পাসপোর্টে ভুল দু’রকম হয়। প্রথমত, আবেদনপত্রে গ্রাহকের ভুল। দ্বিতীয়ত, গ্রাহক ঠিক থাকলেও অফিসের ভুল। ভুল যে কারণেই হোক, দায়ভার চাপানো হয় গ্রাহকের ওপর। টাকা গচ্চা যায় গ্রাহকেরই। পাসপোর্ট অফিসের ভুলের দায় অফিস নিচ্ছে না।
এতে ভোগান্তির শিকার এবং
অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে অনেককেই। রাজধানীর আগারগাঁওসহ দেশের প্রতিটি
পাসপোর্ট অফিসেই এ ধরনের অভিযোগ রয়েছে। পাসপোর্ট অফিসের ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে
আবেদনকারী বা গ্রাহককেই।
খোঁজ
নিয়ে জানা গেছে, হাতের
লেখার যুগ, এমআরপির
যুগ পেরিয়ে বর্তমানে ই-পাসপোর্টের যুগে প্রবেশ করলেও ভুল থেকেই যাচ্ছে। গ্রাহকের
সবচেয়ে বড় অভিযোগ হচ্ছে,
নতুন পাসপোর্ট করতেও যত লাগে, ভুল
সংশোধন করতেও ততই লাগে। এক পয়সাও কম নেয়া হয় না। কোন দেশেই এমন নিয়ম নেই। সবচেয়ে
বেশি ভুল হয় আগের পাসপোর্ট ও এনআইডির মধ্যে মিল না থাকায়। নতুন নিয়মে পুরনো
পাসপোর্টে বিদ্যমান নাম,
বাবার নাম, মায়ের নাম এবং জন্ম তারিখ পরিবর্তনের কোন
সুযোগ নেই। বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর এ সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে সবচেয়ে
বেশি ভোগান্তি তৈরি হচ্ছে এখানে।
অনেকেরই
দেখা যাচ্ছে, পুরনো
পাসপোর্টের নামের সঙ্গে এনআইডির নাম মিলছে না। জন্ম তারিখের তারতম্য ঘটছে। তখন
এনআইডি অনুযায়ী পাসপোর্টের নাম সংশোধন না করে বলা হচ্ছে, এনআইডি
সংশোধন করার জন্য। এনআইডি সংশোধন করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পাড়তে হচ্ছে গ্রাহককে। আবার
এনআইডি সংশোধন করে আনার পরও সেটা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সংশোধিত এনআইডির
পরিচয়পত্র আকারে কপি চাওয়া হচ্ছে। অথচ, সার্ভারে কিন্তু এনআইডি সংশোধিত আকারে আছে।
আবার এসব সংশোধন করতে গিয়ে এতসব কাগজপত্র জোগাড় করতে বলা হচ্ছে যে, সেসব
জোগাড় করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
কাগজ
জোগাড় করতে আদালত পর্যন্ত যেতে হচ্ছে। এর একটা সুরাহা হওয়া উচিত। এনআইডি থাকার পর
এত কাগজপত্রের প্রয়োজনীয়তা আছে কি না, তা পুনরায় বিবেচনা করা দরকার। পাসপোর্ট পেতে
সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হয় সাধারণ মানুষ। অথচ, তারাই দুর্ভোগের শিকার হয়ে বাড়তি টাকা দিয়ে
পাসপোর্ট করে বিদেশে গিয়ে দেশের জন্য মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছে। তাই এই
সাধারণ মানুষের পাসপোর্টপ্রাপ্তি সহজ ও হয়রানিমুক্ত করার জন্য আলাদা সেল করা উচিত
বলে মনে করছেন অনেকে।
বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতর এ সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছে।
জন্ম তারিখ সংশোধন করার জন্য ভোটার আইডি কার্ড, এসএসসির সার্টিফিকেট অথবা জেএসসির
সার্টিফিকেট, ভোটার
আইডি কার্ডের সঙ্গে জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে থাকলে অনলাইন কপি, বিবাহিত
হলে নিকাহনামা- এগুলো প্রয়োজন হবে পাসপোর্টের জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য। আর জন্ম
