আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে—
দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ তৈরি হচ্ছে। লঘুচাপের
বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর
পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। বৃহস্পতিবারের (২২ মে) মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর
এবং এ সংক্রান্ত এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। যা ঘনীভূত হয়ে ধাপে ধাপে
ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক
বলছেন, বর্তমান প্রেডিকশন অনুযায়ী— ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ বাংলাদেশ, মিয়ানমার
বা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, উড়িশ্যা অঞ্চলের দিকেই। তবে এর গতিপথ ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হচ্ছে।
প্রতিনিয়ত গতিপথ পরিবর্তন করছে; রাতে একটা গতিপথ থাকছে আবার সকালে আরেকটা। তাই লঘুচাপ
থেকে নিম্নচাপে পরিণত না হওয়া পর্যন্ত এমনই থাকবে। নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। তবে
নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে তখন গতিপথ স্থির হবে। সে সময় স্পষ্টভাবে বলা যাবে, এটা
কোন এলাকায় বা স্থানে আঘাত হানতে পারে।
তিনি বলেন, ২২ মে
লঘুচাপ তৈরি হয়ে; ২৩ বা ২৪ মের মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। ২৪ মে রাতে বা ২৫
মে সকালের দিকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
আবহাওয়ার বিভিন্ন
মডেল বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন,
ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ ২৬ মে সকাল ৬টার পর থেকে রাত ১২টার
মধ্যে বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলা থেকে শুরু করে; চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজার জেলার
মধ্যবর্তী উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করতে পারে।
তিনি আরও বলেন,
ঘূর্ণিঝড় বৃত্তের অগ্রবর্তী অংশ উপকূলীয় এলাকায় প্রবেশ করা শুরু করতে পারে সকাল
৬টার পর থেকে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করার সম্ভব্য সময় ২৬ মে দুপুর
১২টার পর থেকে বিকেল ৬টার মধ্যে। ঘূর্ণিঝড় বৃত্তের পেছন দিকের অর্ধেক অংশ পুরোপুরি
স্থল ভাগে প্রবেশ করতে রাত ১২টা পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।
ঘূর্ণিঝড়টি যদি
জোয়ারের সময় উপকূলে আঘাত হানা শুরু করে তবে বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয়
এলাকাগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে ৫ থেকে ১০ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে জোয়ারের
পানিতে প্লাবিত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে। খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের
উপকূলীয় জেলাগুলোর উপকূলে আঘাতের সময় ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকতে
পারে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার; যা দমকা হাওয়াসহ ঘণ্টায় ১৪০ কিলোমিটার
পর্যন্ত বাড়তে পারে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে
বৃষ্টিপাত শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে ২৪ মে থেকে; যা ২৮ মে পর্যন্ত অব্যাহত থাকার
সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের ওপর মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে ২৫, ২৬ ও
২৭ মে। অপেক্ষাকৃত হালকা পরিমাণে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে; মে মাসের ২৪ ও ২৮
তারিখে। মে মাসের ২৩ তারিখ থেকেই সমুদ্র উত্তাল শুরু হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে
বলেও জানিয়েছেন গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ।
ভারতের আবহাওয়া
অধিদফতর জানিয়েছে— দক্ষিণ পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের অবস্থান
করছে ঘূর্ণাবর্ত। যা পূর্ব বাংলাদেশ ও সংলগ্ন এলাকার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ দশমিক ৫ থেকে
৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার ওপরে রয়েছে। এর বিস্তৃতি ভারতের হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ থেকে বিহার,
গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ হয়ে পূর্ব বাংলাদেশ পর্যন্ত। এছাড়া রেমালের প্রভাবে দক্ষিণ পশ্চিম
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ বলয় তৈরি হতে পারে, যা পরে শুক্রবার নাগাদ নিম্নচাপে পরিণত হতে
পারে।
ভারতের আবহাওয়া অফিস
বলছে— ওই নিম্নচাপ বলয় উত্তর পূর্বে সরে এসে নিম্নচাপ তৈরি করতে পারে। এছাড়াও
এটিই পরে শক্তি বাড়িয়ে নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার মতো অনুকূল পরিস্থিতি সাগরে
ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস ও বিবিসি