মাইজভান্ডার দরবার শরীফের পীর ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) চেয়ারম্যান হযরত শাহসুফি ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী মাইজভাণ্ডারী বলেছেন, ইসলাম মানুষকে ইনসানে কামেল বা পরিপূর্ণ মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেয়। তিনি বলেন, সচ্চরিত্র তখনই অর্জিত হয়, যখন ক্রোধশক্তি ও খায়েশ শক্তিকে সমতার পর্যায়ে রাখা হয়। কেননা, কঠোরতা কখনও ক্রোধ থেকে এবং কখনও তীব্র লালসা থেকে উৎপন্ন হয়, কিন্তু নম্রতা সচ্চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। সে ব্যক্তি সহনশীল নয়, যে জুলুমের সময় চুপ থাকে, এরপর সক্ষম হলে প্রতিশোধ নেয়; বরং সহনশীল তাকেই বলা হয়, যে জুলুমের সময় সহ্য করে এবং সক্ষম হলে ক্ষমা করে। তিনি আরো বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন মহানবী (সা.) বিজয়ীবেশে মক্কায় প্রবেশ করলে কুরাইশদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু তিনি বিজিত শত্রুদের প্রতি কোনো ধরনের দুর্ব্যবহার করেননি। হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী বলেন, প্রকৃত মুসলমান ওই ব্যক্তি যার মুখ ও হাতের অনিষ্ট থেকে লোকজন নিরাপদ থাকে এবং যার নির্যাতন থেকে মানুষ নিরাপদ তাকে মুমিন বলে। বিএসপি চেয়ারম্যান বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় বসবাসরত আদিম পৌত্তলিক, ইহুদি এবং নবদীক্ষিত মুসলিম তিন সম্প্রদায়ের সমন্বয়ে, দল-মত নির্বিশেষে মদিনা সনদের মাধ্যমে একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। যেখানে সামাজিক নিরাপত্তা, পারস্পরিক সম্পর্ক, মদিনার নিরাপত্তার প্রশ্ন এবং মদিনার অর্থনীতি সচল রাখার বিষয়ে সবাই ঐকমত্যে পৌঁছেছিল। সে সময় কারও কোনো অধিকার বিন্দুমাত্র ভূলুণ্ঠিত হয়নি। সব নাগরিক সমান অধিকার পেয়েছে। রাসুল (সা.)-এর বলিষ্ঠ পদক্ষেপের ফলে তৎকালীন সমাজের গোত্রগুলোর অন্তর্কলহ, রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের অবসানসহ নৈরাজ্যমুক্ত, মানবিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ একটি শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বস্তুত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অনুপস্থিতিতে দেশের শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়। সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ সংঘাতের সূত্রপাত ঘটায়, গৃহযুদ্ধেও রূপ নেয়। তিনও দেশের এই ক্লান্তিকালে মব জাস্টিস, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এ সমস্ত ধ্বংসাত্মক বিশৃঙ্খল পন্থা পরিহার করার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহবান জানান। একই সাথে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টিকারী সম্প্রীতি বিনষ্টকারী উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি কঠোর হওয়ারও আহ্বান সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী।
২রা ডিসেম্বর (সোমবার) রাতে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার নারায়ণপুর নামা বাজার সানিকুল ইসলাম সানির বালুর মাঠে আঞ্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভাণ্ডারীয়া ও মইনীয়া যুব ফোরাম বেলাব উপজেলা শাখার ব্যবস্থাপনায় পবিত্র ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএসপি চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভান্ডারী। বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব মোঃ ধন মিয়া প্রধান ও জনাব মোঃ মকবুল হোসেন মেম্বারের সভাপতিত্বে মাহফিলে উদ্বোধক ছিলেন নারায়ণপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব মোঃ কাউসার কাজল (এম.এ)। কোরআন সুন্নাহর আলোকে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করেন, রাজধানী ঢাকার মিরপুর-১ মসজিদ-এ গাউছুল আজমের খতিব মাওলানা মুফতি মাকসুদুর রহমান, মইনীয়া যুব ফোরাম কেন্দ্রীয় পরিষদের বিভাগীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক, হাফেজ মাওলানা কেরামত আলী, খাদেম মাওলানা হাফেজ খাজা বাহাউদ্দীন মাইজভান্ডারীসহ আরো অনেকেই। এসময় বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, আঞ্জুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভাণ্ডারীয়া ও মইনীয়া যুব ফোরামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে সালাতু সালাম শেষে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি, কল্যাণ ও নিপিড়ীত মানবতার মুক্তি কামনায় আখেরী মুনাজাত পরিচালনা করেন, মাইজভান্ডার দরবার শরীফের বর্তমান ইমাম ও বিএসপি চেয়ারম্যান হযরত শাহসূফী ড. সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আল হাসানী মাইজভাণ্ডারী।