অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান চৌধুরীর ফেসবুক থেকে নেয়া ঃ
স্বার্থপর মানুষ সব সময় মাথা উঁচু করে আকাশের দিকে তাকাতে ভালোবাসে | অথচ স্বার্থপর মানুষ মাটির এতটা কাছাকাছি থেকেও মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকাতে লজ্জাবোধ করে | কিন্তু এমনটা তো হবার কথা ছিলোনা, তারপরও এমনটাই ঘটে যায় | কারণ মানুষ মনে করে চোখ যত উপরে তোলা যাবে জীবন তত জয়ী হয়ে উঠবে, কপালটা নামিয়ে চোখ নিচে নেমে এলে মানুষ সেটাকে নিজের পরাজয় হিসেবে ভাবতে শুরু করে | আসলে মানুষ যা ভাবছে সেটা হয়তো একটা আবরণ, একটা মুখোশ কিংবা অভিনয় |
একটা চাদর শরীরে চড়িয়ে দিয়ে মানুষ সে আবরণটাকে মূল্যবান মনে করে | কিন্তু চাদরের ভিতরে নিভৃতে বসে থাকা চামড়ার শরীরটাকে মানুষ কোনো মূল্যই দিতে চায়না | তবে নির্মম সত্য হলো, ভিতরের চামড়ার কাছে চাদরের কোনো মূল্য নেই | চাদর না থাকলেও মানুষের অস্তিত্ব থাকে, চামড়া না থাকলে অস্তিত্বের সংকটে পড়ে যায় মানুষ | মানুষ চাকচিক্যের মোহে মুগ্ধতাকে আঁকড়ে ধরতে জীবনকে বাজী রাখে, মুগ্ধতার চেয়ে যে বাস্তবতা অনেক বড় তা কোনোভাবেই মানার মতো যুক্তিপূর্ণ জায়গায় নিজেকে নিয়ে যেতে পারেনা |
মানুষ পা মাটিতে রেখে মাটিকে আঘাতে আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত করতে করতে আকাশ দেখার স্বপ্নে আমোদিত হয়, মাটি কাঁদে, মাটির কান্না মাটি নিজেই শুষে নেয় | কিন্তু মাটির নিচে অসহায় কান্না জমতে জমতে নদীর জন্ম দেয়, যে নদী কানায় কানায় কান্নার পানিতে ডুবে থাকে | খুব সুবিধাবাদী হয় মানুষ, মাটিকে কাঁদায়, আঘাত করে, বার বার বিপন্ন করে মাটির জীবন আবার সেই কান্নার জমে থাকা পানি মাটির বুক চিড়ে মানুষ বের করে আনে নিজের অস্তিত্বের স্বার্থে | অথচ মাটির সেই বোবা কান্না মানুষের কানে পৌঁছাতে পারেনা |
হয়তো মানুষ কান্নাকে কখনো আপন করতে পারেনা অথচ নিজের জন্মের সময় চিৎকার করে মানুষ কেঁদে উঠে | তখন কান্না খুব আপন থাকে , কারণ না কাঁদলে জন্মটাই যে অর্থহীন হয়ে পড়তে পারে | শেকড়টা মানুষ এখন আর খুঁজেনা, মানুষ শেকড়ের ভিতর তার স্বার্থ খুঁজে | খুব অদ্ভুত মানুষের মনস্তত্ব | আকাশকে কখনো ধরতে পারেনা অথচ আকাশের চাঁদকে মানুষ ভোগবাদী চিন্তার উৎস বানায় | ঝুলে থাকা তারাদের জ্বল জ্বল করে জ্বলতে দেখে মানুষ নিজের ভিতরের রঙের মেলা বসায় | অথচ সেই তারা গুনতে গুনতে মানুষ খেই হারিয়ে ফেলে | যতবার গুনে ততবার হার মানে | মানুষের কাছে আকাশের তারা ততক্ষন মূল্যবান যতক্ষণ তারাদের পতন ঘটেনা |
ঝুলন্ত তারায় মানুষ তার স্বার্থের বীজ বুনে অথচ একটা পতনশীল তারার আর্তনাদ মানুষের কানে পৌঁছায় না | তারারা হারিয়ে যায় শুন্যতায়, যেমন মানুষও হারিয়ে যায় শুন্যতায় |
আকাশ আর মাটি উপমমাত্র | মানুষ তার নিজের মতো করে ভাবুক, ভাবনাগুলো পাখি হোক, সে পাখি কখনো খাঁচায় বন্দি হবেনা | বরং যতক্ষণ বেঁচে থাকবে ততক্ষন মাটিতে পা রেখে স্বাধীন ভাবনা দ্বারা তাড়িত হবে | ভাবনা উড়ুক যতটা উপরে ততটা তবে মানুষটার পা-টা থাকুক কাদামাটির মাটির নিচে | ক্রমাগত নিচে, যেখানে বিনয় আর ত্যাগ হবে মানুষের শক্তি | যে শক্তির কাছে সব শক্তি একদিন পরাভূত হবে |
--