জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম
কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে পদত্যাগ করতে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন
দলের নেতা-কর্মীরা। অন্যথায় দলের চেয়ারম্যান-মহাসচিবকে অপসারণ করে কাউন্সিলের
মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
রাজধানীর বনানীতে
দলটির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন দলের নেতা-কর্মীরা। এ সময় তারা
কার্যালয়ে ঢুকতে গেলে বাধা দেয় পুলিশ। পরে কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন
দলের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য
সাহিদুর রহমান টেপা।
লিখিত বক্তব্যে সাহিদুর রহমান টেপা বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, জাতীয়
পার্টিকে এতটা বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দেওয়া এবং নির্বাচনে ভরাডুবির দায়িত্ব নিয়ে পার্টির
চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পদত্যাগ করে তাদের সম্মান রক্ষা করবেন। কিন্তু সেই বোধোদয়ও তাদের
হয়নি। আমরা পার্টির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের মনোভাব জানতে পেরেছি। তারা পার্টির চেয়ারম্যান
জি এম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে তাদের পদ থেকে অপসারণ চান।
তিনি আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে রক্ষা করা
এবং পার্টির ঐক্য বজায় রাখার জন্য আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জি এম কাদের এবং মুজিবুল হক
চুন্নুকে তাঁদের পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। এরপর তাঁরা তাঁদের পদ থেকে অপসারিত বলে
বিবেচিত হবেন। এই পর্যায়ে গঠনতান্ত্রিকভাবে পার্টিতে একজন ভারপ্রাপ্ত বা নির্বাহী চেয়ারম্যান
এবং ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিয়োগ করে জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী
কমিটি গঠন করা হবে।
দলের এই সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য
সাহিদুর রহমান টেপা বলেন, ‘এখন একান্ত প্রয়োজনে কিছু রদবদল
ছাড়া পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্য পদে অধিষ্ঠিত নেতৃবৃন্দ স্বপদে বহাল থাকবেন।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের মনোনয়নদানে যেসব অনিয়ম,
দুর্নীতি, অর্থ কেলেঙ্কারি হয়েছে এবং ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানের জন্য একটি
তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। জাতীয় পার্টির যেসব প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে আসতে
বাধ্য হয়েছেন, ভবিষ্যতে তাঁদের মূল্যায়ন করা হবে।
নেতৃত্বের ব্যর্থতার
কারণে নির্বাচনে জাতীয় পার্টির চরম ভরাডুবি হয়েছে উল্লেখ করে টেপা বলেন, ‘জাতীয়
পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে প্রার্থী মনোনয়ন প্রশ্নে মতানৈক্য সৃষ্টি হওয়ায় পার্টির
প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ নির্বাচন থেকে বিরত ছিলেন। কিন্তু তিনি পার্টির মধ্যে
বিভক্তি করতে দেননি। অথচ পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের গত চার বছরে তাঁর
সাংগঠনিক দুর্বলতা, রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা ও অদক্ষতার কারণে জাতীয় পার্টিকে ধ্বংসের
শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছেন। তারই প্রতিফলন ঘটেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। পাটির
প্রার্থীদের সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা, প্রতারণা করা এবং তাদের একপ্রকার পথে বসিয়ে
দেওয়ার জন্য পার্টির দুই শতাধিক প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন। সরকারের কাছে
ধরনা দিয়ে ২৬টি আসনে সমঝোতা করে সেখানেও ভরাডুবি হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে দলের
কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘দলের নেতা-কর্মীরা আজকে ৪৮ ঘণ্টার
আল্টিমেটাম দিয়েছেন। আমরা প্রয়োজনে বর্ধিত সভা করব। আমরা প্রয়োজনে সাংগঠনিকভাবে নিয়মমাফিক
কাউন্সিল আহ্বান করব।
দলের চেয়ারম্যানসহ শীর্ষ নেতাদের প্রসঙ্গে বাবলা বলেন, ‘আমরা শুনেছি তারা টাকা-পয়সা নিয়েছেন। এটা সঠিকভাবে তদন্ত করে আমরা ব্যবস্থা নেব। দলই যদি সঠিক না থাকে, তাহলে আসন পেলাম কি পেলাম না, সেটা প্রশ্ন নয়!