সদরুল আইন,গাজীপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরের শ্রীপুরে ৪টি বাড়িতে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে নারী ও শিশুদের মারধরেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পুলিশের এক সহকারী উপ পরিদর্শককে মারধরের মামলায় শনিবার দিবাগত রাতে শ্রীপুর থানা থেকে পুলিশের একটি দল ফরিদপুর গ্রামে আসামি ধরতে গিয়ে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। ওই এলাকার ২০টি বাড়ির পুরুষেরা এখন বাড়ি ছাড়া।
রোববার দুপুরে ফরিদপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, একদল সাংবাদিক বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারী ও শিশুদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছেন। বাড়িগুলোতে শিশু ও নারী ছাড়া পুরুষদের পাওয়া যায়নি।
আলমগীর হোসেনের মেয়ে ফারজানা ও আফছানা জানান, শনিবার রাত ১টার দিকে ইউনিফর্মে থাকা বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাদের বাড়িতে আসেন। প্রথমে তারা পুলিশ সদস্যদের ডাকাত বলে সন্দেহ করেছিলেন।
নিশ্চিত হওয়ার পর তার মা তালা খোলার জন্য ঘরে চাবি আনতে যান। চাবি নিয়ে এসে দেখেন, পুলিশ শাবল দিয়ে বারান্দার গেটের তালা ভাঙছে। তারা গালিগালাজ করে ঘরে ঢুকে তার বাবাকে মারধর করেন। মারধরে বাধা দেওয়ায় তার মাকে অশালীন ভাষায় গালাগাল ও চুল ধরে টানা-হেঁচড়া করেন।
মনির হোসেনের স্ত্রী হালিমা খাতুন জানান, গভীর রাতে বাইরে লোকজনের আওয়াজ শুনে তারা বের হন। এ সময় পুলিশ তাদের ধাওয়া করে ঘরে ঢুকিয়ে দেয়। রাত ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত চারবার পুলিশ সদস্যরা তাদের বাড়িতে ঢোকেন। তারা ঘরের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে আলনা, ফ্রিজ ও আসবাবপত্র ভাঙচুর ও বিছানা তছনছ করেন।
জল বসন্তে আক্রান্ত তার ছেলে জুবায়ের হোসেনকে (১২) বিছানা থেকে টেনে-হিঁচড়ে নামান। তারা রান্না ঘরের চারটি চুলা ও পানির কল ভেঙে ফেলেন। 'পুলিশের গায়ে হাত দেওয়ার মজা বুঝে নে' বলে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজও করা হয়।
আজ রোববার তারা বাড়িতে এসে নারীদের গ্রেপ্তার করার হুমকি দিয়ে গেছে।
শনিবার রাতে ডিউটিতে থাকা শ্রীপুর থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হক বলেন, পুলিশের একাধিক টিম আসামি ধরতে গিয়েছিল। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবু রায়হান এ ব্যাপারে বলতে পারবেন।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে এসআই আবু রায়হান বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ মিথ্যা ও সাজানো। যারা পুলিশের ওপর হাত তুলতে পারে তারা এমন ঘটনা সাজাতেও পারে। আমরা আসামি ধরতে গিয়েছিলাম।
আলমগীর হোসেন, সিরাজুল ইসলাম ও ইসাহাক নামের ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে রোববার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
এসব বিষয়ে কালিয়াকৈর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আজমীর হোসেন সাংবাদিকদের জানান, বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে।
স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রাতে ফরিদপুর গ্রামে রমজান আলী মুন্সির বাড়িতে জমি নিয়ে বিরোধ মিমাংসার জন্য এএসআই মো. শাহীনুর ইসলাম সালিশ বৈঠক বসিয়েছিলেন। সেখানে এএসআই শাহীনুর সবার সামনে লাইছুদ্দিন নামের একজনকে মারধোর করেন।
পরে উপস্থিত কয়েকজন ওই এএসআইর ওপর চড়াও হন। এর জের ধরেই শনিবার রাতে পুলিশ এসে ভাঙচুর চালিয়েছে।