Logo
শিরোনাম

সফটওয়্যারের কৃত্রিম পরিবেশনা

প্রকাশিত:সোমবার ০৭ অক্টোবর ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

ড. এম. মেসবাহউদ্দিন সরকার

ভার্চুয়াল শব্দের বাংলা অর্থ হলো অপার্থিব (অর্থিব) আর রিয়েলিটি হলো বাস্তবতা। কিন্তু ডিজিটালি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মানে হলো কম্পিউটার সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার দিয়ে তৈরি কৃত্রিম পরিবেশনা, যার বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই। প্রকৃত অর্থে বাস্তব নয় কিন্তু বাস্তবের ন্যায় চেতনা উদ্রেককারী বিজ্ঞাননির্ভর কল্পনাকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বলে। এটি মূলত কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত সিমুলেশন বা মডেলিংয়ের মাধ্যমে এমন একটি কৃত্রিম ত্রিমাত্রিক পরিবেশ তৈরি করে, যেখানে একজন ব্যবহারকারী তার আশপাশের পরিবেশের মতোই সবই জীবন্ত উপলব্ধি করতে পারে। যেমন- বাস্তবে কখনোই বন্যপ্রাণী মহাকাশে উঠতে পারে না

কিন্তু ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে দর্শককে তা বাস্তবের চাইতেও জীবন্ত দেখানো হয়। বিভিন্ন এনিমেশন মুভি বা থ্রি-ডি গেমের সংস্পর্শে গেলেই দেখা যায় এমন বাস্তবতা। হলিউডের মতো বড় বড় ফিল্ম স্টুডিওর বিশ্ব চলচ্চিত্রে, বিজ্ঞাপন ফার্মে এবং বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলোতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে মানুষের সৃজিত নিউরাল ইন্টারফেস বা মানব-মেশিন সংস্পর্শের সৃষ্টি করে তথা মানুষের মধ্যে অভিজ্ঞতা অংশগ্রহণ করতে সাহায্য করে।

প্রযুক্তিটি এমন একটি থ্রিডি বা ইমার্জিভ অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করে, যা ব্যবহারকারী প্রাকৃতিক পরিবেশের মতো অনুভব করতে পারে। তবে এগুলোকে আকর্ষণীয় ও উপভোগ্য করার জন্য কিছু টুলস এবং ডিভাইস ব্যবহার করতে হয়। যেমন ১. হাতের ডেটা গ্লোভ, ২. বডি স্যুট, ৩. মাথায় হেড মাউন্টেড ডিসপ্লে, ৪. ইফেক্টর, রিয়েলিটি সিমুলেটর, সফটওয়্যার এপ্লিকেশন ইত্যাদি


ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সঙ্গে সংযোগ সাধনে ইফেক্টর হিসেবে হাতের ডেটা গ্লোভ, বডি স্যুট ও মাথায় হেড মাউন্টেড ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়। রিয়েলিটি সিমুলেটর ইফেক্টরকে সংবেদনশীল তথ্য দেওয়া এবং এর সঙ্গে সংযুক্ত বিভিন্ন সেন্সরগুলোকে উত্তেজিত করে। এই সবের পেছনে কাজ করে সিমুলেশন সফটওয়্যার এপ্লিকেশন। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি সাধারণত ৫ ধরনের হয়ে থাকে। যেমন ১. সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত (Fully-immersive): প্রকৃতি ও পরিবেশের অকল্পনীয় জগতের অনুভূতি পেতে এক বিশেষ কৃত্রিম পরিবেশ (Artificial environment) তৈরি করে যা দেখে ব্যবহারকারী তার ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারে। যেমন- সমুদ্রের তলদেশে তিমি মাছের দেখা কিংবা জঙ্গলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় টার্জেনের মতো উড়ে বেড়ানো সবই পরিপূর্ণভাবে অনুভব করা যায়

