Logo
শিরোনাম

হিজড়া এবং ইন্টারসেক্স বিষয়ক আলাপে ঢুকার আগে একটা জিনিস ক্লিয়ার করি

প্রকাশিত:বুধবার ২৪ জানুয়ারী 20২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ |

Image

আজহার উদ্দিন অনিক, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় :

আমি জানি আপনাদের অনেকেই মনে করেন হিজড়া মানে হার্মাফ্রোডাইট/ইন্টারসেক্স/যাদের মেল/ফিমেল দুইধরণেরই জেনিটালিয়া/বৈশিষ্ট্য আছে।

কিন্তু হিজড়া মানে ইন্টারসেক্স না, হিজড়া বলতে মোটাদাগে বাংলাদেশের একটা কমিউনিটিকে বুঝানো হয়, যার মধ্যে ইন্টারসেক্স এবং ট্রান্স দুই ধরণের মানুষই থাকে। হিজড়া শব্দটা একটা কালচারাল আমব্রেলা টার্ম একটা কম্যুনিটির জন্য, শুধুমাত্র ফিজিকালি ইন্টারসেক্স বুঝায় না এটা দিয়ে।  

তবে তর্কের খাতিরে এই লেখায় আমি আপাতত ধরে নিচ্ছি ইন্টারসেক্স = হিজড়া।

একইসাথে আপাতত তর্কের খাতিরে আমি ধরে নিচ্ছি ট্রান্স বলে কিছু নাই। ( আই রিপিট, আপাতত, যাতে আমরা একটু ঠান্ডা মাথায় ইন্টারসেক্স কী জিনিস সেইটা বুঝতে পারি)

  

ইন্টারসেক্স কী?

  

ইন্টারসেক্স হচ্ছে একটা গ্রুপ অফ কন্ডিশন্স, যেইখানে কমন থিম হচ্ছে এই যে একটা মানুষের ফিজিকালি বাইরের দিকে, অর্থাৎ বডির বাইরের দিকে যেই জেনিটালিয়া (যৌনাঙ্গ) থাকে, বডির ভিতরে, ইন্টার্নালি একই যৌনাংগ থাকে না। অর্থাৎ "ছেলেদের" ক্ষেত্রে যেরকম টেস্টিস আর "মেয়েদের" ক্ষেত্রে ওভারি থাকে, এমনটা হয় না। 

(এইগুলা মেডিকাল টার্ম, আমার ইনভেন্ট করা না)

  

আগে এই কন্ডিশনগুলাকে হার্মাফ্রোডাইট বলা হইত। এখন সাধারণত এই টার্ম ব্যবহার করা হয় না। এই কন্ডিশনগুলাকে বলা হয় ডিজঅর্ডারস অফ সেক্স ডেভেলপমেন্ট (DSDs)

  

এই কন্ডিশনগুলার ক্যাটাগরি ৪টা। (এখানে একটু লম্বা এবং বোরিং আলোচনা আছে, চাইলে সামনে স্কিপ করে যাইতে পারেন একটু)

  

১- 46 XX Intersex - এই কন্ডিশনে একজন ব্যক্তির XX ক্রোমোসম থাকে (নারীদের মত) কিন্তু তাদের বাইরের দিকে জেনিটালিয়ার এপিয়ারেন্স থাকে ছেলেদের মত। হরমোনাল ইম্ব্যালেন্সের কারণে এমন হইতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ব্যক্তিদের নরমাল জরায়ু আর ফেলোপিয়ান টিউব থাকে, অর্থাৎ আদতে শারীরিকভাবে তিনি নারী, তার ছেলেদের মত দেখতে জেনিটালিয়া থাকলেও। 

এই কন্ডিশন হওয়ার বেশ কিছু কারণ আছে, এর মধ্যে হরমোনাল ইম্ব্যালেন্স এবং এরোমাটোজ ডেফিশিয়েন্সি প্রধান। (টার্ম দুইটা মাথায় রাখেন, পরে আমরা ফেরত আসবো এইখানে)

 

২- 46, XY Intersex - এইক্ষেত্রে জাস্ট আগের কেসের উলটো ঘটনা ঘটে। ছেলের ক্রোমোসম থাকলেও শরীরের বাইরের দিকে যেই জেনিটালিয়া থাকে তা থাকে মেয়েদের জেনিটালিয়ার মত দেখতে। শরীরের ভিতরের দিকে টেস্টিস থাকতেও পারে বা নাও থাকতে পারে। এইরকম হওয়ার পিছনেও অনেক কারণ আছে, তার মধ্যে হরমোনাল ইম্ব্যালেন্স, এন্ড্রোজেন ইন্সেন্সিটিভিটি সিন্ড্রোম (এই ডিফেক্টের ১৫০+ ধরণ আছে)। আবারো বলি, টার্মগুলা মাথায় রাখেন, পরে ফেরত আসবো এখানে।

  

৩- True Gonadal Intersex - এদের ওভারিয়ান এবং টেস্টিকুলার টিস্যু দুইটাই থাকে। এই কন্ডিশনটাকে শুধুমাত্র হার্মাফ্রোডাইটের কাছাকাছি বলা যায়, দুই ধরণেরই টিস্যু থাকার কারণে। এই কন্ডিশনের এক্সাক্ট কারণ আমি খুজে পাই নাই।

  

৪- Complex or undetermined intersex - 46 XX বা XY এর বাইরেও কিছু ক্রোমোসম কনফিগারেশন হইতে পারে, যেমন 45 XO, 47 XXY, 47 XXX। এই ধরণের ক্ষেত্রে হয় সেক্স ক্রোমোজম (যেইটা আপনার লিংগ নির্ধারণ করে) সেইটা হয় একটা কম থাকে নাইলে একোটা বেশি থাকে। এই ধরণের কেইসে জেনিটালিয়ার পরিবর্তন না হইলেও হরমোনাল বযালেন্স আর ডেভেলপমেন্টের সমস্যা হয়।

  

বাংলাদেশের পার্স্পেক্টিভে আসার আগে বিশ্বে আগে কী হইত মেডিকালি সেই বিষয়ে একটু ব্রিফ করি।

আগে যদি কোন বাচ্চা ইন্টারসেক্স এইটা ডিটেক্ট করা যাইত, তাহলে ডাক্তাররা এডভাইস করত যে বাইরের দিক থেকে যেই ধরণের জেনিটালিয়া আছে সেই জেনিটালিয়ার সাথে ম্যাচিং জেন্ডারে শিফট করার জন্য নেসেসারি সার্জারি করতে। এইটা করা হইত বাইরে থেকে জেনিটালিয়ার চেহারা দেখে, ক্রোমোসম কনফিগারেশন কী সেইটা দেখে না। (উপরে যেইখানে মেনশন করলাম যে জেনিটালিয়া ছেলের মত হইলেই ক্রোমোসম ছেলেদের এইটা ইন্টারসেক্সদের ক্ষেত্রে ফ্যাক্ট না)। এই সার্জারির ক্ষেত্রে যেকোন এক জেন্ডারের জেনিটালিয়া/টিস্যু অপারেশন করে রিমুভ করা হইত।

