মাজহারুল ইসলাম মাসুম, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলাম লেখক ঃ
এ যুগে ‘আত্মবিশ্বাস’ বিষয়ক বই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি লেখা ও বিক্রি হচ্ছে । যে সমাজ হিংসা, রেষারেষি, প্রতিযোগিতা, শ্রেষ্ঠত্ব, ‘টাকাই সব’ ইত্যাদি ধারণা ন্যাক্কারজনকভাবে (আমাদের স্কুল/কলেজের শিক্ষা তার প্রমাণ) প্রচার করে, সেখানে ‘আত্ম বিশ্বাস’ সবচেয়ে বিক্রয় যোগ্য ধারণা তো হবেই ! মজার বিয়য় পাশ্চাত্যে অর্থনীতির বৈচিত্রী-করণের আগ পর্যন্ত আত্মবিশ্বাসের ধারণাটি ছিল না । ধনতন্ত্র শক্তিশালী হবার পর থেকে সবাইকে ডিঙিয়ে ওপরে উঠার জন্য আত্মবিশ্বাসের ধারণাটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে । মাত্র ১৮৯০ সালে উইলিয়াম জেমস্ নামে একজন মনোবিজ্ঞানী ও দার্শনিক Principles of Psychology বইতে আত্মবিশ্বাস নিয়ে লেখালেখি করেন । প্রাচ্যে, বিশেষত ভারতবর্ষে কোন্ কৃষক কখন, কি চাষ করবেন, কতটুকু জমিতে ধান কতটুকু জমিতে পাট চাষ করবেন, তা নিয়ে তিনি মোটেও দ্বিধান্বিত নন । এই জনপদে কোন কৃষককে “আপনি পাট চাষের বিষয়ে কতখানি আত্মবিশ্বাসী” এমন প্রশ্ন করলে তিনি বুঝবেনই না তাঁকে কি জিজ্ঞেস করা হচ্ছে ! দুঃখজনকভাবে আজ আমাদেরকে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার জন্য বিস্তর পড়াশনো করতে হচ্ছে, দৌড়াতে হচ্ছে মনোবিজ্ঞানীর কাছে ! । আত্মবিশ্বাস নিয়ে সমাজে দুটি ধারণা প্রচলিত---একটি জাগতিক (জীবনে অন্যদের থেকে বড় হতে হবে) এবং অন্যটি আত্মিক (’আমি কে’ তা খুঁজে বের করতে হবে )। আমার কাছে ‘আত্মবিশ্বাস’-এর বিষয়টি শেয়ার বাজারের মতই মনে হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন লেখক নানান ধরণের ‘আত্মবিশ্বাস’ নামক পণ্যটি বিক্রয় করতে বসে গেছেন। প্রাচীন যোগবিজ্ঞানে, বিশেষত বেদে আত্মবিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বলা হয়েছে---যে কোন মানুষের পক্ষে মুক্তি অর্জন সম্ভব । মুক্তি অর্জনের প্রক্রিয়া (Self-realization process)-টিকে মানুষ যেন অসম্ভব মনে না করে সে কারণেই নিজের ও প্রকৃতির ওপর বিশ্বাস স্থাপনের কথা বলা হয়েছে । এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আপনার/ আমার জীবনে জাগতিক বিষয়াদি যতটুকু না হলেই নয়, তা অর্জন অসম্ভব নয় । প্রাণী জগতের কোন প্রাণীই আত্ম-অবিশ্বাসে ভোগে না । মানুষ ভোগে, কারণ প্রয়োজনের তুলনায় তার অনেক বেশি দরকার !!
”যিনি আত্ম অনুসন্ধান ও গভীর উলদ্ধি দিয়ে নিজের মনের সক্ষমতা অর্জন করেছেন, তাঁর আত্ম বিশ্বাসের অভাব হবে না । মনের ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে এবং তিনি সেটির পূর্ণ সম্ভাবনা ব্যবহার করতে পারবেন (সাম বেদ) । “