবলের বিষয়ে কমিশনের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে।অনুমোদিত বাজেটে সংস্থান থাকা সাপেক্ষে নিম্নতম স্তর থেকে শুরু করে সচিব পর্যন্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সকল পদ কমিশনের নিজস্ব জনবল দিয়ে পূরণ করবে। কমিশনের জনবল সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন করতে পারবে। নতুন বিধানের আওতায় কমিশনের কায্যক্রম শুরুতে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীর শূন্য পদ প্রমোশন, অন্যান্য ক্যাডার থেকে লেটারেল এন্ট্রি অথবা বাজার থেকে সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে অভিজ্ঞ জনবল জড়ো করতে হতে পারে।

দুর্বৃত্তি প্রবণতা নিয়ন্ত্রণঃ যদি সত্যিকারের সংস্কার করতে হয় তাহলে এমন ব্যবস্থা নির্মাণ করতে হবে যে ব্যবস্থা আমাদের রাজনিতিকদের সম্ভাব্য দুর্বৃত্তি প্রবণতাকে পদ্ধতিগতভাবে নিয়ন্ত্রিত রাখা যায়। আমাদের মূল লক্ষ্য হবে রাষ্ট্রের ক্ষমতা এক ব্যক্তির হাতে পুঞ্জীভূত করার কাজকে যথাসম্ভব কঠিন করে তোলা।  শত শত শহীদের তাজা রক্ত, হাজার হাজার দেহের রক্তক্ষরণ আর লক্ষ পিতামাতা, স্বামী, স্ত্রী ও ভাইবোনের আর্তনাদ দিয়ে গড়া গণউত্থানের ফসল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের হাত ব্যর্থ হতে পারেনা। ভবিষ্যতে যেকোন স্বৈরাচারের পুনঃ উত্থান যাতে না হয় তার পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করতে হবে।

দেশে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা ও টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে নিরপেক্ষ জনমুখী প্রশাসন, স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, দুর্নীতিমুক্ত, রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত আইন শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন।বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সীমিত সময়ের মধ্য এক সাথে এই সব কিছু বাস্তবায়নের সাফল্য হয়ত দেখতে পাবেন না। কিন্তু রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের মাধ্যমে দেশের প্রকৃত গণতন্ত্র ও টেকসই উন্নয়নের পথে যাত্রার সূচনা করতে পারে যার উপর ভিত্তি করে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার সেই পথে এগিয়ে যেতে পারবে।

মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে ৯ম সংসদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলাম। ২০১৩ এর শেষ দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কায্যকলাপে যখন বুঝতে পারলাম প্রকৃতপক্ষে তিনি চাইছিলেন না বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করুক তখন আমি সিদ্ধান্ত নিই আমি এই এক তরফা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করব না। আমি তখন প্রধানমন্ত্রীকে চার পৃষ্ঠার একটি নোট এবং আসন্ন নির্বাচনে অংশ গ্রহণে আমার অপারগতা জানিয়ে একটি পত্র দেই (সংযুক্তি ২ ও ৩ দ্রষ্টব্য)। এই তথ্য আপনার কাছে প্রকাশ করছি যেন আপনি এই ধারনা না করেন যে সময়ের পরিবর্তনে আমি ভোল পাল্টে আপনার অনুগ্রহ লাভের আশায় আমার উপরি উক্ত প্রস্তাব  দিচ্ছি। প্রকৃত পক্ষে বাংলাদেশের ‘রাষ্ট্র সংস্কারে’র কোন প্রকারের সুযোগ আল্লাহ্‌ সৃষ্টি করবেন মনে প্রাণে সেই কামনা করছিলাম। আল্লাহ্‌র কাছে অশেষ শোকর যে আল্লাহ্‌ সেই সুযোগ করে দিয়েছেন। 

 বিনীত,                                         

                      এম ইদ্রিস আলী 

সাবেক সচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য 

ই- মেইলঃ [email protected]       

