সামনে বর্ষাকাল আর বর্ষা এলেই বেড়ে যায় ছাতার চাহিদা। গ্রাম বাংলার
ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে বর্ষায় ছাতা মাথায় ঘোরাফেরা।
যুগের আবর্তনে ছাতা
তৈরিতে এসেছে নতুনত্ব এবং গ্রাম থেকে শহরে সব স্থানে বেড়েছে এর চাহিদা। এ ছাতা
তৈরির এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছেন ময়মনসিংহের এক সংগ্রামী কারিগর।
নাম ঈমান আলী, বয়স ৭০ বছরের বেশি। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সকালের নাস্তা সেরে
পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে হালকা পাতলা গড়নের শরীর নিয়ে হেলেদুলে হেঁটে দীর্ঘ ছয়
কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিয়ে শহরের দোকানে যান ঈমান আলী।
দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে
থেকে তিনি ছাতা তৈরি করে আসছেন। শহরের একটি দোকানে ছাতা তৈরি করেন। ঈমান আলীর
কাজের স্পৃহা দেখে অভিভূত বর্তমান প্রজন্মের তরুণরা। অনেকের কাছে এটা গল্পের মতো
মনে হয়।
ওই দোকানে গিয়ে দেখা যায়, ঈমান আলী মোটা ফ্রেমের চশমা চোখে দিয়ে একটার পর একটা
ছাতা তৈরি করে যাচ্ছেন। সামনে ঈদ এবং গরম পড়তে শুরু করেছে, হবে বৃষ্টিও। সেজন্য
ছাতার চাহিদা বেড়েছে। ফলে বেড়েছে কাজের চাপ।
ঈমান আলীর বলেন, আমার
চাচার কাছ থেকে ছাতা তৈরি করতে শিখেছি। আমাদের সময়ে মানে স্বাধীনতার আগে তেমন কাজ
পাওয়া যেতো না। সেই সময়টাতে আমার চাচা ভালো ছাতা তৈরি করতেন। তখন চাচার সঙ্গে থেকে
ছাতা তৈরি করতে শিখেছি। বলতে পারেন, কিছুটা বাধ্য আর কিছুটা নেশায় পড়ে এ পেশা বেছে
নেওয়া।
তিনি আরও বলেন, ছাতা
বানানো এখন আমার নেশায় পরিণত হয়েছে। আমি এখন কাজ না করে থাকতে পারি না। আমার কাছে
এ কাজটা এখন খুবই সহজ লাগে। এখন আমার একটা ছাতা তৈরি করতে সর্বোচ্চ সময় লাগে ১৫
মিনিট। আমি একদিনে প্রায় ৩৬-৪৮টা ছাতা বানাতে পারি। আমার তৈরি করা ছাতা চলে যায়
গ্রামের হাট-বাজারে। সেখানে এসব ছাতা খুচরা দামে বিক্রি করা হয়। আগে আমি বাইরে বসে
ছাতা তৈরি করতাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ময়মনসিংহ নগরের ছোটবাজারের এ ছাতার
দোকানটিতে কাজ শুরু করি, এখনো করছি। বর্তমানে দিনে ছাতা বানিয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা
আয় হয়।
আমি বছরের নয় মাস ছাতা
তৈরি করি। আর বাকি তিন মাস অন্য কাজ করি। ফাল্গুন থেকে শ্রাবণ এ চার মাস ছাতার
চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। এ সময়টাতে বেশি ছাতা বিক্রি করা হয়। ছাতা বানিয়ে আমার
পাঁচ সন্তানকে বড় করে বিয়ে দিয়েছি। কাজ করতে করতে এখন ছাতা তৈরি করা আমার এক রকম
নেশায় পরিণত হয়েছে।
ঈমান আলীর মেজো ছেলে
আমিরুল ইসলাম (৪০) বলেন, আমার বাবা আমাদের জন্মের আগে থেকে ছাতা তৈরির কাজ করেন।
আমাদের তিনি এ কাজ করে বড় করেছেন।
ঈমান আলীর ছোট ছেলের
স্ত্রী ফারজানা আক্তার বলেন, আমার শ্বশুর খুবই সহজ সরল একজন মানুষ। তিনি তার কাজ
করে আনন্দ পান। তিনি এতই কাজ পাগল একজন মানুষ যে দোকানে না গেলে ভালো লাগে না।
ঈমান আলী যে দোকানে
কাজ করেন নব-ছাতা দোকানের মালিক নব কুমার সাহা বলেন, ঈমান আলী খুবই সৎ এবং কাজ
পাগল মানুষ। তিনি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এখনও আমাদের দোকানে ছাতা তৈরি করে
আসছেন। তার কাজের দক্ষতা অসাধারণ। আমরা তার মতো একজন কর্মী পেয়ে খুবই খুশি।