গোবিন্দ শীল, সিনিয়র সাংবাদিক ও কলাম লেখক ঃ
আমরা বুঝি রাগ করলে ঐসময় আমাদের মস্তিষ্ক আক্রোশ দেখানো বা আক্রমণ করা ছাড়া অন্য কোন কাজই করতে পারে না ।
মানব মস্তিষ্কের দু’টি অংশের মধ্যে প্রায় সব-সময়ই যোগাযোগ হয় । সৃজনশীল মনের জন্য, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা ও দীর্ঘ-মেয়াদী শান্তির জন্য এই যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এই দুটি অংশ হলো---একটি ঠিক কপালের পেছনে, যাকে প্রি-ফন্টাল কর্টেক্স (pfc) বলা হয় । আরেকটি হলো এমিগডালা । এর মধ্যে পিএফসি হলো মস্তিষ্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ । আমাদের দীর্ঘ মেয়াদী চিন্তা, পরিকল্পনা, সাহিত্য-সংগীত রচনা ইত্যাদি কাজের জন্য পিএফসি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । আমাদের দুই-কানের মাঝ দিয়ে একটি কাল্পনিক রেখা ও দুই-ভ্রুর মাঝখান দিয়ে পেছনের দিকে আরেকটি কাল্পনিক রেখা টানলে যে অংশে এ দুটি রেখা পরষ্পরকে ছেদ করে, সেটিই এমিগডালা । এটি আমাদের সবচেয়ে প্রাচীন মস্তিষ্ক । সে সময় অন্য প্রাণীর হাত থেকে বাঁচার জন্য এই এমিগডালাই আমাদের সতর্ক করে দিত । এখানেই আমাদের অনেক ধরণের আবেগ, যেমন, ভয়, রাগ, আক্রোশ ইত্যাদি তৈরী হয় । এমিগডালা এতটাই শক্তিশালী যে প্রয়োজনে ( যেমন জীবন বাঁচানোর জন্য পালাতে হবে ), পুরো মস্তিষ্ককে এটি অকেজো করে দিতে পারে । বিষয়টিকে বলা হয়ে ‘এমিগডালা হাইজ্যাক’ । এসময় মস্তিষ্কের কোন অংশই কাজ করে না । গবেষণায় দেখা গেছে, মানুষ রাগ করলে সেটি অন্তত ১৮ মিনিট স্থায়ী হতে পারে । এসময়ে ব্রেনের অন্যান্য অংশ কোন কাজ করতে পারে না । যে কোন ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরী হলে পিএফসি প্রথমে বোঝার চেষ্টা করে, উদ্ভূত পরিস্থিতিটি সত্যি সত্যি জীবনের জন্য হুমকি কিনা । আমরা আমাদের জীবনে এরকম পরিস্থিতির শিকার হয়েছি একাধিকবার । ক্যাম্পাসে বোমা ফুটলে এমিগডালা বলে পালাও আর প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স বোঝার চেষ্টা করে হুমকিটি কতটা ভয়াবহ ! সেরকম কিছু না হলে পিএফসি এমিগডালাকে বলে ‘কাম-ডাউন বাডি…” ইট ইজ নট ওয়ার্থী রানিং…
দীর্ঘদিন মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে, মেলা-মেশা কম করলে, বিনোদনের ঘাটতি হলে এমিগডালা মনের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তার করতে পারে । অনেক সময় বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ শরীরে ঢুকলে এটি এমিগডালাকে সক্রিয় করে রাখে । এমিগডালা বেশির ভাগ সময় সক্রিয় থাকলে ঘুমের ব্যাঘাত, ক্ষুধামন্দা, মানসিক অবসাদ সহ নানা রকম সমস্যা হতে পারে । বিপরীতক্রমে, পিএফসি ব্রেনের একটি বিচক্ষণ জায়গা । এটিকে শান্ত রাখার জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশে হাঁটাহাঁটি, ব্যায়াম, মেডিটেশন, আড্ডা ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে । তবে, এ্যালকোহল ও অন্যান্য ড্রাগ নিলে পিএফসি দুবল হয়ে পড়ে ।
এমিগডালার সাথে চোখ, কান ও অন্যান্য পঞ্চনেন্দ্রিয় সরাসরি জড়িত যাতে করে মস্তিষ্ক পরিবেশ থেকে ভয়-ডর ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য নিতে পারে । মানসিক ভারসাম্য ও বিকাশের জন্য তাই ব্রেনের এই দুই অংশের মধ্যে অর্থপূর্ণ যোগাযোগ খুবই প্রয়োজনীয় । কিন্তু যেটি আমাদের বেশি দরকার সেটি হলো পিএফসির যত্ন নেয়া ।