               

সংযুক্তি -১ 

সূত্রঃ বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন 

৫ম সংসদ নির্বাচন - তারিখ ফেব্রুয়ারি ২৭, ১৯৯১

দল  প্রদত্ত মোট ভোটের অংশ (%) প্রাপ্ত সিটের সংখ্যা  সংসদে মোট সিটের অংশ (%)  প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে প্রাপ্য সিট  প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে প্রাপ্য সংসদের মোট সিটের অংশ (%)   

আওয়ামী লীগ  ৩০.০৮  ৮৮  ২৯.৩৩  ৯০.২৪  ৩০.০৮ 

বিএনপি  ৩০.৮১  ১৪৪   ৪৮  ৯২.৪৩  ৩০.৮১ 

জামাতে ইসলামী   ১২.১৩  ১৮  ৬  ৩৬.৩৯  ১২.১৩ 

জাতীয় পার্টি   ১১.৯২  ৩৫  ১১.৬৬  ৩৫.৭৬  ১১.৮১ 

বাকশাল  ১.৮১  ০৫  ০.৬০৩  ৫.৪৩  ১.৮১ 

কমিউনিস্ট পার্টি  ১.১৯  ০৫  ০৩৯৭  ৩.৫৭  ১.১৯ 

আই ও জে  ০.৭৯  ০১  ০.৩৩৩  ২.৩৭  ০.৭৯ 

ন্যাপ  ০.৭৬  ০১  ০.৩৩৩  ২.২৮  ০.৭৬ 

জেএসডি(রব)  ০.৭৯  ০  ০  ২.৩৭  ০.৭৯ 

গণতন্ত্রী দল  ০.৪৫  ০১  ০.৩৩৩  ১.৩৫  ০.৪৫ 

জেএসডি(ইনু)  ০.৫০  ০  ০  ১.৫  ০.৫০ 

এন ডি পি  ০.৩৬  ০১  ০.৩৩৩  ০.৯৯  ০.৩৩ 

জনতা দল  ০.৩৫  ০  ০  ১.০৫  ০.৩৫ 

জেএসডি(সিরাজ)  ০.২৫  ০১  ০.৩৩৩  ০.৭৫  ০.২৫ 

৭ম সংসদ নির্বাচন - তারিখ ডিসেম্বর ৬, ১৯৯৬

আওয়ামী লীগ  ৩৭.৪৪  ১৪৬  ৪৮.৬৭  ১১২.৩২  ৩৭.৪৪ 

বি এন পি  ৩৩.৬০  ১১৬  ৩৮.৬৭  ১০০.৮০  ৩৩.৬০ 

জাতীয় পার্টি  ১৬.৪০  ৩২  ১০.৬৭  ৪৯.২০  ১৬.৪০ 

জামাতে ইসলামী  ৮.৬১  ০৩  ০১  ২৫.৮৩  ০৮.৬১ 

আই ও জে  ০১.০৯  ০১  ০.৩৩   ০.৩২৭  ০৩.৬৩ 

জেএস ডি(আর)   ০.২৩  ০১  ০.৩৩  ০.৬৯  ০.০৭৬৬ 

আই এন ডি  ০১.০১৬  ০১  ০.৩৩  ৩.০৪৮  ৩.৩৮৬ 


সংযুক্তি – ২

৮ম সংসদ নির্বাচন – তারিখ অক্টোবর ০১, ২০০১ 

দল  প্রদত্ত মোট ভোটের অংশ (%) প্রাপ্ত সিটের সংখ্যা  সংসদে মোট সিটের অংশ (%)  প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে প্রাপ্য সিট  প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে প্রাপ্য সংসদের মোট সিটের অংশ (%)   