   

মেল জেনিটালিয়া রিকন্সট্রাক্ট (অপারেশন করে তৈরী করা) কঠিন দেখে সাধারণত জেনিটালিয়া ক্লিয়ার না হলে ফিমেল জেনিটালিয়া তৈরী করে দেয়ার জণ্য অপারেশন করা হইত, কারণ এইটা সহজ বেশি। 

  

পরে দেখা গেসে জাস্ট ইন্টারসেক্স মানুষদের ক্ষেত্রে ফিজিকাল জেনিটালিয়া দেখতে কেমন সেইটা দেখেই অপারেশন করে দিলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় বিষয়টা এমন না। কারণ আগেই বলেছি, এইসব ক্ষেত্রে ক্রোমোসমের ইমব্যালেন্স থাকে, এবং কারো ক্রোমোজোম ছেলের হইলে অর্থাৎ জেনেটিকালি সে ছেলে হইলে, তার জেনিটালিয়া মেয়েদের মত দেখতে হওয়ার কারণে আপনি যতই অপারেশন করে তাকে কমপ্লিটলি মেয়ে বানায়ে দেয়ার চেষ্টা করেন কেন, এইটা পুরোপুরি ঠিকমত কাজ করবে না। সাইকোলজিকাল, নিউরাল, ক্রোমোজোমাল, বিহেভরিয়াল অনেক ইস্যু থেকেই যায় যেইগুলা ইনফ্লুয়েন্স করবে এই মানুষটাকে আসলে কোন জেন্ডার আইডেন্টিটিতে সুইচ করা উচিত।

  

(এই কারণে এখন ইন্টারসেক্স চিলড্রেনদের ক্ষেত্রে ডাক্তাররা সাথে সাথে অপারেশন না করে কিছুটা বড় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার সাজেশন দেন, যাতে অন্য ফ্যাক্টরগুলো ক্লিয়ার হয়। কারণ কারো কন্ডিশনই হয়ত এক্সাক্টলি সেম না, এবং একেকজনের ক্ষেত্রে হয়ত একেক ট্রিটমেন্ট বেটার কাজে দিবে।)

  

যাই হোক, এই গেল বাইরের বিশ্বের অবস্থা। অবভিয়াসলি বাংলাদেশ এমন না। বাংলাদেশে হিজড়াদের অধিকার নিশ্চিত করা হইসেই মাত্র ১০ বছর আগে ২০১৩ সালে। 

  

বাংলাদেশে তাহলে হিজড়াদের (ইন্টারসেক্স) কী হয়?

  

এই আলাপে ঢুকার আগে একটা প্রশ্ন করি, বুকে হাত দিয়ে আপনি নিজেকে প্রশ্ন করেন, গত ১০ বছরে কি আপনি কোন না কোন সময় হিজড়া শব্দটা গালি/মক করার জন্য কখনো ব্যবহার করেছেন?

আপনি সাক্ষাৎ ফেরেশতা হয়ে না থাকলে, আপনার উত্তর হ্যা হওয়ার কথা।

হিজড়া শব্দটা তাইলে একটা গালি কেন? হিজড়ারা বাজেভাবে টাকা চায় রাস্তাঘাটে এই কারণে এইটা একটা গালি?

নাকি এইটা একটা গালি হওয়ার কারণেই হিজড়াদের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে টাকা চাইতে হয়?

আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতায় জানি কোন ছেলে বাচ্চা দেখতে একটু মেয়েলি হইলে বা কোন মেয়ে বাচ্চা দেখতে একটু ছেলেদের মত হইলে তাদেরকে কি পরিমাণ রিডিকিউল করা হয়, ঢাকার সবচাইতে এলিট স্কুল/কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়েও। 

আমি এমনও দেখসি একটা ছেলের স্বাস্থ্য একটু বেশি হওয়ার কারণে তার বুকে একটু চর্বি বেশি জমে যাওয়ার কারণে ছেলেরা জোর করে তার বুকে হাত দিয়ে তাকে হ্যারাজ করতেসে বা মজা নিচ্ছে যে ঐ ছেলের বুক তো মেয়েদের মত। 

আপনার কি ধারণা ঢাকার বাইরে বা অন্যন্য ইকোনমিক ক্লাসে এই সিচুয়েশনটা বেটার?

একটা ছেলের চেহারা মেয়েলি হওয়ার জন্যে বা একটা মেয়ের চেহারা একটু ছেলেদের মত হওয়ার জন্য যদি তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে যায়, তাইলে ইন্টারসেক্স বাচ্চাদের কী হাল হয়? 

  

বাকি আলোচনায় যাওয়ার আগে একটা জিনিস মেনে নেই সবাই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা সমাজে হিজড়া (ইন্টারসেক্স) মানুষদের ফাংশন করা কঠিন। 

আপনি তাদেরকে আপনার বাচ্চার সাথে সেম স্কুলে চাইবেন না, আপনি তাদের চাকরি দিতে চাইবেন না, আপনি তাদের সাথে আপনার পরিচিত কারো বিয়ে হোক এইটাও চাইবেন না। সহজ ভাষায় হিজড়ারা ভয়ানকভাবে মার্জিনালাইজড।

  

এইটা আমার আপনার মত সদ্য জন্ম নেয়া কোন ইন্টারসেক্স শিশুর বাবা মাও জানে। এই কারণে অনেকক্ষেত্রে এমন হইত (এখনো হয় কিনা জানি না), বাচ্চা ইন্টারসেক্স (হিজড়া) হলে সেই বাচ্চাকে বড় করতে যেই ঝামেলা হবে সেই ঝামেলার ভয়ে বাবা মা শিশুকে দিয়ে দিতেন হিজড়া কমিউনিটির কাছে। সেখানেই এই শিশুরা বেড়ে উঠে, স্কুল কলেজের বাইরে। 

(হিজড়া কমিউনিটিতে সবার অরিজিন এমন তা না, এইটা একটা উদাহরণ, ইন্টারসেক্স মানুষদের সোশাল স্ট্যান্ডিং বুঝাতে)।

     

যে শিক্ষা পায় নাই, যারে সমাজ মেনে নিবে না, চাকরি দিবে না, তার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে টাকা চাওয়া বাদে বেচে থাকার আর কোন উপায় আছে?

  

আমি ধরে নিচ্ছি আমার মত আপনারা সবাইও চান, ইন্টারসেক্স মানুষজন একটা ভাল ফিউচার পাক, তাদের বিরুদ্ধে কোন বৈষম্য না হোক। সেইটা নিশিচত করতে গেলে কী করা লাগবে?

