বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন হচ্ছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া,
চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার অর্থনৈতিক জোট ব্রিকসে। মঙ্গলবার (২২ আগস্ট)
থেকে বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে এ বছরের ব্রিকস শীর্ষ
সম্মেলন হতে যাচ্ছে। ব্রিকস নেতারা এবং সম্ভাব্য সদস্যপদ আবেদনকারীরা আগামী দিনে
বিদ্যমান বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে
বসছেন এ সম্মেলনে। ব্রিকসের সদস্য দেশগুলো ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও
রাষ্ট্রপ্রধান, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানরা সভায়
অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পেয়েছেন। তিনি
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন।
পারস্পরিক
যোগাযোগ, সহযোগিতা ও বাণিজ্যিক মেলবন্ধনের অঙ্গীকার নিয়ে ২০০৯ সালের ১৬ জুন রাশিয়ার
ইয়েকাতেরিনবার্গ শহরে যাত্রা হয়েছিল ব্রিকসের। শুরুতে সদস্য ছিল চারটি দেশ-ব্রাজিল,
রাশিয়া, ইন্ডিয়া ও চীন। দেশ চারটির নামের
আদ্যক্ষর নিয়ে সংগঠনটির নাম ছিল বিআরআইসি। পরবর্তী সময়ে ২০১০ সালের ২৪ ডিসেম্বর
দক্ষিণ আফ্রিকা এ জোটে যোগ দেওয়ায় ‘এস’
যুক্ত হয়ে সংগঠনটির নতুন নামকরণ হয় বিআরআইসিএস ।
বাংলাদেশ
এবং অন্য আবেদনকারী রাষ্ট্র যারা ব্রিকসে সদস্যপদ চায় তাদের জন্য শীর্ষ সম্মেলনটি
তাৎপর্যপূর্ণ হবে। শীর্ষ সম্মেলনটি ব্রিকসের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ কারণ সম্মেলনের
সময় নতুন মুদ্রা এবং অন্য গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হবে সদস্যদের মধ্যে।
এই প্রেক্ষাপটে, ব্রিকসের বর্তমান চ্যালেঞ্জ এবং ব্রিকসে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জগুলো
মূল্যায়ন করা জরুরি।
সর্বশেষ
প্রতিবেদন অনুসারে, ২৫টি দেশ ব্রিকসে যোগ দিতে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য নতুন মুদ্রা
গ্রহণ করতে প্রস্তুত। জোটে যোগ দিতে আগ্রহ দেখানো দেশগুলো হলো আফগানিস্তান,
আলজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, বাহরাইন,
বাংলাদেশ, বেলারুশ, মিসর,
ইন্দোনেশিয়া, ইরান, কাজাখিস্তান,
মেক্সিকো, নিকারাগুয়া, নাইজেরিয়া,
পাকিস্তান, সৌদি আরব, সেনেগাল,
সুদান, সিরিয়া, সংযুক্ত
আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, তিউনিসিয়া,
তুরস্ক, উরুগুয়ে, ভেনিজুয়েলা
ও জিম্বাবুয়ে।
এদিকে, দ্য ন্যাশনাল
নিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ
শুরুর পর থেকে মুদ্রাবাজারে ডলারের সঙ্গে চীনা ইউয়ান ও রুশ রুবলের জোর প্রতিযোগিতা
শুরু হয়। কার্ড পেমেন্ট ব্যবস্থা থেকে শুরু করে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ পর্যন্ত
আন্তর্জাতিক লেনদেনের প্রতি ক্ষেত্রেই বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দেয়। আশঙ্কা
দেখা দেয় মুদ্রাবাজারে ডলারের আধিপত্য বজায় রাখা নিয়ে। বিশেষ করে গত বছর ডলারের
বিনিময় হারে কিছুটা নড়বড়ে অবস্থা দেখা দেয়। তবে এত জল্পনা-কল্পনার পরও ডলারের দাপট
কমেনি।
ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা যখন জোহানেসবার্গে মিলিত
হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন মার্কিন ডলারের বৈশ্বিক আধিপত্য নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি
হয়েছে দেশগুলো তা সমাধান করবে বলে আশা করা হচ্ছে। রাশিয়া ও চীনের পাশাপাশি দক্ষিণ
আফ্রিকার নালেদি পান্ডোর ব্রিকসের নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে
আন্তর্জাতিকভাবে বাণিজ্যিক মুদ্রার বিকল্প খোঁজার চেষ্টা করা হচ্ছে।
একনজরে
ব্রিকস : ব্রিকস হলো গ্লোবাল সাউথ বা বৈশ্বিক দক্ষিণের পাঁচটি উন্নয়নশীল দেশের
একটি জোট; যারা ভবিষ্যতে বিশ্ব অর্থনীতিতে অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার
সম্ভাবনা রয়েছে। জোটের মূল সদস্য ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বের জনসংখ্যার ৪৫%
প্রতিনিধিত্ব করে এবং পৃথিবীর ভূখণ্ডের ৩০% জুড়ে এর অবস্থান। তাছাড়া বৈশ্বিক
জিডিপির ৩১.৫% তাদের দখলে।
ব্রিকসে
বাংলাদেশের সুযোগ : বাংলাদেশ এরই মধ্যে বিকসের ব্যাংক-এনডিবির শেয়ারহোল্ডার। এটি
কোনো বহুজাতিক উন্নয়ন ব্যাংকে বাংলাদেশের জন্য প্রথম মালিকানা। ২০২৩ সালের জুনে
বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকসে সদস্যপদ পাওয়ার জন্য আবেদন করে।
অর্থনৈতিক
দিক থেকে ব্রিকসে যোগদান বাংলাদেশকে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি উন্নয়ন অর্থায়ন
বাড়াতে ও বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে সাহায্য করবে। এ ধরনের একটি কার্যকর জোটে যোগদান
বাংলাদেশকে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে তার অংশীদারত্ব বাড়াতেও সাহায্য করবে। সাধারণ
মুদ্রার ব্যবহার বাংলাদেশকে ডলারের ওপর নির্ভরতা কমাতেও সাহায্য করতে পারে। এ
ফোরামের মাধ্যমে বাংলাদেশও বহুপক্ষীয়ভাবে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগিতায় অংশগ্রহণের
সুযোগ পাবে।
নতুন
চ্যালেঞ্জ : এই সম্প্রসারণকে চীনা উদ্যোগ হিসেবে বিবেচনা করা হলে, এটি বাংলাদেশকে
একটি ‘চীন-ঘেঁষা’
দেশ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারে। আন্তঃব্রিকস কূটনীতি বাংলাদেশের
পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন চাপ সৃষ্টি করতে পারে; কারণ চীন ও ভারত
উভয়ই জোটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাংলাদেশের সমর্থন আশা করবে।
এছাড়া পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং সবশেষে, ভারত এবং চীন-রাশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান ভিন্ন স্বার্থ বাংলাদেশের জন্য নতুন
চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।