Logo
শিরোনাম

অপরিকল্পিত ব্যয়, দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব নয়

প্রকাশিত:শুক্রবার ২১ এপ্রিল ২০২৩ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ |

Image

মাজহারুল ইসলাম মাসুম, সিনিয়র সাংবাদিক, লেখক, গবেষক :

উন্নয়ন প্রশাসনকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালীকরণ অধিক জরুরি। এ ধরনের প্রশাসনের দুর্বল দিকগুলো যথাযথ সংস্কার করে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও গ্রামীণ দারিদ্র্যপীড়িত জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি তাদের জীবন ধারার মানোন্নয়নে এ ধরনের প্রশাসন ব্যবস্থা কার্যকরীকরণ বর্তমান দেশের জন্য একান্ত অপরিহার্য।

জনগণের ক্ষমতায়ন, আইনের শাসন, জবাবদিহিতা ও স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা ব্যতীত বিক্ষিপ্ত এবং অপরিকল্পিতভাবে টাকা ব্যয় করে দারিদ্র্যবিমোচন করা সম্ভব নয়। সব পর্যায়ে গণতন্ত্রায়নের জন্য প্রয়োজন নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার। যে ব্যবস্থায় অসহায় গরিব মানুষ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে ক্ষমতায় যেতে পারে। যেখানে পুঁজিবাদীদের কুদৃষ্টি এ কাজের প্রধান প্রতিবন্ধকতা ও দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রধান অন্তরায়। দেশের অর্ধেক মানুষকে দারিদ্র্যসীমার নিচে স্থিতাবস্থায় রেখে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। এ জন্য দরিদ্র জনগণের দিকে লক্ষ করে হলেও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে কার্যকরী ও শক্তিশালীকরণ পাশাপাশি ক্ষুদ্র ঋণের প্রসার সাধনে সরকার, ব্যাংক এবং এনজিওদের সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণ করা অধিক জরুরি।

এমনিতেই এ দেশের জনগণ চলমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নানাবিধ বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে কোনোরকম দিন অতিবাহিত করছে। এর মধ্যে আবার দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, বাড়িভাড়া ও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি সেগুলোর দারুণ সঙ্কটের কারণে বর্তমানে এ দেশের জনগণ এক প্রকার দিশেহারা ও ওষ্ঠাগত হয়ে পরেছে।

বর্তমানে পুঁজিবাদীদের কথামতো মুক্তবাজার অর্থনীতি গ্রহণ করতে গিয়ে আমাদের মতো দেশগুলো তাদের শর্তের ফাঁদে পড়ে আত্মঘাতী ধ্বংসাত্মক দিকে আমরা ক্রমাগত অগ্রসর হচ্ছি, যা সত্যিই ভয়াবহ ভীতির কারণ। এ ক্ষেত্রে এ দেশে পুঁজিবাদীরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার সপ্রসারণ, প্রচার ও প্রসার করছে ঠিকই কিন্তু পক্ষান্তরে আমাদের দেশের উৎপাদিত পণ্যের বাজার ধনী রাষ্ট্রগুলোতে প্রবেশের ক্ষেত্রে তৈরি করছে হাজারো শর্তের দেয়াল। এ ক্ষেত্রে আমাদের বিকল্প পথ দেখতে হবে, এ ধরনের বিশাল বৈষম্য রোধে নতুন অর্থনৈতিক নীতি প্রবর্তন করতে হবে এবং নতুন অর্থনৈতিক দর্শনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। যেখানে সামাজিক বাজার অর্থনীতি, সমাজ ও রাষ্ট্র মূল প্রহরীর ভূমিকা পালন করবে।

এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারকেন্দ্রিক উন্নয়ন ভাবনা সংবিধান নির্দেশিত পথে যথাযথ পরিচালিত করতে হবে- এ ব্যাপারে নীতি নির্ধারকদের কোনো প্রকার টালবাহানা চলবে না, এর জন্য স্থানীয় সরকারের অনুকলে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন ও ক্ষমতায়ন যথাযথ প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সম্ভব হলে ৪০ শতাংশ রাজস্ব বাজেট সরাসরি স্থানীয় সরকারকে দিতে হবে। সব সিডিউল ব্যাংকের কমপক্ষে ৫-৬ শতাংশ দারিদ্র্যবিমোচনের জন্য দিতে হবে। স্থানীয় সরকারকে গ্রামীণ জনগণের জন্য উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে তৈরি করতে হবে। স্থানীয় সরকারের সাথে গ্রামীণ অর্থনীতি ও গ্রামীণ অর্থনীতির সাথে জাতীয় অর্থনীতির সংযোগ স্থাপন করতে হবে। এগুলো করতে পারলে দারিদ্র্যবিমোচনের পথ সুগম হবে ও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হবে বলে আমরা আশা রাখি।

দারিদ্র্যবিমোচনের ক্ষেত্রে ভূমি সংস্কারের দিকেও সরকারকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের জন্য অধিক বরাদ্দ এবং বিনিয়োগ বোর্ডকে কার্যকরী করতে হবে। কৃষিপণ্য উৎপাদন ও রফতানির জন্য সরকারকে বিশেষ সহযোগিতা দানের ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রামীণ অবহেলিত জনগণের জন্য দুর্যোগ তহবিল ট্রাস্ট গঠন করতে হবে। এক পদ্ধতির শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। জিডিপিতে শিক্ষা খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখতে হবে। শর্তহীন বাজার অর্থনীতি বাতিল করতে হবে। উৎপাদিত পণ্য ও কৃষিক্ষেত্রের ওপর অধিক ভর্তুকি দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে লাভ-ক্ষতির বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। আমাদের দেশের সামাজিক পরিবর্তনের ধারক যেমন- ক্ষুদ্র চাষি, প্রবাসী শ্রমিক, ক্ষুদ্রশিল্প মালিক, গামের্ন্ট ও টেক্সটাইল শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতী ও পেশাজীবী গোষ্ঠী এদের যথাযথ ক্ষমতায়ন করতে হবে। এদের বাদ দিয়ে দেশে দারিদ্র্যবিমোচন সম্ভব নয়। তাই রাষ্ট্রের উচিত দারিদ্র্যবিমোচনের জন্য এদের হাতকে আগে অধিক শক্তিশালী করা।

বর্তমানে আমাদের দেশের নীতিনির্ধারক, রাজনীতিবিদ, আমলা, উচ্চবিত্ত- এদেরকে কথায় নয়, সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেমিক হতে হবে এবং ধনী ও গরিব, গ্রাম ও শহরের মধ্যে বৈষম্য রোধে একদৃষ্টি মনোভাব ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মূলত এ বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে ভমি ব্যবস্থার অসম মালিকানা ও বণ্টনের মাধ্যমে, ট্যাক্সের টাকা প্রতিরক্ষাসহ নীতিনির্ধারকদের ব্যক্তিগত অন্যান্য খাতে অধিক ব্যয়ের মাধ্যমে। যদিও আমরা সবাইকে ভালোভাবে জানি, এ দেশে পুঁজিবাদীদের স্বার্থরক্ষা করে এই রাষ্ট্রের একার পক্ষে দারিদ্র্য হ্রাস করা করা সম্ভব নয়। তারপরও আশা রাখি, যদি এ দেশের নীতিনির্ধারকরা দারিদ্র্যবিমোচনকে গুরুত্বপূর্ণ অ্যাজেন্ডায় রেখে কৃষিপ্রধান আমাদের এই দেশে প্রয়োজনীয় কৃষি ব্যবস্থার সংস্কার, সর্বজনীন আধুনিক শিক্ষা, কৃষি ও কারিগরি শিক্ষা সবার জন্য নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে স্থানীয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও স্থানীয় উন্নয়নে স্থানীয় প্রশাসনের বাজেট প্রণয়ন জরুরি এবং তা যথাযথ বাস্তবায়ন করার পথ তৈরী করা যায় তবে দারিদ্র্যবিমোচনের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে মুক্তবাজার অর্থনীতির নামে পুঁজিবাদের থাবা থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত না এই থাবা থেকে আমরা মুক্তি পাচ্ছি ততদিন পর্যন্ত দারিদ্র্য হ্রাস করা সম্ভব হবে না।