আওয়ামী লীগ  ৪০.১৩  ৬২   ২০.৬৬৬   ১২০.৩৯  ৪০.১৩ 

বি এন পি  ৪০.০৭  ১৯৩  ৬৪.৩৩৩   ১২০.২১  ৪০.০৭ 

আই জে ও এফ  ০৭.২৫  ১৪  ৪.৬৬৬   ২১.৭৫  ০৭.২৫ 

জামাতে ইসলামী ০৪.২৮   ১৭  ৫.৬৬৬   ১২.৮৪  ০৪.২৮ 

জাতীয় পার্টি  ০১.১২  ০৪   ১.৩৩৩   ৩.৩৬  ০১.১২ 

আই ও জে  ০.৬৮  ০২  ০.৬৬৬  ২.০৪  ০০.৬৮ 

কে এস জে এল  ০.৪৭  ০১  ০.৩৩৩  ১.৪১  ০০.৪৭ 

জাতীয় পার্টি(এম)  ০.৪৪   ০১  ০.৩৩৩  ১.৩২  ০০.৪৪ 

৯ম সংসদ নির্বাচন – তারিখ ডিসেম্বর, ২০০৮ 

আওয়ামী লীগ  ৪৮.০৪  ২৩০  ৭৬.৬৬৬   ১৪৪  ৪৮.00 

বি এন পি  ৩২.৫০  ৩০  ১০.০০০   ৯৭  ৩২.৩৩ 

জাতীয় পার্টি  ০৭.০৪  ২৭  ০৯.০০০   ২১.১২  ০৩.০০ 

জামাতে ইসলামী  ০৪.৭০  ০২  ০০.৬৭৭   ১৪.১০  ০৪.৭০ 

জে এস ডি  ০.৭২  ০৩  ০১.০০০   ০২.১৬  ০.৭২০  

ওয়ার্কার্স পার্টি  ০.৩৭  ০২  ০.৬৬৬    ১.১১   ০.৩৭০ 

এল ডি পি  ০.২৭  ০১  ০.৩৩৩  ০.৮১  

বিজেপি  ০.২৫  ০১  ০.333  ০.৭৫  

স্বতন্ত্র  ২.৯৪  ০৪  ০১.৩৩৩  ৮.৮২  

অন্যান্য  ২.২৫  ০  ০  ৬.৭৫  

না- ভোট  ০.৫৫  - - - - 


আরও খবর

সাগরে লঘুচাপ, তিন নম্বর সতর্ক সংকেত

শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪




বন্যার্তদের ত্রাণ সহায়তায় বাকৃবি

প্রকাশিত:শনিবার ২৪ আগস্ট 20২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ |

Image
বাকৃবি প্রতিনিধি:

বন্যার্তদের সহায়তায় ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। 

শুক্রবার (২২ আগষ্ট) রাত পর্যন্ত চলে এই ত্রাণ সংগ্রহের কার্যক্রম। ত্রাণসামগ্রী হিসেবে শিক্ষার্থীরা সংগ্রহ করেছেন নগদ অর্থ, কাপড়, শুকনো খাবারসহ বিভিন্ন ঔষধ। এরপর রাত ২টায় ট্রাকে করে এসব ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ফেনী জেলার দিকে রওয়ানা দেন শিক্ষার্থীরা। 

এ বিষয়ে বাকৃবির শিক্ষার্থী আরাফাত রহমান জানান, শুরুর দিকে আমরা ছোট একটি ফান্ডিং থেকে প্রায় ২০ হাজার টাকা সংগ্রহ করি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সহায়তায় এখন পর্যন্ত ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা সংগ্রহ করেছি। ইতোমধ্যে আমরা এই টাকা দিয়ে প্রায় ৪০০ লিটার বিশুদ্ধ পানি, ২০০ কেজি চিড়া, ১০০ কেজি মুড়ি, ১০০ কেজি চিনি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন, বিস্কুট, কেক, পাউরুটিসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ সামগ্রী ক্রয় করেছি। বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা বন্যাকবলিত মানুষদের জন্য কাপড়ের ব্যবস্থা করেন। পুরুষদের জন্য পাঁচশত প্যান্ট ও টি-শার্ট, দুইশত পাঞ্জাবি , নারীদের জন্য একশত জামা, ছোট বাচ্চাদের জন্য ৬০ টি প্যান্ট এবং ৫০টি শার্ট সংগ্রহ করা হয়েছে।

