Logo
শিরোনাম
তারেক রহমান লন্ডন বসে বিএনপিকে ক্ষমতায় নিতে পারবেন না! ২০ বছর পর সিএনজিচালিত অটোরিকশার অনুমোদন সোহাগ হত্যার বিচার দাবীতে নওগাঁয় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ মিছিল গুম খুন রাজনীতি বন্ধ করতেই আমরা মাঠে নেমেছি’ - নাহিদ ইসলাম ‎ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যার প্রতিবাদে মাভাবিপ্রবি ছাত্রদলের মিছিল নওগাঁর সাপাহারে দেশে প্রথম বারের মতো “ম্যাংগো ফেস্টিভ্যাল” হচ্ছে গজারিয়ায় পঞ্চম বারের মতো দুটি চুনা কারখানা গুঁড়িয়ে দিল তিতাস স্যার এবং ভাইয়ার প্রতি খোলা চিঠি! শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রশাসন সহ সকল ধরনের দুর্নীতির অবসান চাই ..নাহিদ ইসলাম বালুয়াকান্দীতে সন্ত্রাস,চাঁদাবাজ ও মাদকের বিরুদ্ধে মত বিনিময় সভা

ভালো ঘুম না হলে করণীয়

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ০৯ মে ২০২৩ | হালনাগাদ:সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫ |

Image

কখনো কখনো মনে হতে পারে ঘুমানোর জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। কিন্তু তারপরও ঘুম হচ্ছে না। এমনটা অনেকেরই হয়ে থাকে। তবে এ থেকে পরিত্রাণের বিভিন্ন সুযোগ রয়েছে।

জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক খবরে বলা হয়েছে, আধুনিক প্রযুক্তির ফলে মস্তিষ্কে উঁকি মারতে পারি আমরা। মাথার খুলির ওপর ইলেকট্রোড মস্তিষ্কের তরঙ্গ নথিভুক্ত করতে পারে। একই সঙ্গে পেশির টান, নড়াচড়া ও নিশ্বাস-প্রশ্বাসও রেকর্ড করা হয়।

একজন মানুষ ঘুমিয়ে পড়ার প্রতি ১০০ মিনিট পরপর শুরুতে কম গভীর, এরপর গভীর এবং শেষ পর্যায়ে স্বপ্নের ঘুমে আচ্ছন্ন হয়। প্রতি একরাতে এ রকম চক্রের কয়েকবার পুনরাবৃত্তি হয়ে থাকে।

ঘুম বিজ্ঞানী আলিনে লিপ্স বলেন, ভালো ঘুম ও খারাপ ঘুমের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারার জন্য শেষে এক হিপনোগ্রাম বিশ্লেষণ করা হয়। এতে গুমের ধরণ সম্পর্কে জানা যায়। রাতে ঘুমের পর্যায়ের ধরনও শনাক্ত করা হয়। সেখান থেকে রাতে গভীর ঘুমের পর্যায় কতটুকু যথেষ্ট ছিল, সেটি স্পষ্ট বোঝা যায়। হালকা ঘুমের জন্য শরীর চাঙা হয়ে না উঠলে, এর কারণ সম্পর্কেও জানা যায়। আর রাতে যদি ভালো ঘুম না হয় তাহলে দিনে এর প্রভাব পড়ে।

কোলবালিশ: অধিকাংশ মানুষ পাশ ফিরে ঘুমাতে পছন্দ করেন। এ কারণে দুই হাঁটুতে ঘষা লাগে এবং পশ্চাৎদেশ কাত হয়ে থাকে। ফলে হাঁটুতে ব্যথা হয়ে থাকে। চিকিৎসকরা দুই হাঁটুর মাঝে ছোট একটি বালিশ কিংবা কোল বালিশ রাখতে বলে থাকেন। এতে পশ্চাৎদেশের অবস্থান ঠিক থাকে এবং হাঁটুতে ঘষা লাগে না।

তোশকের অবস্থান পরিবর্তন করা: ভালো ঘুমের জন্য তোশকের অবস্থান ঠিক হওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এতে ঘুমানোর সময় তিন আঙুল পরিমাণ ব্যবধান থাকলে সেটি আরামদায়ক হয় না। এ কারণে প্রতি ছয় মাসে একবার করে তোশক উল্টানো উচিত। আবার ঘাড়ে বা শরীরে যদি কখনো ব্যথা হয়, সেক্ষেত্রে তোশক উল্টিয়ে দেয়া ভালো।

আকস্মিক শব্দ: রাতে ঘুমানোর সময় কিছু শব্দ ঘুমে বাধা হতে পারে। যেমন হঠাৎ রেলগাড়ি বা উচ্চশব্দে সাউন্ডবক্স বাজানোর কিছু শব্দ। যদি এ শব্দ প্রতিদিন একই সময়ে হয়, তাহলে অনেকে অভ্যস্ত হয়ে যান এর সঙ্গে। হঠাৎ বিড়াল বা কুকুর ডেকে উঠলেও ঘুম ভেঙে যায়। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে একটি অডিও রেকর্ড চালানো। যাতে করে নির্দিষ্ট কিছু শব্দ তরঙ্গ প্রবাহিত হয়।

বাতি বন্ধ করা: রাতে ঘুমানোর আগে ঘরের বাতি বন্ধ করা একটি জরুরি বিষয়। ঘুমের জন্য মেলাটোনিন হরমোনের প্রয়োজন হয়। তাই ঘুমানোর অন্তত আধা ঘণ্টা আগে বাতি নিভিয়ে দেয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে ডিজিটাল ডিভাইস যেমন মোবাইল ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ ইত্যাদি বন্ধ রাখা উচিত।

অতিরিক্ত খাওয়া: গবেষণা অনুসারে, অতিরিক্ত খাওয়ার পরে কখনোই ভালো ঘুম হয় না। কারণ, অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে পাকস্থলী এতটাই ভরা থাকে যে, মস্তিষ্ক তখন দুঃস্বপ্নের জন্ম দিয়ে থাকে।


আরও খবর

পাউরুটি খেলে কী হয়?

