মনির চৌধুরী সঙ্গীত শিল্পী :
আমার সাথে শ্রদ্ধেয় শুভ্র দার পরিচয় সেই ১৯৯৫/৯৬ সাল থেকে (জেরিন আসগর) জেরিনা আপার বাসায় গান করা থেকে। তারপর টুটু আপার বাসায় সেই সময় শুভ্রদা অনেকবার আমার অনেক গান শুনেছেন। সেই পরিচয়ে শুভ্র দার বিয়ের মেয়ে দেখা অনুষ্ঠান হোটেল পূর্বাণীতে, সেখানে দাদা আমাকে ডাকেন গান গেতে। আমি যদি ভুল নাকরে থাকি, সেই অনুষ্ঠানে প্রয়াত প্রণব ঘোষ দাদা পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন। গান করেছি আমি, ক্লোজআপ ওয়ান তারকা বাঁধন ও পারভেজ। আমরা এই ৩ জনই গান করেছি। ওই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সঙ্গীত জগতের সব তারকারা উপস্থিত ছিলেন। তারপর দাদা আমাকে অনেক প্রগামে গান করার সুযোগ করে দিয়েছেন এবং এখনো দিচ্ছেন। যেটা নিয়ে আমি এতো ভুমিকা করেছি কেন সেটা এখনই পরিস্কার হবে।
আমি যেহেতু গান করি সেহেতু আমি অনেক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের পিছনে বা প্রতিষ্ঠান প্রধানের পিছনে মাসের পর মাস, কারো পিছনে ১ বছর ঘুরেছি আমার এ্যালবাম করার জন্য। আমি কারো নাম নিচ্ছি না। কিন্তু কেউই আমার গান রেকর্ড করেনি ও এ্যালবামও প্রকাশ করেনি। বলাই বাহুল্য আমার কাছে তখন টাকা ছিল না যে আমি এ্যালবাম বের করবো। এখানে আমি বলবো আমার গানের শুরু আমার ইমিডিয়েট ভাই মাজহারুল ইসলামের (বর্তমানে র্প্রিন্সিপাল) হাত ধরে। তিনি আমাকে স্কুলে থাকা অবস্থায় হামদ- নাত শিখিয়ে দিয়ে প্রথম প্রতিযোগীতায় প্রথম হওয়ার পরএই আমার যাত্রা শুরু হলো। ২০০৩ সালে ধানমন্ডি সুরধুনীতে আমার আসা হলো হাসান জামাল আংকেল এর মাধ্যমে। উনি বাংলাদেশ বেতারে ডিডিজি ছিলেন। এই আংকেল আমাকে সুরধুনীতে ডা: খালেদা আন্টি সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ২০০৫ সালে এটিএন তারকা রিয়ালিটি শোতে শুভ্র দা চেয়েছিলেন আমি ওই রিয়ালিটি শো তো অংশগ্রহণ করি, কিন্তু র্দূভাগ্য আমার ঐ শোতো অংশ নেয়া হয় নাই যে কোন কারনে। ২০০৬ খালেদা আন্টি ঠিক করলেন আমার একক সঙ্গীত অনুষ্ঠান করবেন। আমি আন্টিকে না বলেছিলাম কিন্তু উনি আমার অনুষ্ঠান করবেনই। কারন একটা অনুষ্ঠান করতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয় এজন্য না করেছিলাম। অনুষ্ঠানের তারিখ ঠিক হলো। আমি তখন শুভ্র দাকে বললাম দাদা আমার অনুষ্ঠানে আসবেন। দাদা সহ অনেক শিল্পীকে জাতীয় যাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে দাওয়াত দিয়েছিলাম। অনেকি এসেছিলেন সেখানে। দাদা অনুষ্ঠানে আসলেন এবং বক্তব্য রাখার সময় বললেন, সুরধনী আজকে যে শিল্পীকে নিয়ে অনুষ্ঠান করছেন আমি সুরধুনীর সবাইকে আমার অন্তর থেকে ধন্যবাদ জানাই। এবং দাদা এও বলেছিলেন, আমরা