সদরুল আইন, বিশেষ প্রতিবেদক :
বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে এক দফা আন্দোলন করছে।
টানা কর্মসূচির মধ্যে আজও তারা কিছু কর্মসূচি পালন করেছে। তবে এই কর্মসূচির মধ্যে বিএনপি নির্বাচনে যাবে কি যাবে না এমন গুঞ্জনও রয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন নির্বাচন কেন্দ্রিক বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন। সরকার নির্বাচনের জন্য প্রশাসন সাজিয়েছে, এক তরফা ভাবে নির্বাচন করতে চায়, আওয়ামী লীগ বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য মামলা হামলা ইত্যাদি দিচ্ছে এরকম নানা অভিযোগ তিনি সামনে এনেছেন।
ধারণা করা হচ্ছে যে, নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে বিএনপি অপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিতে চায়। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, একটি এক্সিট পয়েন্ট লাগবে।
বিএনপি যে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না বা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবে না বলছে সেখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তাদের একটা পথ দিতে হবে।
এরকম একটি পথ হতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলোর পরামর্শ। আগামী ৭ অক্টোবর মার্কিন প্রাক নির্বাচনী প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করছেন। তারা এই সফরে বিএনপির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং এই সাক্ষাতে যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা বিএনপিকে আশ্বস্ত করে যে, তোমরা নির্বাচনে যাও এবং অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় কিনা সেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ অন্য দেশগুলো তদারকি করবে তাহলে বিএনপি তার অবস্থান পাল্টাতে পারে।
তবে সেক্ষেত্রেও নির্বাচনকালীন সরকার, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন সহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের অবস্থান রয়েছে। তবে বিএনপির একজন নেতা এই নিয়ে হতাশার কথা শুনিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রাক নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না। তার মানে সরকার আবার একটি এক তরফা নির্বাচনের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি নির্বাচনের পর্যবেক্ষক দল না পাঠায় তাহলে পরে এই নির্বাচন যে একটা অর্থহীন নির্বাচন হবে সেটি বলাই বাহুল্য এবং ওই নির্বাচনের ফলাফল পূর্ব থেকে নির্ধারিত থাকবে।
তাই সেই নির্বাচনে গিয়ে বিএনপি তার অবস্থান নষ্ট করতে চায় না। তবে এ নিয়েও বিএনপির মধ্যে ভিন্ন মত আছে।
বিএনপির কোন কোন নেতা বলছেন, বিএনপির অবস্থা এখন আগের চেয়ে ভালো। বিএনপি যদি নির্বাচন না করে এবং শেষ পর্যন্ত যদি সরকার ঝুঁকি নিয়ে হলেও নির্বাচন করে ফেলতে পারে তাহলে বিএনপি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। এর ফলে তাদেরকে রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা যাবে।
কিন্তু কৌশলগত কারণের জন্য তারা যদি নির্বাচন করে এবং নির্বাচনের মধ্যেই তারা আন্দোলন অব্যাহত রাখে, সরকারের পক্ষপাত এবং কারচুপির বিষয়গুলো প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে এবং আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করাতে পারে তাহলে তাদের আন্দোলনের একটা নতুন মাত্রা যোগ হবে এবং ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমেই তারা নির্বাচন বানচাল এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে জোরদার করতে পারে।
তবে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপির এই মনোভাব নিয়ে যথেষ্ট আপত্তি রয়েছে।
তারা মনে করছে, সরকারের অনেক এজেন্ড বিএনপির মধ্যে রয়েছে। যারা বিএনপিকে বারবার বিভ্রান্ত করছে। ২০১৮ নির্বাচনে এভাবেই বিএনপিকে বিভ্রান্ত করা হয়েছিল বলে তারা মনে করেন। এরকম ফাঁদে পা দিলে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে তাদের ধারণা।
তবে এখন বিএনপির জন্য একটি জটিল মেরুকরণ তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো আন্তর্জাতিক চাপ। আন্তর্জাতিক মহল যদি বলে যে, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে দেখতে হবে যে নির্বাচন কতটুকু পক্ষপাতপূর্ণ হচ্ছে। আর দ্বিতীয়ত তৃণমূলের চাপ, তৃণমূল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে অনেক প্রার্থী নির্বাচনমুখী হতে পারে এবং সেটি বিএনপির জন্য আরেকটি বড় সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
কাজেই দেখার বিষয় যে শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।