এ কাজটি বাস্তবায়নে সরকারকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক- সব পর্যায়ের ব্যক্তির মতামত ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন অর্থনৈতিক দর্শনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে এবং দারিদ্র্যবিমোচনে উদ্যোগী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে নিজেদের সমস্যা নিজেদেরই সমাধানের পথ আবিষ্কার করতে হবে।

অতি স্বল্পসময়ের মধ্যে আমাদের এই ছোট দেশের ঈষর্ণীয় অগ্রগতি ও বড় বড় সাফল্য যা অন্য দেশকে ভাবিয়ে তুলছে। আবার অনেকের কাছে আমাদের এই অগ্রগতি তাদের চোখের শূলে পরিণত করছে। ফলে দেশের অভ্যন্তরে ও বহির্বিশ্বে দেশকে নিয়ে না ষড়ষন্ত্র চলছে, যা কাম্য নয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের বড় সাফল্য। আমাদের দেশের কৃষকরা পারে বাম্পার ফসল ফলাতে, আমাদের আছে বিশাল মানবসম্পদ- এদেরকে যদি একটু সহযোগিতা করা যায় এবং স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মের জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলা যায়, তবে এ দেশের ঘুরে দাঁড়াতে তেমন বেশি সময় লাগবে না। যে দেশের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি এবং যে দেশের মাটি থেকে সোনা ফলে, সে দেশ কেন পিছিয়ে থাকবে, ঋণের জন্য পুঁজিবাদীদের ঋণের বিশাল ফাঁদে পা দেবে?

আমাদের সামাজিক পুঁজিকে কাজে লাগাতে উদ্যোগী হতে হবে। উন্নয়নশীল দেশগুলো যেভাবে নিজেদের ভাগ্য নিজেরা রচনা করেছে- এই দর্শনে আমাদের কর্মপরিধি ঠিক করতে হবে। দেশে বিরাজমান টলমলে রাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েমের চেয়ে সামাজিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। সামাজিক গণতন্ত্র যেসব দেশে বিরাজমান সেসব দেশের জনগণ তাদের সর্বনিম্ন চাহিদা মিটিয়ে বেঁচে থাকতে পারে। যার কোনো কর্মসংস্থান নেই সে-ও দারিদ্র্যের অভিশাপে অভিশপ্ত হন না। এ ক্ষেত্রে সমাজই এগিয়ে আসে ওইসব দুস্থ ও দারিদ্র্যদের সাহায্যে এবং তাদের প্রয়োজন মেটাতে।

আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকরা এ ধরনের সৃষ্টিশীল উদ্যোগ গ্রহণের দিকে নজর দেয়ার সময়ই পায়নি। আমাদের দেশের নীতিনির্ধারকদের প্রতি আমাদের অনুরোধ- ক্ষমতার উৎস এসব জনগণের ভাগ্য নির্মাণে স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে শক্তিশালী করুন এবং এ দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করান। শুধু আপনাদের রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ব্যক্তিগত ও দলীয় পর্যায়ের প্রভাব-বৈভব হিসেবে না দেখে দেশের গণতন্ত্র এবং অর্থনীতিকে মজবুত ও স্থিতিশীল করুন, পুঁজিবাদী ও প্রভুরাষ্ট্রের শক্তির মনতুষ্টির চেষ্টা থেকে বিরত থাকুন এবং এ দেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের ওপর আস্থা ও ভরসা রাখুন।