২. সেমি-ইমার্সিভ (Semi-immersive): Fully-immersive I Non-immersive-এর মাধ্যমে তৈরি হয় semi-immersiveকম্পিউটারের মাধ্যমে ও মাউসের সাহায্যে character-এর বৈশিষ্ট্য নিজের ইচ্ছামতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারা। ৩. নন-ইমার্সিভ (Non-immersive)- সফটওয়্যারের মাধ্যমে কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করা হয়। ব্যবহারকারীরা অ্যানিমেশন বা গেমস খেলার মাধ্যম নন-ইমার্সিভের বিষয়টি উপভোগ করতে পারে। ৪. অগমেন্টেড রিয়েলিটি হলো একটি ইন্টারেক্টিভ অভিজ্ঞতা, যা কম্পিউটার-জেনারেটেড ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য তথ্য দিয়ে বাস্তব জগতকে উন্নত করে।

সফ্টওয়্যার, অ্যাপস এবং হার্ডওয়্যার (যেমন- অজ চশমা) ব্যবহার করে অগমেন্টেড রিয়েলিটি ডিজিটাল কন্টেন্টকে বাস্তব জীবনের পরিবেশ এবং বস্তুর ওপর ওভারলে করে। ৫. কোলাবোরেটিভ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এটি একটি সহযোগিতামূলক ভার্চুয়াল পরিবেশ, যা অনেক অংশগ্রহণকারীর সহযোগিতা এবং মিথস্ক্রিয়া করার জন্য ব্যবহৃত হয় এবং এর প্রভাব বড় দূরত্বে ছড়াতে পারে। সাধারণত বিতরণকৃত সিমুলেশন, থ্রিডি মাল্টিপ্লেয়ার গেমস, পাবজি (চটইএ) গেম, সহযোগী প্রকৌশল সফ্টওয়্যার, সহযোগী শিক্ষার অ্যাপ্লিকেশন এবং অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশনগুলো সাধারণত ভাগ করা ভার্চুয়াল পরিবেশের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ১. বিনোদন এর সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যবহার হলো গেমিং। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির গেমগুলো ব্যবহারকারীদের একটি সম্পূর্ণ নতুন জগতে নিয়ে যায় এবং তাদের একটি অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে। এছাড়াও সিনেমা, ভিডিও এবং অন্যান্য বিনোদনমূলক সামগ্রী তৈরিতেও ব্যবহৃত হচ্ছে। ২. শিক্ষা শিক্ষাক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দূরবর্তী স্থানগুলো ভ্রমণ করতে পারে, ঐতিহাসিক ঘটনাগুলো পুনর্জীবিত করতে পারে এবং এমনকি জটিল ধারণাগুলোকে আরও সহজে বুঝতে পারে

শিক্ষকরা তাদের পাঠদান ভার্চুয়ালি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শেয়ার করেন প্রজেক্টরের সাহায্যে। এতে তারা প্র্যাকটিকাল উপায়ে সব শিখতে পারছে। ৩. চিকিৎসা মেডিক্যাল শাখায় জটিল সার্জারি বা রোগ নির্ণয়ে বর্তমানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এক বিশাল জায়গা দখল করে আছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির অনেক অ্যাপ্লিকেশন আছে, যেগুলোর মাধ্যমে ব্যথা উপশম করতে, আতঙ্কজনিত ব্যাধিগুলোর চিকিৎসা করতে, এমনকি অস্ত্রোপচারের আগে রোগীদের প্রস্তুত করতে ব্যবহার করা হয়।