  

১- তাদের সমাজে স্ট্যান্ডিং ইম্প্রুভ করা।

২- তাদের যেসব ফ্যাসিলিটিজ দরকার সেগুলোর ব্যবস্থা করা।

  

এইবার মেইন আলাপে আসি।

  

পুরো ঝামেলাটা শুরু হইসে এক লাইন নিয়েই, শরীফা নামের এক ব্যক্তির শরীর ছেলেদের মত, কিন্তু তার নিজেকে মনে হয় মেয়ে।

  

এইটা নিয়ে আপনাদের যত প্রতিবাদ, যে এইটা শুধু ট্রান্স ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই খাটে, হিজড়ারা (ইন্টারসেক্স) শরীরের দিক থেকে ছেলে/মেয়ে আর মনের দিক থেকে আরেকরকম হইতেই পারে না। 

  

আচ্ছা। ফলো করেন এই জায়গাটা একটু কষ্ট করে। আমি জানি লেখা অনেক লম্বা হয়ে যাইতেসে, তাও একটু ফোকাস করেন।

  

বাংলাদেশে হেলথকেয়ার কেমন সেইটা তো আপনারা জানেন, রাইট?

ধরে নিচ্ছি জানেন।

  

কোন বাচ্চা ইন্টারসেক্স নাকি ইন্টারসেক্স না, এইটা কিছুক্ষেত্রে জন্মের সময়েই বুঝা যায়, এটেন্ডিং ডাক্তার/স্পেশালিস্ট যদি এটা ধরতে পারে।

সেইটা বেস্ট কেস সিনারিও, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বিষয়টা বুঝে যাওয়া।

  

কিন্তু বাস্তবতায় নেমে আসেন। আপনার কি মনে হয় এই ২০+ কোটি মানুষের দেশে প্রত্যেক কোনায় ডাক্তার আছে? প্রত্যেক শিশুর জন্মের সময় প্রেজেন্ট থাকা ডাক্তাররাই এই স্পেসিফিক ফিল্ডে এত এক্সপার্ট যে তারা ধরতে পারে কোন বাচ্চা ইন্টারসেক্স?

অনেক বাচ্চার যে হাসপাতালের বাইরে নরমাল ডেলিভারি হয় বা হইত দেশের অনেক জায়গায়, সেইটার কথাও ভাবেন। সেইক্ষেত্রে কেমনে কেউ ডিটেক্ট করবে বাচ্চার এই ধরণের কোন সমস্যা আছে কিনা?

  

এইগুলা গেল সেসব কেস যেগুলায় ক্লিয়ারলি বুঝা যায় যে একটা বাচ্চা ইন্টারসেক্স। 

কিছুক্ষেত্রে একটা বাচ্চা ইন্টারসেক্স কিনা এইটা বুঝা যাওয়া সম্ভব কিছু টেস্ট করে, ক্রোমোজম এনালাইসিস, হরমোনাল লেভেলস, এন্ডোস্কোপিক টেস্ট, এমআরআই ইত্যাদির মাধ্যমে। বলা বাহুল্য, এই টেস্টগুলা সস্তা না, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাংলাদেশে কোন পরিবারের এত টাকা থাকবেনা এইসব টেস্ট করানোর।

ইন্টারসেক্স বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এমন কেসও থাকে যেইসব ক্ষেত্রে সেই বাচ্চা বয়ঃসন্ধিকালে পৌছানোর আগ পর্যন্ত বুঝা যাবে না তার ইন্টারসেক্স কন্ডিশন, শুধুমাত্র পিউবার্টি বা বয়ঃসন্ধিকালেই ধীরে ধীরে বুঝা যায় যে সেই বাচ্চাটা ইন্টারসেক্স।

  

তাইলে আমরা আপাতত ধরে নিতে পারি যে এমন একটা সিনারিও থাকতেই পারে যে বয়ঃসন্ধিকালে এসে একটা বাচ্চা বুঝা শুরু করতে পারে যে সে হয়ত ছেলে/মেয়ে না, সে হয়ত ইন্টারসেক্স।

  

এখন তাকে যদি ছোটবেলা থেকে তার আউটার জেনিটালিয়ার উপর বেজ করে তাকে এসাইন করা হয় যে সে ছেলে, কিন্তু জেনেটিকালি সে মেয়ে, বয়ঃসন্ধিকালে এসে যখন তার মনে হবে সে মেয়ে, তখন তার কি মনে হবে?

  

তার মনে হবে না যে সে ছেলে, দেখতেও ছেলের মত, কিন্তু মনে মনে সে মেয়ে?

   

অন্য দিকটাও বলি, ধরেন একজন জেনেটিকালি ছেলে, আর আউটার জেনিটালিয়ার দিক থেকে মেয়ে। বয়ঃসন্ধিকালে এসে যদি সে টের পাওয়া শুরু করে যে তারে ছোটবেলা থেকে মেয়ে বলা হইলেও তার নিজেকে ছেলে মনে হচ্ছে, বা মেয়ে হইলেও তার মাসিক হচ্ছে না, তাইলে সে এইটাকে কীভাবে এক্সপ্রেস করবে?

  

তার মনে হবে না যে সে মেয়ে, দেখতেও মেয়েদের মত, কিন্তু মনে মনে সে ছেলে?

  

উপরে ইন্টারসেক্সের কন্ডিশনগুলা নিয়ে আলোচনার সময় কিছু কন্ডিশনের নাম মনে রাখতে বলসিলাম। সেইগুলা এখন আলোচনায় নিয়ে আসি, ব্রিফলি।

  

জেনেটিকালি মেয়ে কিন্তু ফিজিকালি ছেলের মতঃ 

  

১- কঞ্জেনিটাল এড্রেনাল হাইপারপ্লেসিয়া (Congenital adrenal hyperplasia)ঃ বেসিকালি জেনেটিকালি ছেলে/মেয়ে হইলেও একটা স্পেসিফিক এনজাইম না থাকার কারণে মেল সেক্স হরমোন এন্ড্রোজেন অনেক বেশি বেড়ে যায়।

ফলে জেনেটিকালি একটা মেয়ের জেনিটালিয়া ছেলেদের মত দেখতে হইতে পারে, আর এই কন্ডিশন অনেক সেভিয়ার না হইলে বাচ্চার বয়স বৃদ্ধির আগে ডিটেক্ট করা কঠিন।

  

২- মায়ের শরীরে যদি কোন কারণে টেস্টোস্টেরন যায় বা মায়ের শরীরের যদি টেস্টোস্টেরণ তৈরী করে এমন টিউমার থাকে (সাধারণত ওভারিতে হয়), সেইক্ষেত্রেও জেনেটিকালি মেয়ে কিন্তু ফিজিকাল এপিয়ারেন্স ছেলেদের মত এমন হইতে পারে।

  

৩- এরোমাটোজ হচ্ছে এমন এনজাইন যেইটা মেল সেক্স হরমোন কনভার্ট করে এস্ট্রোজেন (ফিমেল সেক্স হরমোন) তৈরী করে। যদি কারো মধ্যে এইটা কম থাকে বা একেবারেই না থাকে, তাহলে সে জেনেটিকালি মেয়ে হইলেও বাইরের দিকে ফিজিকাল এট্রিবিউট তৈরী হবে ছেলেদের মত, কারণ তাদের মেল সেক্স হরমোনই বেশি।  