আরও খবর



বাকৃবির নতুন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. মো. হেলাল উদ্দীন

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ২২ আগস্ট ২০২৪ | হালনাগাদ:বুধবার ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ |

Image

বাকৃবি প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পেলেন কৃষিবিদ ড. মো. হেলাল উদ্দীন।

বুধবার (২১ আগষ্ট) সংস্থাপন শাখার এডিশনাল রেজিস্ট্রার ড. মো. হেলাল উদ্দীনকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব প্রদান করা হয়।
তিনি সাবেক রেজিস্ট্রার মো. অলিউল্লাহ এর স্থলাভিষিক্ত হলেন।

কৃষিবিদ ড. মো. হেলাল উদ্দীন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদ থেকে ১৯৯১ সালে স্নাতক এবং কৃষিতত্ত্ব বিভাগ থেকে ২০০৩ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৯০-৯১ সময়কালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (বাকসু) বার্ষিকী সম্পাদক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি এগ্রিকালচারিস্ট এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এ্যাব) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবেও নিয়োজিত আছেন। 


আরও খবর



বকশীগঞ্জে চেয়ারম্যানের কাজে মেম্বারদের বাধা,প্রশাসনের সহায়তা চান চেয়ারম্যান

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ২২ আগস্ট ২০২৪ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ |

Image

মাসুদ উল হাসান,জামালপুর :

জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর ইউপি’র চেয়ারম্যানের দাপ্তরিক কাজে বাধাঁ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মেম্বারদের বিরুদ্ধে। পরিষদে যেতে চেয়ারম্যানকে বাধাঁ দিচ্ছেন মেম্বাররা। চেয়ারম্যানের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে লাঠিসোঠা নিয়ে পরিষদে অবস্থান করছেন মেম্বার ও তাদের অনুসারীরা।  বৃহস্পতিবার বিকালে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান লাকপতি। প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। 


জানা যায়,দীর্ঘদিন যাবত কামালপুর ইউপির চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের দ্বন্ধ চলে আসছে। গত কয়েক মাস আগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে চেয়ারম্যানের প্রতি অনাস্থা দেন ১১ জন ইউপি সদস্য। কিন্তু চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মেম্বারদের সকল অভিযোগ মিথ্যা প্রমানিত হওয়ায় অনাস্থা প্রস্তাব না মঞ্জুর করে দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়। এরপর গত ৫ জানুয়ারি সরকার পতনের পর ইউপি সদস্যরা আবারো চেয়ারম্যানের অপসারনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। অপসারনের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করছেন মেম্বাররা। এরপরেও নিয়মিত অফিস করছিলেন তিনি। গত বুধবার সকালে চেয়ারম্যানকে প্রতিহত করতে ইউপি সদস্যরা তাদের লোকজন নিয়ে লাঠি সোঠাসহ পরিষদে অবস্থান নেন। এতে করে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ফলে পরিষদে যেতে পারেন নি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান লাকপতি। এই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। 


সংবাদ সম্মেলনে ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান লাকপতি বলেন, আমি জনগণের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছি। সর্বশেষ গত ১৯ আগস্ট ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে গিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করি। ২০ আগস্ট ইউনিয়ন পরিষদের যাওয়ার পথে খবর পাই প্যানেল চেয়ারম্যান গোলাপ জামাল, ইউপি মেম্বার সুমন, লাবনী আক্তার, হোসনে আরা, সামিউল হক, নুরুল আমিন ও সাইফুল ইসলাম সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ও চারপাশে অবস্থান করছে। আমি সেখানে গেলে আমার উপর হামলা করা হতে পারে এমন আশঙ্কা থাকায় বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করি। এমন পরিস্থিতিতে তিনি আমাকে পরিষদে যেতে নিষেধ করেন। এই পরিস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদে প্রবেশে বাধা প্রদান করে আমাকে পরিষদের কার্যক্রমে অনুপস্থিত দেখানো হচ্ছে। এছাড়াও তারা আমাকে দায়িত্ব পালনে নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছে। 