তারিখ সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত হলে সংশোধন করতে পারবেন। পাসপোর্টে বাবা-মায়ের
নাম সংশোধন করার জন্য ভোটার আইডি কার্ড, এইচএসসি অথবা এসএসসির সার্টিফিকেট, বাবা-মায়ের
ভোটার আইডি কার্ডের কপি লাগবে।
পাসপোর্টের
মধ্যে কেউ যদি পেশা পরিবর্তন করতে চান, তবে দিতে হবে কর্মক্ষেত্রের প্রত্যয়নপত্র।
আর এর সঙ্গে জমা দিতে হবে প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্রের ফটোকপি। কেউ যদি স্থায়ী
ঠিকানা পরিবর্তন করতে চান,
সে ক্ষেত্রে আবার নতুন করে পুলিশ প্রতিবেদন লাগবে। তবে, বর্তমান
ঠিকানা পরিবর্তন করার জন্য বা সংশোধনের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোন নিয়ম নেই। যদি
বৈবাহিক অবস্থা পরিবর্তন করতে চান, তাহলে পাসপোর্টের আবেদনপত্রের সঙ্গে
নিকাহনামা দিতে হবে।
ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে
প্রথমেই ব্রাউজার ওপেন করে সার্চ করে পাসপোর্ট সংশোধন ফর্ম বা পাসপোর্ট
সংশোধন-সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনটি লিখে সার্চ করার পর প্রথমে যে ওয়েবসাইট আসবে, ওই
ওয়েবসাইটে ঢুকে পাসপোর্ট সংশোধন ফর্ম ডাউনলোড করে নিতে হয়। এই ফর্মটির সবকিছু
সঠিকভাবে পূরণ করতে হয়। তারপর পাসপোর্ট সংশোধনের আবেদন ফর্মের এই বক্সের মধ্যে যেই
ব্যাংকে জমা দেয়া হবে, সেই
ব্যাংক থেকে একটি চালান বা রিসিট নিয়ে এবং এখানে ফি তথ্য বসাতে হয়। তারপর এই আবেদন
ফর্ম এবং অন্যান্য সব ডকুমেন্ট একসঙ্গে নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে জমা দিলে ২১ দিনের
মধ্যে গ্রাহকের মোবাইল নাম্বারে মেসেজ যায় সংগ্রহ করার।
সংশোধনের অপশন তো পাসপোর্ট প্রিন্ট হওয়ার আগেই আবেদনকারীকে দেখা ও যাচাই-বাছাই করার সুযোগ দেয়া হয়। এ পদ্ধতিতে তো ভুল হওয়ার সুযোগ থাকে না। যদি হয়েও থাকে, সেটা হাজারে একটা কি দুটো হতে পারে। আগের মতো অর্থাৎ হাতে লেখার সময় বা এমআরপির মতো এত ভুল হয় না এখন। কাজেই ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সব সঠিক নয়। হ্যাঁ ভুল হয়, সেটা আবেদনকারীর ভুল পূরণের জন্যই। এ দায়তো অফিস নেবে না।
প্রবাসীদের পাসপোর্ট ভোগান্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে
যেখানেই হোক- পাসপোর্ট তৈরিতে এখন প্রধান ডকুমেন্ট জাতীয় পরিচয়পত্র। তথ্য জটিলতার
কারণেই দেরি হচ্ছে পেতে। ইউরোপে যারা আছেন, তারা একটা নাম দিয়ে পাসপোর্ট করে আগে নিয়ে
গেছেন, কিন্তু
তার দেশের সম্পত্তি বা সবকিছু অন্য নামে।
১৮
বছর পর সবাইকে জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী পাসপোর্ট করতে হবে। দেখা যাচ্ছে পরিচয়পত্র
হয়েছে এক নামে, আর
পাসপোর্ট করা হয়েছে অন্য নামে। এখন রিনিউ করার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী দিলে
তিনি পাসপোর্ট পাচ্ছেন না। অথচ পাসপোর্ট হয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী। এই সমস্যা কিভাবে
সমাধান করা যায়, সেটা
নিয়েও কাজ চলছে। অর্থাৎ গ্রাহকের কল্যাণ নিশ্চিত করাই আমাদের কাজ।