উত্তম রায় লালমনিরহাট :
ভারী বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তা
নদীর পানি বেড়েই চলেছে। ইতিমধ্যে সর্বগ্রাসী তিস্তা দুই কুল ছুইয়ে টইটম্বুর হয়ে
বিভিন্ন পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায়
নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এতে করে তিস্তা অববাহিকার বিভিন্ন চরাঞ্চল ও
নিম্নাঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। আতঙ্কে মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে।
অস্বাভাবিক
হারে পানি বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার চর ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে। তিস্তা ছাড়াও
মানাস,
টেপা, ঘাঘট, করতোয়া,
যমুনেশ্বরী, আখিরা নদীসহ জেলার অন্যান্য
নদ-নদী ও খাল-বিলে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতিমধ্যে তিস্তার চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের
ফসলের ক্ষেত মাছের পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে করে বাদাম, মরিচ,
পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়া ও ভুট্টাসহ বিভিন্ন
রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
পানি
উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা ব্যাজের ডালিয়া পয়েন্টে
সোমবার দুপুর ১২টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
একই সময়ে রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি
প্রবাহিত হয়।
এর
আগে সকাল ৯টার দিকে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ৫২ দশমিক ৫৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে।
যা বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এছাড়াও
সোমবার দুপুর ১২টায় ঘাঘট নদীর গাইবান্ধা পয়েন্টে ২২ দশমিক ৪ সেন্টিমিটার, যমুনেম্বরী নদীর রংপুরের বদরগঞ্জ পয়েন্টে ৩০ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার,
করতোয়া নদীর রহিমাপুর পয়েন্টে ১৮ দশমিক ৮৫ সেন্টিমিটার পানি প্রবাহ
রেকর্ড করা হয়।
রংপুরের
গঙ্গাচড়া উপজেলা নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ,
গজঘণ্টা ও মর্নেয়া, কাউনিয়ার বালাপাড়া,
পীরগাছার ছাওলা, তাম্বুলপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন
এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে অনেক বাড়ি-ঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।
সম্ভাব্য ভাঙন ঠেকাতে বিভিন্ন স্থানে জিও ব্যাগ আগাম মজুত করে রাখা হয়েছে।
কোলকোন্দ ইউনিয়নের চেয়রম্যান আব্দুর রউফ জানিয়েছেন, তার ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ডের প্রায় ১২ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
বিনবিনিয়াচরের পশ্চিমপাড়ায় বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভেঙে যাচ্ছে বাঁধ, বাঁশঝাড়, জমি, বসতবাড়ি।
বেড়িবাঁধটির পূর্বের অংশ এরই মধ্যে ভেঙে গেছে। এখন খৈ খাওয়া অংশে ভাঙন দেখা
দিয়েছে। যদি এই ভাঙন রোধ করা না যায়, তাহলে খৈ খাওয়া,
পাঙ্গাটারি, মধ্যপাড়া, আমিনগঞ্জসহ
আশপাশের প্রায় ১১ থেকে ১২টি গ্রামে ভাঙন শুরু হবে।
এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, উজানের ঢল আর অব্যাহত
বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার,
ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘটসহ এ অঞ্চলের নদ-নদীতে পানি
বাড়তে থাকায় বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। এতে নীলফামারীর জলঢাকা, ডোমার, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারী,
লালমনিরহাট সদর, কুড়িগ্রামের রাজারহাট,
রৌমারী, সদর, রংপুরের
গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা ও
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলসহ নিচু এলাকাগুলোতে বন্যার পানি ঢুকে
পড়েছে।