চেয়ারম্যান আরো বলেন,অনৈতিক সুবিধা না পাওয়ায় একটি মহল দীর্ঘদিন যাবত তার সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য নানা ভাবে পায়তারা করে আসছে। তারা ইউপি মেম্বারদের ব্যবহার করে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এর আগেও মেম্বাররা অনাস্থা দিয়েছিল। মেম্বারদের সকল অভিযোগ মিথ্যা প্রমানিত হওয়ায় অনাস্থা প্রস্তাব না মঞ্জুর করে দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়। এখন নতুন করে তারা আবার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। চাইলে আমি পরিষদে যেতে পারি। এলাকার সকল সাধারণ জনগন আমার সাথে রয়েছে। তারা বাধাঁ দিয়ে আমাকে আটকাতে পারবে না। কিন্তু আমি আসলে সংঘাত চাই না। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। তিনি আরো বলেন,মেম্বাররা সকলেই নানা অপকর্মের সাথে জড়িত। মেম্বার এবং তাদের স্বজনদের নামে সরকারি বিভিন্ন ভাতার কার্ড রয়েছে। নিজেরা দুর্নীতি করে আমাকে দুর্নীতিবাজ বলছে। আমি কোন দুর্নীতি বা অনিয়মের সাথে জড়িত নই। র্দুর্নীতির কোন প্রমান দিতে পারলে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবো। যতদিন দায়িত্বে আছি কাজ করে যেতে চাই। জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। 


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চেয়ারম্যানকে ভুমিদস্যু ও দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে মেম্বাররা বলেন, দাবি একটাই চেয়ারম্যানের অপসারণ। চেয়ারম্যানকে কোনভাবেই পরিষদে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চেয়ারম্যনের বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা দেন তারা।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অহনা জিন্নাত বলেন,চেয়ারম্যানের অভিযোগ জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়াও সার্বিক পরিস্থিতি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।


আরও খবর



নিজ ঘরে মিললো যুবকের গলাকাটা লাশ

প্রকাশিত:রবিবার ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | হালনাগাদ:শুক্রবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ |

Image

লালমনিরহাট প্রতিনিধি::



লালমনিরহাটের আদিতমারীতে নিজ বাড়ি থেকে তাহমিদুল রহমান তারা (৩৫) নামে এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। শনিবার (৩১ আগস্ট) উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের টিপার বাজার এলাকা থেকে আদিতমারী থানা পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে। মৃত তাহমিদুল রহমান তারা ওই এলাকার মৃত আহমেদের ছেলে।


এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা তার নিজ বাড়িতে গলা কেটে খুন করে। তিনি তার ঘরে একাই থাকতেন। তার স্ত্রী দেশের বাইরে ও পরিবার বাইরে থাকার সুযোগে কেউ তাকে হত্যা করেছে। পরে সকালে এলাকাবাসী পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।


মৃত তাহমিদুল রহমান তারার ভাই ইউপি সদস্য মুকুল জানান, আমার ভাই সাদাসিধে এবং খুবই সাদামাটা জীবন যাপন করতেন। তার স্ত্রী বিদেশে থাকে। কে বা কাহারা রাতের আধাঁরে আমার ভাইকে খুন করে পালিয়ে গেছে। আমরা এর সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচার চাই।


আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ উন নবী জানান, খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে আমরা ধারনা করছি তাকে খুন করা হয়েছে। তার গলায় কাটা দাগ রয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আরও খবর