গ্রামীণ অবহেলিত জনমানুষের ভাগ্য নির্মাণে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা ব্যতীত দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নসহ জাতীয় উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে দেশের রাজনৈতিক নেতাদের কাছে অনুরোধ- আপনাদের রাজনৈতিক শক্তিকে ব্যবহার করে প্রভুরাষ্ট্রের গোলামি ভুলে দেশের সার্বিক উন্নয়নে দেশকে ভালোবাসুন, পাশাপাশি ক্ষমতার উৎস জনগণের সার্বিক মঙ্গলে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করুন, দারিদ্র্যবিমোচনই হোক আপনাদের দেশ ও জাতির অর্থনীতির মুক্তির জন্য প্রধান অ্যাজেন্ডা।

 


আরও খবর

থেমে যাওয়া মানে জীবন নয়

রবিবার ২৩ এপ্রিল 20২৩




ঘরমুখী মানুষের চাপ বেড়েছে কমলাপুরে

প্রকাশিত:মঙ্গলবার ০৯ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ |

Image

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ফাঁকা হচ্ছে ঢাকা। নাড়ির টানে বাড়ির পথে মানুষ। এতে বাস, লঞ্চ টার্মিনালের মতো কমলাপুর রেলস্টেশনেও বেড়েছে চাপ। এদিকে শেষ মুহূর্তের দিন ট্রেন যাত্রায় ভেঙে পড়েছে রেলের নিয়মশৃঙ্খলা। ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) ভোর থেকেই রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ছাদ ভর্তি যাত্রী নিয়েই রওয়ানা করছে ট্রেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঈদে বাড়ি ফেরার তাগিদে সকাল থেকে স্টেশন ভিড় করছেন যাত্রীরা। অনেকের ট্রেনের সময় হয়নি কিন্তু আগেই চলে এসেছেন। অনেকে টিকিট পাননি কিন্তু এসেছেন, কোনোভাবে যাওয়া যায় কিনা। টিকিট কাউন্টারের সামনেও কিছু লোকের জটলা চোখে পড়েছে। প্ল্যাটফর্মে তো মানুষে মানুষে ভরপুর।

এছাড়া ভোর থেকে কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাওয়া ময়মনসিংহ-জামালপুর আর উত্তরবঙ্গের সব ট্রেনেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। ট্রেনের ভেতর গাদাগাদি করেই উঠছে ঘরে ফেরা মানুষেরা। বাড়ি ফিরতে মরিয়া যাত্রীরা ট্রেনের সিট না পেয়ে উঠেছেন ছাদে। তীব্র গরমেও ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুন। তবে স্বস্তির খবর প্রতিটি ট্রেন কমলাপুর থেকে শিডিউল মেনে সঠিক সময়ে ছাড়ছে। ভোগান্তি থাকলেও যথাসময়ে ট্রেন যাত্রা করায় স্বস্তির কথা জানিয়েছে কেউ কেউ।

রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রী মারিয়া বলেন, নিদির্ষ্ট সময়ে ট্রেন পাওয়া ঈদের আগে যেন বাড়তি আনন্দ। সময়মতোই পরিবারের কাছে যেতে পারবো, এই ভেবে বাকি কষ্ট, কষ্টই মনে হচ্ছে না।

সুন্দরবন এক্সপ্রেসের যাত্রী আজাদ হোসেন বলেন, অনলাইনে টিকিট কাটায় কোন ভোগান্তি হয়নি। আর এখানে এসে মানুষের চাপের কারণে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। তবে এটি ঈদে স্বাভাবিক পরিস্থিতি। আমরা এতে অভ্যস্থ।

কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ১৭টি ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে কমলাপুর ছেড়েছে। আজ সকাল থেকে যাত্রীদের চাপ বাড়লেও সবগুলো ট্রেন যথাসময়ে স্টেশন ছেড়ে গেছে। যাত্রী সাধারণের কোন অভিযোগ-আপত্তি নেই। দিনের বাকি সময়ও নিরাপদ যাত্রা হবে বলে আশা করছি।