শুক্রবার ২৭ জুন ২০২৫




সুলতানি যুগের সমাজ ও সংস্কৃতিতে সুফিবাদের প্রভাব

প্রকাশিত:রবিবার ১৫ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫ |

Image

মাজহারুল ইসলাম মাসুম. সিনিয়র সাংবাদিক, লেখক, গবেষক :

সুলতানি শাসনকালে ভারতবর্ষের দুটি মৌলিক সংস্কার আন্দোলন হয়েছিল ভক্তিবাদ যখন হিন্দু ধর্মের পরিবর্তন আনতে সচেষ্ট হয়েছিল ঠিক সেই সময়েই মুসলিম ধর্মে সুফিবাদ নামে একটি উদারনৈতিক সংস্কার আন্দোলন শুরু হয় বলাবাহুল্য 'সুফীনামের উৎপত্তি নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে ) 'সাফা' বা 'পবিত্রতা' শব্দ থেকে এর উৎপত্তি হতে পারে ) 'সাফ' বা সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়ানো কথাটি থেকে সুফী কথাটি এসে থাকতে পারে ) 'সুফা' থেকে সুফী শব্দটি এসে থাকতে পারে একটি মতানুযায়ী হজরত মহম্মদ কর্তৃক মদিনায় প্রতিষ্ঠিত মসজিদের বাইরে যারা উপাসনা করেছিলেন তারাই নাকি সুফী আবু নাসবাল সাব্বাজ তাঁর গ্রন্থে দাবি করেছেন যে, 'সুফ' বা মোটা পশমের বস্ত্র দ্বারা সুফীরা নিজেদের আচ্ছাদিত করে রাখতেন বলে তাদের সুফী বলা হত জামির মতে ৮০০ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে বুফার আবু হাসিম সর্ব প্রথম সুফী শব্দটি ব্যবহার করেন অউল্ কুরেশীর মতে ৮১১ খ্রিষ্টাব্দে শব্দটি ইরাকে পবিত্র মানুষদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা শুরু হয় এবং পঞ্চাশ বছরের মধ্যে সমগ্র মুসলিম সমাজের আধ্যাত্মবাদীদের বোঝাতে সুফী শব্দটি ব্যবহার করা হতে থাকে

সুফী নাম করণের উৎপত্তি ও প্রেক্ষাপট নিয়ে বিতর্ক থাকলেও একথা বলা যায় যে, ইসলামের মধ্যে থেকেই সুফীবাদের জন্ম ইউসুফ হুসেন লিখেছেন যে ইসলামের বক্ষদেশ থেকে সুফীবাদের জন্ম ইসলাম ধর্মের সূচনা কাল থেকেই একশ্রেণীর অতীন্দ্রিয়বাদী মুসলিম ছিলেন যারা পরবর্তীকালে সুফী নামে পরিচিত হন ইসলামের শান্তি দূত সূফীদের ব্রত ছিল অন্ধকারের দেশ 'দার-উল-হার্বকে বিশ্ববাসীর দেশ 'দার-উল-ইসলাম' এ পরিনত করা তাঁর মতে সুফীবাদ ইসলাম ধর্মের একটি অংশ এ বিষয়ে সন্দেহ নেই তফাৎ এই যে, গোঁড়া মুসলমানরা ধর্মাচরণের উপর জোর দেন কিন্তু সুফীরা গুরুত্বদেন অন্তরের শুদ্ধতাকে গোঁড়াপন্থীরা বিশ্বাস করেন যে, ঈশ্বরের করুনা লাভের জন্য ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান নিখুঁত ভাবে পালন করা উচিত 

সুফীরা মনে করেন যে প্রেম ও ভালোবাসার মধ্যে দিয়েই ঈশ্বরের কাছে পৌছানো সম্ভব প্রখ্যাত মুসলিম ধর্মবিদ জাকারিয়া আনসারী লিখেছেন সুফীবাদ শিক্ষাদেয় অনন্ত শান্তি লাভের জন্য কিভাবে আত্মাকে শুদ্ধ করতে হয়, নৈতিক মান উন্নত করতে হয় এবং ব্যবহারিক জীবনে আচরণ করতে হয় এর মূল বিষয় হল আত্মার শুদ্ধি এবং প্রধান লক্ষ্য হল স্বর্গীয় আশীর্বাদ লাভ করা ইসলামের অগ্রগতির যুগে সুফী সন্তরা শান্তি ও মানবতাবাদের কথা প্রচার করে বিজীত মানবগোষ্ঠীকে ইসলামের প্রতি আগ্রহী করে তোলেন

ইউসুফ হুসেন সুফীবাদকে ইসলামের নিজস্ব সম্পদ বলে দাবী করলেও সুফীবাদের উপর অন্যান্য ধর্ম মতের প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না সুফীবাদকে একটি জটিল প্রক্রিয়া বলে অভিহিত করে ঐতিহাসিক তারাচাঁদ বলেছেন কোরান ও মহম্মদের জীবন কেন্দ্রিক সংকীর্ণ প্রবাহ বহুদেশের বহু পথ ও মতের সঙ্গে মিলিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে সুফী মতবাদ পাশ্চাত্যের খৃষ্টধর্ম ও নবপ্লেটোবাদ প্রাচ্যের হিন্দু ও বৌদ্ধ ভাবাদর্শ পারস্যের জরাথ্রুষ্টীয় মতবাদ অদ্বৈতবাদ সুফীবাদ গঠনে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেছে . এস. শীবাস্তবও মনে করেন যে ঈশ্বরকে ভালোবাসা, শান্তি ও অহিংসা, উপবাস ও শরীরের প্রতি নিগ্রহ যা সুফীরা অনুসরণ করে তা হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন মতবাদ থেকে গ্রহণ করা সতীশচন্দ্র উল্লেখ করেছেন যে, ইসলামের আবির্ভাবের বহু আগে থেকেই মধ্য এশিয়ার বৌদ্ধধর্ম প্রচলিত ছিল পাশাপাশি ইসলামের আবির্ভাবের পরেও হিন্দু যোগীরা পশ্চিম এশিয়ায় যেতেন, বুদ্ধির বহু কাহিনী ইসলামের লোকগাথায় প্রচলিত ছিল এই সকল তথ্যের ভিত্তিতে সতীশচন্দ্র অনুমান করেছেন যে বৌদ্ধ ও হিন্দু যোগ সাধকদের ধর্মচারণ পদ্ধতি সম্বন্ধে সুফীরা পরিচিত হন এবং কালক্রমে সেগুলিকে গ্রহণ করেন