জেনেটিকালি ছেলে কিন্তু ফিজিকালি মেয়ের মতঃ  

১- টেস্টিস ডেভেলপমেন্টে সমস্যা। যেহেতু টেস্টিস মেল হরমোন তৈরী করে, টেস্টিসের সমস্যা হইলে এমন হইতে পারে যে কেউ জেনেটিকালি ছেলে কিন্তু তার জেনিটালিয়া ছেলেদের মত করে ফর্ম করে নাই। (গonadal dysgenesis)

২- টেস্টোস্টেরন তৈরী করার জন্য দরকারি এনজাইমে ঘাটতি থাকলেও এমন হইতে পারে 

৩- এন্ড্রোজেন ইন্সেন্সিটিভিটি সিনড্রোম- এইক্ষেত্রে কেউ জেনেটিকালি ছেলে হইলেও, X ক্রোমোজমে একটা ডিফেক্টের কারণে বডি এই ছেলেদের মত এপিয়ারেন্স তৈরী করার যেই হরমোনগুলো থাকে, সেগুলোতে রেস্পন্ডই করতে পারে না। ফলে এমন হইতে পারে যে একটা মানুষ ফিজিকালি বাইরের দিক এবং ভিতরের দিক থেকে প্রায় পুরোপুরিই মেয়ে, জাস্ট জেনেটিকালি সে ছেলে।

       

(বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ একটা কমন মিসকন্সেপশন হচ্ছে ইন্টারসেক্স মানুষরা বাচ্চা নিতে পারে না। এইটা পুরোপুরি সত্য না। ইন্টারসেক্স কন্ডিশনের অনেকের পক্ষেই বাচ্চা নেয়া সম্ভব, অর্থাৎ স্পার্ম প্রডিউস করা অথবা প্রেগন্যান্ট হওয়া। সবার ডিজঅর্ডার অফ সেক্স ডেভেলপমেন্ট একই ধরণের বা একই পর্যায়ে না।) 


আরো বেশ কিছু সিনারিও আছে, বাট মূল কথা এইটাই, ইন্টারসেক্স কন্ডিশন সবসময় চাইল্ডবার্থের সময় ডিটেক্ট করা যায় না, আর বাংলাদেশের পার্স্পেক্টিভে সেই প্রবাবলিটি কিছু সিনারিওতে আরো কম। সংক্ষেপে বলতে গেলে, বাংলাদেশের কিছুটা কঞ্জারভেটিভ সমাজে, যেখানে এইসব নিয়ে কথাবার্তা বলা ট্যাবু, সেইখানে বাবা-মা যদি জানতেও পারেন যে সন্তানের ইন্টারসেক্স কন্ডিশন আছে, তা সমাজের ভয়ে চেপে যাওয়া স্বাভাবিক, অথবা ইন্টারসেক্স কন্ডিশন যে বাচ্চার আছে এইটাই বুঝতে না পারাটা স্বাভাবিক। 

(কারণ আমাদের জেনারেশনই জানে না ঠিকমত ইন্টারসেক্স কী জিনিস বা ইন্টারসেক্সের সিম্পটম কী কী, তাইলে প্যারেন্টস কীভাবে জানবে?)

তাইলে এই বাচ্চাগুলা কি স্কুলে গিয়ে তাদের বয়ঃসন্ধিকালে গিয়েই বুঝবে না যে সামথিং ইজ নট রাইট?   

এই সময়েই কি বাচ্চাগুলার মনে হবে না যে হয়ত তাকে এতদিন যেই জেন্ডার হিসেবে বড় করা হইসে, আসলে হয়ত সে সেই জেন্ডারের না?

যেহেতু এই বাচ্চাদের কেউই জেন্ডার স্পেশালিস্ট না, আপনার কোন রোগ হইলে যেমন আমি কোন রোগ এইটা না বুঝলেও কিছু সিম্পটম বা ফিলিংস থেকে বুঝতে পারেন যে সামথিং ইজ রঙ, পিউবার্টি বা আরো পরে যদি একটা মানুষ ইন্টারসেক্স কন্ডিশনের সিম্পটমস প্রথম টের পাওয়া শুরু করে, তখন তারও মনে হবে সামথিং ইজ রঙ, সে ছেলে/মেয়ের ফিজিকাল এপিয়ারেন্সের ব্যাপারে যা জানে, সেইটার বেসিসে সে ছেলে/মেয়ে হইলেও তার নিজেকে ঐ জেন্ডারের মনে হচ্ছে না।

   

এখন আপনি যদি শিশুদের এই বেসিক আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা না দেন যে অন্য কোন একটা মানুষ দেখতে ছেলেদের বা মেয়েদের মত হইলেও সে ইন্টারসেক্স হইতে পারে এবং এমন কন্ডিশনের কারণে সে স্কুলে পড়ার মত একটা বয়সে আবিষ্কার করতে পারে যে তার জেনেটিক জেন্ডার হয়ত ডিফারেন্ট (যখন পিউবার্টির হরমোনাল এক্টিভিটির কারণে কিছু সিম্পটম ইন্টেন্স হয়), তাইলে সে কীভাবে বুঝবে যে তার কোন বন্ধু/বান্ধবী যদি এমন কিছুর মধ্য দিয়ে যায়, তাকে মক করা বা তাকে অচ্ছুৎ করে দেয়া উচিত না?

  

বা, ঐ বাচ্চা নিজেও বা কীভাবে বুঝবে যে তার ইন্টারসেক্স কন্ডিশনের কারণে ঐ বয়সে এসে যে তার এরকম ডিফারেন্ট মনে হচ্ছে নিজেকে, এইটা নরমাল একটা জিনিস এবং সে চাইলে মেডিকাল হেল্প সিক করতে পারে বা বাবা-মাকে জানাতে পারে?

  

আপনি যদি বাচ্চাকে এগুলা নাই বুঝান, আপনি যদি মানুষজনকে এইটা নাই বুঝান, তাইলে আল্টিমেটলি হয় প্যারেন্টস ইগ্নোরেন্ট থেকে গিয়ে বাচ্চার কন্ডিশন ইগ্নোর করে যাবে অথবা, নাহয় বাচ্চা লজ্জার কারণেই কখনো তার এই সমস্যার কথা মুখ ফুটে বলবে না, নীরবে সাফার করে যাবে। 

এত লম্বা লেখার পিছনে ইন্সেন্টিভ কয়েকটা।

১- এই পয়েন্টটা ক্লিয়ার করা যে ইন্টারসেক্স একটা বাচ্চার ক্ষেত্রে এমন হইতেই পারে যে কিছুটা বড় হওয়ার পরেই সে আবিষ্কার করবে যে তার এই কন্ডিশন আছে (বিভিন্ন সিম্পটমের মাধ্যমে), তখন এইটা খুব ভালভাবেই সম্ভব যে এতদিন ফিজিকালি দেখতে তাকে মেয়ে মনে হইলেও জেনেটিকালি সে ছেলে বা ভাইস ভার্সা।  

২- ইন্টারসেক্স কন্ডিশন ডিটেক্ট করা এত সহজ না, এবং সহজে সবার জন্য এফোর্ডেবল না রিয়েলিস্টিকালি। দেশে এখনো হস্পিটালের বিল দিতে না পারার কারণে বাচ্চা বিক্রি করে দেয়ার মত ঘটনাও ঘটে। আপনার কি মনে হয় এইসব পরিবার লাখ টাকা খরচ করে এমআরআই বা ক্রোমোজোম এনালাইসিস করাইতে পারবে বাচ্চা ইন্টারসেক্স কিনা এইটা ডিটেক্ট করার জন্য চাইলেই?

      

পোস্টের শুরুতে একটা কথা বলে নিসিলাম, আমরা আপাতত ধরে নিচ্ছি যে ট্রান্স বলে কিছু নাই। সেই এজাম্পশন রেখে আপনি যদি এই পুরো জিনিসটা দেখেন, তাইলে আপনার কাছে এইটা ক্লিয়ার হওয়ার কথা যে ঐ বইয়ে যেই জিনিসটা লেখা, সেইটা দিয়ে যে শুধু ট্রান্সই বুঝাইতে পারে, ইন্টারসেক্স কন্ডিশন বুঝানো সম্ভব না- এইটা একটা ভুল কন্সেপশন। 

  

আপনি যদি চান যে যেই ইন্টারসেক্স মানুষদেরকে ২০১৩ সালে আইন করে স্বীকৃতি দেয়া হইসে তাদের ব্যাপারে এক্সেপ্টেন্স বাড়ুক সমাজে, তাইলে আপনার পাঠ্যবইয়ে তাদের ইঙ্কলুশন মেনে নিতে হবে।

  

আপনাকে এইটাও মেনে নিতে হবে যে জন্ম থেকেই কাউরে হিজড়া হিসেবে আইডেন্টিফাই করা হয় না, এবং অনেক ক্ষেত্রে এই হিজড়া(ইন্টারসেক্স) কমিউনিটির মানুষরা এমন মানুষ যারা হয়ত তাদের ইন্টারসেক্স কন্ডিশন ডায়াগনোজ করার টেস্টের টাকা অথবা যেই সার্জারি দরকার তাদের কোন একটা জেন্ডারে শিফট করানোর জন্য সেইটার টাকা এফোর্ট করতে পারে না দেখেই তারা হিজড়া থেকে গেছে। সেধে সেধে কেউ মার্জিনালাইজড হইতে চায় না।

আপনি যদি চান যে পরের জেনারেশন থেকে ইন্টারসেক্স মানুষেরা মার্জিনালাইজড না হোক, তারা সমান রাইট পাক, তাইলে আপনাকে এইটা নিশ্চিত করা লাগবে যে যেই বয়সে তারা আবিষ্কার করবেন যে তাদের ইন্টারসেক্স কন্ডিশন আছে, (সেইটা শৈশব, কৈশোর বা আরো বড় বয়সেও হইতে পারে, আমরা এস্টাব্লিশ করেছি ইন্টারসেক্স কন্ডিশন সবসময় জন্মের সময় ধরা পড়ে না), সেই বয়সে যাতে তাদের এই আবিষ্কার করা, এবং দরকারি জেন্ডার চেঞ্জের যেই প্রসেস/সার্জারি, এই ট্রান্সফরমেশনের সময় যাতে তাদেরকে রিডিকিউল করা না হয়, তাদেরকে অচ্ছুৎ বানায়ে দেয়া না হয়। যদি তাদের এক্সেপ্টেন্স না থাকে, তাহলে তারা হয় কখনো প্রয়োজনীয় ট্রিটমেন্ট বা প্রসিডিউর নেয়ার সাহসই পাবেন না, আর নাহয় তাদেরকে সাধারণ সমাজ থেকে দূরে সরে গিয়ে হিজড়া কমিউনিটিতে চলে যাইতে হবে।

(আবারো মনে করাই, এখানে ট্রান্সজেন্ডারদের কথা বলা হচ্ছে না, বলা হচ্ছে ইন্টারসেক্স কন্ডিশনে ভোগা ব্যক্তিদের কথা)।

  

এত বিশাল লেখার শেষে এসে যদি কারো আমাকে মাইর দিতে ইচ্ছা না করে, তাইলে আমি আশা করি আপনার হয়ত ইন্টারসেক্স কন্ডিশন, এই কন্ডিশনের কারণে কীভাবে ডায়াগনোসিস বা নেসেসারি ট্রিটমেন্ট/সার্জারি/ট্রান্সফরমেশন কীভাবে ডিলেইড হইতে পারে, কীভাবে দেখতে ছেলে মনে হইলেও জেনেটিকালি একজন নারী বা দেখতে মেয়ের মত হইলেও জেনেটিকালি কেউ ছেলে হইতে পারে সেই বিষয়ে আন্ডারস্ট্যান্ডিং বাড়বে। 

(ভাংগা রেকর্ডের মত আবার বলি, ট্রান্সজেন্ডারের কথা এখানে হচ্ছে না। যে জেনেটিকালি ফিজিকাল এপিয়ারেন্স থেকে ডিফারেন্ট জেন্ডারের সে তার এই কন্ডিশনটা কিছুটা বড় হয়ে আবিষ্কার করার প্রসেসের কথা বলা হচ্ছে।)

  

আশা করি আপনাদের কাছে পরিষ্কার হইসে কীভাবে ফিজিকালি ছেলের মত দেখতে মনে হইলেও একজনের অরিজিনালি/জেনেটিকালি মেয়ে হওয়ার বা নিজেকে মেয়ে মনে হুয়ার মত সিনারিও ঘটতে পারে ইন্টারসেক্স কন্ডিশনের মানুষদের, এবং কেন এই জিনিসটা শিশুদের বুঝানোর মাধ্যমে ইন্টারসেক্স কন্ডিশনের ব্যক্তি বা শিশুদের সমাজে/স্কুলে এক্সেপ্টেন্স তৈরী করাটা জরুরি। 

যদি এক্সেপ্টেন্স না থাকে, তাইলে সে সমাজে ফাংশন করতে পারবে না।

হয় সে ডায়াগনসিস বা ট্রিটমেন্টের অভাবে সারা জীবন সাফার করে কাটায়ে দিবে,

আর নাইলে বাধ্য হয়ে হিজড়া কমিউনিটিতে যোগ দিয়ে বেসিকালি ভিক্ষাবৃত্তিতে যোগ দিতে বাধ্য হবে পেটের ভাত যোগাইতে।


আরও খবর

নির্বাচন ও রাজনৈতিক হিসাব নিকাশ

রবিবার ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মিডিয়ায় ৩০ বছর...