আরও খবর



মেসি নৈপুণ্যে স্বস্তির জয় পেল মায়ামি

প্রকাশিত:রবিবার ১৪ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ |

Image

সময়টা ভালো যাচ্ছিলো না ইন্টার মায়ামির। শেষ পাঁচ ম্যাচের একটাতেও জিততে পারেনি তারা। শেষ ম্যাচে গোল করেও মেসি জেতাতে পারেননি দলকে। তবে আজ আর ভুল করেননি, গোল করে, করিয়ে মায়ামির ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে দিলেন তিনি।

রোববার সকালে মেজর সকার লিগে কানসাস সিটির বিপক্ষে তাদের ঘরের মাঠে খেলতে নামে ইন্টার মায়ামি। দারুণ লড়াই হলেও শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে সফরকারীরা। এ জয়ে ইস্টার্ন কনফারেন্সের শীর্ষস্থান ফিরে পেয়েছে মায়ামি। ৯ ম্যাচে পয়েন্ট ১৫।


চোটের কারণে টানা পাঁচ ম্যাচ খেলতে পারেননি মেসি। মন্তেরির বিপক্ষে কনক্যাকাফ চ্যাম্পিয়নস কাপের ম্যাচ দিয়ে দ্বিতীয়ার্ধে ফিরলেও সেদিন পুরোপুরি ছন্দে দেখা যায়নি আর্জেন্টাইন অধিনায়ককে। তবে আজ ম্যাচের শুরু থেকেই মেসি ছিলেন উজ্জ্বল। তাতে আলোর মুখ দেখে মায়ামিও।

তবে কানসাসের মাঠে প্রায় ৭৩ হাজার দর্শকের সামনে শুরুতে পিছিয়ে পড়ে মেসির মায়ামি। ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটেই বাঁ প্রান্ত দিয়ে এরিক টমির গোলে এগিয়ে যায় এসকেসি। অবশ্য সমতায় ফিরতে খুব একটা অপেক্ষা করতে হয়নি মায়ামিকে। মেসির সুবাদে দ্রুত ফেরে সমতায়।

ম্যাচের ১৮তম মিনিটে মেসির অসাধারণ অ্যাসিস্টে দলকে সমতায় ফেরান গোমেজ। এরপর আরো বেশকিছু আক্রমণ করলেও ব্যবধান বাড়াতে পারেনি মায়ামি। প্রথমার্ধের বাকি সময়ে তেমন কোনো জোরালো আক্রমণ না হওয়ায় সমতায় থেকে বিরতিতে যায় দুদল।

 

তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই মায়ামিকে এগিয়ে দেন মেসি। ৫১ মিনিটে গোলের দেখা পান বিশ্বকাপজয়ী এই তারকা। ডেভিড রুইজের কাছ থেকে বক্সের বাইরে বল পেয়ে চোখ ধাঁধানো শটে বল জালে জড়ান তিনি। চলতি মৌসুমে মায়ামির হয়ে ৫ ম্যাচে যা মেসির পঞ্চম গোল, সাথে আছে পাঁচ অ্যাসিস্টও।

এগিয়ে যাওয়ার আনন্দটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি মায়ামির। ৫৮ মিনিটে নিজের ও দলের দ্বিতীয় গোলে কানসাসকে সমতায় ফেরান টমি। ২-২ সমতায় খেলা তখন জমে ক্ষীর। জয়সূচক গোলের জন্যে দুই দলই চালাতে থাকে একের পর এক আক্রমণ।

তবে সব সংশয় উড়িয়ে দেন লুইস সুয়ারেজ। ৭১ মিনিটে অবশ্য কানসাস সমর্থকদের উল্লাস থামিয়ে মায়ামিকে আবার এগিয়ে দেন


আরও খবর



৩১ দিন পর মুক্ত জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজের ২৩ নাবিক

প্রকাশিত:রবিবার ১৪ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ |

Image

অবশেষে মুক্ত হয়েছে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকা বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। জাহাজটিতে থাকা ২৩ নাবিকই সুস্থ রয়েছেন।