বস্তুতপক্ষে সুফীবাদ হল একজন মুসলমানের ব্যক্তিগত স্তরে আল্লাহর জীবন উপস্থিতির অনুভূতি ১১৬৫-১২৪০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেকার সময় শেখ মহীউদ্দিন ইবনুল আরবী তত্ত্ব প্রচার করেন যার অর্থ স্রষ্টা বাহক এবং সৃষ্টি বা খালক এক এই বিশ্বের দৃশ্যমান বৈচিত্র্য বা বিভিন্নতা একই ঈশ্বরের নানামুখী প্রকাশবলা বাহুল্য শঙ্করাচার্যের অদ্বৈতবাদে এরূপ এক ও অভিন্ন ঈশ্বরের কথা বলা হয়েছে উপনিষদে বলা হয়েছে যা কিছু বিরাজমান বা যা কিছু দৃশ্যমান সবই ব্রম্ভ। শ্রীমদ্ ভাগবত গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন সর্বধর্ম পরিত্যজ্য মামেকং শরনং ব্রজ অর্থাৎ সবকিছু করে ঈশ্বরকে স্মরণ করতে হবে এটাই মহীউদ্দিনের "complete detachment from the world." অলবেরুনী মনে করেন যে, সুফীবাদের আত্মা সম্পর্কিত মতবাদ পতঞ্জলির যোগসূত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল ত্রয়োদশ শতাব্দীর বিখ্যাত সুফী সাধক শেখ নিজামুদ্দিন আউলিয়া নাথ যোগীকৃত মানবদেহের বিভাজন মেনেনেন এই মতানুসারে মানবদেহের দুটি অংশ মাথা থেকে নাভি পর্যন্ত অংশ হল আধ্যাত্বিক শিবের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং পবিত্র নাভির নিম্নে দেহের অবশিষ্ট অংশ শক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত এবং অপবিত্র প্রায় অনুরূপভাবে সুফী সন্ত শেখ নাসিরউদ্দীন চিরাগ--দেহেলি হিন্দু যোগীদের শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেছিলেন কাজেই সুফী মতবাদের সঙ্গে ভারতীয় হিন্দু তথা বৌদ্ধ ধর্মের স্বাদৃশ্য কোনভাবে অস্বীকার করা যায় না

সুফী দর্শনে পীর বা গুরুর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঈশ্বরের সঙ্গে আত্মার মিলনের জন্য মুরিদ বা শিষ্যকে পীর সঠিক পথ ও পদ্ধতির সন্ধান দেন একটি মতানুসারে একজন সুফী সাধনার দশটি স্তর অতিক্রম করলে তবেই ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করতে পারে এই দশটি স্তর হল i) তত্তবা বা অনুশোচনা, ii) ওয়ারা বা নিবৃত্তি, iii) সবর বা সহনশীলতা অর্জন, iv) শূকর বা কৃতজ্ঞতা প্রদর্শন, v) সুফ বা অন্যায়ের প্রতি ভীতি, vi) রজা বা আল্লাহর করুণা লাভের ইচ্ছাvii) তত্তয়াস্কুল বা আনন্দে বিষাদে অচঞ্চল থাকা, viii) রিজা বা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে আত্মসমর্পণ করা ভক্তিবাদী সাধকদের মত সুফীরা ও পার্থিব জগতের সাথে সম্পর্ক শূন্য থাকাকে আবশ্যিক বলে মনে করতেন সুফীদের একাংশ বিবাহ করে সাধারণ সংসার জীবন যাপন করলেও অধিকাংশই পীরের নেতৃত্বে নির্জন স্থানে খানকা বা দরগায় বসবাস করতেন এবং ইসলামীয় শাস্ত্র চর্চা করতেন শিক্ষাদীক্ষা ছাড়াও দরগাগুলি দরিদ্রকে অন্নদান ও চিকিৎসার কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হত কোন কোন সুফী পন্ডিত জমিতে চাষাবাদ করলেও সুফীরা জীবিকা নির্বাহের জন্য মূলত মানুষের অযাচিত দানের উপরেই নির্ভর করতেন সুফীরা মূলত দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল যারা ইসলামী আইন কানুন বা শরা অনুসরণ করতেন তাঁরা ছিল শরা, সংখ্যালঘিষ্ঠ অংশ কোন ধরনের নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ না থেকে মুক্তভাবে অন্তরের বিকাশে আস্থাবান ছিলেন এদের বলা হত বেশরা ভারতে প্রথমোক্ত গোষ্ঠীই অধিক প্রভাব বিস্তার করেছিল

প্রথম পর্বের প্রখ্যাত সুফী সাধকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বসরার মহিলা সুফী রাবেয়া (অষ্টম শতকএবং মনসুর বিন হল্লাজ (দশম শতক) তাঁরা প্রচার করেন সর্বভুতেই ঈশ্বরের সাথে মানুষের মিলন সম্ভব, স্রষ্টা ও সৃষ্টি সম্পর্কে এই অভেদ ধারণা গোড়াপন্থীদের ক্ষুব্ধ করে এবং তা শিয়া ও সুন্নী উভয় সম্প্রদায়ই সুফীদের বিরুদ্ধাচারণ করে শেষ পর্যন্ত আরবীয় দার্শনিক আল গজালী (১১০৫-১১১২সুফীদের অতীন্দ্রিয়বাদ ও ইসলামের গোঁড়া মতবাদের মধ্যে একটা সমন্বয় সাধনের কাজে কিছুটা সফল হয় তিনি ইসলামের রহস্যবাদকে অধিবিদ্যামূলক ভিত্তি দেন এবং যুক্তি দ্বারা প্রমাণ করেন যে অতীন্দ্রিয়বাদ যুক্তিসম্মতসুফী মতবাদের বিবর্তনে বায়াজিদ বুষ্টামি নামে জনৈক পার্শিয়ান ধর্ম প্রচারকের নাম খুবই প্রশিদ্ধ তিনি ঈশ্বরীয় অনুভূতিতে আবেগ ও অতীন্দ্রিয় ভাববাদ আরোপ করেন প্রথম সুফী লেখক আব্দুল্লা-আল মুহসিন বাইবেলের গসপেলের ভঙ্গিতে সুফী মতবাদ প্রচার করেন হূসেন ইবন হানসুর আল হামাজ রচিত 'ইনসান- কমিল', ফরিদউদ্দিন অ্যাটার রচিত তদ কিরত অল আউলিয়া এবং জালাল উদ্দিন রুমি রচিত 'মসনবি' গ্রন্থগুলি সুফী সমাজের উপর ঈশ্বরোপাসনার বিভিন্ন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে

পাঞ্জাবে গজনীর সুলতান মামুদের আগ্রাসনের (১০০০-১০২৭অব্যবহিত কাল পরেই ভারতে সুফী মতবাদ প্রতিষ্ঠিত হয় লাহোরের শেখ ইসমাইল ভারতে সুফীবাদের প্রথম প্রচারক তাঁর অনুগামী শেখ আলি-বিন-উসমান অ্যাল হুজৌরি ভারতে সুফী মতবাদকে জনপ্রিয় করে তোলেন সুফীদের মধ্যে অনেকগুলি উপদল বা সিলসিলাহ তৈরী হয়েছিল আবুল ফজল লিখেছেন যে ভারতে মোট চৌদ্দটি সুফী সম্প্রদায় প্রবেশ করেছিল এগুলির মধ্যে চিস্তি ও সুরাবর্দী সম্প্রদায়ের কার্যকলাপ মূলত সীমাবদ্ধ ছিল সিন্ধু ও উত্তর পশ্চিম ভারতে কিন্তু চিস্তি সম্প্রদায় প্রভাব সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়ে

