নিজস্ব প্রতিনিধি :
হিমেল হাওয়া আর ঘনকুয়াশার দরুন কাবু উত্তরের জনপথ, খড়কুটোর আগুনে শরীর গরম রাখার চেষ্টা কর্মজীবি ও পেশাজীবি মানুষজন। বিকেল থেকে শুরু করে সকাল ৮ টা পর্যন্ত ঘনকুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় অনেকে অতী প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেনা। রাতের বেলা ফুটপাতে গরম কাপড় কিনতে ভীর জমাচ্ছেন অনেকে। টানা ৭দিনপর লালমনিরহাটের আকাশে দেখা দিয়েছে নিরুত্তাপ সূর্যের আলো। গত কয়েকদিনের চেয়ে মাত্র ৩ পয়েন্ট তাপামাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে আজ ৮ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টির সম্ভাবনা না থাকেলও আরও কয়েকনি থাকতে পারে মেঘলা আকাশ সহ এমন কনকনে শতি। কর্মজীবি, রিক্সাওয়ালারা জানান,সড়কে লোকজন না থাকায় তারা যাত্রী না পাওয়ায় বিপাকে পরেছেন। হাসাপাতল গুলোতে শিশুসেহ নানান বয়সী রোগিদের উপচে পরা ভীর লক্ষ্যকরা গেছে। চিকিৎসক শঙ্কট থাকায় হিমসিম খাচ্ছে ডাক্তাররা ।
কথায় আছে,মাঘের শীতে কাবু হয়েছে পড়েছে উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়সহ পার্শবর্তী কয়েকটি জেলার জনজীবন। টানা চার দিন ধরে বয়ে যাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব এলাকার নিম্নআয়ের মানুষেরা। আজ লালমনিরহাটে ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপামাত্রা রেকর্ড করা হলেও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্ব নিম্ন ৬ দশমিক ৮ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এনিয়ে টানা ৭ দিন সবনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে আগের তুলনায় গতকাল কুয়াশার দাপট ছিলো কিছুটা কম। এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে চলমান মৃদু শৈত্য প্রবাহ থাকবে আরও দুই-একদিন।
লালমনিরহাট,কুড়িগ্রাম,তেতুলিয়া উপজেলায় কয়েক দিন থেকে উত্তরের হিমেল বাতাস ও ঘন কুয়াশায় শীতের দাপট বেড়েই চলছে। মাঘের ৫ম দিনেও কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে উত্তর দিকে থেকে হিমেল হাওয়া বইতে শুরু করে। পাশাপাশি রাত গভীর হওয়ার সাথে সাথে ঘন কুয়াশায় আচ্ছাদিত হয়ে পড়ে পুরো জেলা। তা পর দিন সকাল পর্যন্ত কনকনে শীত ও কুয়াশায় মোড়ানো থাকে। তবে দিনের বেলা সূর্যের আলো পরিলক্ষিত হলেও তেমন সূর্যের উত্তাপ থাকে না। এ মাঘের শীতে মানুষ কাজকর্ম তেমন একটা করতে পারে না। শীতের কারণে সময়মতো কাজে যেতে পারছে না। অন্যদিকে দিন দিন জেলার আধুনিক সদর হাসপাতালসহ বাকি চার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেড়েছে রোগীর চাপ, হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতালে কর্তৃপক্ষ।
তবে আবহাওয়া অফিস বলছে, উত্তর দিক থেকে বয়ে আসা হিম বাতাস ও ঘন কুয়াশার কারণে দিনদিন শীতের তাপমাত্রা ওঠানামা করছে এবং শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বছর এ জেলায় মৌসুমের প্রথম দিকে শীতের আগমন ঘটে এবং অন্যান্য জেলায় তুলানায় শেষে বিদাই নেয়। পৌষ-মাঘ দুই মাস শীতকাল, ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি। মূলত নভেম্বর মাসের ২য় সপ্তাহ থেকে শীতের আগমন ঘটলেও পঞ্চগড়ে অক্টোবর মাসের শেষের দিকেই শীত শুরু হয় যায়।
এদিকে লালমনিরহাট ২৫০ শয্যার অধুনিক সদর হাসপাতালসহ জেলার ৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দিনদিন শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে । প্রতিদিন জ্বর, সর্দি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। তবে এ রোগে বয়স্কদের চেয়ে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
অন্যদিকে লালমনিরহাট জেলায় তেমন কোনো ভারী শিল্প কলকারখানা না থাকায় বেশির ভাগ মানুষ কৃষক,পাথরশ্রমিক হিসাবে কাজ করেন। জেলার মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ গরিব। যদিও জেলা প্রশাসন বলছে, জেলার ৫ উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নে এ পর্যন্ত সাড়ে ৩৮ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে।
জেলা গণতন্ত্রী পার্টি ধরলা চরাঞ্চলের কিছু সংখ্যক সহ পৌর এলাকায় প্রায় ২শত কম্বল বিতরণ করেছেন। জেলা প্রমাসক মোহাম্মদ উল্ল্যা সহ তাছাড়াও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান , উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন ,হাতিবান্ধা উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা মাহমুদুল হাসান সোহাগকেও শীতার্ত মানুষের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরণ করতে দেখা গেছে।
হিমালয়ের পাদদেশে হওয়ায় লালসনিরহাটে প্রতি বছর শীত মৌসুমে বেশি শীত অনুভূত হয়। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন,পুলিশ বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গরিব, অসহায় ও শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ শুরু হয়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যারা প্রকৃত গরিব, অসহায় ও শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করার।
মৃদু শৈত্য প্রবাহ থাকবে আরও ২/৩দিন। লালমনিরহাট পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান,আইন শৃঙ্খলা ঠিক রেখে মানবিক কারণে এ জেলার শীতার্ত মানুষদের মাঝে সাধ্যমতো শীত বস্ত্র বিতরণ চলছে।
এদিকে আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায় দেশের কয়েকটি জেলায় মৃদু চলমান শৈত্য প্রবাহ আরও দুই-একদিন থাকবে।আরও বলেন,লালমনিরহাট ‘দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, চুয়াডাঙ্গা এবং মৌলভীবাজারে মৃদু/মাঝারি শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই জেলাগুলোতে আরও এক থেকে দুইদিন মৃদু শৈত্য প্রবাহ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।’
আবহাওয়ার তথ্য জানিয়ে আবহাওয়া অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে। একই সঙ্গে মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত নদী অববাহিকা এবং উত্তরাঞ্চলে কুয়াশা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বড় কোনো পূর্বাভাস আপাতত নেই।’
অন্যদিকে জেলায শীতজনিত রোগে আকান্ত হয়ে কমপক্ষে ১৩ জন শিশু ও ৫ জন বয়স্ক রোগী মারাযাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
হাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, লালমনিরহাট ,কুড়িগ্রাম এবং পঞ্চগড়ে মৃদু ও মাঝারি শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, যা অব্যাহত থাকবে। এ শৈত্য প্রবাহ রংপুর বিভাগের অন্যান্য এলাকায় এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু এলাকায় বিস্তার লাভ করবে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।তবে আপাতত বৃষ্টির কোন শঙ্কা নেই ।