জাহাজের মালিকপক্ষ কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম শনিবার (১৩ এপ্রিল) দিবাগত রাত ৩টা ৩৫ মিনিটে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, অল্প কিছুক্ষণ আগে আমরা সুসংবাদ পেয়েছি। আমাদের জাহাজটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ২৩ নাবিকই অক্ষত অবস্থায় আমরা ফেরত পেয়েছি।আগামীকাল (রোববার) সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।

জানা গেছে, জলদস্যুদের দাবি অনুযায়ী মুক্তিপণ নিয়ে একটি বিমান বাংলাদেশ সময় শনিবার বিকেলে জিম্মি জাহাজের ওপর চক্কর দেয়। এসময় জাহাজের ওপরে ২৩ নাবিক অক্ষত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এরপর বিমান থেকে ডলারভর্তি তিনটি ব্যাগ সাগরে ফেলা হয়। স্পিডবোট দিয়ে এসব ব্যাগ জলদস্যুরা কুড়িয়ে নেয়। জাহাজে উঠে দাবি অনুয়ায়ী মুক্তিপণ গুনে নেয় জলদস্যুরা। তবে চুক্তি অনুযায়ী জাহাজটি যথাসময়ে ছেড়ে দেয়নি দস্যুরা। পরবর্তীতে আশপাশে কেউ আটক করছে কি না, সেটি নিশ্চিত হয়ে জাহাজ থেকে দস্যুরা নেমে যায়।

মুক্ত হয়ে বাংলাদেশ সময় শনিবার মধ্যরাতে ২৩ নাবিক নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় এমভি আবদুল্লাহ।

যদিও মুক্তিপণ কত এবং কীভাবে দেওয়া হয়েছে সেটি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি জাহাজের মালিকপক্ষের কোনো কর্মকর্তা।

কেএসআরএম গ্রুপের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান বলেন, সমঝোতার পর নাবিকসহ জাহাজটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। জাহাজের চারপাশে একাধিক আন্তর্জাতিক যুদ্ধজাহাজ রয়েছে।

এর আগে গত ১২ মার্চ দুপুরে কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখা হয়। আটকের পর জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। ৫৮ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে গত ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে এমভি আবদুল্লাহ। ১৯ মার্চ সেটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল।

কবির গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন এমভি আবদুল্লাহ আগে গোল্ডেন হক নামে পরিচিত ছিল। ২০১৬ সালে তৈরি বাল্ক কেরিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেয়। বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী এরকম মোট ২৩টি জাহাজ আছে কবির গ্রুপের বহরে।

২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি। ওই সময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।


আরও খবর



রাজধানীর ১০ থানায় কিশোর গ্যাং বেশি

প্রকাশিত:শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ |

Image

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, রাজধানীর ৫০ থানার মধ্যে ১০টি থানায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের অপরাধ দেখা গেছে। এর মধ্যে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বেশি।

শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সামাজিক আন্দোলন নিয়ে ছায়া সংসদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, আজকের কিশোর আগামী দিনের যুবক। তারাই আগামী দিনে দেশের নেতৃত্ব দেবে। ৯ থেকে ১৮ বছর বয়সী কেউ অপরাধ করলে আমরা তাকে কিশোর অপরাধী বলছি। এই বয়সী কিশোররা দলবদ্ধভাবে অপরাধ করলে তাকে আমরা বলছি কিশোর গ্যাং।

হাবিবুর রহমান বলেন, কিশোর গ্যাং অপরাধ নিয়ন্ত্রণে প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম করে থাকে পুলিশ। মসজিদে মসজিদে জুমার দিনে ওসিরা কিশোর গ্যাং বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। কিশোর গ্যাং অপরাধ প্রতিরোধে পুলিশের বিভিন্ন সভা-সমাবেশও করা হয়েছে। স্কুলে-স্কুলে গিয়েও কিশোর গ্যাং অপরাধ প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তবে কিশোর গ্যাং অপরাধ প্রতিরোধে আসল কাজ হবে পরিবার থেকে। মা, বাবা বড় ভাই-বোন এক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করবে। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষকও ভূমিকা রাখবেন।