ভারতে চিস্তি সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন খাজা মইনুদ্দিন চিস্তিলাহোর, দিল্লি এবং মূলত আজমীরে তিনি তার কার্যকলাপ বজায় রেখেছিলেন একজন হিন্দু সন্নাসীর মত তিনি জীবন যাপন করতেন এবং বেদান্ত দর্শনের মতই অদ্বৈতবাদ প্রচার করেন আজমীরে মইনুদ্দিনের (১১৪১-১২৩৫) সমাধি হিন্দু-মুসলমান উভয়ের কাছেই পবিত্র স্থান রূপে গণ্য হয় মইনুদ্দিনের একজন উল্লেখযোগ্য শিষ্য শেখ হামিদউদ্দিন রাজপুতানার নাগাউবে গৃহী জীবনযাপন করতেন এবং হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে সুফীতত্ত্ব প্রচার করেন অপর শিষ্য সেখ কুতুবউদ্দিন সুলতান ইলতুৎমিসের রাজত্বকালে দিল্লিতে দরগা প্রতিষ্ঠা করেন অনুমান করা হয় সঙ্গীতানুরাগী এই সুফী সাধকের স্মৃতিরক্ষার্থেই সুলতান কুতুবউদ্দিন আইবক দিল্লিতে কুতুবমিনারের নির্মাণ শুরু করেছিলেন। মইনুদ্দিনের অপর শিষ্য শেখ ফরিদ বা বাবা ফরিদ (১১৭৫-১২৬৫) বর্তমান পাকিস্তানের অযোধ্যা অঞ্চলে খানকা স্থাপন করেন 

হিন্দু ভক্তিবাদী সাধকদের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি এত উদার ও উচ্চমার্গের ছিল যে পরবর্তীকালে শিখদের আদিগ্রন্থে শেখ ফরিদের বহু পদ উপস্থাপিত হয়েছে বাবা ফরিদের শিষ্য হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া ছিলেন (১২৩৬-১৩২৫চিস্তি সম্প্রদায়ের সর্বাধিক জনপ্রিয় সুফী সাধকআমির খসরু নিজামুদ্দিনের শিষ্য ছিলেন নিজামুদ্দিনের উদা ধর্মনিরপেক্ষতার মতবাদ উলেমাদের ক্ষুব্দ করলেও তাঁর বাণী সারা ভারতে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলনিজামুদ্দিনের শীর্ষ শেখ নাসিরউদ্দিন মামুদ পরবর্তীকালে চিরাগ--দিল্লী নামে পরিচিত হন চিরাগ--দিল্লীর একজন শিষ্য মহম্মদ গেসুদরাজ গুলবর্গায় গিয়ে সুফীবাদ প্রচার করেছিলেন এবং অলৌকিকতাবাদ সম্বন্ধে ত্রিশটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেনপ্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে চিস্তি সম্প্রদায়ভুক্ত সেলিম চিস্তির একান্ত অনুগামী ছিলেন মুঘল সম্রাট মহামতি আকবর চিস্তি সিলসিলার প্রধান কেন্দ্রগুলি ছিল আজমী, নবনৌল, সারওয়ালনাগাউর, হানসী, অযোধ্যা, বাদাউন ইত্যাদি স্থান।

ইরাকের বাগদাদে সুরাবর্দী সিলসিলাহর প্রতিষ্ঠাতা শিহাব উদ্দিন সুরাবর্দী মুলতানের শেখ বাহাউদ্দিন জাকারিয়া আরব দেশে গিয়ে সুরাবর্দীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন এবং মুলতানে এসে খানকা প্রতিষ্ঠা করেনসুরাবর্দী ধর্মাদর্শন প্রচার করেন এই সম্প্রদায়ের অন্যান্য প্রখ্যাত সন্ত ছিলেন সদরুদ্দিন আরিফসৈয়দ জালালউদ্দিন বুখারী প্রমূখ সুরাবর্দী সিলসিলাহ থেকেই পরবর্তীকালে জন্ম লাভ করে ফিরদৌসী ও সাত্তারি তারিখ সিলসিলা যথাক্রমে বিহার ও বাংলায়

চিস্তি ও সুরাবর্দী সম্প্রদায়ের মধ্যে কতগুলি মৌলিক পার্থক্য ছিল চিস্তি সন্তরা নির্জন স্থানে খানকা স্থাপন করতেন এবং সহজ সরল ও কঠোর সংযমপূর্ণ জীবন যাপন করতেন সমাজের হীন দরিদ্র ও অবহেলিত মানুষের জন্য তাদের সাধনগৃহ সর্বদাই উন্মুক্ত থাকত কিন্তু সুরাবর্দী সম্প্রদায় অতিরিক্ত কৃচ্ছসাধনে বিরোধী ছিলেন এঁরা ধর্মসংক্রান্ত বা বিচার বিভাগীয় উচ্চপদে যুক্ত থেকে ধর্ম চর্চা করতেন সমাজের উঁচু শ্রেণীর যোগাযোগ ছিল গরীব মানুষেরা এঁদের খানকায় প্রবেশাধিকার পেতেন না

শেখ মহীউদ্দিনের মতবাদের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে একজন প্রেমিক যেমন প্রেমিকার জন্য উদগ্রীব হয় একজন সুফীও সবকিছু ভুলে ঈশ্বরের সান্নিধ্যেরর জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। সুফীরা মানবসেবা, দরিদ্র নিরামিষ খাদ্য, শান্তি, মৈত্রী ও অহিংসাব্রতকে অন্তরের সঙ্গে পালন করে ভারতে সনাতন বেদ, উপনিষদ বা ভাগবদ্‌ গীতায় এসব কথা বহুদিন আগে থেকে বলা হলেও নিম্নবর্ণের হিন্দুরা তাঁর বিন্দু বিসর্গও জানতো না উচ্চবর্ণের অবহেলার শিকার হয়ে এই অন্তজ শ্রেণি চরম দারিদ্র, চরম অজ্ঞতা নিয়ে প্রায় মনুষ্যত্বের জীবনযাপন করত ভারতের মধ্যে এই শোষিত দরিদ্র হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে সুফীদের সহজ সরল জীবনযাপন এবং বৈরাগ্য ও উদারতা সহজেই গ্রহণযোগ্য হয়ে  ফীরা এদের শোনালেন ইসলাম ধর্ম প্রেমের ধর্ম এবং ঈশ্বরের কাছে মানুষের কোন ভেদাভেদ নেই হিন্দুদের আকৃষ্ট করার জন্য সুফীরা হিন্দু সাধুদের মত পোশাক পরত এবং আচার-আচরণ পালন করত। তান্ত্রিক ক্রিয়াকলাপের প্রতি সাধারণ ভারতীয়দের একটা গভীর টান আগে থেকেই ছিল সুফী পীর ও দরবেশদের অলৌকিক শক্তি প্রদর্শনের দক্ষতা স্বাভাবিক কারণেই সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করে তোলে অনেকেই পীরের দরগায় নিয়মিত আসতে শুরু করে এবং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে হিন্দু রাজারাও তাদের শাসনাধীন অঞ্চলে সুফীবাদের কার্যকলাপের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে কোন বাধা দান করেন নি ফলে অনুকূল বাতাবরণে সুফীবাদ অতি দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল

মধ্যযুগীয় ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতিতে সুফীবাদের প্রভাব কতখানি পড়েছিল তা আলোচনা করা যেতে পারে সুফীবাদের সার্বজনীন আদর্শ ধর্মীয় উত্তেজনা প্রশমিত করে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ককে সাবলীল করে তুলতে সাহায্য করেছিল ইসলামের সাম্যবোধ ও বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব বোধের আবেদন (সুল -কুলের আদর্শসুফী দর্শনের মধ্যে সবচেয়ে বেশী স্পষ্টরুপে প্রকাশ পায় সুফী দর্শন মুসলিম যুব সম্প্রদায়ের নৈতিক মনোনয়ন ঘটাতে সাহায্য করে সুফিবাদের সাম্য ভাবনা বহু নিম্নবর্ণের হিন্দুকে আকৃষ্ট করলেও প্রচলিত হিন্দু ধর্মের উপর সুফীবাদের প্রত্যক্ষ প্রভাব ছিল নগণ্য ঐতিহাসিক এ. এলশ্রীবাস্তব মনে করেন যে, সুফীরা দীর্ঘকাল ধরে ভারতে তাদের ধর্মমত প্রচার করলেও বৃহত্তর সমাজের উপর তার কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি নিম্নবর্ণের হিন্দু গোঁড়া সুন্নীদের কাছে পাত্তা না পেয়ে সুফী সম্প্রদায়ের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিল এবং তাদের সঙ্গে মেলামেশা করত সাধারণ হিন্দুসমাজ সুফিদের সঙ্গে সুন্নী ইসলামের কোন পার্থক্য খুঁজে পায়নি এবং সুফী মতবাদ যা বলত তাদের ধর্মের ঐশ্বর্যের ক্ষেত্রে তা নিতান্তই নগণ্য বলে হিন্দুরা এদের সংশ্রব এড়িয়ে চলত

ডঃ অনিল চন্দ্র ব্যানার্জি মনে করেন যে, সুফীরা ত্রয়োদশ শতাব্দীর পূর্বে ভারতের নিম্ন বর্ণের কিছুসংখ্যক হিন্দুকে ধর্মান্তরিত করতে সক্ষম হলেও  শতাব্দীর পরে তাদের কর্মকাণ্ড সীমিত হয়ে পড়ে এর কারণ হলো রাজ ক্ষমতায় ক্ষমতাশালী উলেমাদের কর্তৃত্বের ছায়া থেকে তারা নিজেদের স্বাতন্ত্রকে পৃথক রাখতে পারেননি রমেশচন্দ্র মজুমদার এই প্রসঙ্গে বলেছেন যে, মধ্যযুগের ভারতে সুফীবাদের গুরুত্ব খুব একটা বেশি নয় কারণ এই ধর্মমতের প্রভাবে ধর্মান্তরিত সুফী ইসলামের সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য হিন্দুরা হিন্দুদের মত এবং মুসলমানরা মুসলমানদের মতই পার্থক্য বজায় রেখে চলেছিল দুটি ধর্ম যেন একটি নদীর পরস্পর বিপরীত দুই তীর দুই তীরের মধ্যে সুফীরা সেতুবন্ধনের চেষ্টা করলেও তা কার্যকরী হয়নি স্থানীয়ভাবে হয়তো সাময়িক কোন সেতু রচিত হলেও তা চিরস্থায়ী হয়নি অন্যদিকে মুসলিম ঐতিহাসিক ইউসুফ হুসেন মনে করেন যে কোরানের শিক্ষাকে সুফীরা ভারতের মৃত্তিকায় সুপ্রোথিত করেছে। সুফীরা কোরানের মৌলবাদী নীতি থেকে আধ্যাত্ম সাধনার দিকটি পৃথক করে জনমানসে প্রতিষ্ঠা করেছে যাদের হৃদয় মৌলবাদী ভাবনা-চিন্তায় সন্দীহান, তাদের কাছে সুফী মতবাদ ছিল শান্তির  প্রলেপ

ঐতিহাসিক বক্তব্যকে অনুসরণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, হিন্দু সমাজে অবহেলিত নিম্নবর্ণের মানুষ যারা একত্রে উপাসনা বা মুক্তি লাভের উপায় সন্ধানের অধিকার থেকে বঞ্চিত তারাই বা তাদের একটি বৃহৎ অংশ সাম্যবাদী সুফী দর্শনের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিল এছাড়া মধ্যযুগের শিক্ষা ও সাহিত্যের উপর সুফী দর্শনের ও সুফী আন্দোলনের প্রভাব ছিল লক্ষণীয় সুফীদের খানকা বা জামাতখানাগুলি বিদ্যাচর্চা ও জ্ঞানান্বেষণের অন্যতম কেন্দ্র ছিল। অনেক খানকায় নিয়মিত বিদ্যালয় পরিচালন করা হতো সুফীরা হিন্দী ও উর্দু ভাষার সমন্বয়ে হিন্দভী ভাষায় কবিতা রচনা করার ফলে তা সাধারণ মানুষের বোধগম্য হয় এবং হিন্দী ভাষারও শ্রীবৃদ্ধি ঘটে সুফীদের গীত বাউল ধর্মী 'সম' গান ভারতীয় সঙ্গীতকে পুষ্ট করেছিল

ইসলাম ধর্ম তার হিন্দু বিদ্বেষ নিয়ে, মৌলবাদী ধ্যান ধারণা নিয়ে, উলেমাদের অপ্রতিহত ক্ষমতার দম্ভ নিয়ে, জিম্মি বা অমুসলমানদের উপর জিজিয়া প্রয়োগ নিয়ে যখন ভারতে তার রাজকীয় দীপ্তি ও মহিমা নিয়ে উপস্থিত হয়েছিল, হিন্দুরা ও তাদের প্রতি অত্যাচারের ক্ষত বুকে নিয়ে তাদের ধর্ম ও সমাজকে রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর হয়ে সুকঠীন মৌলবাদী চিন্তার মধ্যে নিজেদের আবদ্ধ রেখেছিল। এই ধর্মীয় ঘাত প্রতিঘাতের কালপর্বে ইসলামী ও সুফীবাদ বা হিন্দু ভক্তিবাদ ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে এবং অহিংসার মন্ত্রে সকলকে বাঁধতে চেয়েছিল। এই আঙ্গিকে বিচার করলে সুফীবাদ ইসলামের ভারতীয় করন করার প্রচেষ্টা চালিয়ে ছিল মানুষের ওপর বল প্রয়োগ করে নয়, মানুষের হৃদয় জয় করেছে ভালোবাসার উদারতার দানকার্য ও সমাজ সেবার মাধ্যমে যার ফলশ্রুতি হিসেবে গোঁড়ামী, রক্ষণশীলতা, জাতিভেদ সাম্প্রদায়িকতার পরিবর্তে সহিষ্ণু এবং সমন্বয় মূলক সংস্কৃতির বিকাশ


