
বৃষ্টিপাত কমায় গত কিছুদিন ধরে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীর পানি ক্রমাগতভাবে কমে বন্যা পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছিল। কিন্তু আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের অধিকাংশ জায়গায় ভারী বর্ষণে সিলেট-সুনামগঞ্জে ফের বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এ তথ্য জানিয়েছে।
এতে বলা হয়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা
নদ-নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির সমতল বাড়ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে
পারে।
আবহাওয়া সংস্থাসমূহের
তথ্য অনুযায়ী, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় মাঝারি
থেকে ভারী এবং আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টায় ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস
রয়েছে। ফলে এ সময় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী সমূহের পানিসমতল বৃদ্ধি পেতে পারে।
এ ছাড়া আগামী ৪৮ থেকে
৭২ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারা, পুরাতন-সুরমা, সারিগোয়াইন নদীর
পানিসমতল দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চলে
স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
এদিকে, শনিবার (২৯
জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর
এবং তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় লঘুচাপ বিরাজ করছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ বিহার,
কেন্দ্রস্থল এবং বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত
বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের
অন্যত্র প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
এ অবস্থায় রংপুর,
ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, রাজশাহী
ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও
কোথাও ভারী বর্ষণ হতে পারে।
পাউবোর এক বার্তায় বলা
হয়েছে- দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি সামগ্রিকভাবে কমছে
জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্যানুযায়ী, পূর্বাঞ্চল ও
তৎসংলগ্ন উজানে আগামী সাতদিন মাঝারি থেকে ভারী এবং কখনো কখনো ভারী থেকে অতিভারী
বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ফলে, এসময়ে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীর পানি
বাড়তে পারে। চলতি মাসের শেষভাগ থেকে আগামী মাসের প্রথমভাগ নাগাদ
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার নদীগুলোর (সুরমা, কুশিয়ারা,
পুরাতন-সুরমা, সারিগোয়াইন ইত্যাদি) পানি দ্রুত বেড়ে নিম্নাঞ্চলে বিপৎসীমা অতিক্রম
করে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
দেশের উত্তরাঞ্চলের
নদীগুলোর পানি কমছে ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি
বর্তমানে স্থিতিশীল আছে। আগামী তিনদিন পর্যন্ত পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে।
পরবর্তীতে আগামী জুলাই মাসের শুরু থেকে পানি বাড়তে পারে এবং জুলাই মাসের প্রথম
সপ্তাহের শেষ ভাগ নাগাদ সতর্কসীমায় পৌঁছাতে পারে। এ সময় দেশের উত্তরাঞ্চলের
নদীগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান থাকতে পারে। তবে ভারী বৃষ্টিপাতের
পরিপ্রেক্ষিতে এ অঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীর পানি সময় বিশেষে দ্রুত
বাড়তে পারে।
গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি
স্থিতিশীলভাবে বাড়ছে। আগামী সাতদিন, গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীলভাবে বৃদ্ধি
অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময় বিপৎসীমা অতিক্রম করে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার
সম্ভাবনা ক্ষীণ।
দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য
অববাহিকা অঞ্চলের নদ-নদীগুলোর পানি স্বাভাবিক প্রবাহ বিরাজমান আছে। আবহাওয়া
সংস্থাগুলোর তথ্যানুযায়ী, আগামী সাতদিন দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে
মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতের পরিপ্রেক্ষিতে
এসময়ে এ অঞ্চলের নদীগুলোর পানি সময় বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে।