ট্রাইগ্লিসারাইড কি :ট্রাইগ্লিসারাইড হলঃ এক ধরনের চর্বি (লিপিড) যা আপনার রক্তে পাওয়া যায়। খাদ্য গ্রহণের ফলে সৃষ্ট বাড়তি ক্যালরিকে মানুষের শরীর ট্রাইগ্লিসারাইডে রূপান্তর করে মেদকোষে শক্তি হিসেবে জমা রাখে। পরবর্তী সময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী এই ট্রাইগ্লিসারাইড বেরিয়ে এসে শরীরে শক্তির চাহিদা মেটায়। কিন্তু নানা কারণে শরীরে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বা পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
ট্রাইগ্লিসারাইড কি স্বাভাবিক বলে মনে করা হয় ?
একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষা
আপনার ট্রাইগ্লিসারাইডগুলি স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক স্বাস্থ্যকর পরিসরে পড়ে কিনা তা প্রকাশ করতে পারে
· সাধারণ — প্রতি
ডেসিলিটারে 150 মিলিগ্রামের কম (mg/dL), বা
প্রতি লিটারে 1.7 মিলিমোলের কম (mmol/L)
· সীমারেখা
উচ্চ — 150 থেকে 199 mg/dL
(1.8 থেকে 2.2 mmol/L)
· উচ্চ — 200 থেকে 499
mg/dL (2.3 থেকে 5.6 mmol/L)
· খুব
বেশি — 500 mg/dL বা
তার বেশি (5.7 mmol/L বা তার বেশি)
সাধারণত একটি কোলেস্টেরল
পরীক্ষার অংশ হিসাবে উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড পরীক্ষা করবেন, যা
কখনও কখনও একটি লিপিড প্রফাইল বলা হয়। সঠিক ট্রাইগ্লিসারাইড পরিমাপের জন্য রক্ত নেওয়ার আগে আপনাকে
রোজা বা না খেয়ে থাকতে হবে।
ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কোলেস্টেরলের মধ্যে পার্থক্য কী ?
ট্রাইগ্লিসারাইড এবং
কোলেস্টেরলের মধ্যে পার্থক্য হল :
ট্রাইগ্লিসারাইড এবং কোলেস্টেরল হল বিভিন্ন ধরনের লিপিড যা আপনার রক্তে
সঞ্চালিত হয়:
· ট্রাইগ্লিসারাইড
অব্যবহৃত ক্যালোরি সঞ্চয় করে এবং আপনার শরীরকে শক্তি সরবরাহ করে।
· কোলেস্টেরল
কোষ এবং নির্দিষ্ট হরমোন তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।
ট্রাইগ্লিসারাইড কেন বাড়ে ?
দুগ্ধজাত খাবার, মাংস এবং রান্নার তেলে ট্রাইগ্লিসারিড বেশি থাকে আর এইসব খাবার বেশি খেলে ট্রাইগ্লিসারিড বাড়ে । এছাড়া শরীরের অভ্যন্তরে জমে থাকা চর্বি থেকে অথবা লিভারের মধ্যেও ট্রাইগ্লিসারাইড তৈরি হতে পারে। যাদের শরীরে ওজন বেশি, যারা প্রচুর পরিমাণ অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় পান করেন এবং যারা প্রচুর পরিমাণ মিষ্টি জাতীয় খাবার খান তাদের রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ বেশি থাকে।
ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি হলে যা হয় ?
ট্রাইগ্লিসারাইড বেশি হলে
: রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে গেলে প্যানক্রিয়াটাইটিস, ফ্যাটি
লিভার ইত্যাদি হতে পারে।
ট্রাইগ্লিসারাইড এর লক্ষণ – ট্রাইগ্লিসারাইড
এর সংকেত – ট্রাইগ্লিসারাইড
এর উপসর্গগুলি কি কি ?
ট্রাইগ্লিসারাইড এর লক্ষণ
বা ট্রাইগ্লিসারাইড এর সংকেত অথবা ট্রাইগ্লিসারাইড এর উপসর্গগুলি হল : সাধারণত, উচ্চ মাত্রার ট্রাইগ্লিসারাইডের নির্দিষ্ট কোনও উপসর্গ থাকে না।
যদিও, তারা
নির্দিষ্ট কিছু রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় যেমন:
· আর্টেরিওস্কেলেরোসিস – রক্তবাহক
ধ্মনীগুলিকে সংকীর্ণ এবং কঠিন করে তোলে।
· করোনারি
হার্ট ডিজিজ – হৃৎপিন্ডের রক্তবাহক ধমনীগুলিকে কঠিন এবং
সংকীর্ণ করে তোলে।
· স্ট্রোক – মস্তিষ্কে
রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
· প্যানক্রিয়াটাইটিস, যেটি গুরুতর পেটে ব্যথার কারণ হয়।
ট্রাইগ্লিসারাইড কমানোর সেরা উপায় কি ?