সিমুলেটেড সার্জারির মাধ্যমে নতুন ডাক্তার কিংবা মেডিক্যাল শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নিতে পারে। ৪. প্রশিক্ষণ প্রশিক্ষণ ক্ষেত্রেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মাধ্যমে কর্মীদের বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া, নতুন সরঞ্জাম ব্যবহার করতে শেখানো এবং তাদের কর্মক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। ৫. যুদ্ধ পরিচালনা ও প্রশিক্ষণ সামরিক ও বিমানবাহিনীর যুদ্ধ পরিচালনা, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র চালনা, নৌবাহিনীর ডুবোজাহাজ পর্যবেক্ষণ করা ইত্যাদি ভার্চুয়াল পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হয় ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে। 
৬. প্রদর্শনী জাদুঘরে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রয়োগের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের জন্য ইতিহাস ও ঐতিহ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করা খুবই সহজ হয়। ৭. কোয়ালিটি কন্ট্রোল প্রোডাকশনের গুণগতমান যাচাই-বাছাই করার জন্য ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা যেতে পারে। ৮. গবেষণা নকশা, প্রকৌশল, বিপণন ইত্যাদি নানা ধরনের গবেষণার কাজে সিমুলেশনের মাধ্যমে কম্পিউটারের থ্রিডি ইমেজ ব্যবহার করা যায়

৯. মহাকাশ যাত্রা নভোচারীদের ভার্চুয়াল পরিবেশে মহাকাশে অভিযান পরিচালনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদানে সহায়ক। ১০. ভার্চুয়াল মিটিং অনলাইন যোগাযোগ, যা বিভিন্ন ভৌত অবস্থানের লোকদের একই ভার্চুয়াল রুমে মিলিত হতে তাদের মোবাইল বা ইন্টারনেট সংযুক্ত ডিভাইস ব্যবহার করতে সক্ষম করে। বিগত করোনাকালে বিশ্বব্যাপী মানুষে মানুষে সংযুক্ত ছিল ভার্চুয়াল রিয়েলিটির এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সাহায্যে প্রযুক্তিতে অনেক উন্নতি হয়েছে বটে, কিন্তু মানুষের জীবনে এর অনেক নেতিবাচক প্রভাবও পড়ছে। এগুলো হলো ১. বাচ্চারা গেমসের ওপর দিন দিন আসক্ত হয়ে পড়ছে। তাদের দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তির ক্ষতি হতে পারে। এমনকি কর্নিয়াও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ইষঁব যিধষব নামে এক ধরনের গেমস সফটওয়্যার মানুষের মাঝে ভয়ের সৃষ্টি করেছিল। অনেক ছেলেমেয়ে এই গেমের নেশায় পড়ে জীবন দিয়েছে পর্যন্ত। ২. কল্পনা জগতের প্রতি মানুষ বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে

সেজন্য সমাজে মনুষ্যত্বহীনতার মতো বিষয়গুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইচ্ছামতো কল্পনার জগতে বিচরণের সুযোগ লাভের ফলে মানুষ বাস্তবতার অনুভূতি সম্পর্কে উদাসীন থাকছে। ৩. একে অপরের মাঝে পারস্পরিক ইন্টারেকশনের অভাবে সমাজে অনিশ্চয়তা বিরাজ করতে পারে। 
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ইতিহাস দেড়শ
বছরের বেশি। শব্দটি সর্বপ্রথম ব্যবহার করেন ফরাসি কবি ও নাট্যকার অ্যান্টনিম আরচিউড তার লেখা ১৮৩৮ সালে প্রকাশিত গ্রন্থে। এরপর আঠারো শতকে ত্রিশের দশকে স্টেরিওস্কোপ আবিষ্কারকালে ইমেজ প্রোজেক্ট করার জন্য একটি টুইন মিরর ব্যবহার করা হয়, যেখানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ধারণা পাওয়া যায়। এছাড়াও ডেমিয়েন ব্রডরিকের নামক সায়েন্স ফিকশনেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি শব্দটি ব্যবহৃত হয়। ১৯৬১ সালে সেন্সোরমা সেমুলেটর নামক একটি যন্ত্র আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে বাস্তব উপায়ে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি উপস্থাপন করলেও, সেখানে কোনো প্রকার কম্পিউটার প্রোগ্রাম বা সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয়নি

