মো: আতোয়ার রহমান মনির,লক্ষ্মীপুর :
প্রজনন মৌসুমে‘ মা ইলিশ’ রক্ষায় উপকূলীয় মেঘনার লক্ষ্মীপুরের রামগতির আলেকজান্ডার থেকে চাঁদপুরের ষাটনল এলাকার ১শ’ কিলোমিটার পর্যন্ত ঘোষিত অভয়াশ্রম এলাকায় ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশসহ সকল ধরনের মাছধরা নিষিদ্ধ করেছে জেলা মৎস্য বিভাগ। এ সময় ইলিশ ধরা বন্ধে অভিযান চালাবে নৌ-পুলিশ,কোস্টগার্ডসহ মৎস্য বিভাগ।
জাটকা সংরক্ষন ও মা ইলিশ রক্ষায় শনিবার মধ্যরাত ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত ২২দিন মেঘনা নদীতে সকল ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এই নিষেধাজ্ঞার সময় প্রতি জেলে ভিজিএফের চাল পাবে ২৫ কেজি। এই সময়ে বরাদ্ধকৃত চাল লুটপাট না করে সঠিক তালিকা তৈরি করে দ্রুত তা বাস্তবায়নের দাবী জানান জেলেরা। তবে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলছেন,নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করার জন্য নদীতে মৎস্য বিভাগ,উপজেলা-জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও কোষ্টগার্ডের সমন্বয়ে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করা হবে। গত বছরের অভিযান সফল হওয়ায় মাছের উৎপাদন বাড়ছে বলে দাবী করেন তিনি।
এরইমধ্যে মেঘনা নদী থেকে তীরে ফিরতে শুরু করেছেন লক্ষ্মীপুরের জেলেরা। জালসহ অন্যান্য মালামাল গুছিয়ে তুলছেন অনেক জেলে। ২২ দিন সব ধরনের মাছধরা বন্ধ ধাকবে এ কারনে এর মধ্যে জাল সারাইয়ের কাজ করছেন কেউ কেউ।
জানাগেছে, বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় মেঘনা উপকূলে বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় ৫২ হাজার জেলে কর্মহীন থাকবে। এদের অধিকাংশই বিকল্প কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় জাল বুনে দিন পার করছেন। এখানকার জেলেরা বলছেন, তাদের কেউ কেউ জাল, নৌকা ও ট্রলারসহ মাছ ধরার যাবতীয় সরঞ্জাম মেরামত করছেন। বিগত সময়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে চাল না পাওয়ায় কেউ আবার পুর্নবাসনের দাবী হিসেবে নিষেজ্ঞার আগেরই সেনাবাহিনীর মাধ্যমে সঠিক জেলেদের খাদ্য সহায়তা প্রদানের করার দাবী তুলেছেন।
কমলনগরের জেলে তাফাজ্জল হোসেন,একেতো উপার্জন বন্ধ,তার উপর সরকারি প্রণোদনা পান না তারা। আর পরিবার পরিজন নিয়ে দিন কাটানোর চিন্তায় হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন এতে দু'বেলা খাবার জোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। এ সময়ে বিকল্প কর্মসংস্থান না থাকায় কর্মহীন বেকার সময়ে সংসার চালানোর দুশ্চিন্তার ভাঁজ বলছেন তিনিসহ অসংঙ্খ জেলেরা।
মতির হাট এলাকার ট্রলারের মালিক সাহাজালাল বলেন, আমার এই ট্রলারে ২১ জন লোক আছে। তাদের মধ্যে অনেকেই ব্যাংক ঋণে জর্জরিত, মাছ ধরে সেই ঋণ পরিশোধ করে। এখন এই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। মাছ ধরতে না পারলে তাদের এই ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবে। তাই এই জেলেদের অভিযানের আগেই দ্রুত চাল দিলে কিছুটা হলেও তাদের কষ্ট দূর হবে।
জেলে রফিজল হাওলাদার বলেন, বিগত অভিযানে সরকার চাউল দেছে। তা পাই নাই। এবার ২২ দিনের অভিযান । জেলে সন্তান নিয়ে কিভাবে চলবে ২২ দিন। এ জন্য দ্রুত চাল দেয়ার দাবি তার।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় প্রায় ৫২ হাজার জেলে রয়েছে। মেঘনা নদী নির্ভরশীল সরকারি তালিকায় এদের মধ্যে ৪৩ হাজার ৪ শত ৭২ জন জেলে নিবন্ধিত রয়েছে। এদের অধিকাংশই মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। আর নিষেধাজ্ঞা সময়ের ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ঘোষিত এলাকায় সকল ধরণের মাছ ধরা,সংরক্ষণ,আহরণ,বাজারজাতকরণ, মজুদকরণ ও পরিবহন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মৎস্য বিভাগ। এর মধ্যে খাদ্য সহায়তা এসেছে ৩৯ হাজার ৭ শত ৫০ জন জেলে পরিবারের জন্য ৯ শত ৯৩ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। যথা শীঘ্রই চালু পেয়ে যাবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা : মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলছেন, ১৩ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে ২২ দিনের জন্য ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা। এসময় ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করতে ইলিশসহ সকল প্রকার মাছ ধরা, পরিবহন, বিক্রি করার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তিনি আরো বলছেন, নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরাই বেশি বেকার হয়। এখানে কোনো কলকারখানা না থাকায়, তাঁদের বিকল্প কর্মসংস্থান নেই। নির্দিষ্ট সময়ে জেলেদের ২০ কেজির চালের পরিবর্তে ২৫ কেজি করে ৩৯ হাজার ৭ শত ৫০ জন জেলে পরিবারের জন্য ৯ শত ৯৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে জেল, জরিমানা সহ বিভিন্ন শাস্তির কথা জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা।
জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার বলেন, ইতিমধ্যে বরাদ্ধকৃত ভিজিএফের চাল জেলেদের মাঝে বিতরন করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক জেলেকে ২৫ কেজি হারে চাল দেয়া হবে। কেউ বাধ যাবেনা। নিষেধাজ্ঞা মেনে জেলেরা নদীতে যাবে না বলে আশা করেন তিনি। বলেন, যারা আইন অমান্য করবে,তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে জেল-জরিমানা করা হবে। এটি বাস্তবায়নে কাজ করছে সরকার।