
মাজহারুল ইসলাম মাসুম, সিনিয়র সাংবাদিক, লেখক, ও গবেষক
বহুল পরিচিত পাঁচ তরিকার বিবরণ :
কাদেরিয়া তরিকা
চিশতিয়া তরিকা
নকশবন্দিয়া তরিকা
মোজাদ্দেদিয়া তরিকা
মাইজভান্ডারীয়া তরিকা
তরিকা কি?
তরিকা শব্দটি আরবী তারিক শব্দ
হইতে পরিগৃহীত হইয়াছে, ইহার বাংলা অর্থ হইল পথ, রাস্তা ইত্যাদি। কিন্তু অবশ্যই বুঝিতে হইবে যে, এই পথ কোন সাধারণ পথ নয় বরং মহান আল্লাহ্র নৈকট্য হাসিল করার
নিমিত্তে যে পথ অতিক্রম করা হইয়া থাকে মূলত সেই পথকেই তরিকা বলা হইয়া থাকে। ইসলামী
আধ্যাত্মিক পরিভাষায় তরিকা হইল বেলায়েতের জ্ঞান অর্জন করিতে আল্লাহর অলিগণের
প্রবর্ত্তিত বিভিন্ন সাধন পদ্ধতি আর সে পথটির সিলসিলা হইতেছে নিম্নরূপ:
পবিত্র কোরআনের দিক নির্দেশনা এবং রাসূল সা. ও তাঁহার পবিত্র আহ্লে
বাইত আ.- এর দিক নির্দেশনার আনুগত্য করাই হইতেছে- মহান আল্লাহ্র নৈকট্য হাসিল
অর্থাৎ পরিপূর্ণতায় পৌঁছানোর পথ।
পবিত্র কোরআনে বলা হইয়াছে:
“লাকাদ কানা লাকুম ফি রাসুলিল্লাহ্ উসওয়াতুন হাসানাহ্…” ।
অর্থ: আল্লাহ্ রাসূলের মধ্যেই রহিয়াছে তোমাদের জন্য সকল সুন্দরের
আদর্শ।
রাসূল সা. কর্তৃক মদিনা মোনওয়ারাহ্তে তৌহিদ বা এলাহিয়্যাতের শিক্ষা
তথা মারেফাত অর্জনের যে শিক্ষাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল, তাহার পথ চলা শুরু হইয়াছিল পবিত্র কোরআন ও রাসূল সা.-কে আনুগত্যের
মাধ্যমে। হযরত আলী রা. যেহেতু রাসূল সা.-এর একনিষ্ঠ বিশ্বস্ত এবং গোপন ভেদের আমিন
ছিলেন তাই তাঁহার পরে তিনিই দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি এই শিক্ষাকেন্দ্র পরিচালনার
দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন। তিনি স্বীয় জীবদ্দশায় বহু শিষ্য তৈরী করিয়াছিলেন এবং রাসূল
সা.- এর পরে তাঁহার সকল শিষ্যই হযরত আলী রা.-এর শিষ্যে পরিণত হইয়াছিলেন।
হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা সা.- কে সূফীগণ প্রথম ও শ্রেষ্ঠ পীর বলিয়া
অভিহিত করেন এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানের মূল উৎস বলিয়া মনে করেন। সেই জন্য হযরত রাসূলে
করীম সা. হইতেই সমস্ত তরিকার উদ্ভব।
হযরত নবী করীম সা. তাঁহার বিশেষ কিছু সাহাবীকে মিনহাজ বা তাসাওউফ
বা তত্ত্ব দর্শন শিক্ষা দান করিয়াছেন। তাঁহাদের উল্লেখ যোগ্য হইলেন - হযরত আবু বকর
সিদ্দিক রা., হযরত ওমর ফারুক রা., হযরত আলী রা., হযরত সালমান
ফারসী রা., হযরত আবু জর গিফারী রা., হযরত আবু হোরায়রা রা., হযরত আবু আইয়ুব আনসারী রা., হযরত মিকদাদ রা., হযরত আম্মার
ইবনে ইয়াসির রা., হযরত মাআ’জ রা. প্রমুখ।
হযরত আবু বকর রা.-এর মাধ্যমে বর্তমানেও দুইটি তরিকার অস্তিত্ব
পাওয়া যায়।
এই তরিকা দুইটি হইল: নকশবন্দিয়া ও মুজাদ্দেদিয়া।
হযরত ওমর রা.-এর মাধ্যমে প্রচারিত তরিকার বর্তমানে কোন অস্তিত্ব
নাই। হযরত সালমান ফারসী রা. ইয়ামেন অঞ্চলে তরিকত প্রচার করিতেন। নকশবন্দিয়া ও
মোজাদ্দেদিয়া তরিকার শাজারা মোবারকেও তাঁহার নাম রহিয়াছে।
হযরত আলী রা.-এর মাধ্যমে প্রচারিত তরিকার উপর ভিত্তি করিয়াই কাদেরিয়া, চিশতিয়া ও মাইজভান্ডারীয়া তরিকা সহ বিভিন্ন তরিকা ও উপ-তরিকা বর্তমানে বিদ্যমান রহিয়াছে। তাঁহার প্রচারিত তরিকা প্রধানতঃ তাঁহার পুত্রদ্বয় হযরত ইমাম হাসান রা. ও হযরত ইমাম হোসাইন রা. এবং বিশিষ্ট তাবেঈন হযরত হাসান বসরী রহ.-এর মাধ্যমে প্রচারিত হইয়াছে।
বিভিন্ন তরিকার নিয়ম-কানুন, আধ্যাত্মিক সুলুক ও তালিম সু-সংগঠিত ও সু-সংবদ্ধ হয় খৃষ্টীয় দশম
শতাব্দীর দিকে। ইহার পূর্বে সূফীগণের আধ্যাত্মিক অনুশীলন মুখে মুখে চলিয়া
আসিতেছিল। এই সময় (১০ম শতাব্দীতে) আধ্যাত্মিক সাধনার সু-বিখ্যাত কুতুব ও
প্রৌজ্জ্বল পীর-মোর্শেদগণ বিভিন্ন তরিকা প্রতিষ্ঠা করেন। এই সকল সূফী-পীর স্বীয়
তরিকার ইমাম ও কুতুব হিসাবে পরিগণিত। কাল-কালান্তরে হযরত আবু বকর সিদ্দিক রা., হযরত আলী রা.ও হযরত ওয়াইস করনী রহ.-এর তরিকার উপর ভিত্তি করিয়াই
উল্লেখযোগ্য সূফী-সাধকগণের মাধ্যমে অনেক তরিকা প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। তাঁহাদের সাধন
পদ্ধতির পার্থক্যের কারণেই তরিকার সংখ্যা বৃদ্ধি পাইয়াছে। তরিকা সমূহের সংখ্যা
নির্দিষ্ট করিয়া বলা দুষ্কর। কাহারো মতে, তিন সহস্র বা ততোধিক। এই সকল তরিকার মধ্যে বহু সংখ্যক তরিকা
অবলুপ্ত হইয়া গিয়াছে। প্রায় চারশত তরিকার সন্ধান পাওয়া যায়।
বহুল পরিচিত পাঁচ তরিকার বিবরণঃ
ভারত বর্ষে তিন শতাধিক তরিকার
মধ্যে বহুল পরিচিত তরিকা গুলি হইল - কাদেরিয়া, চিশতিয়া, নকশবন্দিয়া, মোজাদ্দেদিয়া ও মাইজভান্ডারীয়া ।
( চলবে ...........)