পরবর্তীতে মরটন হেইলিং গড়ৎঃড়হ ঐবরষরম  কর্তৃক ১৯৫৭ সালে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির কারিগরি উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখেন। অবশ্য ১৯৮০ দশকের মধ্যভাগে জারন জেনিয়ার সর্বপ্রথম একে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নামকরণ করেন। পরবর্তীতে ভিজুয়াল প্রোগ্রাম ল্যাব এর প্রতিষ্ঠাতা হ্যাকার লেনিয়ার ১৯৮৪ সাল থেকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেন। যার ফলশ্রুতিতে বর্তমানে এই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি। 

লেখক : অধ্যাপক এবং তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, আইআইটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


আরও খবর



সাংবাদিক বনাম সেনাবাহিনী একাদশ ক্রিকেট প্রীতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত:শনিবার ৩১ মে ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

নিজস্ব প্রতিবেদক :

শনিবার সকালে যাত্রাবাড়ী ওয়াপদা কলোনী মাঠে যাত্রাবাড়ী আর্মি ক্যাম্পের আয়োজনে এই ক্রিকেট প্রীতি ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়। 

টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে যাত্রাবাড়ী সেনাবাহিনী ক্যাম্প একাদশ। নির্ধারিত ১৬ ওভারে ৭ উইকেটে হারিয়ে ১৭৪ রান করেন তারা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে সাংবাদিক একাদশ ৬৫ রান করলে বৃষ্টি হওয়ায় ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন আম্পায়ার। পরে সাংবাদিকদের সাথে এক মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যাত্রাবাড়ী আর্মি ক্যাম্পের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্ণেল মোঃ শামসুজ্জামান, ক্যাপ্টেন আরিফ মইন,ওয়ারেন্ট অফিসার মোশাররফ হোসেনসহ বিভিন্ন টেলিভিশন ও প্রিন্ট মিডিয়ার  সাংবাদিকবৃন্দ। 

সেনাবাহিনী ক্রিকেট একাদশের অধিনায়ক ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল শামসুজ্জামান ও সাংবাদিক ক্রিকেট একাদশের অধিনায়ক ছিলেন দীপ্ত টিভির রিপোর্টার সোহাগ আহমেদ, আনন্দ টিভি সিটি রিপোর্টার মনির হোসেন, আর টিভি সিটি রিপোর্টার রায়হান আহমেদ, যুগান্তরে যাত্রাবাড়ী প্রতিনিধি খোরশেদ আলম, নয়া দিগন্তর আকাশ শিকদার, এশিয়ান টিভি রিপোর্টার শাহিন আহমেদ, সহ অন্যান্য গণমাধ্যম কর্মীরা


আরও খবর



মার্কিন নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডেকেছেন ট্রাম্প

প্রকাশিত:শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডেকেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় এ বৈঠক হওয়ার কথা বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে ট্রাম্প প্রশাসন গত কয়েক মাস ধরে তেহরানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তার মধ্যে ইসরায়েলি হামলা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলল।

ইসরায়েল বলেছে, তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কারখানা এবং সামরিক কমান্ডারদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তেহরান যাতে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে তারা অভিযান শুরু করেছে। শুক্রবারের হামলা এই অভিযানের শুরু, অভিযান দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা ইসরায়েলের এই হামলার সঙ্গে কোনও ভাবেই জড়িত নয়।

‘ইরানের বিরুদ্ধে হামলায় যুক্তরাষ্ট্র জড়িত নয়। আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে ওই অঞ্চলে আমেরিকান বাহিনীর সুরক্ষা,’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও

জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেছেন, ওয়াশিংটনের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চললেও ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত একান্তভাবেই ইসরায়েলের।

ইরানে হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মনে হয় না, আমাদের এখন কোনো জল্পনা করা উচিত।

ইসরায়েলের হামলার পর ইরানের পাল্টা প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের জেরুজালেমে দূতাবাসের কর্মীদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বলেছে।

রবিবার ওমানে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ষষ্ঠ দফার আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও ইসরায়েলি হামলার পর তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এর আগে ট্রাম্প বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, ‘ইরানে ইসরায়েল হামলা করতে পারে।’ তা সত্ত্বেও তিনি শান্তিপূর্ণ সমাধান চান।