সোমবার ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫




ঝালকাঠিতে কারাবন্ধী ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৪ জানুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ |

Image

হাসিবুর রহমান, ঝালকাঠি :

ঝালকাঠির কারাগারের কারারক্ষীদের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের এক নেতাকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কারাবন্দী ছাত্রলীগ নেতা মো. জুবায়ের হোসেন (৩৫)কে বুধবার দুপুরে   ঝালকাঠি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। হাতে ব্যান্ডেজ লাগানো অবস্থায় হাজির করলে বিষয়টি বিচারকের দৃষ্টিগোচর করেন তাঁর আইনজীবী।

      এ ঘটনায় বিচারক মো. মনিরুজ্জামান আগামী ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে বিষয়টি তদন্ত করে জেল কোড বিধি অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করছেন আসামি জুবায়েরের আইনজীবী বনি আমিন বাকলাই। মো. জুবায়ের হোসেন ঝালকাঠি শহর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। শহরের পূর্ব চাঁদকাঠি এলাকার মৃত মাওলানা আবদুল কাদেরের ছেলে। তিনি জেলা বিএনপি অফিস পোড়ানোর মামলায় প্রায় দুই মাস ধরে কারাগারে আছেন।

এ বিষয়ে আদালত প্রাঙ্গণে জুবায়ের হোসেন বলেন, বিভিন্ন অজুহাতে আমার কাছে কারারক্ষীরা টাকা চেয়ে আসছিলো। টাকা না দেওয়ায় গত ১৭ জানুয়ারি কারাগারের সুবেদার সোহাগ হোসেন, প্রধান কারারক্ষী আলাউদ্দিন মিয়া, কারারক্ষী ইদ্রিস মিয়া, গিয়াস উদ্দিন, শামীম হোসেন, নুরুল হক ও মুসা মিয়া আমাকে তিন দফায় সারা শরীরে বেধড়ক পিটিয়ে ফুলা জখম করে ডান হাত ভেঙে দেয়।

জুবায়েরের ভাই হুমায়ুন কবির বলেন, উপর্যুপরি মারধরের পরেও আমার ভাইকে কোন চিকিৎসা দেওয়া নাই। পরে যখন জুবায়ের ব্যথায় কাতরাচ্ছিল তখন কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করায়। আমার ভাই এত অসুস্থ থাকা সত্বেও তাঁকে কারাগারের হাসপাতালে রাখে নাই।

আদালতে উপস্থিত নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর এক এক আসামি বলেন, জুবায়েরকে কারারক্ষীরা খুব মেরেছে। এতে জুবায়ের ছাড়া অন্য কেউ আহত হয় নাই।

জুবায়েরের আইনজীবী বনি আমিন বাকলাই বলেন, বিষয়টি আদালতের বিচারকের নজরে আনলে তিনি জেল সুপারকে তদন্ত পূর্বক আদালতে প্রতিবেদনের জন্য আদেশ দেন।

এ বিষয় জেল সুপার আবদুল্লাহ ইবনে তোফাজ্জল হোসেন খান বলেন, কোন কারারক্ষী জুবায়েরকে মারধর করে নাই। জুবায়ের ওয়ার্ডে খাবার নিয়ে কয়েদীদের সাথে তর্ক বিতর্ক করলে নিজেরাই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে সে আহত হয়। সেই সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে আমাদের এক কারারক্ষী আহত হয়। সে বুধবার রাতে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।


আরও খবর



কে হবেন নতুন রাজনৈতিক দলের নেতা

প্রকাশিত:রবিবার ২৬ জানুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:রবিবার ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ |

Image

বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা আসছে ফেব্রুয়ারিতেই। নেতৃত্বে নাহিদ ইসলামের নাম আলোচনায় আছে।

ফেব্রুয়ারিতে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেবে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের কবর থেকে শুরু করে চট্টগ্রামে শহীদ ওয়াসিম আকরামের কবর পর্যন্ত পায়ে হেঁটে লংমার্চের মাধ্যমে এই ঘোষণা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

দলের নেতা কে হবেন?


এই দলের নেতৃত্বে কে থাকবেন, তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। এই আলোচনায় সামনের দিকেই আছেন তথ্য, টেলিকম ও আইসিটি উপদেষ্টা। বলা হচ্ছে, তিনি উপদেষ্টার পদ ছেড়ে নতুন এই রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে আসতে পারেন। তবে শিক্ষার্থীদের কোনো পক্ষ বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত করেনি।

নাহিদ ইসলাম কি উপদেষ্টার পদ ছেড়ে নতুন রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নিচ্ছেন? জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, এখনো বিষয়গুলো চূড়ান্ত হয়নি। দলের নাম ও কারা নেতৃত্বে আসবেন তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ছাত্র উপদেষ্টাদের কেউ যদি উপদেষ্টার পদ ছেড়ে রাজনৈতিক দলের দায়িত্বে আসতে চান আমরা তাদের স্বাগত জানাব। তবে এখন পর্যন্ত যেহেতু তারা সরকারে আছে, ফলে তাদের আমরা আলোচনায় ডাকছি না। প্রথম দিকে কেন্দ্রীয়, জেলা ও মহানগরের নেতৃত্ব ঠিক করা হচ্ছে। এরপর পর্যায়ক্রমে আমরা সারাদেশেই নতুন দলের কমিটি করব।

কাদের নিয়ে এ দল?


যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন বা অংশ নিয়েছেন তাদের একটি অংশ এই দলের অংশ হবে। এর বাইরে অন্যান্য দলের বা মতাবলম্বীদেরও এই দলে যোগ দেবার সুযোগ থাকছে বলে জানা গেছে।

নতুন এই রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে আর কারা আসবেন- এ প্রশ্নের জবাবে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, শুধু যারা আওয়ামী লীগের পক্ষে ফ্যাসিবাদ, গুম, খুন ও দুর্নীতির সাথে যারা জড়িত ছিল তাদের দলে নেয়া হবে না। এর বাইরে যেকোনো দল থেকে আসা নেতাকর্মীদের স্বাগত জানানো হবে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, এ পর্যন্ত আমরা ৩২৮টি থানা কমিটি করেছি। কিছুদিনের মধ্যে কমিটি গঠনের কাজ শেষ হবে।

এই নেতাদের কেউ কেউ বলেন, তাদের প্রধান টার্গেট বিএনপি। বিএনপির দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির নেতাদের দলে টানতে তারা কাজ করছেন। বিএনপি ভোটকেও টার্গেট করেছেন তারা।

নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, সিন্ডিকেট ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা ধারণ করেন এমন সব নাগরিকের জন্য নতুন রাজনৈতিক দলের দুয়ার উন্মুক্ত। শুধু বিএনপি নয়, অন্য যেকোনো দলের যে কেউ জুলাই চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে এলে স্বাগত জানানো হবে। তবে যারা অতীতে ফ্যাসিবাদী রাজনীতি তথা আওয়ামী লীগে যুক্ত ছিলেন, তাদের নেয়া হবে না। বিভিন্ন কমিটিতে কয়েকজন অতীতে আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ততার তথ্য গোপন করে ঢুকে পড়েছিলেন। তা জানামাত্র বহিষ্কার করা হয়েছে।

রাজনীতিতে কতটা প্রভাব পড়বে?


