রাশেদ আলম :মাহিকে নিয়ে সবাই ট্রল করছে, আমিও প্রথমে বিষয়টি হাস্যকর হিসেবে নিয়েছিলাম। তবে আমার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল হয়েছে৷
বিষয়টি আমার কাছে মনে হয়েছিল অন্যান্য তথাকথিত শিল্পী মানে রিয়াজ, তারিন, ডিপজল বা ফেরদৌসদের মত সেও আওয়ামিলীগের নমিনেশন কিনবে। যদি লটারি লেগে যায় তাইলেই ছক্কা ধরনের ধান্দাবাজী কিছু। ফেরদৌসের লটারি লেগে গেছে, ব্যাস হয়ে গেছে। তারিন, ডিপজল, রিয়াজদের এবার লটারি লাগে নাই, আগামীতে আবার লটারি লাগার আশায় তারা থেকে যাবে।
যদি বাস্তবে বিএনপি-আওয়ামিলীগ নির্বাচন যুদ্ধ হত তবে এইসব ফেরদৌসদের নমিনেশন পাওয়া দুরের কথা নমিনেশন কেনার চিন্তাও এরা করত কিনা সন্দেহ। ২০১৪ সালের নির্বাচন থেকেই এইসব ধান্দাবাজদের একটাই স্বপ্ন নমিনেশন নিব, হাস্যকর তেলবাজি করব যদি নমিনেশন পেয়ে যাই তাইলে তো অটোপাশ এবং লটারি লেগে গেছে । নির্বাচনের মাঠে আসল যুদ্ধে নেমে জয় ছিনিয়ে আনার চেষ্টা বা যুদ্ধ করতে হলে অনেক বড় কলিজা লাগে। আর এখানেই মাহিয়া মাহি আমার ধারণা চেঞ্জ করে দিয়েছে এই কয়দিনে।
মাহি নমিনেশন পায় নাই, কিন্তু সে নির্বাচনকে সিরিয়াসলি নিয়েছে। সাহস করে স্বতন্ত্র দাঁড়িয়ে গেছে শুধু নয় রীতিমতো প্রচলিত প্রার্থীদের মত সারাদিন রাত নির্বাচনী এলাকায় অন্যান্য সিজেন পলেটিক্যাল পারসনদের মত ঝাপিয়ে পরেছে। সাধারণ মানুষের সাথে কথা মিশতেছে, কথা বলতেছে। একজন নাইকা ইমেজের কেউ হুট করে এইভাবে কোন রাজনৈতিক শেল্টার ছাড়া, নিশ্চিত পরাজয় জেনেও চ্যালেঞ্জ নেয়া খুব কম সাহসের নয় কিন্তু।
মাহি ভালো করেই জানে আওয়ামিলীগ থেকে নমিনেশন চেয়ে না পেয়েও সে স্থানীয় আওয়ামিলীগ থেকে কোন সাহায্য পাবে না বরং বাধায় পরবে এবং বাধায় পরতেছেও। যেহেতু মার্কা নৌকা নয় তাই প্রশাসনের সাহায্যও সে পাবে না এইটাও মাহি জানে। তবুও সে নির্বাচনটা সিরিয়াসলি করতেছে। এবার মাহি জয় পাবে না, কিন্তু আগামীতে তার এইসব কাজ অনেক কাজে আসবে বিশেষ করে ২০২৯ সালের নির্বাচনে। তখন আওয়ামিলীগও তাকে নমিনেশন দিবে কিনা তা সিরিয়াসলি দেখতে হবে। এখানেই মাহিয়া মাহী নির্বাচনের আগেই জিতে গেলো।
আমি এই মাহির সিনেমা দেখা দুরের কথা, তাকে নিয়ে কোন আগ্রহও ফিল করি নাই, এটাই স্বাভাবিক। বরং এদের নিয়ে সংবাদ সব সময় বিরক্তি নিয়ে এড়িয়ে যাই কারন বাংলাদেশের সিনেমা নামক অখাদ্য যেসব তৈরি হয় এফডিসির সিনেমা মেইন স্ট্রিম থেকে, তার জন্যে এদের সকলের উপর ক্ষোভ কাজ করে। ফেরদৌস, রিয়াজ, জায়েদ খান,অপু বিশ্বাস, সাকিব, বুবলি,ওমর সানি, মৌসুমি এরা অভিনেতা বা অভিনেত্রী হিসেবে আমার কাছে ভার ছাড়া অন্য কিছু না।
কিন্তু বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রতিদিন মাহির নির্বাচনের জন্যে দৌড়াদৌড়ি ও পরিশ্রমের সংবাদ অনিচ্ছাকৃত হলেও যখন চোখের সামনে আসতেছিল বারবার তখন, দেখতে ও পড়তে বাধ্য হলাম।