· ব্যায়াম নিয়মিত করা।
· চিনি এবং পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট এড়িয়ে চলুন। সাধারণ
কার্বোহাইড্রেট, যেমন
চিনি এবং সাদা ময়দা বা ফ্রুক্টোজ দিয়ে তৈরি খাবার ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়াতে পারে।
· ওজন কমানো। আপনার
যদি হালকা থেকে মাঝারি হাইপারট্রাইগ্লিসারাইডেমিয়া থাকে তবে ক্যালোরি কাটাতে
মনোযোগ দিন। অতিরিক্ত ক্যালোরি ট্রাইগ্লিসারাইডে রূপান্তরিত হয় এবং চর্বি হিসাবে
সংরক্ষণ করা হয়। আপনার ক্যালোরি কমাতে ট্রাইগ্লিসারাইড কমবে।
· আপনি কতটা অ্যালকোহল পান তা সীমিত করুন। অ্যালকোহলে
ক্যালোরি এবং চিনি বেশি থাকে এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের উপর বিশেষভাবে শক্তিশালী
প্রভাব ফেলে। আপনার যদি গুরুতর হাইপারট্রাইগ্লিসারাইডেমিয়া থাকে তবে অ্যালকোহল
পান করা এড়িয়ে চলুন।
ট্রাইগ্লিসারাইড কমানোর
ব্যায়াম :
সপ্তাহের বেশিরভাগ বা
সমস্ত দিনে কমপক্ষে ৩০ মিনিটের শারীরিক কার্যকলাপের লক্ষ্য রাখুন। নিয়মিত
ব্যায়াম ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে পারে এবং “ভাল” কোলেস্টেরল
বাড়াতে পারে। আপনার দৈনন্দিন কাজের মধ্যে আরও শারীরিক কার্যকলাপ অন্তর্ভুক্ত করার
চেষ্টা করুন – উদাহরণস্বরূপ, কর্মক্ষেত্রে সিঁড়ি বেয়ে উঠুন বা
বিরতির সময় হাঁটাহাঁটি করুন, সাঁতার কাটুন, সাইকেলিং করুন।
যদি ব্যায়ামাগারে
যাওয়ার অভ্যাস থাকে কিংবা ঘরে ব্যায়ামের উপকরণ থাকে তবে ১৫ মিনিটের ধীর গতির
শরীরচর্চায় কোলেস্টেরল কমানো সম্ভব। কোলেস্টেরলে থাকা ট্রাইগ্লিসারাইড দেহে শক্তি
হিসেবে খরচ হয়। ব্যায়াম করলে ট্রাগ্লিসারাইড খরচ হয় ফলে এর মাত্রা কমে।
ট্রাইগ্লিসারাইড কম করার জন্য ৭ দিনের খাদ্য :-
ট্রাইগ্লিসারাইড কম করার
জন্য ৭ দিনের খাদ্য :- ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমানোর সবচেয়ে উপযোগী ডায়েট হলো
মেডিটেরানিয়ান ডায়েট বা ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভ্যাস।
· এই
ডায়েটে মূল খাবার হিসেবে শাকসবজি, ফল
বেশি প্রাধান্য পায়। রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন
প্রচুর সবুজ ও রঙিন শাকসবজি এবং তাজা মৌসুমি ফলমূল রাখতে হবে।
· কার্বোহাইড্রেট
হিসেবে পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার যেমন লাল চাল, গমের
আটা, ভুট্টা, ওটস
বা এ ধরনের খাবারকে প্রাধান্য দিতে হবে। মেডিটেরানিয়ান ডায়েটে কার্বোহাইড্রেট
খাওয়া নিষেধ নয়, তবে তা অল্প পরিমাণে খেতে হয়। দিনে ৩৫
গ্রামের বেশি কার্বোহাইড্রেট না খাওয়াই উত্তম। আর শর্করাজাতীয় খাবার সেগুলোই বেছে
নিতে হবে, যেগুলোয় আঁশ বা ফাইবার বেশি থাকে।
· প্রোটিনের
চাহিদা মেটাতে মাছ বা মুরগির মাংস সপ্তাহে ২-৩ দিন খেতে হবে। এ ক্ষেত্রে মাছকে প্রাধান্য
দেওয়াই উত্তম। সামুদ্রিক মাছ খুবই উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩, ইপিএ, ডিএইচএ
থাকে। প্রতিদিন ৪ গ্রাম ইপিএ/ডিএইচএ খেলে তা ২৫ শতাংশ পর্যন্ত রক্তে
ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করে। রেডমিট (গরু, ছাগল
বা এই জাতীয় প্রাণীর মাংস) মাসে এক বা দুদিনের বেশি খাওয়া যাবে না।
· খাদ্যতালিকায় প্রতিদিন বাদাম রাখতে হবে।
বাদামে প্রচুর ওমেগা-৩ এবং মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা
ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া সূর্যমুখী, কুমড়া
ও তিলের বীজ খাওয়াও খুব উপকারী।
· ভোজ্যতেল
হিসেবে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল, বাদামের
তেল বা খাঁটি সরিষার তেলকে প্রাধান্য দিতে হবে।
· রান্নায় মসলা হিসেবে পেঁয়াজ, আদা, রসুন, এলাচি, লবঙ্গ, দারুচিনি, পুদিনাপাতা
ব্যবহার করতে হবে।
· দুধ, দই, পনির
প্রতিদিন ১ থেকে ৩ সার্ভিংস পর্যন্ত খাওয়া যাবে।
· সপ্তাহে ৪টা ডিমের কুসুম খাওয়া যাবে। ডিমের
সাদা অংশ খেতে বাধা নেই।
· মেডিটেরানিয়ান ডায়েটের সঙ্গে দরকার নিয়মিত
ব্যায়াম করা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।