নতুন যে রাজনৈতিক দল আসছে, এটা কতটা প্রভাব ফেলবে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ করবে নতুন রাজনৈতিক দল এমন আশা করেন নাগরিক কমিটির সদস্যরা।

জানা গেছে, মূলনীতি এবং কর্মসূচি যাই হোক, চাঁদাবাজি-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ বিরক্ত থাকায়, এ ইস্যুতে আত্মপ্রকাশের আগে লংমার্চ কর্মসূচি দিচ্ছেন তারা। জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সূত্রগুলো জানিয়েছে, দল গঠনের পরও নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সক্রিয় থাকবে। আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক না থাকলেও নতুন রাজনৈতিক দলের সহযোগী হিসেবে কাজ করবে।

সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার পতন হলেও চাঁদাবাজি, দখলদারি বন্ধ হয়নি। এতে গণঅসন্তোষ রয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি-দখলের জন্য দায়ী করে তারা বলছেন, এটা জনগণের কাছে তুলে ধরা হবে।

এদিকে, এই দল ঘিরে ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি।
বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন,
তারা যেভাবে রাজনৈতিক দল করতে চাচ্ছে তাতে তো অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতার ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব যে কথা বলেছেন, তা সত্যি হচ্ছে। এখন কিন্তু জামায়াতসহ অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও একই কথা বলছেন। একজন সাধারণ মানুষকেও যদি প্রশ্ন করেন, সরকারের মধ্যে থেকে, বিশেষ করে উপদেষ্টারা যদি রাজনৈতিক দল গঠন করে, তাহলে কি প্রশ্ন উঠবে না? আমরা পত্রিকায় দেখছি, সরকারের কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থাও তাদের জন্য কাজ করছে। ফলে সরকার যেমন নিরপেক্ষতা হারাবে, তেমনি ছাত্রদের এই দলও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, এই রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ার সাথে আমরা উপদেষ্টাদের যুক্ত করিনি। তারা যদি আসেন তাহলে পদত্যাগ করেই আসবেন।

নাহিদ ইসলামও ইতোমধ্যে একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, উপদেষ্টাদের কেউ রাজনৈতিক দলের সাথে কাজ করতে গেলে পদত্যাগ করেই যাবেন। তবে প্রশাসনে যারা বিএনপিপন্থী আছেন তাদের নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন নাহিদ ইসলাম।

এদিকে, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এর আগে তো অনেক ছাত্র আন্দোলন হয়েছে, তখন কিন্তু আমরা ছাত্রদের রাজনৈতিক দল করতে দেখিনি। এখন যারা রাজনৈতিক দল করতে যাচ্ছেন তারা কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশ। কারণ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হয়েছিল সেখানে কিন্তু শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সবগুলো রাজনৈতিক দলও অংশ নিয়েছিল। হাসিনার বিদায়ের পর শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ ঘরে ফিরে গেছে। রাজনৈতিক দলগুলোও নিজেদের এজেন্ডা নিয়ে কাজ করছে। তাদের রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়াকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের সহযোগিতা নিয়ে তারা যে দল করতে যাচ্ছে সেটা মানুষ ভালো চোখে দেখছে না। আবার তাদের গঠনতন্ত্র, উদ্দেশ্য কী এগুলো লিখিত দিক। তখন বুঝা যাবে। তবে দলছুটদের নিয়ে গড়া কোনো দলই সফল হতে পারেনি। ফলে তাদের দল গঠনের প্রক্রিয়া পর্যন্ত আমাদের দেখতে হবে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরও খবর

বাংলাদেশী নাগরিকত্ব পরিত্যাগ বেড়েছে

সোমবার ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫




পাকিস্তান ভ্রমণে যুক্তরাজ্যের সতর্কবার্তা

প্রকাশিত:বুধবার ২৯ জানুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ |

Image

পাকিস্তানের বেশ কিছু অঞ্চলে ভ্রমণের ব্যাপারে নাগরিকদের জন্য সতর্কতা জারি করেছে যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিদেশ, কমনওয়েলথ এবং ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) এ সতর্কতা জারি করেছে। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

সতর্কবার্তায় পাকিস্তানের যেকোনো সীমান্ত এলাকায় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে নাগরিকদের নির্দেশ দিয়েছে এফসিডিও। পাশাপাশি পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখোয়ার বাজাউর, বান্নু, বুনের, চারসাদ্দা, ডেরা ইসমাইল খান, খাইবার, কোহাট, কুররম, লাক্কি মারওয়াত, লোয়ার দির, মোহমান্দ, ওরাকজাই, রাজধানী পেশোয়ার, সোয়াত, তাঙ্ক, উত্তর ওয়াজিরিস্তান, আপার দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান, লোয়ার দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান, মারদান, চিত্রল, মানসেরা জেলা— অর্থাৎ পুরো খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশ, পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে সংযোগস্থাপনকারী সড়ক কারাকোরাম হাইওয়ে এবং তার-সংলগ্ন গিলগিট-বাল্টিস্তানের চিলাস জেলা, আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরের সীমান্ত-সংলগ্ন ১০ মাইল এলাকা এবং বেলুচিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূল ছাড়া প্রদেশটির কোনো এলাকায় ভ্রমণ না করতে নাগরিকদের অনুরোধ করা হয়েছে এফসিডিওর বিবৃতিতে।


আরও খবর



জাতীয় সরকার ছাড়া জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা সম্ভব নয়

প্রকাশিত:রবিবার ২৬ জানুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:শনিবার ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ |

Image

জাতীয় সরকার ছাড়া জন-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা সম্ভব নয় মন্তব্য করে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বলেছেন, জাতীয় ঐক্য এবং সংহতির জন্য জাতীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে নতুন করে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করতে হবে।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে পেশাজীবী অধিকার পরিষদ আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ দাবি জানান।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জন-আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে ধাবিত হচ্ছে অভিযোগ করে ডাকসুর সাবেক ভিপি বলেন, গঠনের পর থেকে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে অন্তর্বতী সরকারের উপদেষ্টারা। সরকারের মধ্যে পরিবর্তন এনে রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। নির্বাচন ডিসেম্বরে বা জুনে যখনই হউক; জাতীয় সরকার ছাড়া কোনো সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। যে রাজনৈতিক দল জাতীয় সরকারে যাবে না, জনগণই তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। ৫ আগস্টের পরেই জাতীয় বা সর্বদলীয় সরকার গঠন জরুরি ছিল। কিন্তু সেটা করা হয় নাই। অন্তবর্তীকালীন সরকার নাম দিয়েই সরকারকে দুর্বল করা হয়েছে। এখন সরকার ও রাজনৈতিক দল মুখোমুখি দাঁড়াচ্ছে। এখন এই অবস্থা যদি চলতে থাকে তবে এই বিভাজনই আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দিবে।

