
মইনুল ইসলাম মিতুল : ক্লান্তিহীন লেখালেখির মধ্যে কেটেছে
জীবন। একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও
চলচ্চিত্র নির্মাতা। সাহিত্য আর টিভি নাটকের মতো চলচ্চিত্রেও মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন
কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদ। তার বইয়ের ভাষায় কথার জাদুতে মোহিত হননি এমন বাঙালি
পাঠক পাওয়া যাবে না। ক্ষণজন্মা এ কথাশিল্পীর জীবন ২০১২ সালে কেড়ে নেয় ক্যান্সার।
তার অসামান্য সাহিত্যকীর্তি আজ বাঙালি ও
বাংলাদেশের সম্পদ। তাই হুমায়ূন-মুগ্ধ পাঠকের হৃদয়ে তিনি চিরায়ত হয়ে আছেন তার
আশ্চর্যসুন্দর রচনাবলীর মাধ্যমে।
বাঙালির
হৃদয়নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী আজ। জন্মদিনের
আনুষ্ঠানিকতা তেমন পছন্দ ছিল না হুমায়ূন আহমেদের। তবু রাত ঠিক ১২টা ১ মিনিটে
প্রিয়জনদের নিয়ে কাটতেন জন্মদিনের কেক। সকাল হলে ভক্তরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতেন
প্রিয় লেখককে। এছাড়া দিনব্যাপী নানা আয়োজন তো থাকতই।
এবারো নানা আয়োজনে
উদ্যাপন হবে দিনটি। হুমায়ূন আহমেদকে হারানোর শোক আজও লালন করছে লাখো পাঠকের হৃদয়।
তবু আনন্দ আয়োজনে ভক্ত-পাঠকরা আজ পালন করবেন তার জন্মদিন। তার জন্মদিন উপলক্ষে
চ্যানেল আইয়ে আজ থাকবে দিনব্যাপী হুমায়ূন মেলা।
নুহাশপল্লীতে নানা
আয়োজন ॥
শনিবার রাতেই হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী
মেহের আফরোজ শাওন, ছেলে নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে নুহাশপল্লীতে
অবস্থান করবেন। আজ সকাল ১১টায় তারা হুমায়ূন আহমেদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
কবরের পাশে দোয়া ও ফাতেহা পাঠ শেষে নুহাশপল্লীর হোয়াইট হাউসের সামনে জন্মদিনের কেক
কাটা হয়।
পাঠকমুগ্ধ এ
লেখকের জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোনা জেলার
মোহনগঞ্জ নানার বাড়িতে। পিতার বাড়ি নেত্রকোনাতেই কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর
গ্রামে। পিতা ফয়জুর রহমান আহমদ পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। তার মায়ের লেখালিখির অভ্যাস
না-থাকলেও একটি আত্ম জীবনী গ্রন্থ রচনা করেছেন যার নাম ‘জীবন যে রকম।
নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও
হুমায়ূন আহমেদ সমাদৃত। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। বাংলা
কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। তার সৃষ্ট হিমু ও মিসির আলি
চরিত্রগুলি বাংলাদেশের যুবকশ্রেণিকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছে। তার নির্মিত
চলচ্চিত্রসমূহ পেয়েছে অসামান্য দর্শকপ্রিয়তা। তবে তার টেলিভিশন নাটকগুলো ছিল
সর্বাধিক জনপ্রিয়।
সংখ্যায় বেশি না হলেও তার রচিত গানগুলোও
সবিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার অন্যতম উপন্যাস হলো ‘নন্দিত নরকে’, ‘মধ্যাহ্ন, ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, ‘মাতাল হাওয়া’ ইত্যাদি। তার নির্মিত কয়েকটি চলচ্চিত্র হলো ‘দুই দুয়ারী, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’ ইত্যাদি।
হুমায়ূন আহমেদ তার
দীর্ঘ চার দশকের সাহিত্যজীবনে বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার মধ্যে একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস
পুরস্কার উল্লেখযোগ্য। দেশের বাইরেও সম্মানিত হয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। ২০০৫ সালে
প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে মেহের আফরোজ শাওনকে বিয়ে করেন।
এই জননন্দিতশিল্পী
২০১২ সালে ১৯ জুলাই এক বর্ষণমুখর দিনে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। তার অসামান্য
সাহিত্যকীর্তি আজ বাঙালি ও বাংলাদেশের সম্পদ।
1