তিনি বলেন, ঢাকা শহরে খেলার মাঠের সংখ্যা কম। মাঠ নিয়ে আন্দোলনও হয়েছে। সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনগুলো খেলাধুলার মাঠের বিষয়ে কাজ করতে পারে।

কিশোর গ্যাংয়ের গড ফাদারদের তালিকা করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে কি না জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের মদদদাতা যারা রয়েছে তাদের তালিকা করা হয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের অদ্ভুত-অদ্ভুত নাম রয়েছে, তাদের তালিকা করা হয়েছে। যারা মদদদাতা, গড ফাদার তারা ওইভাবে গড ফাদার নয়। তারা যে কিশোর অপরাধের জন্য গ্যাং তৈরি করেছে বিষয়টি এমন নয়। রাজনৈতিকভাবে কিছু লোক কিশোরদের নিয়ে যাচ্ছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে।

কিশোর অপরাধ নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাফিলতি আছে কি না জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো গাফিলতি নেই। অভিযোগ এলেই সঙ্গে সঙ্গে মামলা গ্রহণ করা হয় এবং জড়িতদের আইনের আওতায় এনে আদালতে সোপর্দ করা হয়। পরে কিশোর সংশোধনাগারে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু প্রাথমিকভাবে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কাজ নয়। প্রাথমিকভাবে স্থানীয় জনসাধারণের কাজ। জনগণ সোচ্চার হলে কিশোর গ্যাং কালচার কমে যাবে।

টিকটকে অশালীন কন্টেন্টের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি অবশ্যই নেতিবাচক। ইতোমধ্যে এমন টিকটকারদের আমাদের সাইবার টিম আইনের আওতায় এনেছে। পুলিশের সাইবার টিম থেকে নিয়মিত বিটিআরসি'র কাছে বিভিন্ন কনটেন্টের তালিকা দেওয়া হয়।

হাবিবুর রহমান বলেন, স্থানীয় কাউন্সিলদের কিছু অনুসারী রয়েছেন যাদের ১৮ বছরের উপরে বয়স। এলাকায় রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে কেউ কেউ কিশোরদের ব্যবহার করছে। সরাসরি কোনো কাউন্সিল কিশোরদের নিয়ে অপরাধ করার জন্য গ্যাং তৈরি করেছে এমন তথ্য পাইনি। কাউন্সিলদের সহযোগী রয়েছেন এমন কেউ কেউ আছেন তারা কিশোরদের নিয়ে চলাচল করেন। এসব কিশোরদের বেশিরভাগই ছিন্নমূল। বেশিরভাগ কিশোরদের বাবা নেই। মা থাকলেও দেখা যায় অন্যের বাসায় কাজ করেন। এসব বিষয়েও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে। তবে আইনের আওতায় পড়লে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক পাতিনেতাদের বিভিন্ন সময় থানায় ডেকে শাসানো হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সমাজের ভদ্রলোকরা মনে করেন থানায় অভিযোগ দিতে গেলে বিপদে পড়বেন এজন্য সেই ভয়ে থানায় যান না। এটি সমাজের সবচেয়ে দুর্বলতা এবং নেতিবাচক দিক। যারা সমাজের ভালো মানুষ, শান্তি প্রিয় মানুষ, তারা যদি ঐক্যবদ্ধ হন তবে অনেক কঠিন কাজই সহজ হয়ে যায়। আমি সেটির আহ্বান জানাই। সমাজে ভালো মানুষ যারা তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।


আরও খবর



৭৬ বছরের রেকর্ড ভাঙলো এবারের তাপপ্রবাহ

প্রকাশিত:শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ | হালনাগাদ:মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ |

Image

তীব্র দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। আগুন ঝরা গরমে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। দেশজুড়ে তাপদাহে ঘরে কিংবা বাইরে সবখানেই কাতর সবাই।