আওয়ামী লীগকে নিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যদি সুযোগ পায়, তাহলে কিন্তু কাউকে ছাড়বে না। আওয়ামী লীগকে কামব্যাক করানোর জন্য ন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল অনেক এজেন্ট কাজ করবে, ফান্ড দেবে। কাজেই ছাত্রসহ সব রাজনৈতিক দলকে বলব, আওয়ামী লীগের প্রশ্নে আপনাদের অবস্থান পরিষ্কার করুন এবং করতেই হবে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে কোনো ছাত্রকে আমরা শক্ত অবস্থানে দেখছি না। এ বিষয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালানোর দরকার ছিল। কিন্তু বুঝতে পারছি না, তারা কেনো আওয়ামী লীগের প্রশ্নে একটা সুবিধাবাদী অবস্থায় আছে।

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রতি প্রশ্ন রেখে নুর বলেন, নির্বাচনে প্রত্যেক প্রার্থী ৮ থেকে ১০ কোটি টাকা খরচ করে। তারা ধান্দা করার জন্যই টাকা খরচ করে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সংস্কারে যারা কাজ করছেন, তারা কালো টাকা আর পেশিশক্তি ব্যবহার বন্ধে কি কাজ করেছেন আমাদের সেটা জানা নাই। নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে নূন্যতম একটি শর্ত রাখতে হবে। আর নির্বাচন কমিশনকেই প্রার্থীর পোস্টারসহ নূন্যতম খরচ দিতে হবে। এ সময় তিনি উপদেষ্টাদের ভূমিদস্যু এবং লুটেরা দুইটি গ্রুপের বৈঠকের অভিযোগ তোলেন।

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান সরকারের উদ্দেশে বলেন, কেন উপদেষ্টারা বিএনপিকে বলছে, তারা কি ১/১১ চায়? বিএনপি তো ১/১১ এর সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। বরং শোনা যাচ্ছে এই সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টার আশপাশে এক-এগারোর কুশীলবরা ঘোরাফেরা করছে। বরং মানুষের মনে উদ্বেগ যে, এ সরকার ব্যর্থ হয়ে আরেকটি এক-এগারো সৃষ্টি করে কি না।

তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারকে বলবো, ব্যর্থ হবেন না। সব রাজনৈতিক দল ও গণঅভ্যুত্থানের শক্তিকে নিয়ে বসুন। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে রোডম্যাপ প্রকাশ করুন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করার ফলাফল ভাল হবে না।

সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই সরকার গত সাড়ে ৫ মাসে সফলতার মুখ দেখতে পারেনি। বরং পদে পদে ব্যর্থ হয়েছে। এখনো কেনো শেখ পরিবার, আওয়ামী হাইকমান্ড ও তৃণমূল থেকে আওয়ামী পান্ডাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না? কেনো শহীদ পরিবার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছে না; শহীদ ও আহতদের সঠিক তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না? কেনো নিত্যপণ্যের দাম না কমিয়ে, ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানো হলো? সরকারের এসব ব্যর্থতা রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপানোর চেষ্টা করছে উপদেষ্টারা।

এসময় পেশাজীবী অধিকার পরিষদের সভাপতি ডা. জাফর মাহমুদের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর সদস্য আবু হানিফ, অ্যাডভোকেট নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, হাবিবুর রহমান রিজু প্রমুখ।


আরও খবর

গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণে আসবে সমতা

শুক্রবার ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫




নওগাঁয় গাজরের বাম্পার ফলন,সারে ৩ কোটি টাকা বিক্রির সম্ভাবনা

প্রকাশিত:সোমবার ২৭ জানুয়ারী ২০২৫ | হালনাগাদ:শনিবার ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ |

Image

শহিদুল ইসলাম জি এম মিঠন, সিনিয়র রিপোর্টার:

নওগাঁর মান্দা উপজেলায় অনুকুল আবহাওয়া ও উন্নত মানের বীজের কারণে এবারে গাজরের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজার দাম আশানুরুপ হওয়ায় সারে ৩ কোটি টাকার গাজর বিক্রির আশা করছেন কৃষকরা।

কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গাজর কন্দাল জাতীয় ফসল। নাতিশীতোঞ্চ আবহাওয়া এ চাষের জন্য উপযোগী। এবারে একটানা ঘন কুয়াশা ও দীর্ঘ মেয়াদী শৈত্য প্রবাহ ছিলো না। এ কারণে গাজরের বাম্পার ফলন হয়েছে। 

মান্দা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে মান্দা উপজেলায় প্রায় ৬০০ বিঘা জমিতে গাজরের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে বিলকরিল্যা, কুসুম্বা, বাদলঘাটাসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে এ ফসলের চাষ বেশি হয়ে থাকে। এ চাষ থেকে অন্তত ৭২ হাজার মণ গাজর উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য সারে ৩ কোটি টাকার উপরে। রবিবার নওগাঁর মান্দা উপজেলার বিলকরিল্যা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে ৯টি মেশিনের সাহায্যে গাজর পরিষ্কারের কাজ চলছে। গ্রামের গাজর চাষিরা খেত থেকে গাজর তুলে এসব মেশিনে পরিষ্কার করে নিচ্ছেন। পরে পাইকারদের কাছে দরদাম চুকিয়ে বিক্রি করে টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন তারা। এদিন প্রকার ভেদে প্রতিমণ গাজর ৫২০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

উপজেলার বিলকরিল্যা গ্রামের কৃষক হানিফ উদ্দিন মণ্ডল বলেন, এবারে আমি ১৫ বিঘা জমিতে গাজরের চাষ করেছি। হালচাষ, সার-বীজ, কীটনাশক ও পরিচর্যা সহ প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ১৪ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। উৎপাদন হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ মণ করে। খরচ বাদে প্রতি বিঘায় আমার ৪০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা লাভ থাকবে।

একই গ্রামের কৃষক আবুল বাশার বলেন, প্রতি বারের মতো এবারেও গ্রামের বিভিন্ন পয়েন্টে ৯টি মেশিনের সাহায্যে গাজর পরিষ্কারের কাজ চলছে। এজন্য এক মণ গাজরে দিতে হচ্ছে ২৫ টাকা করে। প্রতিদিন এসব পয়েন্টে অন্তত ২ হাজার মণ গাজর প্রসেসিং করা হয়। এরপর ট্রাকে করে নওগাঁ, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, অনুকুল আবহাওয়ার কারণে এবারে গাজরের বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদনের সঙ্গে বাজারে দামও ভালো। এবারে মান্দা উপজেলা থেকে সারে ৩ কোটি টাকার উপরে গাজর বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। এতে কৃষকেরা আশানুরুপ লাভবান হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।


আরও খবর