বলি এ স্টার ও স্টার আজকে আমি বলবো সত্যিকারের স্টার মনির চৌধুরী। সত্যিকারের স্টার ও ই যাকে নিয়ে সুরধুনী এতো বিশাল আয়োজন করেছে। আমি দাদার আমার মতো অধম ও বেগুন মানুষকে নিয়ে একথা আমি কোন দিনও ভুলবো না। আমাদের শিল্পী সমাজে আমার দেখা ২/৪ সেলিব্রিটি শিল্পী ছাড়া কাউকে দেখা যায়না নতুন কোন গানের মানুষকে সামনে তুলে ধরতে সাহায্য ও সহায়তা করতে কোন কারন ছাড়া। আমি বলতে চাই, আপনার প্রতিভা আছে কিন্তু এই প্রতিভাটাকে সবার সামনে তুলে ধরার প্রয়াস কোন সেলিব্রিটি শিল্পী দেখায় কোন রকম সম্পর্ক ছাড়া এটা বিরল। যেটা দাদা আমার বেলায় দেখিয়েছেন। আমি ছোট বেলা থেকে শুনে আসছি, যে মানুষকে সম্মান করে মহান আল্লাহ নাকি তাকে সম্মানিত করেন। ওই একক অনুষ্ঠানের পর দাদাকে ধরে ডা: খালেদা আন্টি ও সুরধুনীর সবাই এটিএন এর চেয়ারম্যান জনাব মাহফুজুর রহমানকে দিয়ে আমার একক মৌলিক গানের এ্যালবাম "প্রিয়া তোমায় ভুলিনি" শিরোনামে সিডি ও ভিসিডি বের করার ব্যবস্থা করেন। সবকটি গান লিখেছেন শেখ রেজা শানু, সুর করেছেন শ্রদ্ধেয় মান্নান মোহাম্মদ।
আমি প্রথমেই একটু বেশি ভুমিকা টেনেছি সঙ্গত কারনে। আমি তো সারাজীবন দাদার অবদানের কথা বলবোই। আমার জানা মতে আরো অনেককে শিল্পী হওয়ার পথে সহায়তা করেছেন দাদা। জীবনে যিনি মানুষের মঙ্গল চান, যিনি পরোপকারী তিনি তো সম্মানিত হবেন এটাই স্বাভাবিক। আজ অবধিও দাদা আমার খোঁজ খবর রাখেন। করোনা মহামারীর সময়ও দাদা আমার খোঁজ খবর নিয়েছেন। অনেকেই দাদার একুশে পদক পাওয়া নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব ব্যক্ত করেছেন আমি দেখছি, কিন্তু আমি বলবো শুভ্র দা মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন একজন শিল্পী। তাঁকে মহান আল্লাহ পাক সম্মানিত করেছেন। আপনার আমার হিংসা করে কোন লাভ নেই। আল্লাহ যাকে সম্মান দেন তাঁকে কেউ অসম্মান করা ঠিক না।
এবার আসি দাদার জনপ্রিয়তা নিয়ে কথা।
দাদা ৮০ দশক ও ৯০ দশকে যে গান উপহার দিয়েছেন এগুলো আমার বিবেচনায় সেরা। ইয়াং ছেলে মেয়ের কাছে দাদা কতো জনপ্রিয় তা শুধু আমরা জানি যারা সে সময় স্কুল ও কলেজে পড়েছি। কৃষ্ণ চুড়ায় ছায়ে ছায়ে, নীল চাঁদোয়া, আমি হেমিলনের সেই বাঁশিওয়ালা। এরকম অগণিত গান জনপ্রিয়। আহা! কি ক্রেজ দাদার। গীতিকার ও সুরকার হিসেবেও সফল দাদা। আন্তজার্তিক অঙ্গনে দাদার যে অবদান সেটা একটা ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে দাদার ক্যারিয়ারে। আমি তো উনার কোন অযোগ্যতা দেখিনা। কতো অযোগ্য লোক একুশে পদক পেয়েছে দেখলাম, তাদের বেলায় তো কারো কোন প্রতিবাদ দেখলাম না। ঔ সময় ভোলায় অভিজিৎ দা আমাকে বলতেন "ভোলার শুভ্র দেব" এটা আমার কানে এখনো বাজে।