তপ্ত দুপুরে গরমের তীব্রতায় নাগরিক জীবনের এমন হাঁসফাঁস অবস্থার মধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এবার এই এপ্রিল মাসে টানা যত দিন তাপপ্রবাহ হয়েছে, তা গত ৭৬ বছরেও হয়নি। গত বছর টানা ১৬ দিন তাপপ্রবাহ হয়েছিল। এবার তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে ১ এপ্রিল থেকে।

আজ শুক্রবারও তাপপ্রবাহ বইছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। আজ সকাল থেকেই বয়ে গেছে গরম হাওয়া। রোদের তেজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে গরমের তীব্রতাও।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, গতকাল পর্যন্ত হিসাবে চলতি মাসে ২৩ দিন তাপপ্রবাহ অব্যাহত ছিল। ১৯৪৮ সাল থেকে এক বছরে তাপপ্রবাহের দিনের রেকর্ড আজ ভেঙে গেছে।

টানা অন্তত দুই দিন তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি থাকলে তা তাপপ্রবাহ হিসেবে বিবেচনা করে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজশাহী বিভাগে গত ১ এপ্রিল থেকে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। ১১ এপ্রিল থেকে তাপপ্রবাহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। রাজশাহী, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে তাপপ্রবাহ তুলনামূলক বেশি। চলতি বর্ষাপূর্ব মৌসুমে দেশে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ১৯৪৮ থেকে তাদের কাছে বিভিন্ন স্টেশনের আবহাওয়ার তথ্য-উপাত্ত আছে। তবে সব বছরে সব স্টেশনের উপাত্ত নেই। উপাত্তগুলো একেবারে সুনির্দিষ্টভাবে আছে ১৯৮১ সাল থেকে। তারপরও আগের স্টেশনগুলো বিশ্লেষণ করে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, ১৯৪৮ থেকে চলতি বছর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি তাপপ্রবাহ হয়েছে এবারের এপ্রিল মাসে।

এর আগে ২০১০ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ২০ দিন তাপপ্রবাহ ছিল, তবে তা টানা ছিল না। কিন্তু এবার টানা ২৬ দিন তাপপ্রবাহ হলো।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ১৯৪৮ সাল থেকে উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখেছি, এবারের মতো তাপপ্রবাহ টানা আগে হয়নি। তিনি বলেন, এতে বলা যায়, ৭৬ বছরের রেকর্ড এবার ভেঙে গেল। এবার টানা যেমন তাপপ্রবাহ হয়েছে, আবার এর বিস্তৃতিও বেশি ছিল। এ বছর দেশের ৭৫ ভাগ এলাকা দিয়ে টানা তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে, যা আগে কখনোই ছিল না।

আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, এপ্রিল বাংলাদেশের উষ্ণতম মাস। কিন্তু স্বাধীনতার পর এবারের এপ্রিলই সবচেয়ে উষ্ণ যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এল নিনোর প্রভাবে এই তাপপ্রবাহ সৃষ্টি হয়েছে, যা বর্তমানে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে প্রভাব ফেলছে এবং এটি এই মাসের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

এপ্রিল উষ্ণতম মাস হওয়ায় বরাবরই এ সময়ে দেশের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে উল্লেখ করে অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান বলেন, এটা অস্বাভাবিক নয়।

তিনি আরও বলেন, এবার টানা দুই সপ্তাহ ধরে তাপপ্রবাহ থাকায় ও বৃষ্টিহীন পরিস্থিতি বিরাজ করায় গরমের অনুভূতি বেড়েছে। জলীয়বাষ্পের পরিমাণটা বেশি, যে কারণে অস্বস্তি বেশি হচ্ছে। স্বাভাবিক যা থাকার কথা, তার চেয়ে ৪ থেকে ৭ ডিগ্রি বেশি তাপমাত্রা উঠছে বিভিন্ন এলাকায়।


আরও খবর