আরও খবর



বিশ্ববাজারে বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু হওয়ার পর বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়ছেই। সোমবার সকালেও সেই ধারা অব্যাহত আছে। এমনকি দিনের শুরুতে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি চার ডলার পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, আজ ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ১ দশমিক ১২ ডলার বা ১ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫ দশমিক ৩৫ ডলার। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেলের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ১০ ডলার বা ১ দশমিক ৫ শতাংশ— দাম বেড়ে হয়েছে ৭৪ দশমিক ৮ ডলার। শনিবারও তেলের দাম ৩ শতাংশ বেড়েছে।

ইরানের পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনায় ইসরায়েলের বিমান হামলার পর শুক্রবার বিশ্ববাজারে তেলের দাম একলাফে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

২০২২ সালের মার্চের পর গত শুক্রবার একদিনে তেলের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে অর্থাৎ এর মধ্যে তেলের দাম একদিনে আর কখনোই এতটা বাড়েনি। এ ছাড়া গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ।

ইসরায়েল-ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চতুর্থ দিনে গড়িয়েছে। দুই দেশ একে অপরের দিকে পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছেই কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

এ অবস্থায় ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার কথা ভাবছে বলে জানিয়েছেন দেশটির একজন জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা। গোল্ডম্যান স্যাকস বলছে, বিশ্বের মোট তেলের প্রায় ২০ শতাংশ এই প্রণালিপথ দিয়ে পরিবাহিত হয়। প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।


আরও খবর



বিশ্বব্যাপী কমেছে খাদ্যের দাম, জানাল এফএও

প্রকাশিত:সোমবার ০৯ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:সোমবার ১৬ জুন ২০২৫ |

Image

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) জানিয়েছে, মে মাসে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম ০.৮ শতাংশ কমেছে। সবচেয়ে বেশি কমেছে উদ্ভিজ্জ তেল ও চিনি জাতীয় পণ্যের দাম।

৬ জুন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের বরাতে সিনহুয়া জানায়, খাদ্যমূল্য সূচকের সবচেয়ে বড় উপাদান—শস্য ও খাদ্যশস্যের দাম মে মাসে ১.৮ শতাংশ কমেছে। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলে ভালো ভুট্টার ফলন এবং বৈশ্বিকভাবে গমের চাহিদা কমেছে।

তবে ইন্দিকা চালের চাহিদা ও মার্কিন ডলারের মূল্য পতনের কারণে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। তা সত্ত্বেও সামগ্রিক সূচকের ওপর তা প্রভাব ফেলেনি।

মে মাসে মাংসের দাম বেড়েছে ১.৩ শতাংশ। গরু, খাসি ও শূকরের মাংসের চাহিদা বাড়ায় এই প্রবণতা দেখা গেছে।

বিশেষ করে জার্মানিতে পা ও মুখের রোগের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় দেশটির বাজারে চাহিদা বাড়লে শূকরের মাংসের দাম বেড়ে যায়। তবে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের শঙ্কায় মুরগির মাংসের চাহিদা কমেছে।

এদিকে দুগ্ধজাত পণ্যের দাম বেড়েছে ০.৮ শতাংশ। এশিয়ার চাহিদার কারণে মাখনের দাম রেকর্ড উচ্চতায় রয়েছে, ফলে পনির ও গুঁড়া দুধের দামও বেড়েছে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে উদ্ভিজ্জ তেল ও চিনির দামে।

উদ্ভিজ্জ তেলের দাম কমেছে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ, যদিও এটি এখনো গত বছরের তুলনায় ১৯.১ শতাংশ বেশি। পাম, রেপসিড, সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলের দাম কমে গেছে—এর পেছনে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং যুক্তরাষ্ট্রে চাহিদা কমে যাওয়াকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে এফএও।

এদিকে খাদ্য ও পানীয় প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে চাহিদা কমে যাওয়ায় এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতি অনিশ্চিত থাকায় চিনির দাম কমেছে ২.৬ শতাংশ। সূত্র : ইউএনবি


