নেত্রকোনা প্রতিনিধি:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩—২৪ শিক্ষাবর্ষে ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ৭২তম হওয়ার পরও অর্থের অভাবে ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে মো. সাইফুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী।
সাইফুল জেলার পূর্বধলা উপজেলার নিজহোগলা গ্রামের মো. জামাল উদ্দিন ও রিনা বেগম দম্পতির ছেলে। জামাল উদ্দিন ও রিনা বেগমের সাংসারিক জীবনে বনিবনা না হওয়ায় ১৮ বছর আগে ডিবোর্স হয়ে যায়। পূর্বভিকুনীয়া গ্রামের দিনমজুর মইজ উদ্দিনের মেয়ের ছেলে সাইফুল। সাইফুল তার নানার বাড়িতে মায়ের সাথে বসবাস করেন। সংসারের ব্যয়ভার মিটিয়ে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়ালেখার খরচ বহন করার সামর্থ নেই মা রিনা বেগমের। প্রাথমিক অবস্থায় ভর্তির জন্য যে টাকা লাগবে সেটাই এখনো জোগাড় করতে পারেননি তিনি।
সাইফুল ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় নেত্রকোনার পূর্বধলার সাধুপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৫ এবং ২০২৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় পূর্বধলা সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।
সাইফুল ইসলামের মা মোছা. রিনা বেগম জানান, একমাত্র ছেলে ছাড়া তার আর কেউ নেই। স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্স হবার পর থেকে ছেলেকে নিয়ে বৃদ্ধ বাবার অভাব অনটনের সংসারে বসবাস করছেন তিনি। অভাবের কারনে ছেলেকে তেমন প্রাইভেট কোচিং এ পড়াশুনা করাতে পারেননি। কোন মতে তাদের সংসার চলে। সাইফুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছে এখন খরচ আরও বেড়ে গেল।
দারিদ্রতার সাথে লড়াই করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, তার বয়স যখন দুই বছর পাঁচ মাস তখন বাবা এবং মায়ের ডিভোর্স হলে মায়ের সঙ্গে নানার বাড়িতে থাকেন। তার বাবার বাড়ি নিজহোগলা এবং নানার বাড়ি পূর্বভিকুনীয়া। তার মায়ে ইচ্ছে ছিল যে কোনভাবে ছেলেকে পড়াশুনা করিয়ে মানুষের মত মানুষ করবে। তাই তাকে পূর্বভিকুনীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেয়। নানার আর্থিক অবস্থা খুবই দুর্বল ছিল তাই তাকে পড়াশুনা করানোর জন্য তার মাকে অন্যের বাড়িতেও কাজ করতে হয়েছে। কিন্তু ভাগ্য ভাল যে তার নানা— নানু, মামাদের পাশাপাশি আশেপাশে অনেক ভাল মানুষ ছিল। সবাই তাকে অনেক সহযোগিতা করেছে। তার যখন টাকার প্রয়োজন হয়েছে অথবা কোন সমস্যা হয়েছ তারা সমাধান করেছেন। শিক্ষকরা তাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। এলাকার বড় ভাই ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শ্যামল চন্দ্র এবং আরেক বড় ভাই জসিম শেখ তারা তাকে খুব কাছ থেকে সাহায্য করেছেন। দিলরুবা হাবিব শিক্ষা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ওসমান গনি সুমন স্যার, সাংবাদিক মোস্তাক আহমেদ খান সম্পর্কে তার নানা হন। তারা তাকে অনেক সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। এভাবেই সাইফুল পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন এবং পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে কাজ করে নিজেও টাকা উপার্জন করেছেন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করবেন। আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ‘ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, কিন্তু মায়ের পক্ষে পড়াশুনার টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়। ভর্তি সুযোগ পেয়ে খুশি হয়েছিল সাইফুল। কিন্তু ভর্তি ও পড়াশুনার টাকার চিন্তায় সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার স্বপ্ন মনে হয় তার পূরণ হবে না।’
ঢাবি’র পূর্বধলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রুকন উদ্দিন রানা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পূর্বধলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদ (উটচঝডঅ) মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা ও সহায়তা প্রদান করে। এরই ধারাবাহিকতায় সাইফুল ইসলামকে সকল বিষয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে সাধ্য মত সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।
পূর্বধলা সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক আবু হানিফ তালুকদার রাসেল বলেন, ‘সাইফুল ইসলাম খুব মেধাবী ছাত্র। আমরা যতটুকু পেরেছি তাকে সহযোগিতা করেছি। পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে সে হয়তো মেধা তালিকায় প্রথম থেকে দশের মধ্যে স্থান পায়নি, তবে সে যে মেধাবী তার প্রমাণ সে দিয়েছে। সমাজের বিত্তবান, মহৎ ব্যক্তি, সরকারি বা বেসরকারি দাতা সংস্থা পাশে দাঁড়ালে সাইফুলের স্বপ্ন পূরণ হতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি বছর ‘গ’ ইউনিটে যে ৪ হাজার ৫৮২জন মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছে তাদের মধ্যে ৭২তম সাইফুল ইসলাম। অদম্য মেধাবী সাইফুল ইসলামের উচ্চ শিক্ষা অর্জনের লড়াইয়ে বিত্তবান মহৎ ব্যক্তি ও দাতা সংস্থা শরিক হলে লড়াইটা সহজ হবে। সাইফুল ইসলামের সাথে ০১৯৯০-৬২৬১৭০ নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে!