মানুষের খাদ্যাভ্যাসে অনিয়ম, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে শরীরে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। আর এমন জীবনযাপন যদি করেন যেমন বেশি শুয়ে বসে থাকা। তারপর কিছু অভ্যাস আছে যেমন ধূমপান, মদ্যপান, জর্দা সেবন এসব কারণে হয়। আর কিছু রোগ রয়েছে কোলেস্টেরলের জন্য দায়ী ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি। আর কিছু ওষুধ আছে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
কোলেস্টেরল এক ধরনের চর্বি। রক্তে ফ্যাটের মাত্রা বেড়ে গেলেই কোলেস্টেরলের সমস্যা শুরু হয়! এর ফলে ধমনীর দেওয়ালগুলোতে মেদ জমতে শুরু করে। ধীরে ধীরে সরু হতে শুরু করে ধমনীগুলো, ব্যাহত হয় রক্ত সঞ্চালন। ধমনী সরু হয়ে গেলে পাকস্থলী, প্লীহা ও যকৃতেও ঠিক মতো রক্ত সঞ্চালন হয় না। অন্ত্রে রক্ত সরবরাহকারী নালিগুলোর পথ মেদের কারণে সরু হয়ে অন্ত্রে পেরিফেরাল আর্টারি ডিসি়জ় হতে পারে। দেহের বিভিন্ন অঙ্গে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত ছড়িয়ে পরে ধমনীর মধ্য দিয়ে। কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে গেলে সেই ধমনীগুলোর ভিতর স্নেহ পদার্থের আস্তরণ তৈরি হয়। ফলে রক্ত চলাচলের পথ রুদ্ধ হয়ে আসতে পারে। একে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘প্লাক’ তৈরি হওয়া। এই ধরনের প্লাক তৈরি হলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত পৌঁছনোয় সমস্যা দেখা দেয়। দেহের প্রান্তিক অঙ্গগুলির ধমনীতে তৈরি হওয়া এই সমস্যাকেই বলে ‘পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ’ বা ‘পিএডি’। অন্ত্রে এই সমস্যা দেখা দিলে সেই অংশের টিস্যুগুলিরও ক্ষতি হয়। এই কারণে রোগীর বারে বারে মলত্যাগের বেগ আসে কিংবা মলের সঙ্গে রক্তপাত হয়। এমনটা কি আপনার সঙ্গেও হয়? তা হলে কিন্তু এটি কোলেস্টেরলের লক্ষণ হতে পারে।
মানুষের শরীরে গুপ্ত ঘাতকের মতো হানা দেয় কোলেস্টেরল। বহু ক্ষেত্রেই আগে থেকে বুঝতে পারা যায় না, কখন রক্তে বেড়ে গিয়েছে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা। আর অজান্তেই যদি খারাপ কোলেস্টেরল বেড়ে যায়, তবে যে কোনও মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে বিপদ। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গিয়েছে কি না, তা বুঝতে রক্তপরীক্ষা করাই সবচেয়ে ভাল উপায়। কিন্তু সব সময়ে পরীক্ষা করানো পর্যন্ত অপেক্ষা করার দরকার হয় না। কিছু উপসর্গ দেখলে বোঝা যায় শরীরে এই রোগ বাসা বেঁধেছে কি না।
একটু সচেতন হলেই বুঝে যাওয়া যায়, কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ছে কি না। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে চোখের কিছু উপসর্গের মাধ্যমে তা ফুটে উঠতে পারে। একে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে জ্যানথেলাসমা। চোখ ও নাকের সংযোগস্থলে ত্বকের নীচে কোলেস্টেরল সঞ্চিত হওয়ার ফলে এই ঘটনা ঘটে। চোখের নীচে বা চোখের পাতায় ব্যথাহীন ফোলা অংশ দেখা দিলে দ্রুত রক্ত পরীক্ষা করান। এতে চোখের কোনও সমস্যা দেখা না দিলেও এটি রক্তে কোলেস্টেরল থাকার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ।
এ ছাড়াও এক চোখে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, চোখ ঝাপসা হয়ে আসা, চোখে ব্যথাও কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ হতে পারে। অনেক সময়ে কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে চোখের রেটিনায় থাকা রক্তবাহে সমস্যা দেখা দেয়। ফলে এই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
চোখের সমস্যা ছাড়াও কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে একাধিক সমস্যা দেখা দেয় দেহে। কিছু দিন ধরে মাঝেমাঝে বুকে ব্যথা হচ্ছে, অথচ ইসিজি রিপোর্টে তেমন কিছু সমস্যা খুঁজে পাননি? এমন হলে এক বার রক্ত পরীক্ষা করিয়ে দেখে নিন রক্তে কোলেস্টেরল প্রবেশ করেছে কি না। আসলে উচ্চ কোলেস্টেরল থাকলে রক্তনালীতে অক্সিজেন সরবরাহ কমে। পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাবে হৃদযন্ত্রে চাপ পড়ে বুকে ব্যথা হতে পারে। কোলেস্টেরল জমলে মস্তিষ্কেও রক্ত সঞ্চালন কমে। এই কারণে ঘাড়ে ও মস্তিষ্কের পিছনের দিকে মাঝেমাঝে একটানা ব্যথা হয়। এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে অবিলম্বে সতর্ক হতে হবে।