আমার মত বাংলাদেশের সিনেমার এইসব নায়ক, নাইকা দুরের কথা এদের সিনেমাতেও যাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই তাদের কাছেও মাহির এই চ্যালেঞ্জ নেয়া, পরিশ্রম করা ইতিবাচক হয়ে দেখা দিচ্ছে। আমাদের মত সাধারণ মাজুষেরাও তাকে জাজ করছে একজন নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে। এইটাই তার সার্থকতা।
নায়ক ফেরদৌস, ক্রিকেটের সাকিবেরা কি নৌকা নমিনেশন না পাইলে স্বতন্ত্র করার সাহস করত? মাশরাফি এবার নৌকা না পাইলে কি নির্বাচন করার সাহস করতো? নিজের পকেটের টাকা খরচ করে, এত শ্রম দিয়ে নিশ্চিত পরাজয় মেনে নিয়েও সাহস করে নির্বাচন এইসব ফেরদৌস, সাকিব এমনকি মাশরাফিরও সাহস হইতো না নিশ্চিত। এরা ফ্রি ফ্রি এমপি হবার জন্যেই এসেছে, রাজনৈতিক কোন আহামরি চিন্তা করে নয়। সেখানে মাহি সাহস করে নিজের টাকায় যুদ্ধে নেমে গেছে।
বহু পুরুষ মানুষকেও দেখছি সারাজীবন রাজনীতি করে, দুনিয়ার ত্যাগ শিকার করেও চ্যালেঞ্জ নেয়ার সাহস করে না। মাথা নিচু করে লাইফ পার করে দেয়। নিজেদের নিজেরা সান্তনা দেয় - আদর্শের জন্যে রাজনীতি করি, পদ পদবির জন্যে রাজনীতি করি না আরও কত কথা। আসলে যে ভিতু সেটা স্বীকার করে না। কত ভাই ব্রাদার দেখছি সেই বিশ বছর থেকে নেতাদের পিছন পিছন ঘুরে তো ঘুরেই। এখনো বলার মত কোন পদ নাই অথবা ভিক্ষা হিসেবে এদিক সেদিক হাস্যকর কিছু কমিটিতে সদস্য পদ পাইছে তাতেই মহা খুশি। আজকেই দেখলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় ভাই নিজের দশ বছর ছোট এক নেতার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে পোস্ট দেয় - আমার নেতা, আমার আদর্শ। অথচ এই নেতা যখন ক্লাস ফাইভে পড়ে, রাজনীতির 'র' জানে না তখন আমার বিশব্বিদ্যালয়ের বড় ভাইটি রাজনীতি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন সেই ক্লাস ফাইভের বাচ্চাও বলে বড় ভাইয়ে আদর্শিক নেতা। চুল দাড়ি পাকায় ফেলছে রাজনীতি করতে করতে, আজকে ডাক দিলেও একটা ছেলে তারজন্যে দশ মিনিট পাশে দাঁড়াবে না। এরা আজীবনই অন্যের পা চেটে বেঁচে থাকার জন্যে জন্ম নিয়েছে।
এখানেই মহিরা ভিন্ন, চ্যালেঞ্জ নিতে জানে। চাইছি নমিনেশন, দেয় নাই তো কি হয়েছে ? নিজের যোগ্যতা নিজেই প্রমান করে দেখাবো।
মাহির মত মানুষদের নিয়ে ট্রল করা সহজ কিন্তু তাদের এইভাবে সাহস করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকে প্রশংসা করা হয়ত কিছুটা কঠিন। তবুও কঠিন চেষ্টাটি করলাম - কারন নিশ্চিত হেরে যাবে জানার পরেও যে যুদ্ধে নামে তাকে আমি সব সময় সাধুবাদ জানাই। সমাজে এইধরনের মানুষেরা নিজেদের অজান্তেও অনেক যোদ্ধা তৈরি করে সমাজের অনেক ক্ষেত্রে অনেক পরিসরে, সমাজ এদের জন্যেই মহিমান্বিত হয়।।
মাহিয়া মাহির জন্য শুভকামনা। ট্রল তো করাই যায়, আসুন না সাধুবাদও জানাই তার পরিশ্রমকে।।