সম্প্রতি চালের ওপর শুল্ক কমানো হলেও আমদানিতে আগ্রহী নন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন,
চাল আমদানি করা হলে সেটি বর্তমানে
দেশের বাজারে যে দাম তার চেয়েও বেশি দাম দিয়ে ক্রেতাদের কিনতে হবে। আর বেশি দামের কারণে দেশের ব্যবসায়ীদেরও মুনাফা
হবে না। তারা মনে করেন, শুল্ক কমানো হলেও এই মুহূর্তে দেশে চালের দামে প্রভাব পড়বে না।
গত আগস্টে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার
কারণে আমন চাষে প্রভাব পড়ার পর থেকেই খুচরা বাজারে
চালের দাম বাড়তি।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম
ফসলের ফলন কমে যাওয়ায় চালের দাম যেন আরো না বেড়ে যায় তা ঠেকাতে অন্তর্বর্তী সরকার আমদানি
শুল্ক কমিয়ে আমদানিকে
উৎসাহিত ও স্থানীয়
মজুদ বাড়ানোর চেষ্টা
করছে।
গত ২০ অক্টোবর
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড
(এনবিআর) চালের আমদানি
শুল্ক ৬২ দশমিক পাঁচ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে।
সংস্থাটি বলছে, ব্যাপক
বন্যার কারণে শুল্ক কমানো হয়েছে। আশঙ্কা
করা হচ্ছে, সম্ভাব্য
সরবরাহ ঘাটতির কারণে চালের দাম বেড়ে যেতে পারে।
রাজস্ব কর্তৃপক্ষ আরো জানিয়েছে, শুল্ক কমানোর
ফলে প্রতি কেজিতে
আমদানি খরচ ১৪ টাকা ৪০ পয়সা কমবে।
তবে চাল কলের মালিকরা বলছেন, প্রতিবেশী
ভারতে চালের দাম বেশি হওয়ায় বাংলাদেশে
শুল্ক কমালেও সেখান থেকে আমদানি আর্থিকভাবে
লাভজনক নয়। তাছাড়াও,
পরিবহন ও অন্য খরচের কারণে আমদানি
করা চালের দাম দেশের বাজারের তুলনায়
অনেক বেশি হবে।
এক শীর্ষ চাল আমদানিকারক বলেন, বর্তমান
বাজার পরিস্থিতির কারণে আমদানির বিষয়টি কেউ বিবেচনা করবেন এমন সম্ভাবনা খুবই কম।
তাদের হিসাবে, আমদানি
শুল্ক শূন্যে নামিয়ে
আনলেও শুধু আমদানি
খরচ হিসেব করলে চালের দাম কেজিপ্রতি
৮০ টাকা ও মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৭৬ টাকা হবে। এর বিপরীতে
দেশের চিকন চাল বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৫ টাকায়।
মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৫৫ টাকা। এরপর পরিবহন, শ্রমিকসহ
আরো অন্য খরচ যোগ হবে।
এই আমদানিকারক মনে করেন, আমন ও বোরো ধান কাটার পর চালের দাম কমবে। তখন আমদানির
প্রয়োজনীয়তা আরো কমে যাবে।
একই মত অপর শীর্ষ চাল আমদানিকারক জাকির হোসেন রনির ।
তিনি বলেন, এই দামে কেউ চাল আমদানি করবেন না। অদূর ভবিষ্যতে দেশে চালের দাম বাড়বে।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের এক আমদানিকারক বলেন, কেউ কেউ এক মাস পর চাল আমদানির
কথা ভাবতে পারেন।
আশা করা হচ্ছে,
উৎপাদন বেশি হওয়ায় ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা
তুলে নেবে। তখন চালের দাম আরো কমবে। বাজারে চালের সরবরাহ কমে যাওয়ায়
ঢাকায় চালের দাম বাড়তি।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে কয়েকটি
এলাকায় ৫০ কেজি চালের বস্তায় দাম ৫০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়েছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ জাতের ৫০ কেজির বস্তা এখন তিন হাজার থেকে তিন হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে ছিল ২ হাজার ৮৫০ থেকে ২ হাজার ৯৫০ টাকা।
রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, গত সপ্তাহে
মাঝারি মানের চালের দাম বেড়েছে প্রায় এক শতাংশ। গত মাসে বেড়েছে প্রায় দুই শতাংশ।
বার্ষিক হিসাবে চিকন চালের দাম বেড়েছে
৯ দশমিক ০৯ শতাংশ। মাঝারি মানের চালের দাম বেড়েছে
১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। মোটা চালের দাম বেড়েছে ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ।
গত ২৩ অক্টোবর
ভারত সরকার টনপ্রতি
ন্যূনতম রপ্তানি দাম ৪৯০ ডলার তুলে দিয়ে বাসমতি ছাড়া অন্য চালের ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে। ভারত সেদ্ধ চালের ওপর ১০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক তুলে নেওয়ার একদিন পর এ উদ্যোগ
নেওয়া হয়। এসব উদ্যোগ আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমাতে সহায়তা
করতে পারে। তবে স্থানীয় আমদানিকারকরা বর্তমান দাম বিবেচনায় নিয়ে আমদানির
কার্যকারিতা সম্পর্কে সন্দেহ
প্রকাশ করেছেন।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ক্রয় ও সরবরাহ শাখার অতিরিক্ত
সচিব হাবিবুর রহমান হোসাইনি বলেন, কয়েকজন
আমদানিকারক খোঁজখবর নিয়েছেন।
তবে চাল আমদানির
জন্য সরকারিভাবে আবেদন করা হয়নি। ব্যবসায়ীরা
আপাতত আমদানির জন্য আবেদন করবে বলে তিনি মনে করছেন না।
খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে
জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রেকর্ড
পরিমাণ চাল উৎপাদনের
পর এ বছর চালের সরবরাহ বিঘ্নিত
হয়েছে। সেসময় দেশে চার কোটি টনের বেশি চাল উৎপাদন
হয়েছিল। ফলে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত আমদানির
প্রয়োজনীয়তা ছিল না।
যা বলছেন ভারতীয় রপ্তানিকারকরা : ভারতের চাল রপ্তানিকারক ও চাল কলের মালিকরা
রপ্তানি বিধিনিষেধ শিথিল করার উদ্যোগকে স্বাগত
জানিয়ে বলেছেন, তারা আসন্ন দীপাবলি, বড়দিন ও ইংরেজি নববর্ষের
আগে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করবেন।
চাল রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি
বিভি কৃষ্ণ রাও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে চালের চাহিদা বেশি। রপ্তানি
বিধিনিষেধের কারণে হারানো
অর্ডার ফিরে পাওয়ার
বিষয়ে আমরা আশাবাদী।
ইন্ডিয়ান রাইস এক্সপোর্টার্স ফেডারেশনের
ভাইস প্রেসিডেন্ট দেব গর্গ বলেন, সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দেওয়ায় ভারতীয়
কৃষক ও রপ্তানিকারকরা বিশ্ববাজারে তুলনামূলক
সস্তায় চাল বিক্রি
করতে পারেননি।
নয়াদিল্লিভিত্তিক রপ্তানিকারক রাজেশ পাহাড়িয়া
জৈনের মতে, ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে চাল রপ্তানি বাড়বে।
আগামী মার্চের মধ্যে চালান ২ কোটি ২০ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।