
রোকসানা মনোয়ার : প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। বাজারে
অস্থিরতা যেন কাটছেই না। ফলে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত
মানুষ। বাজারে গিয়ে তারা হিমসিম খাচ্ছেন। মাস শেষে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হচ্ছে। ঋণ
করে সংসার চালাতে হচ্ছে স্বল্প আয়ের এসব মানুষকে।
বাজারে গিয়ে সাধ্যের মধ্যে চাহিদামত পণ্য ক্রয় করতে না পেরে
বিপাকে পড়ছেন তারা। ফলে প্রতিদিনের খরচের তালিকায় করতে হচ্ছে কাটশাট। অনেক সময়
কমিয়ে দিচ্ছেন খাবারের মেনু।
বর্তমান পরিস্থতিতে কারো কারো পক্ষে সংসারের ব্যয় বহন করা
প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অনেকে সঞ্চয় ভেঙে ছেলে-মেয়েদের পড়ার খরচ জোগাচ্ছেন।
সন্তানদের পুষ্টিকর খাবার তো দুরের কথা স্বাভাবিক দুবেলা দু’মুঠো খাবারই এখন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষ করে স্বল্প বেতনে চাকরি করা শিক্ষিত মানুষের
নাভিশ্বাস ওঠে গেছে। তারা না পারছেন বলতে, না পরছেন সইতে।
যদিও নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার ইতোমধ্যে
কিছু পণ্যের দাম নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। কিন্তু তাতে লাভ হচ্ছে না। খুচরা বাজারে
তার প্রভাব পড়ছে না। ক্রেতাদের পণ্য কিনতে হচ্ছে বিক্রেতাদের নির্ধারিত দামেই।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, মালিবাগ
রেলগেট, খিলগাঁও রেলগেট, শান্তিনগর,
মতিঝিল এজিবি কলোনি, মুগদা, রামপুরা, উলনসহ বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা গেছে,
মাছ-মুরগি সবজিসহ সব পণ্যের দাম বাড়তি। কাঁচা মরিচ, আদা ও টমেটোর দাম আবারও বেড়েছে। সবজি মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
ইমরান হোসেন রাজধানীর বাংলামোটরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে
চাকরি করেন। তিন সদস্যের পরিবার নিয়ে থাকেন শনির আখরা এলাকায়।
তিনি বলেন, বাসা আর অফিস কাছাকাছি। যাতায়াত খরচ নেই।
একটি মেয়ে ক্লাস ওয়ানে পড়ে। যে বেতন পাই তা বাসা ভাড়া দিয়েই শেষ। চাকরির পাশাপাশি
ছোট একটা ব্যবসা করি। ব্যবসা আর চাকরি মিলে কোনোমতে সম্মান নিয়ে বেঁচে আছি।
ইংরেজিতে মাস্টার্স করা আফজাল আরও বলেন, গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ। মাসে
একবার বাড়ি যাই। বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা আছেন। তাদের খরচসহ দেখভাল করতে হয়। যে আয়
করি তার চেয়ে ব্যয় বেশি।
একটা কথা কি জানেন, আমরা যারা শিক্ষিত স্বল্প আয়ের মানুষ।
আমাদের চেয়ে বেশি কষ্টে আর কেউ নেই। না পারি হাত পাততে, না
নারি সম্মান নষ্ট করতে। বাজারের যে অবস্থা। ভয়ে বাজারে যাই না। কোনো মতে খেয়ে না
খেয়ে দিন পার করছি।
রাজধানীর মগবাজার রেলগেট এলাকায় থাকেন রফিকুল ইসলাম। বাড়ি
ময়মনসিংহের মুক্তগাছায়। মিডিয়া কর্মী রফিকুল জানান, এভাবে চলা যায় না। প্রতি
মাসেই ঋণ হতে হচ্ছে। বেতন বাড়ছেনা। ইনক্রিমেন্ট নেই। সঞ্চয়তো দুরের কথা, ঢাকা শহরে বেতনের টাকা দিয়ে থাকা যায় না। যে বেতন পাই বাসা ভাড়া দিতেই
শেষ। কিন্তু একশেণীর মানুষের কাছে টাকার অভাব নেই, তাদের
কোনো সমস্য নেই। তারা টাকার পাহাড় বানাচ্ছে। সমস্যা শুধু আমাদের মত মানুষের।
এদিকে বাজারে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, নিত্যপণ্যের মজুত ও সরবরাহ
সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। বাজার ও গুদামে পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই। সিন্ডিকেটের কারসাজির
কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য এক বা একাধিক পণ্য টার্গেট করে
পরিকল্পিতভাবে দাম বাড়ানো হচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে আলু, ডিম,
পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে কারা ভোক্তার পকেট কেটেছে, অসাধু পন্থায় অতিমুনাফা করছে, সেই তথ্য সরকারের কাছে
আছে। তাই ভোক্তাদের স্বার্থে অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে। তবেই
নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা কমবে।