আরও খবর



মিয়ানমার উপকূলে নৌকা ডুবে ৪২৭ রোহিঙ্গার মৃত্যু

প্রকাশিত:শনিবার ২৪ মে ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ |

Image

সমুদ্রপথে যাত্রার সময় মিয়ানমার উপকূলে পৃথক দুটি নৌকাডুবির ঘটনায় অন্তত ৪২৭ রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে নৌকাডুবির ঘটনাগুলো ঘটেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর। ২৩ মে রাত ৮টার দিকে কক্সবাজারস্থ ইউএনএইচসিআরের যোগাযোগ কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই ধরনের বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের মৃত্যু বা নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এতে আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগর বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সমুদ্রপথগুলোর একটি হয়ে উঠেছে।

সংস্থাটির প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, দুটি নৌকায় মোট ৫১৪ জন রোহিঙ্গা ছিলেন। ৯ মে প্রথম নৌকাটি ডুবে যায়, যেখানে ২৬৭ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের অনেকেই বাংলাদেশে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির থেকে এবং বাকিরা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে যাত্রা করেছিলেন। এই দুর্ঘটনায় মাত্র ৬৬ জন বেঁচে যান। পরদিন ১০ মে দ্বিতীয় নৌকাটিও ডুবে যায়। তাতে ২৪৭ জন রোহিঙ্গা ছিলেন, যারা একইভাবে কক্সবাজার ও রাখাইন থেকে এসেছিলেন। এই নৌকা থেকে মাত্র ২১ জনকে জীবিত উদ্ধার করা যায়।

বর্তমানে বেঁচে যাওয়া মানুষদের পরিচয় ও বিস্তারিত তথ্য যাচাই করছে ইউএনএইচসিআর। এছাড়া আরও একটি নৌকার খবর পাওয়া গেছে, যাতে ১৮৮ জন রোহিঙ্গা ছিলেন। নৌকাটিকে ১৪ মে মিয়ানমারে আটকে দেওয়া হয়।

ইউএনএইচসিআরের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক হাই কিয়ং জুন এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, সহায়তা তহবিল কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গাদের মানবিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। ফলে নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনের আশায় অনেকেই প্রাণঝুঁকি নিয়ে বিপজ্জনক সমুদ্রযাত্রায় নামতে বাধ্য হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়- আশ্রয়প্রদানকারী প্রথম দেশগুলোতে কার্যকর সুরক্ষা নিশ্চিত করা, দায়িত্ব ভাগাভাগি এবং সমুদ্রপথে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালানো জীবন রক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি। সম্প্রতি দক্ষিণ এশিয়ায় বর্ষা মৌসুম শুরু হয়েছে। ফলে সাগর উত্তাল, বাতাস ও বৃষ্টি প্রবল। এই সময়ে সমুদ্র পাড়ি দেওয়া আরও বিপজ্জনক। সমুদ্রে বিপদগ্রস্তদের জীবন রক্ষা করা আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইনের অধীনে একটি মানবিক বাধ্যবাধকতা ও দীর্ঘদিনের দায়িত্ব। ইউএনএইচসিআর এ অঞ্চলের দেশগুলোকে অনুরোধ করছে, যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৫ সালে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইউএনএইচসিআরের ৩৮৩ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে শরণার্থী ও আশ্রয়দাতা জনগোষ্ঠীর জীবন স্থিতিশীল করতে এই তহবিল ব্যবহার হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০ শতাংশ সংগ্রহ করা গেছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা মো. জোয়ের বলেন, দালালদের প্রলোভনে পড়ে সাগরপথে পাড়ি দিচ্ছেন রোহিঙ্গারা। মূলত রোহিঙ্গারা যাতে রাখাইনে ফেরত না যায় সেজন্য দালালরা এ ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। ফলে এ ধরনের মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। আসলে এটি খুবই দুঃখজনক। এটি বন্ধে সরকারের উচিত মানব পাচারকারী (দালালদের) বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।


আরও খবর