আরও খবর

কারবালার ৭২ জন শহীদের নাম

রবিবার ০৬ জুলাই ২০২৫




দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদে একমত সব দল

প্রকাশিত:সোমবার ৩০ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫ |

Image

দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। তবে আনুপাতিক পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণে দ্বিমত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি একথা জানান।

আলী রীয়াজ বলেন, প্রাপ্ত ভোটের মাধ্যমে সংখ্যাানুপাতিক পদ্ধতিতে ভোট করার জন্য অধিকাংশ দল মতামত দিয়েছে। কিছু কিছু দল এ বিষয়ে সুস্পষ্ট আপত্তি জানিয়েছে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নীতিগতভাবে একমত। কোনো কোনো দল সামান্য কারণে আপত্তি জানিয়েছে। সব রাজনৈতিক দল যেহেতু দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনে নীতিগতভাবে আগ্রহী, সেক্ষেত্রে ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে একমত হতে পারবো। যেসব দলের এ বিষয়ে আপত্তি আছে তারা জানিয়েছে তারা আবারও এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে।

তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশন থেকে প্রস্তাব করা হয়েছিল জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন করার জন্য। প্রস্তাবের পর অনেক রাজনৈতিক দল এই প্রস্তাব সমর্থন করছে না। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কমিটি নামে নতুন কমিটির প্রস্তাব করেছিলাম। সেখানে এনসিসির যেসব দায়দায়িত্ব ছিল, তা সীমিত করে কাঠামোগত দিক পরিবর্তন করা হয়। যেসব রাজনৈতিক দল কমিটিকে স্বাগত জানিয়েছিল তারা এর বিস্তারিত জানতে চেয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে আজ নতুন কাঠামোগত দিকের প্রস্তাব তুলে ধরেছি।

সাংবিধানিক সংবিধিবদ্ধ নিয়োগ প্রতিষ্ঠান কমিটি কোন কোন কমিশনে নিয়োগ দেবে তা উল্লেখ করে আলী রীয়াজ বলেন, নিয়োগ কমিটি সুনির্দিষ্টভাবে ৬ কমিশনের প্রধান ও সদস্য নিয়োগ এবং আইনের দ্বারা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও সদস্য নিয়োগের ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠান কাজ করবে। এগুলো হচ্ছে নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকারি কর্ম-কমিশন, মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং তথ্য কমিশন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন মনে করে এই কমিশনগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং দেশে একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

কমিটির সদস্য কারা হবেন জানিয়ে তিনি বলেন, কাঠামোগত দিক থেকে চিন্তা করে বলেছি- যখন সংসদ বহাল থাকবে তখন কমিটি কীভাবে কাজ করবে সেটা বলেছিলাম। তারমধ্য প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার; যদি উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে উচ্চকক্ষের স্পিকার, বিরোধীদলের নেতা ও অন্য বিরোধী দলগুলোর নির্বাচিত একজন প্রতিনিধি।

আলী রীয়াজ আরও বলেন, এর আগে এনসিসিতে আমাদের প্রস্তাব ছিল- রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির অন্তর্ভুক্তি। সেটা যেহেতু অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি, সেজন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সেখান থেকে সরে এসে প্রস্তাব দিয়েছিল রাষ্ট্রপতির একজন প্রতিনিধি আমরা সুনির্দিষ্ট করেছি। আমরা বলেছি সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তি ও প্রজাতন্ত্রের কর্মে লিপ্ত এমন ব্যক্তি নয়, মনোনয়নের পূর্বে ১০ বছর কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নয় বা কোনো সংগঠনের সদস্য নয় এমন ব্যক্তি রাষ্ট্রপতির প্রতিনিধি হতে পারবেন। প্রধান বিচারপ্রতির প্রতিনিধির ক্ষেত্রে আমরা বলেছি তার মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি। কাঠামোগত দিক থেকে এটাই আমরা প্রস্তাব করেছি। নিম্নকক্ষের স্পিকার এতে সভাপতিত্ব করবেন।

তিনি বলেন, আলোচনায় একটি বিষয় আসছে- যখন সংসদ বহল থাকবে না, তার মানে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকবে তখন কী হবে? আমাদের দিক থেকে প্রস্তাব ছিল এটা অব্যাহত রাখার। আলোচনা যেটা স্পষ্ট হয়েছে, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল যারা এই কমিটিকে সমর্থন করে তারা মনে করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকলে এই কমিটি বহাল রাখার প্রয়োজন নেই। প্রশ্ন ওঠে ওই সময় নির্বাচন কমিশনে কীভাবে নিয়োগ হবে? আলোচনা করে অনেকে প্রস্তাব করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে সীমিতভাবে (ক্ষমতা) দেওয়া যায়। অন্য কমিশনে নিয়োগের ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়কের হাতে ক্ষমতা থাকবে না।


আরও খবর



কুড়িগ্রামে ইসলামীআন্দোলন বাংলাদেশ এর গণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

প্রকাশিত:শনিবার ২১ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫ |

Image

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কার গণ হত্যার বিচার এবং সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে  ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কুড়িগ্রাম জেলার আয়োজনে আজ শনিবার বিকেলে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে গণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় । 


এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই।

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন দখলদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন, খুনিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন, মানুষের অধিকারকে প্রতিষ্টিত করার আন্দোলন হবে ইনশাআল্লাহ । যে রকম ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিস্টকে এদেশ থেকে তাড়াতে বাধ্য  করেছিলাম,ঠিক তেমনি সকলে মিলে যদি ঐক্যবদ্ধ ভাবে রাস্তায় নামি তাহলে চাঁদাবাজদের উৎখাত করতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ।  

এসময় ইসলামী আন্দোলন কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি আলহাজ্ব মুহাম্মদ শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন,  কুড়িগ্রাম ২ আসনের ইসলামি আন্দোলনের মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক মাওলানা নুরবক্ত প্রমুখ। 

সমাবেশে জেলার বিভিন্ন উপজেলার কয়েক হাজার কর্মী উপস্থিত ছিলেন।



আরও খবর



প্রশংসায় ভাসছে ব্যতিক্রমী গল্পের নাটক 'সম্মান'

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫ | হালনাগাদ:সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫ |

Image

ঈদ মানেই আনন্দ। এই আনন্দের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে প্রচার হয় নানা গল্প আর আমেজের নাটক। যার বেশিরভাগই থাকে হাস্যরস, রোমান্স আর থ্রিলারে ভরপুর। এসবের ভিড়ে আলাদা করে দাগ কাটে ব্যতিক্রমী কিছু কাজ। এবারের ঈদুল আজহায় প্রচার হওয়া তেমনি একটি নাটক 'সম্মান'।

একজন নীতিবান শিক্ষক ও তার প্রতি এক আদর্শ ছাত্রের সম্মান প্রদর্শন করার গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে এ নাটক৷ আকবর হায়দার মুন্নার গল্প অবলম্বনে নাটকটির চিত্রনাট্য করেছেন লিমন আহমেদ। দারুণ মুন্সিয়ানায় নাটকটি পরিচালনা করেছেন জনপ্রিয় নির্মাতা তপু খান।

ক্লাব ইলেভেন এন্টারটেইনমেন্টের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার হওয়া এই নাটকে শিক্ষকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বরেণ্য অভিনেতা তারিক আনাম খান। তার ছাত্রের ভূমিকায় আছেন ফারহান আহমেদ জোভান। এতে জোভানের বিপরীতে জুটি বেঁধেছেন কেয়া পায়েল। মূল তিনটি চরিত্রই মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে দর্শকের মনে।

১৩ জুন প্রচার হওয়া নাটকটি এরইমধ্যে ৫ লাখেরও বেশি দর্শক উপভোগ করেছেন। অদ্ভুত বিষয় হলো ১৬ হাজারেরও বেশি লাইক পড়া নাটকটিতে একটিও ডিজলাইক নেই৷ সাড়ে ৯ শতাদিক মন্তব্যের সবই নাটকটির বাস্তবধর্মী গল্প ও প্রধান তিনটি চরিত্রের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বিশেষ করে শিক্ষক চরিত্রে তারিক আনাম খান ও ছাত্রের চরিত্রে জোভানের অভিনয় দর্শকের মনে দাগ কেটেছে।

নাটকটির প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশ করে নির্মাতা ও লেখক ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন, ‘মুন্না ভাই ও তপু খানের ‘সম্মান’ দেখলাম। দারুণ গল্প। জোভান অভিনেতা হিসেবে তার শতভাগ দিয়েছেন। কেয়া পায়েল সবসময়ই সাবলীল, প্রাণবন্ত। আর যার কথা বলতে একটু আয়োজন করে নিতে হয়, তিনি তারিক আনাম খান। আমি সবসময়ই ওনাতে মুগ্ধ। এখানে কেবল বাড়িয়েছেন সেটা। সব মিলিয়ে ‘সম্মান’ এই ঈদের ভালো নাটকের তালিকার একটি।

ক্লাব ইলেভেন এন্টারটেইনমেন্ট চ্যানেলে নাটকটির মন্তব্যের ঘরে রাফি আহমেদ নামে এক দর্শক লিখেছেন, 'সম্মান নাটকটি এক কথায় বাস্তব জীবনে আমাদের শিক্ষক এবং গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান ও তাদের গুরুদক্ষিণা দেওয়ার পরিপূর্ণ দৃষ্টান্ত প্রকাশ করে।

কৌস্তব সান্ত্রা নামে ভারতীয় এক দর্শক নাটকটি দেখে মুগ্ধতা জানিয়ে লিখেছেন, 'কাঁটাতারের ওপার থেকে এ সম্মান নাটকটি দেখলাম। এই বছর ঈদের সেরা সেরা নাটক এই 'সম্মান' হওয়া উচিত। বাস্তব জীবনে শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা তো এখন আর দেখাই যায় না খুব একটা। আমি বিগত ৭ বছর ধরে বাংলাদেশের নাটকগুলো দেখি নিয়মিত। এক কথায় অসাধারণ।

মিজানুর নামে একজন লিখেছেন, 'হয়ত একদিন জোভান ভাইয়ের মনে থাকবে না এমন একটি নাটকে তিনি অভিনয় করেছিলেন। বর্তমান সময়ে শিক্ষকের প্রতি সম্মান আগের মতো নাই। বর্তমান সমাজটা কেমন একটা হয়ে যাচ্ছে। অসাধারণ সুন্দর একটি নাটক।'

শেখ বিথি নামের এক দর্শক তার ভালো লাগা জানিয়ে লিখেছেন, 'নাটক টা দেখার সময় চোখে পানি চলে এসেছে। শিক্ষকের পেশা সর্বোচ্চ সম্মানের পেশা। আমাদের দায়িত্ব তাদের সম্মান, শ্রদ্ধা করা। ভালো থাকুন আমাদের সব শিক্ষকরা।

আদৃতা নামের এক দর্শক লেখেন, 'এ ধরনের নাটকের জাতীয় পুরস্কার পাওয়া উচিত।

রবিউল ইসলাম নয়ন থাকেন মিশরে। সেখান থেকে নাটকটি উপভোগ করেছেন তিনি। নিজের অনুভূতি জানিয়ে লিখেছেন, 'নাটকটি রিলিজ হবার ১ ঘণ্টা পরই দেখা শুরু করলাম। পুরো নাটকই কান্না করে দেখেছি। এমন সৎ নিষ্টবান শিক্ষকের ছাত্র রাফিরা হাজার বার জন্মাক। তাহলেই আমাদের দেশ থেকে সুদ ঘুষ অন্যায় অবিচার সমাজ থেকে উঠে যাবে।

এ নাটক নিয়ে পরিচালক তপু খান বলেন, 'গতানুগতিক ভাবনার বাইরে গিয়ে একটা কাজ করার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। জানি এ ধরনের কাজগুলো ভিউ কম পায়। তবে সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে আমরা নাটকটি তৈরি করেছি। সে জায়গা থেকে আমরা সফল। শিক্ষকের প্রতি ছাত্রের কতোটা শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত, একজন আদর্শ শিক্ষক কেমন হওয়া উচিত সেই গল্প নিয়ে 'সম্মান' নাটক। যারা নাটকটি দেখেছেন সবাই প্রশংসা করছেন৷ এটাই আমাদের প্রশান্তি। বিশেষ করে তারিক আনাম স্যার, জোভান ও কেয়া পায়েলের অভিনয় সবাইকে মুগ্ধ করেছে৷

নাটকটি পছন্দ করার জন্য দর্শককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারিক আনাম খান, জোভান, কেয়া পায়েলসহ 'সম্মান' নাটকের পুরো টিম৷


আরও খবর



নওগাঁর সাপাহারে দেশে প্রথম বারের মতো “ম্যাংগো ফেস্টিভ্যাল” হচ্ছে

প্রকাশিত:বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫ | হালনাগাদ:সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫ |

Image

শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, সিনিয়র রিপোর্টার :

উত্তরের খাদ্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত জেলা নওগাঁ। নওগাঁয় উৎপাদিত চালের সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। বর্তমানে সেই ধানের পর আমই হচ্ছে নওগাঁর দ্বিতীয় প্রধান ফসল। অপরদিকে বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে খ্যাত জেলার সাপাহার, পত্নীতলা, পোরশা, ধামইরহাট, নিয়ামতপুর উপজেলার প্রধান বাণিজ্যিক ফসলে পরিণত হয়েছে এই আম। এছাড়া অন্যান্য উপজেলাতেও ছড়িয়ে পড়ছে এই আম চাষ। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানিও হচ্ছে নওগাঁর আম।

ইতিমধ্যই নওগাঁর নাকফজলি আম পেয়েছে জিআই সনদ। নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চলের লাল মাটিতে উৎপাদিত সুমিষ্ট, রসালো ও সুস্বাদু আম্রপালি আমের খ্যাতি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবছরই রাজশাহী ও চাঁপাইকে ছাড়িয়ে আম উৎপাদনে এগিয়ে যাচ্ছে নওগাঁ। সেই আমের সুখ্যাতিকে দেশসহ বিশ্বব্যাপী আরো প্রসারিত করতে প্রথমবারের মতো আমের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিতি পাওয়া নওগাঁর সাপাহারে আগামী ১৮ ও ১৯ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী ''ম্যাংগো ফেস্টিভ্যাল ২০২৫''।


“আসুন সাপাহারের রূপালি আমের স্বাদ ছড়িয়ে দেই দেশ-বিদেশে” এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে নিয়ে সাপাহার উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসনের আয়োজনে উৎসবটি বসবে সাপাহার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। উৎসবে থাকবে আম বিক্রয় ও প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন স্টল। ক্রেতারা বিশেষ ছাড়ে আম কিনতে পারবেন। মেলায় থাকবে তাৎক্ষণিক কুরিয়ার সার্ভিস, যার মাধ্যমে দেশ-বিদেশে আম পাঠানো যাবে। থাকবে আম দিয়ে তৈরি নানান খাবারের স্টল, আম চাষিদের প্রোফাইল ও অনলাইন সরবরাহকারীর তথ্যসমৃদ্ধ স্টল। ফেস্টিভালে ১০০ জন অংশগ্রহণকারীর জন্য দুই দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ সেশন আয়োজন করা হবে। প্রশিক্ষণে আমের রোগবালাই প্রতিরোধ, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বিষয়ে আলোচনা হবে। পাশাপাশি আম রপ্তানি এবং বাজার সম্প্রসারণ নিয়ে উন্মুক্ত সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে অংশ নেবেন সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞরা। প্রতিদিন বিকেলে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আম ভিত্তিক ভোজন প্রতিযোগিতা। নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবুল কালাম আজাদ জানান গত ১০ বছরে নওগাঁয় আমের নিরব বিপ্লব ঘটেছে। এমন ম্যাংগো ফেস্টিভ্যাল শুধু নওগাঁর আমকেই নয় দেশের কৃষি খ্যাতকে দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের দৃষ্টি আকর্ষনে পাথেয় হিসেবে কাজ করবে। গত ২২মে থেকে নওগাঁসহ দেশের বাজারে আসতে শুরু করেছে নওগাঁর আম। আর ১৮ জুন থেকে আম্রপালি বাজারে আসা শুরু করেছে। চলতি বছর জেলার ৩০হাজার ৩০০হেক্টর জমির বাগানে আম চাষ হয়েছে। নওগাঁর ঐতিহ্য আম্রপালি, নাকফজলি জাতের আমসহ ব্যানানা ম্যাংগো, মিয়াজাকি, কাটিমন, গৌড়মতি, বারি-৪ আমসহ দেশি-বিদেশি প্রায় ১৬ জাতের আম চাষ করেছেন চাষিরা। যেখান থেকে ৩লাখ ৮৬হাজার মেট্টিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া চলতি বছর ৪হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের আশা করা হচ্ছে। নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর শরিফুল ইসলাম খাঁন জানান, নওগাঁয় প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ম্যাংগো ফেস্টিভ্যালের মাধ্যমে নওগাঁকে দেশ ও বিদেশের মানুষরা নতুন করে চিনবেন এবং জানবেন। এমন উদ্যোগ নি:সন্দেহে স্থানীয় অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে। পাশাপাশি এই মেলার মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্যোক্তাও সৃষ্টি হবে এবং স্থানীয় আমচাষীরা ব্যাপক ভাবে উপকৃত হবেন। এছাড়া এমন আয়োজন নওগাঁর আমকে নিয়ে দেশজুড়ে এক শ্রেণির কুচক্রী ব্যবসায়ীদের গড়ে তোলা মিথ্যে যড়ষন্ত্রকেও ধুলায় মিশে দিতে সক্ষম হবে। এমন প্রশংসনীয় উদ্দ্যোগ ম্যাংগো ফেস্টিভ্যালকে শতভাগ সফল করতে নওগাঁবাসীকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন এই শিক্ষাবিদ।

নওগাঁ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, নওগাঁর ব্র্যান্ড হচ্ছে আম। দেশের অনেক স্থানে নওগাঁর আমকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা নওগাঁর আমকে রাজশাহী ও চাঁপাই বলে বিক্রি করে আসছে। এমন নানা কর্মকান্ডে দেশজুড়ে নওগাঁর আমের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া নওগাঁর আমের প্রতি ব্যবসায়ীদের দৃষ্টি কাড়তে এবং দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভোক্তাদের কাছে নওগাঁর আমের সুখ্যাতির সুনাম আরো প্রসারিত করতে এমন মেলার আয়োজন করা। ইতিমধ্যই জেলার সাপাহার আম বাজার দেশের দ্বিতীয় আমের বাজারের পরিচিতি পেয়েছে। এছাড়া প্রচারেই প্রসার তাই সাপাহারে যে পরিমাণ আম উৎপাদিত হয় তা দিয়ে সারা বছর দেশের আম ভিত্তিক শিল্পকারখানা চলতে পারে। অপরদিকে নওগাঁর আমকে ঘিরে মধ্যস্বত্বভোগীরা আর্থিক ভাবে লাভবান হলেও আম উৎপাদনের কারিগর আম চাষিরা ন্যায্য দাম পাওয়া থেকে থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন বছরের পর বছর। তাই আমের পাশাপাশি আমচাষীরাও যেন লাভবান হোন এবং নতুন করে নওগাঁর আমের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার প্রত্যয় সামনে রেখে এমন আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান জেলার এই প্রধান কর্মকর্তা।


আরও খবর